স্মৃতিগুলো একপাল কুকুরের মত খিঁচিয়ে ধাড়ালো দাঁত মনের পেছনে করে তাড়া
অস্কারের বয়স এখন ৮৫ বছর। ১৯২৮ সালে এ পুরস্কার প্রতিষ্ঠিত হয়। এবং প্রতি বছর একবার করে যুক্তরাষ্ট্রের লস এ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত হয়। তা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়ন ও সাফল্য প্রতিফলন করেছে, তা নয়, বরং তা বিশ্বের অনেক দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের ওপর যে প্রভাব ফেলেছে, তা উপেক্ষা করা যায় না।
এ পুরস্কারের ট্রফি হল একজন সোনালী রং-এর পুরুষের।
এ ট্রফির দৈহিক উচ্চতা ৩৪.২৯ সেন্টিমিটার। তার ওজন ৩.৮৬ কেজি। এবং তা কিন্তু খাঁটি সোনা দিয়ে তৈরি করেনি। শুধু সোনার দিয়ে আবরণ দিয়ে তৈরী করা হয়েছে। একটি ট্রফি তৈরি করতে সময় লাগে ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা এবং এমন একটি সোনা গিলটি ট্রফি তৈরি করতে ৫ শ' মার্কিন ডলার লাগে।
আর খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তা সব হাতের তৈরি, কোনো মেশিন ব্যবহার করে না। এবং ১৫টি পর্যায়ের মাধ্যমে তা তৈরী করা হয় ।
ইতিহাসে অস্কার পুরস্কার প্রদানের অনুষ্ঠান তিনবার স্থগিত হয়। প্রথমবার হল ১৯৩৮ সালের কথা, তখন ঠিক লস এ্যাঞ্জেলেসে ব্যাপক বন্যা হয়, এ কারণে সে বছরের অস্কার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান স্থগিত হয়। দ্বিতীয় বার হল ১৯৬৮ সালের কথা, যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত গণ অধিকার অভিযানের নেতা মার্টিন লুথার কিং (তিনি নিগ্রো মানুষের সমান অধিকার পাওয়া এবং তাদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য নিরলস চেষ্টা চালিয়েছেন) সে বছরই তিনি মৃত্যু বরণ করেন এবং তাঁর শেষকৃত্যানুষ্ঠানটি ছিল ঐ বছরের অস্কার অনুষ্ঠানের ঠিক একই দিনে।
এ মহান মানুষকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সে বছরের অস্কার অনুষ্ঠানটি স্থগিত করা হয়। আবার ১৯৮১ সালে মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট রিগেন আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। এ কারণে সে বছরের অস্কার পুরস্কার প্রদানও স্থগিত হয়।
১৯৩০ সালে তৃতীয় অস্কার Norma Shearer শ্রেষ্ঠ প্রধান নারীর ভূমিকায় পুরস্কার পান। তখন তিনি এত বিখ্যাত এবং সফল একজন অভিনেত্রী যে সবাই তাকে চলচ্চিত্রের ফার্স্ট লেডি হিসেবে ডাকে।
হলিউডের ইতিহাসের বিখ্যাত ও জনপ্রিয় চলচ্চিত্র gone with the wind ছবিটির পরিচালক বিখ্যাত এই অভিনেত্রীকে নাম-ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তিনি এই বিখ্যাত চলচ্চিত্রের প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করতে অস্বীকার করেছিলেন। তার কারণ তিনি একজন খারাপ নারীর ভূমিকায় অভিনয় করতে রাজি হননি। এটাই ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। কারণ এ চলচ্চিত্রের প্রধান নারী ভূমিকায় অভিনয় করার কারণে অভিনেত্রী ভিভিয়েন লেই অস্কারের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন এবং বিশ্ববিখ্যাত হয়েছিলেন।
অস্কারের ইতিহাসে এমন একজন সেরা নারী অভিনেত্রী আছেন, তিনি কোনো প্রস্তুতি না নিয়েই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন এটা ১৯৩৪ সালের কথা। সপ্তম অস্কার পুরস্কার অনুষ্ঠানে অভিনেত্রী ক্লাউডিট কোলবার্ট 'ইট হ্যাপেন্ড অয়ান নাইট ছবিতে চমত্কার অভিনয়ের কারণে সে বছরের সেরা অভিনেত্রী পুরস্কার পেয়েছেন। যখন তিনি পুরস্কার গ্রহণ করতে যান, তখন তিনি কোনো ফরমাল এ্যাটায়ার পরেননি এবং কোনো প্রসাধনও ব্যবহার করেন নি। কারণ তিনি মনে করেছিলেন পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা তাঁর নেই। তুমি জানো, যখন পুরস্কার অনুষ্ঠানে তাঁর নাম ঘোষণা করে, তখন তিনি রেলস্টেশনে।
তাই তিনি ভ্রমণের কাপড় পরেই পুরস্কার গ্রহণ করেছেন।
অস্কারে কোনো পুরস্কর পাওয়া তো খুব গর্বের এবং আনন্দের ব্যাপার। পুরস্কার পাওয়া তো অনেক পরের ব্যপার যখন কেউ শুধুমাত্র মনোনয়ন পায় সেটাই একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রীর জন্য অনেক গৌরবের। তাহলে পুরস্কার পেলে কিরকম আনন্দের বিষয় হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়। তাই অনেকেই পুরস্কার গ্রহণের পর তা রীতিমত উদযাপন করে থাকে।
তবে অস্কারের ইতিহাসে এমন একজন আছেন, যাকে পুরস্কার পাওয়ার পর পরই আনন্দ উদযাপন করার পরিবর্তে কারাগারে যেতে হয়েছে। ১৯৮২ সালের অস্কার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ইজ্বিগনিও রিবিস্কি নামে একজন ডিরেক্টর শ্রেষ্ঠ সর্ট ফিল্ম পুরস্কার পায়। অনুষ্ঠান চলাকালে তিনি থিয়েটারের বাইরে একটি সিগারেট খেয়ে একটু বিশ্রাম নিতে চাইলে, অপরিচিত নিরাপত্তা রক্ষী কর্মী তাকে থিয়েটারে সিগারেট না খাওয়ার অনুরোধ করে। কিন্তু রিবিস্কি বললেন: আমি এ মাত্রই অস্কার পুরস্কার পেয়েছি, আর এখনই ভিতরে যাবো। তবুও ওই নিরাপত্তা কর্মী তাকে সিগারেট খাওয়ার অনুমতি দেয় না।
এরপর সেই ডিরেক্টর রাগ হয়ে কর্মীকে মেরে বসেন, আর এ করণে তাকে কারাগারে দেয়া হয়েছে।
অস্কার পুরস্কার নির্বাচনের নিয়ম অনেক কঠোর। চলচ্চিত্র শিল্প একাডেমীর এই পুরস্কার পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই প্রাথমিক মনোনয়ন পেতে হবে। আর এই মনোনয়ন পাওয়ার প্রথম শর্তই হচ্ছে চমৎকার ছবি এবং চমৎকার অভিনয়ের দক্ষতা। তবে ১৯৬৮ সালে এ নিয়মকে ভেঙে দিয়েছেন মার্কিন অভিনেত্রী বারবারা স্ট্রইসান্ড।
যখন তিনি অস্কারের সেরা অভিনেত্রীর মনোনয়ন পেয়েছেন, তখন তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র "ফানি গার্ল"–এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। যদিও অনেকেই তার মনোনয়নের বিরোধিতা করেছে, তবুও তাঁর চমৎকার অভিনয়ের কারণে তিনিই অবশেষে সে বছরের অস্কার পুরস্কার পেয়েছেন। এটা অস্কারের ইতিহাসে একবারই ঘটেছে।
নিঃসন্দেহে, কেভিন জে. ও'কনোর হচ্ছেন অস্কারের ইতিহাসে সবচেয়ে দূর্ভাগা শিল্পী। পুরস্কারের জন্য তিনি বার বার মনোনয়ন পেয়েছেন, কিন্তু প্রতিবারই তিনি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছেন অন্যরা এই সোনালী পুরুষটিকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন।
এ পর্যন্ত তিনি ২০ বার মনোনয়ন পেয়েছেন, তবুও কখনই এ সোনালী পুরস্কার হাতে ধরার সৌভাগ্য হয়নি তাঁর। তাঁর চলচ্চিত্র দ্য টার্নিং পয়েন্ট এবং কালার পার্পেল প্রত্যেকেরই ১১ বার অস্কারের মনোনয়ন পেয়েছে, তবুও তিনি একবারের জন্যও পুরস্কার পাননি। তাই তাকে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে দূর্ভাগা মানুষ বলা যায়।
অস্কারের ইতিহাসে সবচেয়ে তরুণ বিজয়ীর বয়স মাত্র দশবছর। তার নাম টাটুম ওনীল।
"পেপার মুন" নামে চলচ্চিত্রটিতে চমৎকার অভিনয়ের কারণে তিনি ১৯৭৩ সালের অস্কার সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন। ওই সোনালী পুরস্কার পাওয়ার পর তার বলা প্রথম কথা ছিল: মা, এখন আমি কি বাসায় যেতে পারবো?
তথ্যসূত্র
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।