সাধারণ একজন অস্কার জিততে হলে
তারিক আল আজিজ
(বিবিসি’র ‘হাউ টু উইন এন অস্কার’ এর ভাবানুবাদ, লুসি রজার্সের লেখা থেকে অনুবাদকলে কিছুটা সংক্ষেপ করা হয়েছে।
এমপায়ার ম্যাগাজিনের হেলেন ও’হারা এখানে বিভিন্ন বিষয়ে তার মতামত দিয়েছেন। )
সেই ১৯২৭ থেকে একাডেমি এওয়ার্ড তথা অস্কার পুরস্কার দেয়ার রীতি চালু হয়েছে। কেউ কি হলফ করে বলতে পারবেন কোন ধরণের চরিত্রে অভিনয় করলে অস্কার জেতা যাবে? কোন চরিত্রে অভিনয় করে হওয়া যাবে সেরা অভিনেতা বা অভিনেত্রী?
রাজা-রানী থেকে রাজনীতিবীদ, ধর্মগুরু; নানা চরিত্রে অভিনয় করে নানাজনে বগলদাবা করেছেন চলচ্চিত্রের এই সর্বোচ্চ খেতাব। অভিনয়ের ক্ষেত্রেও একেকজন চেষ্টা করেছেন ভিন্ন আঙ্গিকে তুলে ধরার।
অস্কার জেতার কি কোন সহজ উপায় নেই? শুরু থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত পর্যালোচনার মাধ্যমে অস্কারে সেরা অভিনেতা-অভিনেত্রী হবার পাঁচটি উপায় নিয়ে এই লেখায় আলোচনা করা হয়েছে।
১. বাস্তব চরিত্রে অভিনয়
বাস্তব জগতের মানুষের চরিত্র অনুযায়ী অভিনয় করে অস্কার জিতেছেন শতকরা ১৯ ভাগ অভিনেতা। গত বছরের কিংস স্পিচের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। কিংস স্পিচের তোতলা রাজা ষষ্ঠ জর্জের চরিত্রে যথাযথ চরিত্রায়ন করে সেরা হয়েছেন কলিন ফার্থ। এর আগে ‘লাস্ট কিং অব স্কটল্যান্ড’ ছবিতে উগান্ডার সৈর শাসক ইদি আমিনের চরিত্রে অভিনয় করে অস্কার জিতেছেন ফরেস্ট হোয়াইটেকার।
অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রে এই হার একেবারে কম নয়। শতকরা ১৩ ভাগ। ‘লা ভিয়ে এন রোজ’ ছবিতে গায়িকা এডিথ পিয়েফের চরিত্রে অভিনয় করে সেরা অভিনেত্রী হয়েছেন ম্যারিয়ন কটিলার্ড। রিচি উইদারস্পুন সেরা হয়েছেন গায়িকা জুন কার্টারের জীবনী নির্ভর ছবি ‘ওয়াক দা লাইনে’ অভিনয় করে।
ও’হারা বাস্তব চরিত্রে অভিনয়ে সেরা হওয়ার ব্যাখ্যায় বলেন, অভিনয় একটি শিল্প।
নানাজন নানা চরিত্রে অভিনয় করে। যা মূল্যায়ন করা সত্যিই কঠিন। কিন্তু যখন সমাজের কোন বাস্তব জানাশোনা চরিত্রে কেউ অভিনয় করে তখন তা মূল্যায়ন করা অনেক সহজ হয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, কড়া মেকাপ নিয়ে থেরন সিরিয়াল কিলার এলিয়েন অরনসের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। থেরন অভিনিত ‘মনস্টার’ ছবিটি ২০০৩ সালে মুক্তি পায়।
নিজেকে ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপনও অভিনয় শিল্পীকে সেরা হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে দেয়।
হলিউডে সুন্দরী ও স্লিমদের জয়জয়াকার। এই সুন্দরীরা চরিত্রের প্রয়োজনে কুৎসতিভাবেও নিজেকে মেলে ধরছেন। মেয়েদের ক্ষেত্রে সত্যিই এটা সাহসের বিষয়।
২. প্রতিবন্ধি চরিত্রে অভিনয়
সেরা অভিনেতা বা অভিনেত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধি চরিত্রে অভিনয় করে সাফল্যের হার ভালই।
প্রতিবন্ধি চরিত্রে অভিনয়ে অস্কারে সেরা হয়েছেন ১৬ ভাগ অভিনয় শিল্পী। অভিনেতাদের ক্ষেত্রে এটা ১৭ ও অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রে ১৪ ভাগ।
প্রতিবন্ধি চরিত্রে অভিনয়ে অস্কারে সেরা হওয়ার কারণও অনেকটা বাস্তব চরিত্রে অভিনয়ের মত। এখানেও প্রতিবন্ধির বৈশিষ্ট্য জানা থাকার কারণে অভিনয় মূল্যায়ন সহজ হয়ে যায়। ও’হারা তাই মনে করেন।
তিনি বলেন, সম্ভবত প্রতিবন্ধি চরিত্রে অভিনয় করার ক্ষেত্রে অভিনয়ের দীর্ঘ সময় ধরে নেয়া প্রস্তুতিও একাডেমি সদস্যদের প্রভাবিত করে। হফম্যান যেমন মানসিক প্রতিবন্ধির চরিত্রে অভিনয়ের আগে এক বছর প্রস্তুতি নিয়েছেন। ১৯৮৮ সালে ‘রেইন ম্যান’ ছবিতে প্রতিবন্ধির অভিনয় করে তিনি পুরস্কার জিতে নেন। ডেনিয়েল ডে লুইস অভিনয় করেছিলেন ‘মাই লেফট ফুট’ ছবিতে। সেখানে তিনি প্যারালাইসিস রোগাক্রান্তের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
প্রতিবন্ধির চরিত্রে অপ্রতিবন্ধি অর্থাৎ সুস্থ সবল মানুষের অভিনয় কিন্তু মেনে নেয়নি প্রতিবন্ধিরা। কিছু প্রতিবন্ধিদের বক্তব্য হচ্ছে- আমাদের চরিত্রে তোমরা অভিনয় করো না। আমরা নিজেরাই এসব চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রস্তুত।
৩. পুরুষরা নেতা বা মাদকাসক্তের চরিত্রে অভিনয় করতে পারে
১৩ ভাগের কিছু বেশি অভিনেতা নেতা বা রাজ পরিবারের কেউ হয়ে অস্কার জিতেছেন। এ ধরণের চরিত্রে অভিনয় করে বিজয়ী হয়েছেন আটজনে একজন।
অস্কারের শুরুর দিকে এ ধরণের চরিত্রে পুরস্কার পাওয়ার ঘটনা বেশি। ১৯২৯/৩০ সালে জর্জ অরলিস অস্কার সেরা হন। তিনি ‘দিইসরাইলি’ ছবিতে বেঞ্জামিন দিইসরাইলি চরিত্রে অভিনয় করেন। তিন বছর পরে ‘প্রাইভেট লাইফ অফ হানরি ভিল’ হানরি ভিল চরিত্রে অভিনয় করে সেরা হন চার্লস লাফটন। ১৯৮০ সালে বেন কিংসলি ‘গান্ধি’ ছবিতে অভিনয় করে পুরস্কার জিতেন।
অভিনয়ে পুরুষরা মাতালের অভিনয় করে সেরা হয়েছেন ১৭ ভাগের কিছু বেশি। এ ধরণের চরিত্রে অভিনয় করা ছয়জনে একজন পুরস্কার জিতেছেন। ও’হারার মতে মাদকাসক্তির সাথে হলিউড ভালভাবেই পরিচিত। পরিচিত একাডেমির বিচারকরাও।
মাতাল চরিত্রে অভিনয় করে অস্কারে বিজয়ী হয়েছেন এমন একজন হচ্ছেন হামফ্রি বোগার্ট।
১৯৫১ সালে ‘আফ্রিকান কুইন’ ছবিতে অভিনয় করে তিনি পুরস্কার জিতেন। ‘লিভিং লাসভেগাস’ ছবিতে অভিনয় করে ১৯৯৫ সালে অস্কার জিতেন নিকোলাস কেগ।
৪. মহিলারা করতে পারে অবিবাহিত মা, বিধবা বা পতিতার চরিত্র
পুরুষরা যেমন অস্কারে জয়ী হয়েছেন নেতা বা মাতালের চরিত্রে, মেয়েরা তেমন হয়েছেন অবিবাহিত মা, বিধবা বা পতিতাদের চরিত্রে।
অবিবাহিত মা বা বিধবার চরিত্রে অভিনয় করে সেরার পুরস্কার নিজের করেছেন ২৩ ভাগ অভিনেত্রী। এর বিপরীতে পুরুষদের অবস্থান মাত্র পাঁচ শতাংশ।
এ ধরণের চরিত্রে বিজয়ী অভিনেত্রীদের মাঝে রয়েছেন ১৯৪৫ সালে ‘মিলড্রেড পিয়ার্স’ ছবির অভিনেত্রী জোয়ান ক্রাওফোর্ড। । জুলিয়া রবার্ট সেরা হন ২০০০ সালে ‘এরিন ব্রকোভিচ’ ছবিতে অভিনয় করে।
পতিতা চরিত্রে অভিনয় করে সেরা হওয়ার হার শতকরা ১২ ভাগ। ‘স্ট্রিট এঞ্জেল’ ছবিতে পতিতা চরিত্রে প্রথম অস্কার জিতেন জেনেট গে’নর।
‘বাটারফিল্ড ৮’ ছবিতে অভিনয় করে সেরা হন ক’দিন আগে পরলোকে যাওয়া এলিজাবেথ টেইলর।
নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে ভিন্ন চরিত্র অস্কার পাওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন ও’হারা। তিনি বলেন, সমাজ এখনো পুরুষকে শক্তিশালী ও নারীকে দুর্বল বা শিকার হিসেবে দেখতে পছন্দ করে।
তবে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে পারে বলে তিনি জানান। উদাহরণ হিসেবে টানেন ‘আয়রন লেডি’ ও ‘দা গার্ল উইথ ড্রাগন ট্যাট্টু’ ছবির কথা।
এ ধরণের চলচ্চিত্র দেখে আশান্বিত হওয়ার কথাও জানান তিনি।
৫. শোবিজ চরিত্রে অভিনয়
শিল্প মাধ্যম সংশ্লিষ্ট চরিত্রে অভিনয় করে অস্কার জিতেছেন ১২ ভাগ অভিনেতা-অভিনেত্রী। ও’হারা উদাহরণ হিসেবে টানেন বর্তমানের আলোচিত ছবি ‘হিউগো’র নাম। যেখানে সিনেমার প্রতি ভালবাসাকে তুলে আনা হয়েছে।
ও’হারা বলেন, এই চরিত্রগুলো ঘুরেফিরে হলিউডের ছবিতে আসবে।
অর্থাৎ জীবনী নির্ভর বা প্রতিবন্ধি জাতীয় চরিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র হতে থাকবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।