আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেমন যেন কয়েকটি চামচিকার গোলক-ধাঁধায় পড়েছি! !!!

চামচিকা -১; জীবন আমাদের, কিন্তু আমাদের জীবনের চিন্তা হচ্ছে রাজনৈতিক দলের! বিষয়টা আমার কাছে হাস্যকর মনে হয়। আমাদের কেউ মারা গেলে টানা হেঁচড়া চলে, আমরা কোন দল করতাম বা করি। দাঁড়ি থাকলেই আমরা শিবির করি। অনেক ক্ষেত্রে, ধর্মীয় পরিচয় না পাওয়া পর্যন্ত শিবির দাবী করতে পারে, আমরা তাদের সমর্থক ছিলাম। একই ঘটনা'র জম্ম দিচ্ছে আওয়ামীলীগ স্বয়ং নিজেই।

আমাদের জীবন কি বাংলালিংক দামে পাইছেন? চাইলেই মেরে দিচ্ছেন শিবির বা আওয়ামী তকমা! চামচিকা -২; আমাদের অনেক বড় বড় রাজনৈতিক দলের বড় বড় নেতা আছেন। তাদের একটা কথার ভার, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের হেড স্যারের কথা'র ভার যেমন ছিল ঠিক তেমনই। এটা আমরা মনে করতাম! এখন যুগ পাল্টাইছে, কথা'র ধরনও পরিবর্তন হয়েছে। এখন আর হেডস্যার নিরপেক্ষ নেই। হয়ত সে বিএনপি করে অথবা জামায়াত করে (আওয়ামীলীগের উপাধি অনুসারে)।

তো আমাদের নেতারা এখন কথা বলেন বাচ্চাদের মত! আম্মু আমাকে লজেন্স কিনে দাও, না আমি গেম খেলব, আ আ আ .. .. .. .. ইত্যাদি ইত্যাদি। ছোট বাচ্চার কথার যেমন গুরুত্ব সেয়া হয়না, তেমনি নেতাদের কথারও গুরুত্ব নাই হয়ে গেছে (প্রধানমন্ত্রীও আছেন এই তালিকায়, লেভেল একটু উপরে)। এই জায়গায় জামায়াত শিবির এগিয়ে আছে অন্য দুই দলের চেয়ে। এটা নিঃসন্দেহে। চামচিকা -৩; আমরা যারা শাহবাগে অবস্থান করছি, তাদের একটাই উদ্দেশ্য রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ গড়া।

একটা উদ্দেশ্যের কথা এই জন্য বললাম, আপাতত এটা ছাড়া আর কোন উদ্দেশ্য উচ্চারিত হয়নি। কেননা, রাজাকার মুক্ত মানে ওদের সব কিছু ধ্বংস করে দেয়া। আর এটা করতেছি একমাত্র ভবিষ্যৎ প্রজম্মের কথা চিন্তা করে। তাদের জীবন যেন কলুষিত না হয় তার জন্য। শ্লোগান শিখিয়েছি, ক তে কাদের মোল্লা, তুই রাজাকার, তুই রাজাকার।

আজকে এটার প্রতিফলন দেখেছি। বুয়েটের কাছে রিক্সায় বসে আছি সিগন্যালের জন্য। স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের একটা র্যাআলি যাচ্ছে। ব্যানারে লিখা –“সৃজনশীল রচনা প্রতিযোগিতা’১৩”। ভাল কথা, খুশি হলাম।

মূহুর্তেই মাথা খারাপ গরম হয়ে গেল। কাদের জন্য আমরা রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ গড়ব? এরা আগুন জ্বালানোর শ্লোগান দিচ্ছে। “জ্বালো জ্বালো, আগুন জ্বালো। “ এরা ভবিষ্যতে কি হবে? চেতনায় বিশ্বাসী না সন্ত্রাসে! চামচিকা -৪; আমাদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে, ইলেক্ট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়া। কারন, আমাদের জাতির বিবেক হচ্ছে এরা মানে যারা সংবাদ সংগ্রহ করে আমাদের কাছে পোঁছে দেয়।

আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ সবসময়। তবে তাদের খবরের বস্তুনিষ্ঠতা হচ্ছে প্রধান বিষয়। ইদানীং কালে এই বস্তুনিষ্ঠতা শব্দের মাহাত্ন্য হারিয়ে যাচ্ছে। একটা ঘটনা ঘটার পর তা আমাদের কাছে আসে অনেকটা একপেশিয়া। যারা মতাদর্শি কোন না কোন দলের সেক্ষেত্রে মিডিয়া তে তার মনোভাব আসাটা অনেকটা সাংবাদিক নীতিমালা ভঙ্গের শামিল।

কেউ আমার বিপক্ষে কথা বললেই তাকে রাজাকার বা ফ্যাসিবাদী বলা কতটুকু সমীচীন! তবে কিছু কিছু ঘটনার সাক্ষী আমি নিজে হয়েও ভুল তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ পরিবেশিত হতে দেখেছি। এটা আমাদের জন্য লজ্জার! !!! চামচিকা -৫; আমরা অনেকেই মানবাধিকারের কথা বলি। শাহবাগ ও বলে, এবং জোর গলায় বলে। আর বড় কথা হচ্ছে, মৃত্যু কেউই আশা করে না। তবে স্বাভাবিক মৃত্যু সবারই কাম্য।

সে নাস্তিক হোক বা আস্তিক হোক। পুলিশ গুলি চালিয়েছে নির্বিচারে, এবং প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ মেরেছে। তাদের নিরাপত্তার জন্যই ধরি, অথবা শিবির নিধনের জন্য উপরের নির্দেশ ও ধরি। কোনটাই তারা করতে পারে না। যাই হোক করেছে, আমাদের কেউ কেউ দারুন খুশি! শাহবাগও খুশি!!! তাতে মানবাধিকার কোথায় গেল দেখাটা সমীচীন নয়! কেন আমরা এত নিষ্ঠুর হব? মানুষ মেরে হোলী খেলব! আমি বলব, ৫০% সাধারণ মানুষ ছিল ওখানে।

তাহলে তা কতটুকু মানবাধিকার রক্ষা হল? আমাদের কমিশন আছে, আছে তার চেয়ারম্যান। কিন্তু তিনি মনে হয় মদদপুষ্ট রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র। যেভাবে কথা বলেন তাতে তার আর ওখানে থাকার যোগ্য বলে মনে করি না। চামচিকা -৬; আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে থেকেই বলে আসছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় তারা বিশ্বাসী। এখনো অনেকেই বলেন।

কিন্তু কার্যত এটা চামচিকা -২ এর মত। সাম্প্রতিক “বাঁশেরকেল্লা’ বা “সোনারবাংলা ব্লগ’ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাতে আমার আপত্তি নেই। “প্রজম্ম চত্বর’ বা কিছু অনলাইন পত্রিকা অথবা কিছু ব্লগে অনেক আপত্তিকর সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে। এবং সেগুলো অনেক বেশি মারাত্মক।

মানুষের সংবেদনশীল জায়গাতে আঘাত করতেছে। প্রমানের জন্য আসিফ মহিউদ্দিন, অমি রহমান পিয়াল, নাস্তিক নবী এদের লেখা দেখুন। ফেইসবুক বা ব্লগে। এদের স্বাধীনতা দেয়া হচ্ছে কিন্তু “বাঁশেরকেল্লা’ বা “সোনারবাংলা ব্লগ’ এর ক্ষেত্রে দিতে সমস্যা কোথায়? তাতে কি আমার কথার সাথে কাজের মিল হচ্ছে? চামচিকা -৭; দুই একদিন আগে দেখলাম পত্রিকায় সর্বোপরি ধর্ম মন্ত্রণালয় মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে জানান দিচ্ছে, তারা ইসলাম ও অন্য যে কোন ধর্মে কোন প্রকার আঘাত হানে এমন কাজ বরদাশত করবে না। খুশি হলাম।

এ ব্যাপারে তারা বদ্ধ পরিকর। কিন্তু এখনো তারা আসিফ মহিউদ্দিন, অমি রহমান পিয়াল, নাস্তিক নবী আরো অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। তারা স্ব-গৌরবে লিখে যাচ্ছেন। তাদের লেখায় ইসলাম কতটুকু সুরক্ষা পাচ্ছে তা খতিয়ে দেখার কোন পদক্ষেপ দেখছি না। তাতে কি আমাদের ধর্ম মন্ত্রণালয় বা সরকার সঠিক জায়গায় আছে? চামচিকা -৮; বারংবার আমরা বলে যাচ্ছি, জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ করা হোক।

এটা বাংলাদেশের ৯০ ভাগ জনগণের দাবী। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সহ আরও অনেক মন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করছেন, একটা আইনের মাধ্যমে এদের নিষিদ্ধ করা সম্ভব। কিন্তু কেন করা যাচ্ছে না? এটা কি ভোটের রাজনীতি’র দিকে এগোচ্ছে? নাকি সাহসের ঘাটতি! আমরা বাস্তবায়ন চাচ্ছি, আজাইরা মুখের ফেনা নষ্ট করতে বলছি না। চামচিকা -৯; দেশে গত চার বছরে খুন বা গুম কম হয়নি। সেগুলোর মধ্যে খুব কম সংখ্যক (হাতে গোনা) খুনের রহস্য উম্মোচিত হয়েছে।

কয়েকদিন ধরে, বিশিষ্টজনদের আত্নীয় স্বজন খুন হচ্ছেন। তারা এতই বিশিষ্ট যারা দেশের রাজাকার মুক্ত আন্দোলনের একনিষ্ট কর্মী। তারা সাক্ষী বা চেতনা লালন পালনকারী’র সন্তান। এখন পর্যন্ত কাউকে ধরতে পারে নি পুলিশ। আর কোন আলামতও পাওয়া যাচ্ছে না যাতে অন্যকে ফাঁসানো যায়।

সোজা দায় ভার তুলে দেয়া হচ্ছে জামায়াত শিবিরের কাঁধে। কেন? ওদের কাজ শুধু মানুষ খুন করা? তারা এতই শক্তিশালী আমাদের পুলিশ, ডিবি বা র্যা ব বাহিনী’র চেয়ে! আমরা কর দিয়ে তাহলে ওদের পুষতেছি কেন? চামচিকা -১০; হরতাল, এটা নাকি গণতান্ত্রিক অধিকার -অনেক বিশিষ্টজন বলেন। তাহলে আমি হরতালের ডাক দিতে পারব না কেন? আমার অধিকার কি খর্ব হচ্ছে না? প্রথম সারির এক পত্রিকার সম্পাদক বলেছেন, হরতাল মানে কোন একটা বিষয়ে আমার মতের মিল না হলে আমি ওটার বিরুদ্ধে হরতাল আহ্বান করতে পারি। এবং তা যদি সঠিক হয় তাতে জনগণ সমর্থন দিয়ে ওটা কার্যকর করবে। বিএনপি হরতাল আহ্বান করলে মাঠে জনগণ থাকে না যে এমন না।

দিনশেষে সংবাদগুলোর কাছে বলা হয়, হরতাল সফল হয়েছে। আর যাদের বিরুদ্ধে হরতাল পালন করা হয়েছে, তারা বলেন জনগণ তা প্রত্যাহার করেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন হল ক্ষয়-ক্ষতি, এর দায়ভার কে নেবে? আমি বলব, এর দায়ভার সরকারের। কেননা, হরতালের আগের দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সবাইকে মাঠে নামার জন্য প্ররোচিত করেন। রাস্তায় যান চলবে, দোকান খুলবে, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সব খোলা থাকবে।

আমি হরতাল ডাকলাম, রাস্তায় গাড়ি চলবে না, সব কিছু বন্ধ থাকবে। আর আপনি রাস্তায় গাড়ি নামাচ্ছেন পিকেটিংটাকে আরো জোরালো করার জন্য। এটা আপনি অবশ্যই অন্যকে চাপ প্রয়োগ করে করাচ্ছেন। সুতরাং এর দায়ভার আপনার এবং আপনার দলের। শান্তিপুর্নভাবে হরতাল পালন করতে দিন, দেখুন কয়টা গাড়ি পুড়ে বা ভাঙ্গে? চামচিকা -১১; আমার লেখার বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারে, তাতে আমি উদ্দীপ্ত হই।

আর আমার লেখার কোন বিষয় যদি কারো বিপক্ষে যায় তাতে সে মনঃকষ্ট পেলেও আমার কিছু আসবে যাবে না। আর আমি এত বেশি নায়ক হতেও চাচ্ছি না কারন আমি আসিফ মহিউদ্দিন, আরিফ জেবতিক, মারুফ রসূল, সানিউর বা নাস্তিক নবীও নয়। ব্লগে যা দেখি, বিতর্কিত লেখকরাই সবচেয়ে জনপ্রিয়। কারনটা আমার অজানা। আমি সত্য বলার চেষ্টা করি, তাতে আমি ছাগু বা ফ্যাসিবাদী যাই হোক না কেন, হতে রাজি আছি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.