"ভালোবাসো, ভালোবাসি, লোকে মন্দ বলে তাতে
কাহারও নই প্রতিবাদী, তবু কেন মিছে তাতে।
কি নৃপতি কি দীন/সবে দেখি প্রেমাধীন
কেউ ছাড়া নয় কোনও দিন
ভেবে দেখ যাতে-তাতে। "
প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে আমি ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াই। পর পর দুইটি সিগারেট শেষ করি এবং আগামীকালের রুটিন টা সাজিয়ে নিই। জীবনে বহু রকম ঘূর্নিপাকে পড়ে আমি বুঝেছি যে যথাসময়ে যথারীতি কৌশল প্রয়োগ করাই জীবন ধারনের প্রকৃষ্ট পন্থা।
আজ ব্যালকনিতে দাঁড়াতেই কীটসের কবিতা মনে পড়ে গেল- "টু সরো/আই বেইড গুড-মরো/অ্যান্ড থট্ টু লীভ হার ফার বিহাইন্ড/বাট চীয়ারলি, চীয়ারলি/শী লাভস মি ডিয়ারলি ;/শী ইজ সো কনস্টান্ট টু মী,অ্যান্ড সো কাইন্ড..."। কোনও অনিচ্ছাকৃত দোষ করে ফেলার ফলে প্রভু যদি লাথি ঝাঁটা মারে তাতে আক্ষেপের কিছু থাকে না। কিন্তু কোনও দোষ করা হয়নি, বরং প্রভুর মনোরঞ্জনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে, তা সত্ত্বেও প্রভু যদি প্রহার করার জন্য উদ্যত হন,তা হলে সেটা বড়ই মনস্তাপের ব্যাপার হয়।
কিছু কিছু মানুষ বড়ই বিচিত্র। একই মানুষের মধ্যে যেন নানান বৈচিত্রের সমাহার।
যেমন তেজী এবং জেদী আবার তেমনই কোমল। কখনও কখনও কারুর প্রতি ক্রোধে উদ্দীপ্ত হয়ে অশ্রাব্য কু-কথার ফোয়ারা ছুটিয়ে দেন। আবার সেই মানুষই দেশের সাধারণ মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা শূনে অশ্রু বর্ষন করেন। এক সময় তিনি খুবই দরিদ্র ছিলেন বটে কিন্তু এখন তিনি যথেষ্ট অবস্থা ও সঙ্গতিসম্পন্ন, কিন্তু আজও তিনি নিজের কৈশোর-যৌবনের দারিদ্যের কথা অহংকারের সঙ্গে বলে বেড়ান। এই মানুষটির নাম কে বলতে পারবে?আমি আর একটু সহজ করে দিচ্ছি।
দেশের সাধারণ মানুষের দুঃখ দূর করার জন্য তিনি লেখনীকে তরবারি করে তুলেছেন দিন দিন। আবার সে প্রতিদিন গলায় ঢালেন সুরা রুপী অগ্নি, ঢালতেই থাকেন। প্রায় রাত্রেই তিনি নিজ ভবনে না ফিরে যান পতিতালয়ে। দেশের মানুষকে ভালোবাসেন তিনি, আবার দেশের মানুষকে এত বেশী গালিগালাজও আর কেউ দেন না তার মতন। সে প্রায়ই বলেনঃ অধরের অধরামৃত পান করে আমি অমর হবো।
বুক চাপড়ে সগর্বে বলেন- আমি কত বছর বাঁচব জানো? তিনশো বছর! আমার এত কাজ, তার আগে ফুরুবে না!এক চুমুক মদ মুখে দিলেই আমার বুদ্ধির জানালা খুলে যায়। (কিন্তু আমি দেখেছি মদ খাওয়ার পর কত মানুষ অমানূষ হয়ে যায়। )তিনি বলেন,আচ্ছা, ঈশ্বর কি কাউকে বলে দিয়েছেন,এটা খাবে না,ওটা খাবে না। কত দেব-দেবী তো মদ খেয়ে নাচানাচি করেছে। তারপর যীশু নিজে তার শিষ্যদের মদ পরিবেশন করেছেন।
যারা মদ খেয়ে মাতলামি করে তাদের সাথে আমার তুলনা করো না। আমি প্রতিভাবান,আমি যা খুশি করবো। আমি জানি মাথার উপরে ঈশ্বর আছেন,তিনি সব দেখছেন!রাজিব ভায়া, আমি ঈশ্বরকে মানি কেন জানো? আমি জানি, আমার সব রকম বিপদ-আপদে তিনি আমায় রক্ষা করবেন। একটা দিনের ঘটনা তোমায় বলি-
তখন আমার বয়স ১৫/১৬ হবে। পোষ্ট অফিসের সামনে বসে চিঠি এবং জমির দলিল লিখি।
যা টাকা পাই তা দিয়েই আমার সংসার চলে!হঠাৎ একদিন বিনা নোটিশে আমাকে সেখান থেকে উঠিয়ে দেয়। । কোনও রোজগারপাতি নাই, দিন আর চলে না,এমন অবস্থা হলো বাড়িতে চুলা জ্বলে না। পেটে নেই খাবার। মা শেষমেষ বললেন- যা, আমার এই নাক ফুলটা বন্ধক রেখে যা পাবি তা দিয়ে চাল ডাল কিনে নিয়ে আয়!বেরুতে যাবো, এমন সময় ঝুম ঝুমিয়ে বৃষ্টি শুরু হলো!সে কী বৃষ্টি, তোমায় কী বলব ভাই, যেন আকাশ একেবারে ফেটে বৃষ্টি পড়ছে।
২/৩ ঘন্টা হয়ে গেল বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষন নেই। আমি না হয় বৃষ্টি মাথায় করেই বের হতে পারি, কিন্তু কোন দোকান তো খোলা থাকবে না!নিরুপায় হয়ে এক সময় কাঁদতে শুরু করলাম!কাঁদতে কাঁদতে বললাম হে ঈশ্বর, তুমিও আমাকে দেখলে না?তারপর কী হলো জানো, ব্রাদার রাজিব? সেই ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে এক ব্যবসায়ী আমার বাড়ি খুঁজে এসে হাজির। তার এক দলিলের ইংরেজী করতে হবে, খুব জরুরী,পরদিন সকালেই আদালতে হাজির করার কথা। আমি সে কাজ করে দিলাম। আর নগদ বেশ কিছু টাকা হাতে পেলাম।
বলো ঈশ্বরের দয়া ছাড়া এমন হয়?
এই ভদ্রলোকের সাথে কাকতালীয় ভাবে আমার প্রায়ই দেখা হয়ে যায়। নানান বিষয়ে আলোচনা হয়। একদিন বিকেলে কাওরান বাজারে একটা চায়ের দোকানে দেখা হয়। সে আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন- তোমার হিমি কেমন আছে?আমি বললাম স্যার হিমি বলে তো কেউ নেই। শূন্য।
তিনি আমার কথায় কান দিয়ে বলতে লাগলেন,শোনো ছেলে স্ত্রীলোক মাত্রই এক-একটি রত্ন! তুমি জানো, প্রাচীন গ্রীসে,রোমে বড় বড় দার্শনিকরা গভীর রাতে বারবনিতা পল্লীতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে দর্শন তত্ত্ব আলোচনা করত!আসলে, সুন্দরী, স্বাস্থ্যবতী এবং নিষেধহীন কোনো তরুনী কাছে থাকলে পুরুষের শরীরে রক্ত চলাচল দ্রুত হয়, তাতে তার বুদ্ধি ও প্রতিভা বাড়ে!আর সেই জন্যই নিরবে এক তরুনীর কাছে একাধিক পুরুষ থাকতে নেই। থাকলেই বিবাদ,মন কষাকষি, কিংবা রক্তারক্তি। কিন্তু পতিতাদের কাছে সব পুরুষই অনন্য, দ্যাট ইজ দি বেস্ট পার্ট অফ ইট!তারা প্রত্যেকেই তোমার আমার। তুমিও তাদের সকলের,কোনো ভেদাভেদ নেই। ফ্যালো কড়ি, মাখো তেল!
আমি বাসায় ফিরতে ফিরতে ভাবি মানূষটির কথা,সব সময় চুরচুর নেশাগ্রস্ত,পোশাকে অপরিচ্ছন্ন,চোখ ঘোলাটে, দেখলেই বুঝা যায় তার আর আয়ু নেই।
অবশ্য, যে মানুষ নিজের প্রানের মায়া একেবারে ত্যাগ করে বসে থাকে,তার মৃত্যু সহজে আসে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।