আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তোরা সব অসুস্হ,সিক্‌ !!!!!!!!!

ত ইউনিভার্সিটি সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি, হুট করে হিমেলের মাথায় চাপলো ন্যাড়া হবে। কিন্তু একা ন্যাড়া হওয়াটা রিস্কি, সাথে কাউকে নিতে হবে, কল করলো ইশরাককে, "মামা, চল ন্যাড়া হই!!!!"। বলাই বাহুল্য এই ধরনের ফালতু পাগলামিতে ইশরাকের কোনো কালেই উতসাহের কোনো কমতি ছিলো না। "বাসায় (মিরপুর) চলে আয়, একসাথে ন্যাড়া হই !!!" মিরপুরে বাসায় বসে দুইজনে ভাবতে লাগলো আর কাকে দলে টানা যায়, মেহেদীকে ফোন, "খাড়া আইতাসি !!!, আমারে ছাড়া ন্যাড়া হইলে ন্যাড়া মাথা আবার ন্যাড়া করুম !!!", ওপাশ থেকে উত্তর। ভয়ে ভয়ে কল করা হলো আজাদকে, যার একমাত্র ফ্যাশনই ছিলো চুল বড় করা, চুলের যত্ন নেয়া।

দেখা যেতো তার গোসল হতো না ২/১ সপ্তাহ কিন্তু চুলে শ্যাম্পু ঠিকই করা হতো নিয়মিত। স্বাভাবিক ভাবেই আজাদ দ্বিধান্বিত, "আমরা তিনজন হচ্ছি তুই হবি না ???", আজাদের দাঁত কেলানো হাসি সাথে উত্তর, "গুল্লি মারি চুলের, তোরা ন্যাড়া হবি আর আমার মাথায় চুল থাকবে ???" যদিও চুল কাটার পর আজাদের শোক ভুলানোর জন্য ওকে পর্যাপ্ত ঘুষ দেয়া হয়েছিলো (স্পিড আর গোল্ডলীফ...., ঐ দুই টা জিনিসই খালি ও খাইতো !!!! )। আদনানকে জানালেই ও লাফ দিয়ে উঠে বল্লো, আমিও চিন্তা করতেছিলাম গত কয়েকদিন যাবত্‌, পার্টনার পাইতেছিলাম না !!!দলবেধে শেয়ালের লেজ কাটার মতো দলবেধে চুল ন্যাড়া করা হলো। ঘটনা এখানেই শেষ না....ক্লাসের এক কলামের এক রো তে বসা যেতো ৫ জন। এই পাঁচজন বেশ কয়েকদিন (চুল না উঠা পর্যন্ত) একসাথেই বসতো, ব্রেকে একসাথেই সিগারেট খেতে যেতো....এক টিচার বলেই ফেলেছিলো, "তোমাদের ৫ জনকে একসাথে দেখা চোখেরও অশান্তি!!!" পাচটা ন্যাড়া ধামড়া একসাথে ডিপার্টমেন্টে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে, একসাথে ক্লাসে কথা বলছে, একসাথে স্যাররা ওদের দাঁড় করিয়ে রেখেছে!!!!তারা নির্বিকার ।

একদিন চেয়ারম্যান স্যার বলেই ফেল্লো, "কি ভাই আপনারা কি অসুস্হ নাকি !!!!"এই হচ্ছে আমার ফ্রেন্ড, আমিও প্রায়ই বলতাম, তোরা অসুস্হ, সিক্‌.................... আজাদের একমাত্র হবিই ছিলো গোল্ডলীফ খাওয়া!!!! -সকালে নাস্তা হইছে ? "হু" -কি খাইছোস ? "সিগারেট !!!" -দুপুরে ভাত খাবি না ? "না" - কি খাবি ? উদাস ভঙ্গিতে গলা চুলকিয়ে সিগারেটের প্যাকেট টা চেক করলো রিফিল করতে হবে কিনা !!! ফার্স্ট ইয়ারে তার টাইফয়েডে কাহিল অবস্হা, গায়ে জ্বর, খাইতে পারে না কিন্তু হাতে গোল্ডলীফ। "মুখে রুচি নাই একদম, এই একটা জিনিসই খাইতে পারি", গভীর এক টান দিয়ে গম্ভীর ভাবে বল্লো !!! গ্রাফিক্স ল্যাব ফাইনালের আগের দিন আদনানের সাথে দেখা, কি অবস্হা জিগ্গেস করলাম। বল্লো মোটামোটি সব রেডি, আজকে রাতে আরেকটু দেখলেই হবে....ভালো কথা। পরদিন ল্যাবে সবাই উপস্হিত, আদনান নাই। ফোন দিলাম বেশ কয়েকবার কেটে দিলো।

বিকেলে গেলাম রুমে, ঘুমাচ্ছে!!!ডাক দিয়ে জিগ্গেস করলাম, কিরে এক্সাম দিতে গেলি না যে ? "ঘুম থেকে উঠতে পারি নাই মামা !!!" আমি তো কল দিলাম বেশ কয়েকবার, কেটে দিলি। "এলার্ম ভাবছিলাম মামা!!" বলে ওপাশ ফিরে আবার ঘুমানো শুরু করলো!!!! ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষার মাঝে চারদিন করে গ্যাপ, আদনান ২ দিন আই,বি (ইন্টারন্যাশনাল ব্রিজ) খেলে কাটাইতো। শেষদিন এসে আফসোস করতো, একদিন আই,বি কম খেল্লেই এই পরীক্ষাটা ফাটাইতে পারতাম রে!!!পরের পরীক্ষাতেও সেই একই চিত্র। আমরা বলতাম ওর আর সি,এস,ই থেকে গ্রেজুয়েশান করা লাগবে না, আই,বি থেকে এম,বি করলেই হবে.............!!!! ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময় মেহেদীর প্রেম হয়েছিলো মিমের সাথে। গার্লফ্রেন্ড ফোন করেছে, সে আমাদের সাথে কার্ড খেলছে।

"ভয়ংকর মাথাব্যাথা, কথা বলতে পারবো না","কালকে এক্সাম,পড়তেসি !!!" মিমের সাথে ডেটিং করার চেয়ে আমাদের সাথে টাইম কাটাতেই বেশী পছন্দ ছিলো তার। বেচারী ঝুলে ছিলো অনেকদিন, পরে বুঝতে পারলো এ ছেলের দ্বারা প্রেম হবে না.......পালিয়ে বাচলো। গ্যালাক্সীতে বসে বসে স্বগোক্তি করতো,"একটা মিম গেছে কিন্তু দশটা মিম আছে আমার সাথে", আমাদের দিকে আঙ্গুল তাক করে। আমরাও খুব বুঝদারের মতো মাথা নাড়তাম...!!!! ক্লাসে কপি করার এক অদ্ভূত ক্ষমতা ছিলো মেহেদীর!!!টিচার যতো কড়া ও ততোটাই পারদর্শী। একবার আমাদের বিপদে ফালানোর জন্য এলগরিদমের ক্লাস টেস্টে বই এর সবচেয়ে বড় এলগরিদমটা লিখতে দেয়া হলো......সবার নাম্বার আসলো ৪/৫, মেহেদী পেলো ২০ এ ১৮ !!! ফার্স্ট ইয়ারের এক একটা এক্সাম দিয়ে হল থেকে পাশা দাঁত কেলিয়ে কেলিয়ে বের হতো আর নাচতে নাচতে বলতো, "প্রুফ করতে দিছে ইম্রুভ রাইখা আইছি!!!" ফার্স্ট ইয়ারের ১১ টা সাবজেক্টের ৮ টাতেই ইম্প্রুভ রেখে আসছিলো পরের বার ভালোমতো পড়ে পরীক্ষা দিবে বলে।

৮টা তেই পয়সা খরচ করে ফরম ফিল আপ করেছিলো এবং বলাই বাহুল্য একটাও দেয় নাই। আমাদের বলতো তোরা ফার্স্ট ইয়ারের ইম্প্রুভ সেকেন্ড ইয়ারে দেস্‌, সেকেন্ড ইয়ারেরটা দিবি থার্ড ইয়ারে, এভাবে তো তোরা অনার্স ফাইনালের ইম্প্রুভ দিবি মাস্টার্সে পড়ার সময়। আজরাইলও তো তোদের কাছে প্রথমবার আইসা ইম্প্রুভ রাইখা চইলা যাইবো!!!! থার্ড ইয়ার ফাইনালের সময় ইশরাকের মাথায় চাপলো ফেইসবুক গেম "মব ওয়ার!!!" আমরা পড়ি একসাথে, ইশরাক নাই। খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, মব মারতে ব্যস্ত। এতটাই সিক্‌ হয়ে গিয়েছিলো যে ও রাতে একটানা ৩ ঘন্টার বেশী ঘুমাতো না।

ততক্ষণে অনেক মব এসে জমা হয়ে যাবে, মারতে না পারলে চলে যাবে, পয়েন্ট মিস !!!এলার্ম দিয়ে ঘুমাতো ৩ ঘন্টা করে করে!!!পিসি লগইন করাই থাকতো ২৪ ঘন্টা, এলার্ম বাজলে উঠে চোখ মুছে মব মেরে আবার ঘুম!!!!! যতো বাজে এবং ইন্টেলেকচুয়াল টাইপ মুভি ছিলো, সবগুলোর মুগ্দ্ধ দর্শক হতো ইশরাক। মাঝে মাঝে আমাদের ইন্টেলেকচুয়াল মুভির কাহিনী শোনাতে আসতো, আমাদের নিরুতসাহিতা দেখে বেচারা হতাশ হতো!!আমাদের স্বভাব হয়ে গিয়েছিলো কোনো মুভি দেখে মেজাজ খারাপ হলে বা না বুঝলে ইশরাকের জন্য রেখে দেয়া হতো!!! ফার্স্ট ইয়ারে এসে সবাই প্রোগরামিং নিয়ে ব্যস্ত, রিয়াদ ব্যস্ত কবিতা নিয়ে। তার প্রোগ্রামিং ভাল লাগে না। প্রোগরামিং থিওরীতেও ফার্স্ট ইয়ারে পেলো ১০০ তে ৩২। হুট করে কি হলো, সেকেন্ড ইয়ারে তার প্রোগ্রামিং ভাল লেগে গেলো!!!সব বাদ খালি প্রোগ্রামিং !!!এই রিয়াদ অনার্স শেষ করলো আমাদের ব্যাচের সেরা প্রোগ্রামার হিসেবে !!! ফার্স্ট ইয়ারে সেকেন্ড ক্লাস পাওয়া স্টুডেন্ড মাস্টার্স শেষে হলো থার্ড !!! ইউ এস এ যাবার ডিসিশন না নিলে হ্য়তো ডি ইউ র টিচারও হতে পারতো!!!! অনেকদিন সেই আড্ডা টা হয় না, মেহেদী আজাদ মাঝে মাঝে ওভারসীজ কল করে।

আজাদ মনে হয় না আর স্মোক করে, মনামী যে আছে সাথে !!!হলের পুকুর পাড়ে বসে আমাদের শোনানো ওয়ারফেজের "মনে পড়ে" গানটা হয়তো এখন মনামীই শোনে। রিয়াদ আর ইশরাক ব্যস্ত ইউ এস এ যাওয়া নিয়ে। মব মারার টাইম কই ?। গ্রামীনফোনের ডি,বি,এ আদনান এখন ৮ টায় অফিস ধরার জন্যে ৭টার মধ্যেই উঠে যায়, এলার্ম বাজুক আর না বাজুক। মেহেদী রাত জেগে ল্যাবে থিসিসের কাজ করে , নতুন কোনো মিমকে নিশ্চয় এখন ওর টাইম দিতে পারে.................. তোরা কেমন আছিস কে জানে আমি কিন্তু এখনও আছি সেই আগের মতোই .....অসুস্থ,সিক্‌ !!!! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.