আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে রোজা .........

আমি মুক্ত, আমি স্বাধীন। মুক্ত চিন্তা আমার ধর্ম। ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত কল্যাণকর, পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। তাই এতে স্বাস্থ্যনীতিও রয়েছে। দেহকে অযথা কষ্ট দেয়া ইসলামের বিধি নয়।

রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম। সকল সক্ষম ঈমানদারদের উপর আল্লাহ রমযানের একমাস রোজা ফরজ করেছেন। আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাহদেরকে নিছক কষ্ট দেয়ার জন্যে এটা ফরজ করেননি। তিনি এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘‘ওয়া আনতা সুউমু খাইরুল লাকুম ইন্কুনতুম তা'লামুন’’- অর্থাৎ- ‘‘তোমরা যদি রোজা রাখ তবে তাতে রয়েছে তোমাদের জন্য কল্যাণ, তোমরা যদি সেটা উপলব্ধি করতে পার। ’’ (সূরা বাকারাহ- ১৮৪) বস্তুত এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা রোজা পালনের নানাবিধ কল্যাণের প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন।

আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানীগণ গবেষণা করে উপরোক্ত আয়াতে সত্যতা প্রমাণ করেছেন। রোজার প্রায় সকল হুকুম আহকাম স্বাস্থ্যরক্ষার দিকে লক্ষ্য রেখেই করা হয়েছে। যেমন- শিশু ও অতিবৃদ্ধের জন্যে রোজা ফরজ নয়। সফরে ও অসুস্থ অবস্থায় রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে। ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় বেশি কষ্ট না পাওয়ার জন্যে সাহরীর ব্যবস্থা ইত্যাদি।

ইউরোপের ঘরে ঘরে ইদানীং রোজা করার হিড়িক পড়েছে। সবার মুখে এক কথা- শরীরটাকে ভালো রাখতে চাওতো রোজা কর। এ ধরনের চেতনা সৃষ্টির পিছনে সত্তর দশকে প্রকাশিত একটি বই বিশেষত: দায়ি। বইটি হচ্ছে প্রখ্যাত জার্মান চিকিৎসাবিদ ড. হেলমুট লুটজানার-এর The Secret of Successful Fasting অর্থাৎ উপবাসের গোপন রহস্য। বইটিতে মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গের গঠন ও কার্যপ্রণালী বিশ্লেষণ করে নিরোগ, দীর্ঘজীবী ও কর্মক্ষম স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হলে বছরের কতিপয় দিন উপবাসের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

ড. লুটজানারের মতে, খাবারের উপাদান থেকে সারাবছর ধরে মানুষের শরীরে জমে থাকা কতিপয় বিষাক্ত পদার্থ (টকসিন), চর্বি ও আবর্জনা থেকে মুক্তি পাবার একমাত্র সহজ ও স্বাভাবিক উপায় হচ্ছে উপবাস। উপবাসের ফলে শরীরের অভ্যন্তরে দহনের সৃষ্টি হয় এবং এর ফলে শরীরের ভিতর জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থসমূহ দগ্ধীভূত হয়ে যায়। উল্লেখ্য যে, ‘রমযান' শব্দটি আরবির ‘রমজ' ধাতু থেকে উৎপত্তি। এর অর্থ দহন করা, জ্বালিয়ে দেয়া ও পুড়িয়ে ফেলা। এভাবে ধ্বংস না হলে, ঐসব বিষাক্ত পদার্থ শরীরের রক্তচাপ, একজিমা, অন্ত্র ও পেটের পীড়া ইত্যাদি বিভিন্ন রোগব্যাধির জন্ম দেয়।

এছাড়াও উপবাস কিড্নী ও লিভারের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরে নতুন জীবনীশক্তি ও মনে সজীবতার অনুভূতি এনে দেয়। রোজা পালনের ফলে মানুষের শরীরে কোন ক্ষতি হয় না বরং অনেক কল্যাণ সাধিত হয়, তার বিবরণ কায়রো থেকে প্রকাশিত 'Science Calls for Fasting' গ্রন্থে পাওয়া যায়। পাশ্চাত্যের প্রখ্যাত চিকিৎসাবিদগণ একবাক্যে স্বীকার করেছেন, "The power and endurance of the body under fasting conditions are remarkable : After a fast properly taken the body is literally born afresh." অর্থাৎ রোজা রাখা অবস্থায় শরীরের ক্ষমতা ও সহ্যশক্তি উল্লেখযোগ্য : সঠিকভাবে রোজা পালনের পর শরীর প্রকৃতপক্ষে নতুন সজীবতা লাভ করে। রোজা একই সাথে দেহে রোগ প্রতিষেধক ও প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। রোজাব্রত পালনের ফলে দেহে রোগ জীবাণুবর্ধক জীর্ণ অন্ত্রগুলো ধ্বংস হয়, ইউরিক এসিড বাধাপ্রাপ্ত হয়।

দেহে ইউরিক এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে বিভিন্ন প্রকার নার্ভ সংক্রান্ত রোগ বেড়ে যায়। রোজাদারের শরীরের পানির পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার ফলে চর্মরোগ বৃদ্ধি পায় না। আধুনিক যুগের চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজার ব্যবহারিক তাৎপর্য উপলব্ধি করেই জার্মান, সুইজারল্যান্ড প্রভৃতি দেশে ব্যবস্থাপত্রে প্রতিবিধান হিসেবে এর উল্লেখ করা হচ্ছে। ডা. জুয়েলস এমডি বলেছেন, ‘‘যখনই একবেলা খাওয়া বন্ধ থাকে, তখনই দেহ সেই মুহূর্তটিকে রোগমুক্তির সাধনায় নিয়োজিত করে। ’’ ডক্টর ডিউই বলেছেন, ‘‘রোগজীর্ণ এবং রোগক্লিষ্ট মানুষটির পাকস্থলী হতে খাদ্যদ্রব্য সরিয়ে ফেল, দেখবে রুগ্ন মানুষটি উপবাস থাকছে না, সত্যিকাররূপে উপবাস থাকছে রোগটি।

’’ তাই একাদশ শতাব্দীর বিখ্যাত মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইবনে সিনা তার রোগীদের তিন সপ্তাহের জন্য উপবাস পালনের বিধান দিতেন। রমযান মাসে অন্যমাসের তুলনায় কম খাওয়া হয় এবং এই কম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে দীর্ঘজীবন লাভের জন্যে খাওয়ার প্রয়োজন বেশি নয়। কম ও পরিমিত খাওয়াই দীর্ঘজীবন লাভের চাবিকাঠি। বছরে একমাস রোজা রাখার ফলে শরীরের অনেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিশ্রাম ঘটে।

এটা অনেকটা শিল্প-কারখানায় মেশিনকে সময়মত বিশ্রাম দেয়ার মত। এতে মেশিনের আয়ুষ্কাল বাড়ে। মানবদেহের যন্ত্রপাতিরও এভাবে আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পায়। ডা. আলেক্স হেইগ বলেছেন, ‘‘রোজা হতে মানুষের মানসিক শক্তি এবং বিশেষ বিশেষ অনুভূতিগুলো উপকৃত হয়। স্মরণশক্তি বাড়ে, মনোসংযোগ ও যুক্তিশক্তি পরিবর্ধিত হয়।

প্রীতি, ভালোবাসা, সহানুভূতি, অতীন্দ্রিয় এবং আধ্যাত্মিক শক্তির উন্মেষ ঘটে। ঘ্রাণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি প্রভৃতি বেড়ে যায়। এটা খাদ্যে অরুচি ও অনিচ্ছা দূর করে। রোজা শরীরের রক্তের প্রধান পরিশোধক। রক্তের পরিশোধন এবং বিশুদ্ধি সাধন দ্বারা দেহ প্রকৃতপক্ষে জীবনীশক্তি লাভ করে।

যারা রুগ্ন তাদেরকেও আমি রোজা পালন করতে বলি। ’’ বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সিগমন্ড নারায়াড বলেন, ‘রোজা মনস্তাত্ত্বিক ও মস্তিষ্ক রোগ নির্মূল করে দেয়। মানবদেহের আবর্তন-বিবর্তন আছে। কিন্তু রোজাদার ব্যক্তির শরীর বারংবার বাহ্যিক চাপ গ্রহণ করার ক্ষমতা অর্জন করে। রোজাদার ব্যক্তি দৈহিক খিচুনী এবং মানসিক অস্থিরতার মুখোমুখি হয় না।

’’ প্রখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী ুটডতটঢঢণভ সাহেব মনের প্রগাঢ়তা ও বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশে রোজার ভূমিকা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘রোজার অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে কি পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করা হলো তার ওপর বুদ্ধিবৃত্তির কর্মক্ষমতা নির্ভর করে না। বরং কতিপয় বাধ্যবাধকতার উপরই তা নির্ভরশীল। একজন যত রোজা রাখে তার বুদ্ধি তত প্রখর হয়। ’’ ডাঃ এ, এম গ্রিমী বলেন, ‘‘রোজার সামগ্রিক প্রভাব মানব স্বাস্থ্যের উপর অটুটভাবে প্রতিফলিত হয়ে থাকে এবং রোজার মাধ্যমে শরীরের বিশেষ বিশেষ অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ’’ ডাঃ আর, ক্যাম ফোর্ডের মতে, ‘‘রোজা হচ্ছে পরিপাক শক্তির শ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী।

’’ ডাঃ বেন কিম তাঁর ’’এর্ট্রধভথ তমর দণটর্ফদ’’ প্রবন্ধে বেশ কিছু রোগের ক্ষেত্রে উপবাসকে চিকিৎসা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এরমধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ (হাঁপানী), শরীরের র‌্যাশ, দীর্ঘদিনের মাথাব্যথা, অন্ত্রনালীর প্রদাহ, ক্ষতিকর নয় এমন টিউমার ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে তিনি বলেন, উপবাসকালে শরীরের যেসব অংশে প্রদাহ জনিত ঘা হয়েছে তা পূরণ (Šণযটধর) এবং সুগঠিত হতে পর্যাপ্ত সময় পেয়ে থাকে। বিশেষত খাদ্যনালী পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাওয়াতে তার গায়ে ক্ষয়ে যাওয়া টিস্যু পুনরায় তৈরি হতে পারে। সাধারণত দেখা যায় টিস্যু তৈরি হতে না পারার কারণে অর্ধপাচ্য আমিষ খাদ্যনালী শোষণ করে দূরারোগ্য (ইর্লমধববলভণ ঢধ্রণট্রণ) সব ব্যাধির সৃষ্টি করে ডাঃ বেন কিম আরো বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন উপবাস কিভাবে দেহের সবতন্ত্রে (ওর্হ্রণব) স্বাভাবিকতা রক্ষা করে।

প্রখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ জন ফারম্যান ‘‘এর্ট্রধভথ টভঢ ঋর্টধভথ তমর দণটর্ফদ’’ প্রবন্ধে সুস্বাস্থ্য রক্ষায় উপবাস এবং খাবার গ্রহণের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে উপবাসের স্বপক্ষে মত দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষণীয় রমযানের রোজা রাখার সুফল পাওয়া যায় না মূলত খাদ্যাভ্যাস ও রুচির জন্য। বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক ডাঃ নূরুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘রোজা মানুষের দেহে কোন ক্ষতি করে না। ইসলামে এমন কোন বিধান নেই, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। গ্যাষ্ট্রিক ও আলসার এর রোগীদের রোজা নিয়ে যে ভীতি আছে তা ঠিক নয়।

কারণ রোজায় এসব রোগের কোন ক্ষতি হয় না বরং উপকার হয়। রমযান মানুষকে সংযমী ও নিয়মবদ্ধভাবে গড়ে তুলে। ১৯৫৮ইং সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ডাঃ গোলাম মুয়াযযম সাহেব কর্তৃক ‘‘মানব শরীরের উপর রোজার প্রভাব’’ সম্পর্কে যে গবেষণা চালানো হয়, তাতে প্রমাণিত হয় যে, রোযার দ্বারা মানব শরীরের কোন ক্ষতি হয় না। কেবল ওজন সামান্য কমে। তাও উল্লেখযোগ্য কিছুই নহে, বরং শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতে এরূপ রোজা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের খাদ্য নিয়ন্ত্রণ (ঊধর্ণ উমর্ভরমফ) অপেক্ষা বহুদিক দিয়েই শ্রেষ্ঠ।

১৯৬০ ইং সালে তার গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে, যারা মনে করে রোজা দ্বারা পেটের শূলবেদনা বেড়ে যায়, তাদের এ ধারণা নিতান্ত অবৈজ্ঞানিক। কারণ উপবাসে পাকস্থলীর এসিড কমে এবং খেলেই এটা বাড়ে। এ অতি সত্য কথাটা অনেক চিকিৎসকই চিন্তা না করে শূলবেদনার রোগীকে রোজা রাখতে নিষেধ করেন। ১৭ জন রোজাদারের পেটের রস পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, যাদের পাকস্থলীতে এসিড খুব বেশি বা খুব কম রোজার ফলে তাদের এ উভয় দোষই নিরাময় হয়েছে। এ গবেষণায় আরো প্রমাণিত হয় যে, যারা মনে করেন রোজা দ্বারা রক্তের পটাসিয়াম কমে যায় এবং তাতে শরীরের ক্ষতি সাধন হয়, তাদের এ ধারণাও অমূলক।

কারণ পটাসিয়াম কমার প্রতিক্রিয়া প্রথমে দেখা যায় হৃদপিন্ডের উপর অথচ ১১ জন রোজাদারের হৃদপিন্ড অত্যাধুনিক ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম যন্ত্রের সাহায্যে (রোজার পূর্বে ও রোজা রাখার ২৫ দিন পর) পরীক্ষা করে দেখা গেছে রোজা দ্বারা তাদের হৃদপিন্ডের ক্রিয়ার কোনই ব্যতিক্রম ঘটে নাই। সুতরাং বুঝা গেল যে, রোজার দ্বারা রক্তের যে পটাসিয়াম কমে তা অতি সামান্য এবং স্বাভাবিক সীমারেখার মধ্যে। তবে রোজা দ্বারা কোন কোন মানুষ কিছুটা খিট খিটে মেজাজী হয়। এর কারণ সামান্য রক্ত শর্করা কমে যায় যা স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেই ক্ষতিকর নয়। অন্য কোন সময় ক্ষিধে পেলেও এরূপ হয়ে থাকে।

রোজা থেকে শারীরিক ফায়দা লাভের জন্যে রোজাদারদের প্রতি ডাঃ আমীর আই, আহমদ আনকাহর কতিপয় মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন, সেগুলো নীচে দেয়া হলো ঃ ১. যদি আপনি বিত্তবান হোন তবে অধিক ভোজন ও চর্বিযুক্ত খাদ্য পরিহার করে চলুন। রোজা রেখে সুস্থ থাকুন- এ প্রতীক গ্রহণ করুন। ২. সহায় সম্বলহীন আপন ভাইকে সাহায্য করুন। ৩. রমযান মাস সম্পদশালীদের জন্যে নিবেশ আর গরীবদের জন্য ভালো খাবার মাস মনে করুন। ৪. দিনের বেলা ক্ষুৎপিপাসার তাড়না থেকে মুক্তি পেতে হলে রাতে অতিরিক্ত চিনি, লবণ ও চর্বিযুক্ত খাদ্য পরিহার করুন।

৫. খাদ্য ভালোভাবে চিবিয়ে খান। ৬. খাবার ব্যবস্থা করতে না পারলে শুধুমাত্র দুধের উপর নির্ভর করতে পারেন। ৭. যথাসম্ভব ইফতার তাড়াতাড়ি আর সেহেরী দেরীতে খাওয়া ভালো। ৮. সেহরী খেয়ে সটান না হয়ে বিনিদ্র রজনী যাপন করুন। তাতে খাদ্য ঠিকমত হজম হয়।

৯. ইফতারের পর চটপটি জাতীয় এবং ঠান্ডা জিনিস অধিক পরিমাণে গ্রহণ করবেন না। ১০. সারাদিন কাজে লিপ্ত থাকুন। ক্ষুৎপিপাসা ভুলতে চেষ্টা করবেন না। ১১. রমযান মাসে নেক কাজ ও ত্যাগ তিতিক্ষার যে অভ্যাস আপনার মাঝে সৃষ্টি হয়েছে, তা সবসময় চালু রাখুন। ১২. জীবনের চড়াই উৎরাই সবসময় রোজার দাবিকে সমুন্নত রাখুন।

১৩. কু-চিন্তা ও ধ্যান-ধারণা থেকে মুক্ত থাকুন। কুচিন্তা বিষসদৃশ যা স্বাস্থ্যকে ধ্বংস করে দেয়। কুচিন্তা ও কুধারণার উপশম না ওষুধে হয় না খাদ্যে। ১৪. মুসলমান নিজেদের জীবনে স্বল্পতুষ্টি, তাওয়াক্কুল শান্তি ও মনের সন্তুষ্টির মত বেশিষ্ট্যসমূহ বাস্তবায়িত করার মধ্য দিয়ে রমযানের বরকতের পর্যবেক্ষণ করবে। এর মধ্যেই সাহসের বিস্তৃতি ও মনের শান্তি এবং এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে মানুষের আরোগ্য লাভের গুপ্ত রহস্য।

১৫. রমযানের সিয়াম সাধনায় মুসলমান হবে স্বাস্থ্যবান এবং পুণ্য ও পবিত্র আত্মার অধিকারী। উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশের মানুষ ইফতার ও সাহরীতে সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ না করে মুখরোচক মশলাদার খাবার গ্রহণ করে। এতে পাকস্থলীর এসিডিটি, আলসার, বদহজম আরো বেড়ে যায়। তিরমিজি শরীফে এসেছে রাসূল (সা.) মাগরিবের নামাজের পূর্বে কয়েকটি তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। খেজুর না থাকলে কয়েক কোশ পানিই পান করতেন।

রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘‘যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে। কেন না এতে বরকত রয়েছে। যদি খেজুর না পায় তবে যেন পানি দ্বারা ইফতার করে। কারণ পানি হলো পবিত্রকারী। ' উপমহাদেশে ইফতারের রকমারি আয়োজন থাকলেও তাদের সারাবিশ্বের মুসলমানদের খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা উচিৎ।

সাধারণত পানি, খেজুর, মুড়ি, ফলের রস, চিড়ার পানি, (বা এ দ্বারা তৈরি খাবার), দুধ ইত্যাদি দিয়ে ইফতারের আয়োজন করা যেতে পারে। রমযানে দুই খাবার গ্রহণের মধ্যবর্তী সময় কম থাকায় পাকস্থলী গুরুপাক খাবার দিয়ে বোঝাই না করাই উত্তম। আসল বিষয় হলো রমযানের উদ্দেশ্য পূরণে রকমারি খাবার আয়োজন রোজার সুফলকে ম্লান করে দেয়। রোযা রাখার ব্যাপারে বিধি নিষেধ : রোযা রাখার ব্যাপারে আমরা মাঝে মাঝে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। এমন অনেক অসুস্থ্য ব্যক্তি আছেন যাদের রোযা রাখলে আরো অসুস্থ্য হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।

তাদের রোজা রাখার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা উচিৎ নয়। আবার ঠিক ততটা অসুস্থ্য নয় কিন্তু অসুস্থ্যতার উল্লেখ করে রাযা না রাখাও বৈধ নয়। কুরআনে রয়েছে, ‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রোগগ্রস্ত অথবা সফরে থাকে, সে যেন অন্য দিনসমূহে এই সংখ্যা পূর্ণ করে। (সূরা বাকারাহ) রাসূল (সা.) সফররত রোজাদারদেরকে কখনো কখনো তিরস্কার করেছেন। এক্ষেত্রে স্মরণ রাখা দরকার, প্রয়োজনীয় ও জরুরি ক্ষেত্রে সফর হলে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে।

শুধুমাত্র বেড়ানোর উদ্দেশ্যে এই নিয়ম গ্রহণযোগ্য নয়। বিশেষ কিছু রোগে যেমন-উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে রোজা রাখতে হবে। কেননা এসব এমন ধরনের অসুস্থতা যা সম্পূর্ণ আরোগ্য হয় না। ফলে রোগী রমযান ছাড়া অন্যসময় এসব রোজা পূর্ণ করতে পারে না। ডা. ফারাদেই আজিজি এবং ডা. শিয়াকোলা ডায়াবেটিস রোগীদের উপর এক বিশেষ জরিপ চালান।

সেখানে কিছু রোগীকে রোজা রাখার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয় এবং কিছু রোগীকে অনুৎসাহিক করা হয়। Šটবটঢটভ এর্ট্রধভথ টভঢ ঊধটঠর্ণণ্র বণফফর্ধল্র' এ শিারোনামে ওয়েব সাইটে তারা এ রোগীদের জন্য বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। যে সব ডায়াবেটিক রোগী ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীল নয় অর্থাৎ মুখে ওষুধ এবং পরিমিত খাদ্যাভ্যাস এবং শরীর চর্চা করে থাকেন তাদের রোজা রাখতে তেমন কোন অসুবিধা হয় না, এক্ষেত্রে সাহরীর কিছু সময় পূর্বে ওষুধ সেবন করতে হবে এবং ইফতারের তালিকায় শর্করা ও স্নেহ জাতীয়ত খাদ্যের পরিমাণ কম রাখতে হবে। এছাড়া তাদের নিয়মিত গ্লুকোজ পরীক্ষা করতে হবে যাতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার তারতম্য অস্বাভাবিক না হয়ে যায়। যে সব রোগী শুধুমাত্র ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীল অর্থাৎ এ ছাড়া অন্যকোন উপায়ে রক্তের চিনির মাত্র নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না তাদের খুবই সতর্কতার সাথে রোজা রাখতে হবে।

এসব রোগীর চিনির মাত্রা খুব নিচে নেমে গিয়ে রোগী শকে (ঔহযমথফহডণবধড ওদমডপ) চলে যেতে পারে। সেজন্য শকের যে সব লক্ষণ রয়েছে সেগুলো রোগীকে খুব সাবধানতার সাথে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যেমন-অনেক ঘামতে থাকা, অস্থিরতা অনুভব করা, মাথা ঘোরা, চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি। এসব রোগীর যেকোন সময় এধরনের সমস্যা হতে পারে বিধায় সবসময় ডায়াবেটিক রোগীর অঊ কার্ড বহন করতে হবে। নিয়মিত প্রস্রাব (খরধভণ ওলথণর) পরীক্ষা করা ও সব সময় একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে।

এইসব রোগীকে রোযা রাখতে উৎসাহিত করা হয় না। রোজা না রাখাই ভালো ঃ ১. শুধুমাত্র ইনসুলিন নির্ভরশীল রোগী। ২. খুব নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না (রক্তের গ্লুকোজ) এমন রোগীর (ূঅঊঊু টভঢ অঊঊু) ৩. যে সব ডায়াবেটিক রোগী অন্যকোন জটিল রোগে আক্রান্ত যেমন-বুকে ব্যথা (খর্ভ্রটঠফণ ইভথধভট) এবং অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ (খভডমর্ভরমফফণঢ ঔহযণর্রণভ্রধমভ) ৪. যাদের ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা রয়েছে যেমন-র্ণিম টডধঢম্রধ্র ৫. সন্তান সম্ভাবা ডায়াবেটিক মা। ৬. যাদের ডায়াবেটিসের সাথে ঘন ঘন ইনফেকশনের ইতিহাস রয়েছে (খরধভণ ধভতফণর্ডধমভ, Šণ্রযধরর্টমরহ র্রটর্ড ধভতটর্ডধমভ) ৭. এমন বয়স্ক রোগী যারা ডায়াবেটিসজনিত অসুস্থতা ব্যাখ্যা করতে পারেন না। ৮. রমযান মাসেই যদি দুই থেকে তিনবার রক্তে গ্লুকোজ মাত্রা খুব কম বা বেশি হয়ে থাকে (ঔহযমথফহডণবধট টভঢ ঔহযণরথফহডণবধট) অনেক রোগী রয়েছে যারা অধিক ওজন সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছে তারাও রোজা রাখার ক্ষেত্রে অনেক সাচ্ছন্দ্যবোধ করছে।

রমযান শুধু দৈহিক অসুস্থতাই নয়, যারা অনেকদিন ধরে মানসিক অবসন্নতা বা বিভিন্ন রকম দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত তাদের জন্যও চিকিৎসা হিসেবে কাজ করছে। এরকম একটি জরিপে দেখা গেছে রোজা রাখার কারণে যেসব রোগী তাদের কথাবার্তা এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম নিময়-শৃক্মখলার মাধ্যমে অতিবাহিত করেছে তাদের ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করা গেছে। কুরআনের প্রতিটি বিধানই মানব জাতির জন্যে কল্যাণকর। গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে রোজার মধ্যে প্রভূত কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে রমযানের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে শারীরিক সুস্থতা দান করুন।

মুল লেখা: অধ্যাপক রুহুল কুদ্দুস  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।