ওয়ান-ইলেভেনের জন্য জেনারেল মইনকে দায়ী করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান ফখরুদ্দীন ছিলেন ঠুঁটোজগন্নাথ। মইন উ আহমেদ পেছন থেকে সবকিছু করতেন। মইনের পেছনে ছিল কিছু বিদেশী শক্তি। আসলে মইন বিএনপি’র ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে জিয়াউর রহমান হতে চেয়েছিলেন। এজন্য বিএনপি’র কিছু বেঈমানও তার সঙ্গে যোগ দিয়েছিল।
যারা মুখে ‘মাইনাস টু’ এর কথা বলতো, আসলে তারা ‘মাইনাস ওয়ান’ ফর্মুলা বাস্তবায়ন করে বিএনপিকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল। বৃটেন সফররত খালেদা জিয়া রোববার রাতে সাউথ লন্ডন গ্রসভেনর হাউজ হোটেলে আয়োজিত বৃটেন বিএনপির কর্মী সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন। প্রায় ৫৫ মিনিটের বক্তব্যে খালেদা জিয়া দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মধ্যবর্তী নির্বাচন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, সীমান্ত সমস্যা, সংবিধানের সংশোধনী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বিচার বিভাগে দলীয়করণ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। এ সময় কানায় কানায় ভর্তি ছিল হোটেলের হল রুম। হলের বাইরেও কর্মী-সমর্থকদের ভিড় ছিল।
যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা এই সমাবেশে যোগ দেন। কর্মী সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেন, ফখরুদ্দীন ও মইনের ষড়যন্ত্রের ফসল হলো এই আওয়ামী লীগ সরকার। আওয়ামী লীগ নিজেরাই সেকথা স্বীকার করে নিয়েছে। কারণ, তারাই বলেছিল, ফখরুদ্দীন-মইন এর সরকার তাদের আন্দোলনের ফসল। আর ফখরুদ্দীন ও মইন উ আহমেদ নিজেদের পিঠের চামড়া বাঁচাতে নির্বাচন দিয়ে আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন।
২০০৮ সালের এই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। মইন উ আহমেদকে দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, সে সময় ব্যবসায়ীদের ধরে ধরে জেলে নেয়া হয়েছে আর তাদের উপর জুলুম চালিয়ে টাকা আদায় করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী বিচার হলে মইন উ আহমেদ এবং ফখরুদ্দীনের শাস্তি হবে। মইন উকে উদ্দেশ্য করে খালেদা জিয়া বলেন, দুর্নীতি না করলে দুই বার সংসদীয় কমিটি ডেকে পাঠালো, তাদের সামনে হাজির হচ্ছেন না কেন? দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন কেন? বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, মইন দেশে রাজনৈতিক দল গঠন করে প্রেসিডেন্ট হতে চেয়েছিলেন। এ জন্যই ‘জাগো বাংলাদেশ’ গঠন করা হয়েছিল।
তবে বেঈমানরা আল্লাহর তরফ থেকে যেমন কোন সহযোগিতা পায় না তেমনি জনগণের কাছ থেকে তারা কোন সহযোগিতা পায়নি। ফলে মইনের সেই খায়েশ পূর্ণ হয়নি। খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান সরকার বাকশাল কায়েম করতে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে একের পর বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। নিজেদের আন্দোলনের ফসল তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ সংশোধনের নামে সংবিধান তছনছ করছে। এমনকি দলীয়লোককে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করতে ষড়যন্ত্র করছে।
তবে কোন অবস্থাতেই দলীয় লোককে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মানা হবে না। এ জন্য বর্তমান সরকারের সকল অন্যায় ও অগণতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, আগামীতে নিজেদের অধীনেই নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করছে সরকার। তবে আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হতে হবে। অন্য কোন বিকল্প আমরা মেনে নেব না।
তারেক রহমান ও বিএনপির নেতাদের নামে দুর্নীতির অভিযোগকে মিথ্যা অভিহিত করে খালেদা জিয়া বলেন, বিদেশী সহযোগীদের মাধ্যমে গণমাধ্যমকে টাকা দিয়ে এসব প্রচারণা চালোনো হয়েছে বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য। অথচ সরকারের লোকজনই শেয়ারবাজার লুটে নিয়েছে। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। এজন্যই শেয়ার কেলেঙ্কারির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, দেশে মানুষ অনেক কষ্টে রয়েছে।
দেশে দুর্দিন চলছে। বিদেশে কর্মরত আমাদের হাজার হাজার শ্রমিক কর্ম হারিয়ে বাড়ি ফিরছে। কিন্তু সরকারের সেদিকে কোন নজর নেই। তাদের নজর প্রভুদের কিভাবে খুশি করে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় সেদিকে। খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি সবসময়ই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি।
যুদ্ধ করে, রক্ত দিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। যা সবাই শুনেছে। অন্যরা যতই দাবি করুক, আমরাই আসল স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি। খালেদা জিয়া বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের জরুরি অবস্থার সময় অনেকেই দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
তবে প্রবাসীরা সে সময় দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এর আগে লন্ডনের গ্রসভেনর হাউজ হলরুলে স্থানীয় সময় বিকাল চারটায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা) বৃটেন বিএনপির এ কর্মী সম্মেলন শুরু হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বেগম খালেদা জিয়াকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান বৃটেন বিএনপির নেতারা। বৃটেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিয়া মনিরুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, সাবিহউদ্দিন আহমেদ, আবদুল আওয়াল মিন্টু, মহিদুর রহমানসহ প্রবাসী নেতারা বক্তব্য রাখেন। তবে সমাবেশে খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠপুত্র ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান উপস্থিত ছিলেন না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।