নাজমুল ইসলাম মকবুল
ভেজাল খাদ্যে ভরছে দেশ
কিডনি লিভার হচ্ছে শেষ
নাজমুল ইসলাম মকবুল
আমাদের এ সোনার দেশে সোনার ফসল ফলে। কিন্তু এ সোনার ফসল পরবর্তীতে আর খাটি সোনার থাকেনা। এককালে মাঠ ভরা ফসল গোলা ভরা ধান গোয়াল ভরা গরু পুকুর ভরা মাছ নিয়ে আমাদের গর্বের অন্ত ছিলনা। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ কৃষকেরই গোয়ালে গরু নেই। সে জায়গা দখল করেছে ট্রাক্টর মাড়াইকলসহ ডিজিটাল মেশিনারিজ।
ফলে গরুর গোবর থেকে উৎপাদিত উন্নতমানের ও পরিবেশবান্ধব জৈবসারের পরিবর্তে কৃত্রিম রাসায়নিক সার ব্যবহার করে উর্বর কৃষি জমিগুলোকে তামা বানানো হচ্ছে। অধিক পরিমাণে রাসায়নিক সার ও কিটনাশক ব্যবহারের ফলে মাঠের ফসলেও যুক্ত হচ্ছে রাসায়নিক বিষ। এতে কৃষদের সাময়িক লাভ দেখা গেলেও জমিগুলো ভবিষ্যতের জন্য হচ্ছে চাষাবাদের অনুপযোগী। পরিবেশ হচ্ছে বিপন্ন এবং দেখা দিচ্ছে নানান ধরনের রোগ বালাই। সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে পুকুর দিঘী নদী নালা খাল বিল জলাশয় ভরাট করে অবৈধ ভুমিখেকো প্রভাবশালীরা তাদের দখল বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে বেপরোয়াভাবে।
অনেকেই দানবের মতো প্রতিযোগিতা করে পরিবেশ বিপন্ন করে চুটিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে রিয়েল এস্টেট নামক প্লট ও ফ্যাটের রমরমা বাণিজ্য। আন্তর্জাতিক আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র ভারত উজানে বিভিন্ন নদীর উৎসমুখে বাধ দেয়ার ফলেও বাংলাদেশের নদীগুলো ক্রমান্বয়ে ভরাট হয়ে ধু ধু মরুভুমিতে পরিণত হয়েছে। নদী নালা খাল বিল ভরাট হওয়ার ফলে আমাদের মুল্যবান মিঠাপানির অধিকাংশ প্রজাতির সুস্বাদু মাছ আজ বিলুপ্ত হয়ে গেলেও আমরা তা পুণরুদ্ধারে এগিয়ে আসার প্রয়োজন অনুধাবন করছিনা। একটু আধটু যা অবশিষ্ট আছে তাও কারেন্ট জাল দিয়ে ডিম বাচ্ছাসহ নিঃশ্বেষ করে দেয়ার মহোৎসব চলছে গত কয়েক বছর যাবত। কারেন্ট জাল বে-আইনী হলেও শহরাঞ্চলে পুলিশের নাকের ডগায় এর উৎপাদন ও বিপনন না হলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এসব কারেন্ট জাল কি আকাশ থেকে নাজিল হয়? দেশের প্রায় প্রতিটি বাজারে এমনকি থানার পার্শ্বের বাজারগুলোতেও খোলামেলাভাবে এর বিক্রয় হচ্ছে দেদারসে।
দেশে কারেন্টজালের শুভ মহরতের পর থেকে উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের হাটাচলা ডিম পোনা ছাড়া ইত্যাদি শান্তিপুর্ণভাবে ব্যাহত করার মহাগৌরব অর্জনে সাধ্যাতীত সহযোগিতা করে প্রশাষনের সংশ্লিষ্ট মহামহিম কর্তারা কারেন্ট জাল উৎপাদন ও বিপননকারীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা সসম্মানে বখরা হিসেবে হাতিয়ে নিয়ে ভুড়ি মোটা করেছেন ও করছেন বলে আশংকা করছেন পরিবেশবিদরা। মৎস সম্পদের আকালের ও আকাশচুম্বী দামের সুবাধে ব্যাপকভাবে বদ্ধ পানিতে মৎস চাষের প্রচলন হয়েছে দেশের সর্বত্র। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম খাবার প্রদান করে এসব মাছ কমদিনে বড়ো করার ফলে মাছের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায়না। কোন কোন ফার্মের মাছ মুখে নিলে বমির উদ্রেক হয় উদ্ভট গন্ধ করে। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী বিক্রয়ের জন্য মাছ ডাঙ্গায় তোলার পর কয়েকদিন তরতাজা রাখার অভিপ্রায়ে স্বাস্থ্যের জন্য চরম তিকর বিষাক্ত ফরমালিন মেশাতে তাদের বিবেকে একটুও নাড়া দেয়না।
আর এতে মাছের স্বাদতো পাওয়া দুরের কথা বরং এসব মাছ খেয়ে মানুষের কিডনি ও লিভার নষ্ট হয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ধাবিত হওয়া ছাড়া উপায় নেই। এছাড়া উৎপাদিত ফলমুল পাকানোর জন্য তিকর রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রন করে মুহুর্তেই ডিজিটাল সিস্টেমে তা পাকিয়ে আকর্ষনীয় করে চড়া দামে বাজারজাত করা হচ্ছে দেদারসে। ফলমুল ও তরি তরকারি শাক সবজি তাজা রাখার জন্যও রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার হচ্ছে বলে পত্র পত্রিকায় অহরহ সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। আমাদের দেশে গোয়াল ভরা গরু হাওয়া হয়ে যাবার আরেকটি কারন হচ্ছে ডিজিটাল সিস্টেমে গরু চুরি বৃদ্ধি পাওয়া। দিনে দুপুরে মাঠে ঘাস খাওয়ারত অবস্থায় গরু চুরি করে নিয়ে যাবার আতকে উঠার মতো খবর পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়।
রাত্রে শয়ন করে পাশের রুমে বড় বড় তালা দিয়েও গরুগুলোকে নিরাপদ রাখা যাচ্ছেনা। শান্তিপুর্ণভাবে চুরি করে নিয়ে বাংকারে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের মাধ্যমে আবার ফেরতও দিচ্ছে বীর পুরুষরা। সাথে বখরাও পাচ্ছেন অনেকেই। এভয়ে অনেকেই গরু পালনে ভরসা পাচ্ছেননা। ফলে বাজার থেকে রাসায়নিক বা ফরমালিনযুক্ত দুধ উচ্চমুল্যে কিনে দুধের সাথে বিষ গলধকরন করে কোমলমতি সোনামনিদের লিভার কিডনী চিরতরে শেষ করে দিচ্ছেন।
কোনটা ভেজার আর কোনটা ফ্রেশ তাও জানা সম্ভব হচ্ছেনা। অনেক হোটেল স্ন্যাক্সবারএ খাবার তৈরির স্থান ও ঘিঞ্জি পরিবেশ দেখলে সাথে সাথে শরিরের লোমকুপগুলো খাড়া হয়ে যায়, বমি আসার উপক্রম হয়। খাবার তৈরির সময় ভেজাল ও পুরনো বিষাক্ত তেলও ব্যবহার করা হয় অহরহ। আবার দই মিস্টি জিলাপী আমির্তি খাজা পোলাও পিয়াজু চটপটি চপ সস ইত্যাদিকে ক্রেতার সামনে লোভনীয় ও আকর্ষর্নীয় করে তুলতে ব্যবহার করা হয় এক ধরনের বিষাক্ত লাল রং। যা লিভার ও কিডনীর জন্য মারাত্মক তিকর।
ভ্রাম্যমান আদালত মাঝে মধ্যে অভিযান চালালে এসব ধরা পড়লেও সামান্য জরিমানা দিয়ে অপরাধীরা পার পেয়ে আবার পুরনো বুনিয়াদী কাজে লেগে যায়। অনেক ভুয়া কোম্পানীও জাল ভেজাল খাদ্র দ্রব্য ও ঔষদসামগ্রী উৎপাদনের সময় হাতে নাতে ধরা পড়ার সচিত্র প্রতিবেদন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় পেয়েও আমরা বিচলিত হইনা। কারন ভেজাল খেতে খেতে আমাদের পেট ভেজাল সহনীয় হয়ে গেছে। যারা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে মুনাফা হাতিয়ে নেয় তাদের ও তাদের সহযোগী এবং তাদের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের সর্বোচ্ছ শাস্তির ব্যবস্থা না থাকায় এসব দমন না হয়ে তা দিন দিন আশংকাজনকহারে বেড়েই চলেছে। ভবিষ্যতে আরও যে বাড়বেনা তারইবা নিশ্চয়তা কোথায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।