পাপ পূণ্যের কথা আমি কারে বা শুধাই
একদেশে যা পাপ গণ্য
অন্য দেশে পূণ্য তাই।
তিব্বত নিয়ম অনুসারে, এক নারী বহু পতি ধরে
এই দেশে তা হলে পরে
ব্যভিচারী দণ্ড হয়।
শুকর গরু দুইটি পশু, খাইতে বলেছেন যীশু
তবে কেন মুসলমান হিন্দু
পিছেতে হঠায়।
দেশ সমস্যা অনুসারে, ভিন্ন বিধান হতেও পারে
সূক্ষ্ণ জ্ঞানের বিচার করলে
পাপপূণ্যের নাই বালাই।
পাপ হলে ভবে আসি, পূণ্য হলে স্বর্গবাসী
লালন বলে নাম উর্বশী
নিত্য নিত্য তাঁর প্রমাণ পাই।
মোদ্দাকথা পাপ বলে কিছু নাই, এগুলো সামাজিক সংস্কার। আমাদের দেশের কথাতেই আছে, একদেশে যা বুলি, অন্যদেশে তা গালি। লালন যেমন উদাহরণ দিয়েছেন, তিব্বতে মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্হায় একজন নারীর চারজন পর্যন্ত স্বামী থাকতে পারে, অথচ একই কাজ বাংলাদেশে কোন নারী করলে তাকে মোল্লারা ফতোয়া দিয়ে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবে।
একইভাবে খ্রীস্টানরা গরু, শুকর দুইটাই খায়, কিন্তু মুসলমান, হিন্দু তাদের সাথে তাল মিলাতে পারছে না। শুকর খেলে মুসলমান পতিত হয়, আবার হিন্দুর গরু ভগবান,এ নিয়ে ইতিহাসে কতকিছু হয়ে গেল।
লালন বলেন, এসব বাহ্য,ধর্মের সাথে এদের কোন সম্পর্ক নেই। হিন্দুদের ব্যাপারটা নতুন, আগেও ভারতে গরুর মাংশ খেত,কিন্তু কৃষিভিত্তিক সমাজে গরু হল সম্পদ তাই চাষবাসের সুবিধার জন্য গরু নিধন বন্ধ করা হয়।
মুসলমানদের শুয়োরের মাংশ না খাওয়ার জন্য কোরানের নির্দেশ আছে (২:১৭৩), তবে বাধ্য বা নিরুপায় হলে খাওয়া যাবে। কিন্তু ঠিক কি জন্যে তা স্পষ্ট নয়, কারণ শুয়োরের মাংস খেয়ে দুনিয়ার অন্যসব জাতি বহাল তবিয়তে দীর্ঘায়ু নিয়ে বেঁচে থাকছে। খ্রীস্টান ধর্মের প্রসারের সময় সাধু পল দেখলেন শুয়োরের মাংস খাওয়া এপ্রুভ না করলে খাদ্য অপ্রতুল ইউরোপের ধর্মের পালে হাওয়া লাগবে না।
ফলে পল অথবা যীশুর অনুসারীরা শুয়োরের মাংস খেতে বাধা নেই, এতে আমরা আবারও ধর্মীয় বিধানে স্হানীয় কৃষ্টির প্রভাব দেখতে পাই।
দেশ সমস্যা অনুসারে বিধান বা নিয়ম ভিন্ন হতে পারে। এটা মেনে নিলে আজকের দুনিয়ায় উদ্ভূত অনেক সমস্যার নিজে থেকে সমাধান হয়ে যায়। যারা দেশের বাইরে থাকেন তারা জানেন নতুন সমাজে প্রতিনিয়ত তাদের সামাজিক, ধর্মীয় আচরণ কিভাবে মানিয়ে নিতে হয়।
সূক্ষভাবে বিচার করতে গেলে সর্বজনীন পাপের কোন সংজ্ঞা দেয়া যায় না।
পাপ কি ? কার কাছে পাপ ? উর্দু একটা শের মনে পড়ল যার মানে হল, "ও কোনজন যার পূণ্য করার ফুরসত মিলে, আমি তো পাপ করেই শেষ করতে পারলাম না"।
পাপ করলে আমরা দুনিয়ায় আসি আদমের পাপে আমরা পৃথিবীতে, আবার পূণ্য করলে আমার স্বর্গলাভ হয়। স্বর্গ-নরক রুপকে আত্মিক শান্তি বা অশান্তি বুঝায়, এর অবস্হান এ দুনিয়াতেই টের পাওয়া যায়। 'লালন বলে নাম উর্বশী নিত্য নিত্য তাঁর প্রমাণ পাই', অর্থাৎ পাপের অনুভূতি থাকলে দুনিয়াতে আমাদের নরকবাস হয়, অপরদিকে অপাপবিদ্ধ শরীরে স্বর্গীয় সৌন্দর্যের যে অনুভূতি হয় তার নাম 'উর্বশী'।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।