ফকির লালন শাহের যথাযথ মূল্যায়ন দুই বাংলার কোথাও তেমন হয়নি। আমাদের পরম সৌভাগ্য লালন ফকির বাংলায় এসেছিলেন, কিন্তু একথা ভুলে গেলে চলবে না, লালনের আবির্ভাব বাংলায় হলেও তিনি আসলে বিশ্বজনীন। নতুনভাবে লালনকে নিয়ে তাই অনেক গবেষণা হবে, হচ্ছে এবং হওয়া উচিত। ইত্যবসরে জনপ্রিয় লালনগীতি থেকে আমরা লালনের দর্শন বুঝার চেষ্টা করতে পারি।
সবার আগে লালনের প্রবর্ত্যদেশের গান 'ও যার আপন খবর আপনার হয় না ' দিয়ে শুরু করা যাক।
ছোটবেলায় রেডিওতে আব্দুল আলীমের কন্ঠে এ গানটা এত শুনেছি কখনও লিরিকস খেয়াল করিনি।
ও যার আপন খবর আপনার হয় না
একবার আপনারে চিনতে পারলে যে,
যাবে অচেনারে চেনা। ।
সাঁই নিকট থেকে দূরে দেখায়,
যেমন কেঁশের আড়ে পাহাড় লুকায় দেখ না
আমি ঘুরে এলাম সারা জগৎ রে,
আমার মনের ঘোর তো যায় না। ।
আত্মরূপে কর্তা হরি,
মনে নিষ্ঠা হলে মিলবে তার ঠিকানা
ও তুই বেদ - বেদান্ত, পড়বি যত রে,
ও তোর বাড়বে তত লগ্না। ।
আমি আমি কে বলে মন,
যে জানে তার চরণ শরণ লও না
ফকির লালন বলে মনের ঘোরে রে,
হলাম চোখ থাকিতে কানা। ।
ও সে অমৃত সাগরের সুধা,
সুধা খাইলে জীবের ক্ষুধা তৃষ্ণা হয় না
ফকির লালন মরল জল পিপাসায় রে,
কাছে থাকতে নদী মেঘনা।
।
সক্রেটিসের মত ফকির লালনও নিজেকে জানার উপর জোর দিয়েছেন, কারণ নিজেকে জানলেই তবে অজানাকে অচেনাকে জানা যায়। আমাদের জানার বৃত্তে প্রচলিত কথার বিপরীতে আসলে জ্ঞানেরই সীমা আছে, অজ্ঞানতার কোন সীমা-পরিসীমা নেই।
এ অজান জগতের হদিস আমাদের খুবই নিকটে। আমাদের অভ্যন্তরীণ সত্তা যার অবস্হান আমাদের মস্তিষ্কে সেখানেই সাঁইয়ের অধীষ্ঠান।
লালন তাই রুপকের মাধ্যমে বলছেন, ' যেমন কেশের আড়ে পাহাড় লুকায় দেখ না'। কিন্তু না বুঝে, মনের ঘোরে আমরা তাঁকে পাহাড়ে-পর্বতে, নদী-নালায়, চরাচরে অর্থাৎ বাইরে খুঁজে বেড়াই।
লালনের মতে আত্মরুপে কর্তা ভজলে তবে তাকে জানা যায়, তাঁকে খুজতে বেদ-বেদান্ত পড়ে শুধু সময় নষ্ট। এই যে আমরা 'আমি', 'আমি' বলছি, এ আমিটা কে? তা যদি জানা না থাকে তবে মানুষ গুরুর শরণাপন্ন হওয়া যেতে পারে।
এ রসের সুধা পান করলে মানুষের মন জৈবিকভূমি থেকে উর্ধ্বে আরোহন করে ফলে ক্ষুধা-তৃষ্ণার নিবারণ হয়।
মনের মানুষের সাথে মিলন পিয়াসী মনের আকুল তিয়াসা থেকে লালনের আক্ষেপ,'ফকির লালন মরল জল পিপাসায় রে, কাছে থাকতে নদী মেঘনা'।
ইংরেজিতে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।