আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লালনগীতি: আগে জানলে তোর ভাঙা নৌকায় চড়তাম না।



সবার আগে গানটা লিখি, গুগলে সার্চ দিলে দেখায় বিএনপির মির্জা সাহেব কোন মিটিংয়ে রাজনৈতিক বাগাড়ম্বরের অংশ হিসেবে এ গানের প্রথম লাইনটা কোট করেছেন সে খবর। এতটুকু পড়েই যারা এখুনি ঐ খবরের পেছনে ছুটবেন, তাদের জন্য এই যে লিন্ক । আগে জানলে তোর ভাঙ্গা নৌকায় চড়তাম না। ওরে দূরদেশে পাড়ি ধরতাম না । ।

ছিলো সোনার দাঁড় একখানা পবনের বৈঠা ময়ুরপঙ্খী নাওখানা গলুইতে ছিলো ফুল তোলা গহনা চন্দ্র-সূর্য তার জোস্না। । ছমছম কলকল দরিয়াতে ওঠে ঢেউ ঐ মাতঙ্গ তুফান দেখে কেউ দিও না পাড়ি কারণ্য দরিয়ায় নাও ডুবিলে উপায় কি জানো না । । একটা ছিদ্র ছিলো বুঝি নায়ের মাঝখানে ওঠলো পানি ভরে নায়ে তুফানে তুফানে যদি যেতো জানা নায়ের ছিদ্র আছে গোপনে লালন বলে তা হলে নায়ে চড়তাম না।

। খুবই জনপ্রিয় এ গান রুনা লায়লা, ফেরদৌসী মজুমদার এরা গেয়েছেন তবে আমার কাছে আব্বাস উদ্দিনের গাওয়াটা ভাল লাগে। উদ্দীন বলে ফেভারিটিজম না ! লিরিক যে কোনটা সঠিক, ইউটিউবে দেখা যায় এটি পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের সংগৃহীত গান, সেখানে লালনের নাম নেই। গানে 'কইরা', 'ধইরা', 'ও আমার দরদী' ধুয়া তোলা শব্দ হয়ত বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে, লবঙ্গ লতিকা দেশটাও ফোকেরই ইঙ্গিত দেয়। সেক্ষেত্রেও ভাবের দিক দিয়ে গানের কোন অমিল নেই, লিরিকেও অসম্ভব মিল, তাই আসল কথায় আসি।

এসব নৌকা ফৌকা কিছু না, দেহটাই এখানে নৌকা। কোন অচিনদেশ থেকে এ শরীর রুপ নৌকায় ভর করে আমরা সবাই ভবের সাগর পার হচ্ছি। লালনের ভাষায় সোনার দাঁড় হল আমাদের মেরুদন্ড, পবনের বৈঠা অর্থাৎ বাতাসে এ নৌকা চলে, বাতাস ছাড়া আমরা বেঁচে থাকতে পারি না। ময়ুরপঙ্খী নাওয়ের মত, নৌকার আগাতে মানে মানুষের মাথাতেই সব সৌন্দর্য, কারুকার্য। গলুইতে ফুলতোলা গহনা, চন্দ্র-সূর্য, আর টলটলে জোস্না আসলে এ নৌকা বয়ে যাবার পেছনে যে উদ্দীপনা, জীবনীশক্তি দরকার , শরীরের জননেন্দ্রিয়াঞ্চলে এর আধার।

এরকম অবস্হায় ভবপারাপারের এই ঘাটে দাঁড়িয়ে তুফানের বহর দেখে লালন আমাদের সাবধান হতে বলছেন, কারণ তরী ডুবলে উপায় কি হবে তা কারো জানা নেই। খুব সহজ কথাবার্তার এ গানটি লালনের 'সাধক' পর্যায়ের গান, ফলে এরকম গানে আধ্যাত্মিক মান-অভিমানের পালা দেখা যায়। লালন অনুযোগ করছেন, নায়ের মাঝখানে একটা ছিদ্র ছিল, তাই তো তুফানে পানি ওঠে, আগে যদি জানতাম ব্যবস্হা করা আছে, তাহলে দয়াল তোর নৌকায় চড়তাম না। বাস্তবিকই মানুষের শরীরের আগাগোড়া শক্ত কিন্তু মাঝখানটাই দূর্বল, মাঝখানের এ ছিদ্র ভরাট করতেই মানুষের দেহ নৌকা ডুবে যাচ্ছে।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৪০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।