নাজমুল ইসলাম মকবুল
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ : বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় সরকার ব্যর্থ : মাহমুদুর রহমানের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে
বর্তমান সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। র্যাব এবং পুলিশ সদস্যরা অযৌক্তিকভাবে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের আটক করছে। আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর চালানো হয়েছে নির্মম নির্যাতন। বাংলাদেশে নারীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ নানা ধরনের সহিংসতা চলছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
গতকাল লন্ডনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ‘দি স্টেট অব দি ওয়ার্ল্ডস হিউম্যান রাইটস’ শীর্ষক এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।
রিপোর্টে এশিয়া প্যাসিফিক চ্যাপ্টারে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে বলা হয়, সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের হিসাব অনুযায়ী ২০১০ সালের প্রথম ১০ মাসে র্যাব এবং পুলিশের হাতে ৬০ জনেরও বেশি মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যার উদাহরণ দিয়ে রিপোর্টে বলা হয়, গত জুলাই মাসে কুষ্টিয়া জেলার কোনাবাড়িয়া গ্রামের আবদুল আলীমকে পুলিশ সবার সামনে আটক করে। পরের দিন সকালে তার গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ পাওয়া যায়।
পরে পুলিশ দাবি করে আবদুল আলীমকে গ্রেফতার করতে গেলে সে প্রতিরোধ করে এবং নিহত হয়। আলীমের পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সুবিচার পাওয়া যায়নি।
বন্দি নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে রিপোর্টে বলা হয়, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গত বছর ২ জুন আটক করা হয় এই অভিযোগ এনে যে, তিনি বৈধ লাইসেন্স ছাড়া পত্রিকা চালাচ্ছেন। আটক অবস্থায় মাহমুদুর রহমানকে পুলিশ নির্মমভাবে প্রহার করেছে। মাহমুদুর রহমান আদালতে তার ওপর চালানো নির্যাতনের বর্ণনা দেন।
রিপোর্টে বলা হয়, আটক অবস্থায় নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনে গত বছর অন্তত ৬ জন মারা গেছে। এসব ঘটনা নিয়ে পুলিশি তদন্ত হলেও এখন পর্যন্ত দায়ীদের কাউকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি। আটক অবস্থায় গর্ভবতী গার্মেন্ট শ্রমিকরাও নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন থেকে রক্ষা পায়নি বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে।
মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের প্রসঙ্গ তুলে ধরে রিপোর্টে বলা হয়, র্যাব এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর বেপরোয়া শক্তি প্রয়োগ করছে। তারা বিএনপি নেতা এবং সাবেক মেয়র মির্জা আব্বাসের বাড়িতে হরতালের আগের রাতে হামলা চালায়।
ওই হামলায় অন্তত ২০ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল নারী।
অযৌক্তিকভাবে গ্রেফতার এবং ডিটেনশনের কথা উল্লেখ করে অ্যামনেস্টির রিপোর্টে বলা হয়, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন রাজনৈতিক ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনকালে দেড় হাজারের বেশি মানুষকে নির্বিচারে আটক করে। ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিল এবং বিভিন্ন সমাবেশ থেকে তাদের আটক করা হয়। এদের অনেকের বিরুদ্ধে আনা হয় ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ।
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাঝে ছাত্রশিবিরের অন্তত ৩০০ সদস্যকে আটক করা হয়। জুন মাসে বিএনপির ২০ নেতাসহ আটক করা হয় ২০০ জনকে।
যুদ্ধপরাধের বিচার প্রসঙ্গে রিপোর্টে বলা হয়, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের জন্য বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে। সরকার বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মো. কামারুজ্জামান এবং আবদুল কাদের মোল্লাকে গ্রেফতার করে তাদের এখন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত বলে দেখানো হচ্ছে। তবে তাদের গ্রেফতার করা হয় অন্য অভিযোগে।
মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের জন্য যুদ্ধাপরাধ বিচার আইন ১৯৭৩ গত ২০০৯ সালে সংশোধন করা হয়েছে। বিদ্যমান এই আইনে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি রয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্র তুলে ধরে রিপোর্টে বল হয়, নারীর প্রতি সহিংসতার ৭ হাজার ২৮৫টি অভিযোগ পুলিশের কাছে এসেছে ২০১০ সালের প্রথম ৬ মাসে। এর মধ্যে ধর্ষণের অভিযোগ ছিল ১ হাজার ৫৮৬টি।
সুত্রঃ আমার দেশ
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।