আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যাযাবরনামা... চতুর্থ পর্ব!

মুন রিভার ...
হাওয়াই মিঠাই দিন-রাত-দিন... তারপরের সময়গুলো রঙের পসরা সাজিয়ে আমার সারা আকাশ জুড়ে মেঘে মেঘে ঘুরে বেড়ায় । সিঙ্গাপুর আমার কাছে আরো বর্ণিল হয়ে ধরা দেয়। দেখতে দেখতে আমার এক সেমিস্টার শেষ হয়ে যায়। সময় আসে ভ্যাকেসন এ বাড়ি ফিরে আসার। মন পরে থাকে ইস্ট কোস্টে।

মন পরে থাকে মনের সাগর বাড়িতে। মন পড়ে থাকে একসাথে বসে একসাথে দেখা রাতের জাহাজ মাস্তুলে... ভালোবাসার মানেটা কি... ঢাকায় ফিরে এসে সবার সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগে খুব। কিন্তু এক-দু দিন পরেই লিয়েন-কে খুব মিস করতে থাকি। বন্ধুদের আড্ডায় কিংবা ছোটো আপা, কাজিনদের সাথে গল্প-তর্কে হঠাৎ হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়ে পড়ি। ১৫ দিনের ছুটি শেষ হতেই সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স এ উঠে বসি।

তখনও একজনকে ছোট্ট একটা কথা বলা বাকি আমার! পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর বাক্যটা বলি আমি লিয়েন কে ফিরে ফিরেই। তারপর দুজন ঘুড়ে বেড়াই, ঘুড়ে বেড়াই, ঘুড়ে বেড়াই... সময়গুলো সব আনন্দ তখন। কোথাও কোনো বিষাদ নেই, দুঃখ নেই। নিয়ম করে অনিয়ম পড়াশোনায়, অনিয়ম ঘুম থেকে ওঠায়, অনিয়ম বিয়ার খেতে বসে আর না ওঠায়! সবটাতেই আনন্দ। লিয়েন রাশ টেনে ধরে একসময়।

রীতিমত শাসন যাকে বলে। আমার বোহেমিয়ান জীবন খানিক নিয়ন্ত্রনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। আসলে ওঠে না। আমি টের পাই অদ্ভুত এক শুণ্যতা আমাকে মাঝে মাঝেই কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। বহুদিন লিখিনা।

মনে পড়ে আর কিচ্ছু না করে শুধু গান লিখবো বলে আমি নগরের ধারাপাত ভুলে, সমাজের সিড়িভাঙ্গা নিয়ম মেনে মানুষ হবার অদ্ভুতুড়ে পাঠশালা ছেড়ে চলে এসেছিলাম আমার আপন জগতে। মনে পড়ে আমি কারো জন্য মন খারাপের কথা লিখেছিলাম। হাতের উপর হাতের পরশ রবে না... দেখতে দেখতে আমাদের দুজনের আরেক সেমিস্টার শেষ হয়ে যায়। দেশে ফেরার সময় চলে আসে। অন্য কোনো দেশে একসাথে যাবো বলে আমরা আ্যপ্লিকেশন করি।

অফার লেটার ও চলে আসে। এই আনন্দে আমরা ঘুড়ে বেড়াই পুলা উবিন আইল্যান্ড, স্যান্টোসা, আরো কোথায় কোথায়! তারপর কু ঝিঁক ঝিঁক ট্রেনে চলে দুজন ঘুড়তে চলে যাই মালয়শিয়া-তে। কুয়ালালামপুর হয়ে চলে যাই বহুদুরের পথ পেনাং! কি যে সুন্দর পেনাং। ততদিনে আমরা সমুদ্র সন্তান হয়ে গেছি যেনো। পেনাং এ যেয়েও খুঁজে পেতে একটা হোটেল এ উঠে দেখি তার সাথে লাগোয়া সমুদ্র আর বিশাল জলরাশির অপার্থিব শান্ত সন্ধ্যা।

পেনাং এর রাস্তায় রাস্তায় দুই দেশের দুই পর্যটক হাত ধরে হেটে বেড়ায়। আর দুজনই জানে, ' হাতের উপর হাতের পরশ রবে না'... ফিরে এসে দেখি রেজাল্ট হয়ে গেছে। কোর্স শেষ। স্টুডেন্ট ভিসার মেয়াদ ও শেষের পথে। সময় আছে মোটে ১৫ দিন হাতে।

দুজনই বলি আবার দেখা হবে, কিন্তু দুজনই জানি দেখা হবে না আর কোনোদিনও, কোনোখানে... হু হু করে ওঠে বুক! ভালোবাসার তীব্রতা আমাকে এলোমেলো করে দেয়। খুব কাছে চলে আসে চলে যাওয়ার দিন। ঠিক হয়, লিয়েন যেদিন যাবে তারপরদিন-ই আমি চলে যাবো। তারপর একদিন লিয়েন চলে যায়.... শেষ রাতের চেনা পথ, চেনা সুর, চেনা সুদুর... সে রাতের বিষাদ আসলে লিখে বোঝানো মুশকিল। সন্ধে হতেই আমি পথে নেমে হাটঁথে থাকি।

কোথায় যাচ্ছি, কেনো যাচ্ছি কিচ্ছু জানি না। হাটঁথে হাটঁথে চোখ মেলে দেখি গ্যালাং এর কাছে পৌঁছে গেছি। ক্লান্ত আর বিধ্ধস্ত হয়ে এক পানশালায় ঢুকে পড়ি। তারপর একটা সাদা কাগজ পেয়ে লেখা শুরু করি শঙ্খ ভালোবাসা গানটা। পরদিন আমি ঢাকায় ফিরে আসি।

পরবর্তি ছয় মাস আমার জীবনের সবচেয়ে ক্লান্তিকর আর ডিপ্রেসড ছয় মাস হয়। আমি লিখতে ভুলে যাই, হাসতে ভুলে যাই। আমি ভুলে যাই আয়নার চেনা আমিকেও... ক্রমশঃ পুনশ্চ - যাযাবরনামা লিখতে খুব ক্লান্ত লাগছে। কেনো যেনো মনে হচ্ছে ব্লগার বন্ধুরাও পড়ে ক্লান্ত খানিক! গানটা দিলাম এই পোস্ট-এ। আমার খুব প্রিয় একটা গান শঙ্খ ভালোবাসা, খুব! যারা শুনেন নি তারা শুনে দেখতে পারেন।

ভালো থাকুন সবাই। আনন্দে থাকুন, মঙ্গলে থাকুন। প্রার্থনা করি, রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে তার সুশীতল ছায়াতলে রাখুন।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।