আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অবসান হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম নির্বাচিত সমাজতান্ত্রিক শাসন

ইতিহাসের পেছনে ছুটি তার ভেতরটা দেখবার আশায়

লালদুর্গ হিসাবে পরিচিত পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে বামফ্রন্টের। ভূমিধস জয় পেয়েছে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট। বিধানসভা নির্বাচনের ২৯৪টি আসনের মধ্যে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট পেয়েছে ২২৬টি। মাত্র ৬২টি আসনে জয়লাভ করেছে ক্ষমতাসীন বামফ্রন্ট।

অন্যান্য দল পেয়েছে ৬টি আসন। দল হিসাবে তৃণমূল ১৮৫, কংগ্রেস ৪১, সিপিএম ৪০, এআইএফবি ১১, আরএসপি ৭ এবং অন্যান্য দল ১০টি আসনে জয়লাভ করে। এদিকে নিজ আসনে হেরে গেছেন মূখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নিজেই। মূখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগেরও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। অবশ্য পরবর্তী মূখ্যমন্ত্রী দায়িত্ব না নেয়া পর্যন্ত বুদ্ধদেবকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাজ্যপাল।

লালদুর্গের পতন: পশ্চিমবঙ্গে লালদুর্গের পতন হয়েছে। অবসান হয়েছে ৩৪ বছরের বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম নির্বাচিত সমাজতান্ত্রিক শাসন। বিধানসভা নির্বাচনে ভূমিধস পরাজয়ের মুখোমুখি হয়েছে বামফ্রন্ট। ২৯৪টি আসনের মধ্যে মাত্র ৬২টি আসন লাভ করেছে ক্ষমতাসীনরা। ১৯৭৭ সাল থেকে সমাজতান্ত্রিক দলগুলো পশ্চিমবঙ্গ শাসন করে আসছিল।

কিন্তু অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে পড়েছে জনগণের এমন ধারণা থেকে বামফ্রন্টের এই ভরাডুবি হয়। এছাড়া দীর্ঘ ৩৪ বছরের সমাজতান্ত্রিক শাসনের বিকল্প চেয়ে আসছিল পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। সিঙ্গুর, নন্দিগ্রাম ও রেজওয়ান হত্যাকাণ্ডের মতো বিষয়কে এর জন্য দায়ী করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। হারলেন বুদ্ধদেব, মূখ্যমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ: নিজ আসনে হেরে গেছে মূখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বুদ্ধদেব যাদবপুর আসনে তৃণমূল প্রার্থী মনীশ গুপ্তের কাছে ১৬ হাজার ৭৭৭ ভোটে পরাজিত হন।

বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনের ফলাফলকে পরিবর্তনের বড় ধরনের ইঙ্গিত বলে বর্ণনা করে গণমাধ্যমগুলো। এরআগে শুক্রবার দুপুরের দিকে দলের পরাজয় স্পষ্ট হয়ে উঠলে মূখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। অবশ্য পরবর্তী মূখ্যমন্ত্রী দায়িত্ব না নেয়া পর্যন্ত বুদ্ধদেবকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাজ্যপাল। তিনি হলেন পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী যিনি বিধানসভা নির্বাচনে হেরে গেলেন। এর আগে ১৯৬৭ সালে মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল চন্দ্র সেন বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যান।

বুদ্ধদেবের মতো হারতে হয়েছে শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন, অর্থমন্ত্রী অশোক দাশগুপ্ত, গৃহায়ণ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব ও পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য সহ অনেক মন্ত্রীকে। তৃণমূলের পরিবর্তনের ডাকে জনগণের সাড়া: পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট। ২৯৪ আসনের মধ্যে ২২৬ আসনে জয়লাভ করেছে তৃণমূল-কংগ্রেস। এরমধ্যে তৃণমূল ১৮৫টি এবং কংগ্রেস ৪১টি আসন পেয়েছে। মূলতঃ তৃণমূলের পরিবর্তনের ডাকে সাড়া দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ।

একঘেঁয়ে বাম শাসনের পরিবর্তন চেয়েছিল তারা। এছাড়া তৃণমূল-কংগ্রেস জোটও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। একইসঙ্গে সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্তের খেসারত দিতে হয়েছে বামফ্রন্টকে। পরবর্তী মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি: পশ্চিমবঙ্গের পরবর্তী মূখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী ও কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মমতার মা,মাটি ও মানুষের তৃণমূল নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে।

দলের এই জয়কে গণতন্ত্র ও মানুষের জয় বলে আখ্যায়িত করেছেন তৃণমূল নেত্রী। এই জয়কে মানুষ ও মাতৃভূমির জয় মন্তব্য করে তিনি দলের সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। মূখ্যমন্ত্রী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে মমতা বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ পরিবর্তন চেয়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে দীর্ঘ একনায়ক শাসনের অবসান হয়েছে। মমতার বাড়ির সামনে তৃণমূলের আনন্দ-উচ্ছ্বাস: এদিকে তৃণমূলের জয়ের খবর আসতে শুরু করলে মমতা ব্যানার্জির হরিশ চ্যাটার্জির স্ট্রিটের বাসভবনে দলের নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে শুরু করে।

তারা বাসার সামনে আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে থাকে। বিজয় উদ্‌যাপনে তৃণমূলের নারী কর্মীরা দলের দলীয় প্রতীক ‘জোড়া ঘাসফুল’ খচিত শাড়ি পরে উৎসবে যোগ দেন। এ সময় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা দলীয় পতাকা নেড়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে থাকেন। এরআগে বিগত লোকসভা নির্বাচনে জয়ের পর এমন আনন্দ করেছিল তৃণমূল। সিপিএম কার্যালয়ে শোকের আবহ: তৃণমূলের আনন্দ-উচ্ছ্বাসের বিপরীতে সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থান বামফ্রন্টের।

বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর শোকের আবহ বিরাজ করছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। এই ফলাফল ছিল বাম নেতাদের কাছে অপ্রত্যাশিত। বাম নেতারা এই ফলাফলকে অপ্রত্যাশিত মন্তব্য করলেও জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন তারা। নেতারা জানান, তার ফল বিপর্যয়ের কারণ পর্যালোচনা করবেন। ফ্রন্টের নেতারা শিগগিরই বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন।

ফলাফল পরবর্তী পশ্চিমবঙ্গ: এদিকে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর পশ্চিমবঙ্গে নেচে-গেয়ে আনন্দ প্রকাশ করতে থাকে তৃণমূল-কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। সাধারণ মানুষও এই জয়কে স্বাগত জানিয়েছে। এই পরিবর্তনকে ‘প্রয়োজনীয় ও ইতিবাচক’ বলে মন্তব্য করেন পশ্চিমবঙ্গের জনগণ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।