আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এসইসির সদস্যকে পদত্যাগ করানোর অভিনব পদ্ধতি।

জানতে ভালোবাসি,...তাই প্রশ্ন করি...

আহা!! কি (ডিজিটাল)সুশাসন চলছে আমার এই বাংলায়। প্রধানমন্ত্রী দেশে ছিলেন না, অর্থমন্ত্রীও না। এ সময় নাটকীয় কায়দায় ভয়ভীতি দেখিয়ে পদত্যাগ করানোর নতুন নজির স্থাপন করা হলো। আর এই ঘটনা ঘটেছে গত ৯ মে। ওই দিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) সদস্য ইয়াছিন আলী পদত্যাগ করেন।

হঠাৎ করে দুজন তরুণ প্রবেশ করেন এসইসির কার্যালয়ে। এ সময় এসইসির কার্যালয়ের মূল প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে বিশেষ করে সাংবাদিকেরা না আসতে পারেন। তরুণ দুজন ইয়াছিন আলীর কক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। পরিচয় দেন একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য হিসেবে। তাঁরা প্রায় চার ঘণ্টা ছিলেন ইয়াছিন আলীর কক্ষে।

সূত্র জানায়, কক্ষ বন্ধ করে দেওয়া হলেও বাইরে থেকেই ভেতরের অনেক কথা শোনা গেছে। এ সময় ইয়াছিন আলীর কক্ষ থেকে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় শোনা গেছে। বলা হচ্ছিল, ‘আপনাকে এক্ষুনি পদত্যাগ করতে হবে। কোনো কথা আমরা শুনব না। ’ ইয়াছিন আলীকেও উচ্চ স্বরে কথা বলতে শোনা যায়।

তিনি বলেন, ‘আমি পদত্যাগ করব না, আমাকে দরকার হলে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যান। ’ সূত্র জানায়, এ সময় ইয়াছিন আলীকে নানা রকম ভয়ভীতি দেখানো হয়। শেষ পর্যন্ত উপায়ান্তর না পেয়ে ইয়াছিন আলী পদত্যাগপত্র লেখেন এবং গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা তাঁকে সঙ্গে করে সচিবালয়ে নিয়ে যান। সেখানে ব্যাংকিং ও আর্থিক বিভাগের সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারীর কক্ষে প্রবেশ করে পদত্যাগপত্র দেন। কাজে সফল হয়ে এরপর গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা চলে যান।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার একজন সদস্যকে এভাবে পদত্যাগে বাধ্য করার বিষয়টি জানাজানি হলে শেয়ারবাজারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এ নিয়ে সরকারে মধ্যেও অসন্তোষ হয়েছে বলে জানা গেছে। সরকারের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে, প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে সরকারের একটি অংশের অতি উৎসাহে এ ধরনের ঘটনার জন্য এই বৈঠকে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। এ নিয়ে সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রথম আলোকে এ বিষয়ে বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এসইসির সদস্যদের পদত্যাগ করার কথা বলা হয়েছে।

তবে গোয়েন্দাদের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা ছিল না বলে তিনি জানান। এর আগে গত ৩ মে শফিকুর রহমান পাটোয়ারী ডেকে নিয়ে ইয়াছিন আলীকে প্রথম পদত্যাগ করতে বললে তিনি তাতে সম্মত হয়েছিলেন। এ সময় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে তাঁকে বলা হয়েছিল, দু-এক দিনের মধ্যে পদত্যাগের দিনক্ষণ বলা হবে। এর পরদিনই তাঁকে সকাল ১০টায় সচিব ফোন করে পদত্যাগ করতে বললে তিনি পদত্যাগপত্র তৈরি করেন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে আবারও পদত্যাগপত্র এখনো জমা দিচ্ছেন না কেন জানতে চাইলে তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন।

জানিয়ে দেন যে, অর্থমন্ত্রী দেশে এলে পদত্যাগ করবেন। এর পর থেকেই নানাভাবে ইয়াছিন আলীর ওপর চাপ দেওয়ার পর ৯ মে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের ব্যবহার করে পদত্যাগে বাধ্য করানো হয়। ডেকে নিয়ে পদত্যাগ করতে বলার এই সংবাদ প্রথম আলোসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। এর আগে, এসইসির অপর সদস্য আনিসুজ্জামানকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ৮ মে ফোন করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। তিনি ওই দিনই এসইসির চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খোন্দকারের কাছে পদত্যাগপত্র দিয়ে চলে যান।

ইয়াছিন আলী পদত্যাগপত্র দিলেও তা গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গ্রহণ না হওয়ায় তিনি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। অর্থমন্ত্রী অবশ্য গতকাল বলেছেন, এসইসির সদস্যদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সংস্থাপন মন্ত্রণালয় বিষয়টি এখন দেখছে। দুজন সদস্য পদত্যাগে বাধ্য হলেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে পুঁজিবাজার তদন্ত কমিটি। বরং এসইসি থেকে ইয়াছিন আলীই কমিটিকে সহায়তা দিয়েছিলেন বলে তদন্ত কমিটি সূত্র জানায়।

এসইসির বিভিন্ন সূত্র জানায়, বাজার থেকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে বেশি মুনাফা তুলে নেওয়া, প্লেসমেন্ট শেয়ার, আইপিওকে অতিমূল্যায়িত করা ইত্যাকার প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইয়াছিন আলী কমিশন বৈঠকেও বিরোধিতা করেছিলেন। মিউচুয়াল ফান্ডের ব্যক্তি প্লেসমেন্টে শেয়ারের ওপর লক-ইন না থাকার বিরোধিতা করেন তিনি। এ ছাড়া তাঁর বিরোধিতার কারণে বেক্সিমকো টেক্সটাইলের ঋণকে শেয়ারে রূপান্তর করার পর এক বছরের লক-ইন দিতে বাধ্য হয় এসইসি। একইভাবে সম্প্রতি নর্দার্ন পাওয়ারের ক্ষেত্রেও লক-ইন দেওয়া হয়। কমিশনের ৪০টির মতো সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ইয়াছিন আলীর ভিন্নমত বা আপত্তি রয়েছে।

কিন্তু কমিশনের বেশির ভাগ সদস্যের সম্মতি থাকায় সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করা হয়। এসব কারণে শেয়ারবাজার কারসাজিকারীদের একটি শক্তিশালী গোষ্ঠী সব সময়ই ইয়াছিন আলীকে সরিয়ে দেওয়ায় সচেষ্ট ছিল। সম্প্রতি একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেদন তৈরি করে বলেছে যে, ইয়াছিন আলী বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক থাকাকালে বিএনপিদলীয় শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ঋণ নিয়মিত করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইয়াছিন আলী ওই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বগুড়া ও সিলেট অফিসে এবং পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। ঋণ সম্পর্কিত বিষয় বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ দেখে।

তা ছাড়া ঋণ পুনঃ তফসিল বাণিজ্যিক ব্যাংকই করে। শুধু ব্যাংকের পরিচালকের খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিলের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে হয়। এসব বিষয়ে ইয়াছিন আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো কথাই বলতে রাজি হননি। প্ররথম আলু

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.