অবশেষে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশন (এসইসি) পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষক ড. এম খায়রুল হোসেন। এর আগে নতুন সদস্য হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হেলালউদ্দীন নিজামীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আরো দুজন সদস্য নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
দেরিতে হলেও এসইসি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করাকে শেয়ারবাজারের সার্বিক উন্নয়নে সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
এতে অভিভাবকহীন একটা অসহায় পরিস্থিতি থেকেও শেয়ারবাজার মুক্ত হবে বলে তাঁদের বিশ্বাস। বিধ্বস্ত পুঁজিবাজারে প্রাণসঞ্চার করা, বিনিয়োগকারী ও তালিকাভুক্ত কম্পানির আস্থা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করার বিশাল দায় এখন পুনর্গঠিত এসইসির কাঁধে। দায়িত্বের বিশালতা উপলব্ধি করছেন নতুন চেয়ারম্যান নিজেও। রবিবার কাজে যোগ দেওয়ার পরই তিনি বলেন, 'অনেক চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে এসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনাই হবে আমার প্রথম কাজ।
এসইসির কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে। বিনিয়োগকারীদের প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করা হবে। পুঁজিবাজারকে কাজে লাগিয়ে দেশের শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করা হবে। বর্তমান আইনে সম্ভব না হলে এসইসির আইন পরিবর্তন করা হবে। '
এসইসির ভাবমূর্তি এখন শূন্যের কোঠায়।
সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সংশ্লিষ্ট সবার আস্থার জায়গায় দাঁড় করানোই এসইসির নতুন নেতৃত্বের প্রথম কাজ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কাজটি যে সহজ নয়, তারও ইঙ্গিত দিলেন তাঁরা। এসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ সিদ্দিকী কালের কণ্ঠকে বলেন, নতুন চেয়ারম্যানের প্রথম কাজ হবে আস্থা অর্জন করা। আস্থা অর্জনের জন্য দরকার সৎ ও নিরপেক্ষভাবে আইন অনুযায়ী দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাওয়া। এটা করতে পারলে দ্রুতই বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে এসইসির নতুন নেতৃত্বের প্রতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ওসমান ইমাম বলেন, এখনো এসইসির পুরোপুরি পুনর্গঠন হয়নি। আরো দুজন সদস্য নিয়োগ দিতে হবে। এসইসির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া যত দ্রুত সম্ভব হবে, তত গুজব কমে যাবে। বাজার স্থিতিশীল হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন চেয়ারম্যানের এ সহকর্মীর মতে, বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর কিছু নেই।
স্থিতিশীল হওয়া আর ঘুরে দাঁড়ানো এক কথা নয়। এখন দরকার স্থিতিশীল করা। এটা করতে হলে প্রথম কাজ হবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন। সেটা করার জন্য দরকার সততার সঙ্গে কাজ করা। এসইসিকে তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।
বেশি আইপিও বাজারে আনতে হবে। শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে যেসব কম্পানি ইতিমধ্যে আবেদন করেছে, তাদের সম্পদের পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে আলাদা অডিট ফার্ম দিয়ে। এসব শেয়ারের দাম কমিয়ে করে প্রাইমারি মার্কেটে আইপিও ছাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
বিগত সময়ে যেসব আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে, তা দূর করতে আইন সংশোধন করার কথাও বললেন ড. ওসমান ইমাম।
এসইসিকে সহযোগিতা করার জন্য আলাদা পরামর্শক কমিটি ও কারিগরি কমিটি গঠনের পরামর্শ দিলেন তিনি। এ ছাড়া তিনি অমনিবাস অ্যাকাউন্ট, প্লেসমেন্ট শেয়ার, মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্মকাণ্ডে যেসব অসংগতি ও অনিয়ম হয়েছে, তা রোধ করার জন্য তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এসইসিকে কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করা চলবে না। এসইসির কোনো আইন না মানার সাহস কারো থাকার কথা নয়।
গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে শেয়ারবাজারে ঘটে যাওয়া বিপর্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ জানুয়ারি সরকার কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
দুই মাস তদন্ত শেষে গত ৭ এপ্রিল সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি। এতে সুনির্দিষ্টভাবে এসইসির শীর্ষস্থানীয় চার কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁদের অপসারণ করে এসইসি পুনর্গঠনের তাগিদ দেওয়া হয়। তাঁদের রেখে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পুনর্গঠন ও পুঁজিবাজারের সামগ্রিক সংস্কার সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করে কমিটি। নানা জল্পনাকল্পনার পর প্রতিবেদন পেশের এক মাসের মাথায় সরকার নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়। এর আগে একজন সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়।
ইতিমধ্যে দুজন সদস্য পদত্যাগ করেন। সাবেক চেয়ারম্যানকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। আরো দুই সদস্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত এসইসি পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারবে না বলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা জানান।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, আস্থা অর্জন করে শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য দরকার তদন্ত প্রতিবেদনের উলি্লখিত সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা। তদন্ত প্রতিবেদনে সুপারিশে এসইসির কয়েকটি আইনের ফাঁক বন্ধ করার সুপারিশ করার কথা বলা হয়েছে।
মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর অমনিবাস অ্যাকাউন্টে সবচেয়ে বেশি কারসাজির সুযোগ রয়েছে। এই ধরনের অ্যাকাউন্ট থেকে ভৌতিক লেনদেন হয়েছে। এটা বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। শেয়ারবাজারের প্লেসমেন্ট ব্যবসাকে বেআইনি না বলা হলেও অনৈতিক বলা হয়েছে। এ জন্য প্লেসমেন্টের আইন সংশোধন করার কথা বলা হয় প্রতিবেদনে।
বুকবিল্ডিং পদ্ধতির আইনি দুর্বলতা দূর করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া দুই স্টক এঙ্চেঞ্জের ডি-মিউচুলাইজেশন করা, এসইসি ও দুই স্টক এঙ্চেঞ্জের সমন্বয়হীনতা দূর করা, আলাদা অডিট ফার্মের মাধ্যমে অতিমূল্যায়িত কম্পানির সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন করার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। বাজারকে স্থিতিশীল করার জন্য এসইসির নতুন নেতৃত্বকে এসব সুপারিশই বাস্তবায়ন করতে হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।