আমি চাই শক্তিশালী স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ
চুক্তির ব্যর্থতা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে: দীপু মনি
ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধানে বাংলাদেশের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, তার সরকার আগামী মাসে ভারতীয় পার্লামেন্টে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের বিল পাসের অপেক্ষায় রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ ও ভারতের রাজ্যসভায় বিরোধী দলীয় নেতা বিজেপির অরুণ জেটলির সঙ্গে বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগে শুক্রবার দিল্লিতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি নিশ্চিত, অনেকদিন ধরে ঝুলে থাকা এই চুক্তি বাস্তবায়নের গুরুত্ব সব দলই বুঝতে পারবে। ”
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত স্থলসীমান্ত চুক্তি এবং ২০১১ সালে সই হওয়া এ সংক্রান্ত প্রটোকল বাস্তবায়ন করতে হলে ভারতের সংবিধান সংশোধন করতে হবে। এ লক্ষ্যে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট সরকার এর আগে পার্লামেন্টে বিল তোলার উদ্যোগ নিলেও বিষয়টি আটকে আছে প্রধান বিরোধী দল বিজেপির বিরোধিতার কারণে।
কোনো বিল পাস করতে হলে ভারতীয় পার্লামেন্টের উভয়কক্ষ লোকসভা ও রাজ্যসভায় অন্তত দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন দরকার, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট সরকারের যা নেই।
নির্বাচনের ছয় মাসেরও কম সময় বাকি থাকতে এই অমীমাংসিত বিষয়টি নিয়ে বিজেপির সঙ্গে আলোচনা করতেই দিল্লি গেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আগামী ৫ অগাস্ট শুরু হতে যাওয়া রাজ্যসভার বর্ষাকালীন অধিবেশনে আবারো বিলটি তুলবে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের দল কংগ্রেস।
চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অস্বস্তিও প্রকাশ পেয়েছে দীপু মনির কথায়।
তিনি বলেন, “যদি বিলটি পাস না হয় আর তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি যদি না এগোয়, তাহলে আগামী নির্বাচনে বিষয়গুলো নিশ্চিতভাবেই বড় ধরনের ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে। ”
২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের যে সফরে ঢাকায় স্থল সীমান্ত চুক্তির প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়, ওই সময়ই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা ছিল দুই দেশের মধ্যে।
সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হলেও শেষ মুহূর্তে চুক্তি আটকে যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বিরোধিতার কারণে।
দীপু মনি বলেন, “জনগণ যখন ভোট দেবে তখন তারা এ বিষয়গুলো অবশ্যই মনে রাখবে। ”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সীমান্ত নিয়ে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান না হওয়ায় মাঝেমধ্যেই উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে এবং কখনো কখনো তা রক্তপাতের মতো ঘটনায় গড়াচ্ছে।
স্থলসীমান্ত চুক্তি ও প্রটোকলের আওতায় ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের মোট সাত হাজার ১১০ একর আয়তনের ৫১টি এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের মোট ১৭ হাজার ১৬০ একর আয়তনের ১১১টি ছিটমহল বিনিময়ের কথা রয়েছে, যা নিয়ে বিজেপির আপত্তি। দলটি বলছে, ছিটমহল বিনিময় হলে যে পরিমাণ জমি হাতবদল হবে, তাতে ভারত প্রায় ৭ হাজার একর বেশি জমি হারাবে।
বাংলাদেশি ছিটমহলগুলোতে জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ১৪ হাজার এবং ভারতীয় ছিটমহলগুলোতে জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার।
এর আগে বৃহস্পতিবার দিল্লির অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনে দেয়া বক্তৃতায় গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় প্রতিবেশী দেশগুলোকে নিয়ে যৌথ পানিব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন দীপু মনি।
তিনি মনে করেন, নদীভিত্তিক পানি বণ্টন ব্যবস্থার বদলে অভিন্ন নদীগুলো নিয়ে যৌথ ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার। আর এক্ষেত্রে নেপাল-ভুটান-মিয়ানমার ও চীনকেও সঙ্গে নেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত জানুয়ারিতেও অভিন্ন ব্যবস্থাপনার এ প্রস্তাব তুলেছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যা নিয়ে তখন ভারত তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।
তবে পরে বিষয়টি নিয়ে দিল্লিতেও আলোচনা শুরু হয়।
দীপু মনি মনে করেন, অববাহিকাভিত্তিক যৌথ ব্যবস্থাপনা চালু করা গেলে সামুদ্রিক সম্পদসহ সামুদ্রিক সীমানা বিন্যাস নিয়েও নতুন করে আলোচনা শুরু হতে পারে।
Click This Link
*************
১৯৭২-৭৫ মেয়াদে মুজিব কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভারতের সাথে সমঝোতা করেন। এগুলি হল ১) বেরুবাড়ী দান, ২) ৭২এর মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি এবং ৩) ফারাক্কা বাধ চালুর অনুমতি। এই তিনটি বিষয়ের কোনটিই সমঝোতা হওয়ার আগে আমাদের জাতীয় সংসদে আলোচনা করা হয়নি।
মুজিব সেটা সম্পূর্ণ রুপে অগ্রাহ্য করছে। বেরুবাড়ীর বিনিময়ে তিন বিঘা করিডোর দিতে ভারত প্রায় ৩৫ বছর দেড়ী করে এবং আজও সেখানে বাংলাদেশের পূর্ণ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা হয়েছে কিনা জানা নাই। ৭২এর এবং ৭১এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ৭দফা চুক্তির ভিত্তিতে স্বাধীন বাংলাদেশের তৃতীয় কোন রাষ্ট্রের সাথে সামরিক সম্পর্কতো দূর বাণিজ্য এবং পররাষ্ট্র সম্পর্কের জন্যও দিল্লীর সাউথ ব্লকের অনুমতি লাগত। এই কারণে মুজিব আমলে মধ্যপ্রাচ্য, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের সম্পর্ক গড়ে উঠে নাই। আর ফারাক্কা বাধ চালুর বিষয়ে মুজিব আসাফদ্দৌলার বার বার বলা সত্ত্বেও ভারতকে জবাব দেওয়া চিঠিতে "পরীক্ষামূলক" না লিখে শুধু চালুর অনুমতি দিয়ে দেন।
এখানেও মুজিব সংসদ কিংবা নদী-পানি বিশেষজ্ঞদের তোয়াক্কা করেন নাই।
এরপর ১৯৯৬ সালে প্রায় ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে হাসিনা বিরোধী দল বিএনপি ও জামাততো দূর নিজ ক্ষমতার শরিক দল জাপার অনুরোধ সত্ত্বেও সংসদে কোন প্রকার আলোচনা ও বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ না করেই ৩০ বছর মেয়াদী ফারাক্কা চুক্তি করে ভারতের সাথে। অথচ সংসদে আলীগ বাদে বাকী সব দল বলেছিল চুক্তিতে যেন গ্যারান্টি ক্লজ থাকে। পরে চুক্তিতে জানা গেল যে এটা শুভংকরের ফাকি। এই চুক্তিতে বলা হয় যদি ফারাক্কার উজানে ৭৫ হাজার কিউসেক পানি জমে তাইলে ভারত পাবে ৪০ হাজার এবং বাংলাদেশ ৩৫ হাজার কিউসেক।
এতে কোন গ্যারান্টি ক্লজ নাই। এখানে ভারত আলীগের সহায়তায় পুরাটাই প্রতারণা করছে। কারণ ভারতে গঙ্গা সংশ্লিষ্ট রাজ্য গুলোতে ফিডার ক্যানাল ও পাম্পের সাহায্যে ব্যাপক হারে পানি উত্তোলন করা হয় শুস্ক তথা গ্রীষ্ম মৌসুমে। ফলে গ্রীষ্মে ফারাক্কার উজানে ৭৫ হাজার কিউসেক পানি জমবে এটা আকাশ-কুসুম কল্পনা মাত্র।
যদি হাসিনা এই চুক্তি স্বাক্ষরের পূর্বে বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিত তারা চুক্তির খসড়া অনুসারে এটা সংশোধন করতে বলত অথবা চুক্তি না করতে বলত।
কিন্তু খাস দালাল বিধায় আলীগ ভারতকে একতরফা পানি লুন্ঠন করতে দিচ্ছে। পরে ভারত বলে যে বাংলাদেশ বর্ষাকালে পানি ধরে রাখতে পারে না এবং আলীগও একই তালে নাচে তাইলে এই ৩০ বছর মেয়াদী চুক্তি করে কি লাভ হল?
এরপর সিঙ্গাপুর বানানোর মূলা ঝুলিয়ে ভারতকে দেওয়া নদী পথের করিডোরে(১৯৭২ এর চুক্তিতে) অর্থ আদায়তো দূর উল্টা ভর্তূকি দেয় হাসিনার সরকার। উপরন্ত এই ২০০৯ মেয়াদে ক্ষমতায় এসে হাসিনা আবার কঠোর গোপন চুক্তি স্বাক্ষর করে ভারতের সাথে। ২০১০ সালের জানুয়ারীতে কি কি শর্তে চুক্তি করল ভারতের সাথে তার জন্য দেশবাসী-সংসদের অনুমোদনতো দূর আজ পর্যন্ত আমরা এর বিষয়াদি জানি না।
এখন যখন ভোটের সময় এগিয়ে আসছে ততই হাসিনা গংদের অস্থিরতা বাড়ছে।
এইবারও মনমোহন থেকে আশ্বাস পেয়ে ফিরে আসছে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনি। মানলাম ভারতের বিজেপি লোকসভায় স্থল সীমান্তের বিলের বিরুদ্ধে তাইলে তোর আলীগ সরকার কেন কোন কিছু না জানিয়ে ভারতকে সব উজাড় করে সুবিধা দিল? বিজেপি, সমাজবাদী, শিবসেনা কি অন্য যেকোন ভারতীয় রাজনৈতিক দল তারা কি বিলে সমর্থন দিল বা বিরোধীতা করল সেটা তাদের আভ্যন্তরীন মাথা ব্যাথা। ভারত সরকার এই নিজ বিষয়ে সমাধান করে কিছু নিশ্চিত করলেই কেবল আমাদের নিজেদের ন্যায্য স্বার্থের পক্ষে বিনিময় চুক্তি করা উচিত। বিভিন্ন লেনদেনে বিশেষজ্ঞ, সংসদ ও জনগণের কাছে বিষয়াদি খোলাসা না করে এবং অনুমতি না নিয়ে কিভাবে নিজেরা র্দূনীতি-লুটপাট, জুলুম এবং দিল্লীর অন্যায় আব্দার রক্ষা করবে সেই চিন্তায় মশগুল থাকে আলীগ। এরাই আবার পরবর্তীতে ক্ষমতায় আসার জন্য উদগ্রীব।
জনগণকে অন্ধকারে রেখে বাংলাদেশের ক্ষতি করে কিভাবে আলীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতা পক্ষের শক্তি হয় সেটা একমাত্র শয়তানের কাছে বিবেক বন্ধক দেওয়া ব্যাক্তি গোষ্ঠীই সমর্থন করতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।