বোরহান উদ্দিন আহমেদ (মাসুম)
আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার মিশনে অংশ নিয়েছিল সর্বাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত মার্কিন নৌবাহিনীর একটি বিশেষ ইউনিট, যার নাম 'ইউএস নেভি সিল'। ওসামাকে আটক বা হত্যার জন্য কয়েক বছরের পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু তা বাস্তবায়নে সময় লেগেছে মাত্র ৪০ মিনিট। পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদের ওই অভিযানে অংশ নেওয়া ইউনিটটি 'সিল টিম ৬' নামে পরিচিত। ৪০ জনের মতো কমান্ডো এ অভিযানে অংশ নিলেও দুই ডজনেরও কম সেনা হেলিকপ্টার থেকে ওসামার বাড়ির চত্বরে নেমেছিল।
ওসামাকে হত্যা করতে গিয়ে তাদের গায়ে এতটুকু আঁচড়ও লাগেনি। তাহলে কী তাদের বিশেষত্ব?
কাগজ-কলমে নেভি সিলের নাম নেভাল স্পেশাল ওয়্যারফেয়ার ডেভেলপমেন্ট গ্রুপ। তবে ডেভগ্রু নামেই এটি বেশি পরিচিত।
এ বাহিনীর সবাই সেরা কমান্ডো। অত্যন্ত গোপন কোনো অভিযান পরিচালনার জন্য পাঠানো হয় এ বাহিনীকে।
তাদের হাতে রয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক সামরিক প্রযুক্তি। তাদের সরঞ্জাম সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জানা গেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক ব্লাকহক হেলিকপ্টার, মনুষ্যবিহীন বিমান, দূর নিয়ন্ত্রিত রোবট, দ্রুত রং পরিবর্তনশীল নিরাপত্তা চশমা, উড়াল গাড়ি প্রভৃতি।
অত্যাধুনিক ব্লাকহক হেলিকপ্টার : অ্যাবোটাবাদের অভিযানে নেভি সিলের যে কটি হেলিকপ্টার অংশ নিয়েছিল, সেগুলোর একটি কারিগরি ত্রুটির কারণে বিন লাদেনের বাড়ির চত্বরে বিধ্বস্ত হয়। এটি তৈরির প্রযুক্তি যাতে অন্যদের হাতে না যায়, সে জন্য বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটি ধ্বংস করে ফেলা হয়।
কিন্তু এর পেছনের কিছু অংশ সীমানাপ্রাচীরের ওপর পড়ে ছিল। সেটি দেখেই বোঝা যায় এটি আসলে সাধারণ কোনো ব্লাকহক হেলিকপ্টার ছিল না। পেছনের পাখাগুলো ছিল সাধারণ পাখার চেয়ে অতিমাত্রায় পাতলা। প্রচণ্ড জোরে ঘুরলেও এর শব্দ অনেকটাই ক্ষীণ। একইভাবে তৈরি মূল পাখাগুলোও।
এ কারণে অনেকটাই নিঃশব্দে উড়ে বেড়াতে পারে এ হেলিকপ্টার। এসব হেলিকপ্টার ইনফ্রারেড সেন্সর দিয়েও চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না। বিন লাদেনের কাছে বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র থাকলেও এ হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে ছোড়া সম্ভব হতো না।
মনুষ্যবিহীন বিমান : লকহিড আরকিউ-১৭০ সেন্টিনেল নামের মনুষ্যবিহীন এ বিমানে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র থাকে না। লাদেনের বাড়িতে চালানো অভিযানে নজরদারি করা হয়েছে এ বিমানের সাহায্যে।
কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে এ বিমান থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিওচিত্র দেখে কমান্ডোরা ওই বাড়ির চত্বরের কোথায় কে আছে, তা দেখে অভিযান চালিয়েছে। অভিযানের কয়েক মাস আগে থেকেই পাকিস্তানের রাডারকে ফাঁকি দিয়ে এ বিমানের সাহায্যে লাদেনের বাড়ির ওপর নজরদারি করা সম্ভব ছিল।
দূরনিয়ন্ত্রিত রোবট : নেভি সিল ২০০৯ সালে মার্কিন কম্পানি রেকন রোবটিকসের তৈরি করা এ রোবট কেনে। এর আকার বিয়ারের ক্যানের মতো। ইনফ্রারেড ক্যামেরার সাহায্যে এ রোবট অন্ধকারেও ঘটনাস্থলের ভিডিওচিত্র ধারণ করে তারবিহীন ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে অপারেটরের কাছে পাঠাতে সক্ষম।
রেকন রোবটিকস পুলিশ বাহিনীর কথা মাথায় রেখে এ রোবট তৈরি করেছে। সম্প্রতি মার্কিন নৌবাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে তারা এ রোবটের উন্নত সংস্করণ তৈরি করতে সক্ষম হয়। চুম্বকের সাহায্যে এ রোবট জাহাজের গা বেয়ে ডেকেও উঠে যেতে পারে।
দ্রুত রং পরিবর্তনশীল নিরাপত্তা চশমা : মার্কিন নেভির গবেষণা দপ্তর জানিয়েছে, গত জানুয়ারিতে তারা সিল সদস্যদের জন্য প্রথম ৩০ জোড়া এ ধরনের নিরাপত্তা চশমা সরবরাহ করেছে। এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক স্টিফেন এভারেট বলেন, কমান্ডোরা সাধারণত একে অপরের মধ্যে বিনিময়যোগ্য লেন্সের চশমা ব্যবহার করে।
নির্দিষ্ট আলোতে তারা হাতের সাহায্যেও এর লেন্স ঠিক করতে পারে। তবে এটা করতেও তারা কোনো সময় পায় না। তাই দ্রুত রং পরিবর্তনশীল নিরাপত্তা চশমার ব্যবহার শুরু করা হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন বৈদ্যুতিক চার্জের মাধ্যমে এ চশমা হলুদাভ, নীল বা ধূসর রং ধারণ করতে পারে। পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এ চশমা রং বদলাতে পারে।
আবার কমান্ডোরা চাইলে হাতের সাহায্যেও বাটন টিপে চশমার রং বদলাতে পারে। আর এই রং বদলাতে আধা সেকেন্ডেরও কম সময় লাগে।
উড়াল গাড়ি ট্রান্সফরমার টিএঙ্ : দুর্গম এলাকায় নেভি সিলের মতো বিশেষ বাহিনীর কমান্ডোদের বহনের জন্য উড়াল গাড়ি তৈরি প্রক্রিয়াধীন। এক ট্যাংক জ্বালানি দিয়ে এ যান ২৫০ নটিক্যাল মাইল যেতে পারবে। জিপ গাড়ির পাশাপাশি এর ওপরের অংশে থাকবে হেলিকপ্টারের প্রপেলার।
গাড়ি হিসেবে চলার সময় ওপরের পাখা ভাঁজ করে রাখা যাবে। আবার ওড়ার দরকার হলে পাখা খুলে হেলিকপ্টারের মতো উড়ে যাবে এ গাড়ি।
তথ্যসূত্রঃ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।