যাত্রার শুরু রাজশাহী থেকে ঢাকা............
একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম “দোস্ত , ১৪৮৭ কিলোমিটার, আমরা শেষ করতে পারি, যথেষ্ট হয়েছে”। কাইয়ুম বাইক এর মিটার এর দিকে তাকিয়ে বলল “ওকে, শেষ করা যাক। কিন্তু যশোর তো বাদ থেকে গেলো। তাও অবশ্য অনেক হয়েছে”। একটা বড় হাই ফাইভ দিলাম।
ওর ক্লান্ত চোখে এক অদ্ভুত সাফল্লের উল্লাস।
গত ৫ দিন ধরে আমরা ঘর ছাড়া। মাথায় ছিল যে দেশ ভ্রমন করব বাইকে। আমার হিরো হোন্ডা হাঙ্কটা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম অজানা পথে। ছিলনা কোন চিন্তা আসন্ন কোন কিছু নিয়ে।
ছিল না কোন আশংকা যে এর ফলাফল কি হতে পারে। ভাবিনি যে কেও নিষেধ করেছে কিনা বা বাসাতে কেও জানলে কি হতে পারে। বা ভাবিনি এই ধরনের কথা যে করতে পারব কিনা বা পত্থে যদি কিছু হয় বা বেশি কস্ট হয়ে যাবে না তো! ভাবিনি কোন কিছুই। আজ প্রায় ১৫০০ কিলমিটার পার করে যখন শেষ করার সিদ্ধান্ত নিলাম, মনে আসছে যে কত কিছু নিয়েই তো আগে চিন্তা করতে পারতাম। কিন্তু তা করা হয়নি, করলে হয়ত আর এই পাগ্লামিটা শেষ করতে পারতাম না, করা হতই না।
হ্যাঁ অনেকই তো হয়েছে রাজশাহি-ঢাকা-সিলেট-কুমিল্লা-ঢাকা এইই কি যথেষ্ট নয়!
যাত্রাটা শুরু হয়েছিল ৩০ এপ্রিল ২০১১ সকাল ৬টায়। রাজশাহী থেকে আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল ঢাকা। বাবা মাকে একরকম ভূগোল বুঝিয়েই বের হতে হয়েছিল। কারন সবারই বোধগম্য। বাসায় বলেছিলাম বাইকটাকে সাজ্জাদ এর কাছে রেখে যাব নাটোরে।
কাইয়ুম বলেছিল আশিক এর কাছে রেখে যাব। আমাদের মা রা কি যে বুঝেছিল জানিনা বা কোনদিন জানবোও না, পরে আর মানা করতে পারেননি। ফলাফল আমরা ঢাকার পথে।
পুরো জীবনের এই অজানা পথটি বাদ দিয়ে আর কোন এমন পথে বের হইনি যার শেষ কোথায় জানিনা। এবারি প্রথম ছিল।
যাত্রার শুরুতেই আমাদের বাধা ছিল দুটো। এক, বাইকে পেট্রোল ছিল না, যা ভেবেছিলাম পথে নিয়ে নিব। আর দুই, এবারও বাইক এর ই মবিল চেঞ্জ করতে হত। যা আমারা ঠিক করেছিলাম নাটোরে চেঞ্জ করে নেবো। আগের রাতে ঘুম হয়নি বিশেষ।
কাইয়ুম এর কথা বুঝেছি আর আমি তো ছিলাম খুবি উত্তেজিত। কেমন ঘোরের মধ্যে যাত্রাটা শুরু হয়েছিল। কারন, ঘোর জিনিশটাই আমাদের এই পথে যাত্রা শুরুর কু সঙ্কোচ আনেনি কখনো।
সকালটা কেমন ঠান্ডা ছিল। বাইকে থাকাতে বাতাসটাও ছিল বেশ।
আমি চাইছিলাম রোদ উঠার আগেই যমুনা পউছে যেতে। সব কিছুই বরাবর ছিল শুধু পেট্রোল পাচ্ছিলাম না। গতিটা নিয়ে আমি খুশি ই ছিলাম কিন্তু বানেসশর এ পেট্রোল পাওয়ার আগ পর্যন্ত টেনশন ছিল দুইজনেরই, যাত্রার শুরুতেই না গাড়ি থেমে যায় আমাদের। যাইহোক বানেসশর পার হয়ে গিয়ে অবশেষে আমরা আমাদের পেট্রোল পেলাম।
শুরু হল নিশ্চিত যাত্রা।
প্রথম বিরতি নাটোরে তারপর বহু প্রতিক্ষিত বনপারা বাইপাস। শান্তি মত আমি ৮০। ৯০। ১০০ কিলমিটার গতি তুলেদিয়েছিলাম।
কেন জানিনা আমি যখন ই বাইকের স্পীড ৮০ র উপরে তুলি আমার মস্তিষ্কের একটা সুইচ বন্ধ করে দি।
সেটা হল ভালমন্দের সুইচ। মনে হয় যে যা হবে হোক আগে মন মত স্পীডটা তুলেনি। বনপারা বাইপাসে বিশেষ কিছুর মধ্যে একটাই ব্যাপার ঘটেছিল। আমাদের অভিযানের প্রথম দুর্ঘটনা। না না কোন মানুষ বা গাড়ির সাথে নয় এক শালিক পাখির সঙ্গে।
আমার বুকে লেগেছিল পাখিটা। যে দুর্ঘটনার ব্যথা আমি প্রায় পুরো অভিযানেই বয়ে নিয়ে বেরিয়েছি যার কোন সংবাদ কাইয়ুম এর জানা নেই। অনেকবার ভেবেছি যে পাখিটার কি হয়েছিল। কারণ, বাইকটা ছিল প্রায় ১০০ কিলো স্পীডে। আসলে যাত্রাপথে অনেক কিছুই থাকে যার খবর জানতে চাইলেও জানা যায় না।
যমুনাতে শাহাদাত ছিল আমার মতই এক দেশসেবার কর্মী। থাকে যমুনা পারের সেনানিবাসে। ওকে গিয়ে একরকম ঘুম থেকেই তুলেছিলাম খুব অবাক হয়েছিল আমাদের দেখে। তার চাইতে অবাক হয়েছিল আমাদের অভিযান যাকে অনেকে বলে পাগলামি সেই অভিযানের প্ল্যান শুনে। ওখানে গিয়ে নুডলস খেয়েছিলাম।
সাথে কোক। শাহাদাত আমাদের আরও সাবধান হতে বলেছিল সাম্নের পথ টা নিয়ে। ও বলছিল “সাবধানে চালাস বাইক, সামনে গিয়ে দেখবি সব গাড়ি রাস্তার দুপাশে উল্টিয়ে পরে আছে”। আমার স্পষ্ট মনে আছে কাইয়ুম এর চোখে আমি ভয় দেখেছিলাম তখন। আমার কি হয়েছিল? হাহা আমি আগেরদিন “ঘোস্ট রাইডার” মুভিটা দেখেছিলাম।
ও এমন্ভাবে বলছিল যেন “ঘোস্ট রাইডার” এর নিকলাস কেজ গিয়েছে একটু আগে আর সব গাড়ি দুপাশে উল্টিয়ে পড়েছে। যমুনা ব্রীজে উঠলাম শাহাদাতকে বিদায় বলে। এ নিয়ে বাইক নিয়ে ৩য় বার ব্রীজে উঠেছিলাম তাই আমার দেখার কিছু ছিল না সেখানে। বলে দেয়া যায় যে একবার ঢাকা থেকে রাজশাহী আসার পথে আমি এই ব্রীজেই দাড়িয়ে সিগারেট হাতে সূর্যাস্ত দেখেছিলাম।
এবার সিগারেট নিয়ে কিচু না বললেই নয়।
যারা সিগারেট খায়না তারা এটা কখনই বুঝবে না আর , যারা করেও আমাদের পরিস্থিতিতে না পরলে পুরোটা বুঝবে না যে, How it feels when u hv 2 roads to go among which 1 is backroad and 1 in front so long and u are at the middle of it with a burning cigarette with tea having so much challenge to face in very near future. এক কথায় অন্যরকম ভাষায় বলে বোঝানো কঠিন।
ব্রীজের পরের পথ ছিল আসলেই কঠিন। রাস্তা ছিল ছোট, গাড়ি ছিল বেশি আর ছিল ধুলোর ছড়াছড়ি। হেলমেট ছিল শুধু আমার মাথায় কাইয়ুম কে তাই বেশ কষ্টই করতে হচ্ছিল। কাইয়ুম কে কখনো বলিনি তখন কিন্তু ওর জন্য করুনাই হচ্ছিল তখন।
সাভার ইপিজেড পৌছিয়ে ন্যেছিলাম বিরতি। আমাদের অভিযানে প্রথম বার এর মত দেখা পেলাম বৃষ্টির। ওখান থেকে কিছুদুর গিয়েই একটা মরমান্তিক দুর্ঘটনা দেখলাম এক বাসকে পিছ থেকে একটা CAR আর সামনে থেকে একটা TRUCK বাড়ি মেরেছে। আমাদের সেখানে থামা হয়নি, কেননা আমাদের পথ যে আরও ভয়ংকর আর দীর্ঘ ছিল। পউছালাম বাইপাল মোড়।
বৃষ্টি ভেজা পথ দেখে কাইয়ুম এর ধুলো খাবার বুঝি অবসান হল ভেবে চা খেয়ে আবার যাত্রা শুরু করে ছিলাম ঠিকই কিন্তু সুখ সইলনা। আশুলিয়া পথে ঢুকেই দেখি সেখানে বৃষ্টি তো নেইই আবার সারাদিন ই কোন পানির ফোটা পড়েনি। এক রকম ধুকতে ধুঁকতেই পথ চলছিলাম। আমাদের মহাভিযানের প্রথম পর্ব শেষ করার জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছিলাম দুজন। আশুলিয়াতে একটা সিগারেট বিরতি তারপর বহু প্রতিক্ষিত খিলখেত মানে আমাদের বন্ধু হাসান- সোহাগদের বাসা।
বাড়িতে ঢুকে ধপ করে চেয়ারে বসে যখন GOLD LEAF এ টান দিয়াছলাম বুঝেছিলাম আমরা অবশেষে ঢাকাতে; নিরাপদে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।