মৌলভীবাজার জেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক ইটের ভাটা রয়েছে। কৃষি জমির উর্বর মাটি এনে এসব ভাটায় ইট তৈরি করা হচ্ছে। গ্রামের দরিদ্র কৃষক অর্থাভাবে আবার কেউ কেউ সচেতনতার অভাবে জমির উর্বর মাটি বিক্রি করছেন ইট ভাটায়। অধিকাংশ ভাটায় ধোঁয়া বের হওয়ার চিমনি থাকলেও বেশ কয়েকটিতে চিমনি দেখা যায়নি। কমলগঞ্জের গ্রামাঞ্চল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশেই পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে এভাবেই জমজমাট ইট ভাটার ব্যবসা চলছে।
কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইট বিক্রি করলেও গত দু’বছর ধরে ভারতে ইট রফতানি হওয়ায় দেশীয় ইট ভাটার মালিকরা নির্মাণ সামগ্রির সাথে ইটের দাম হু হু করে বাড়িয়ে দিয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলার রাজদিঘীর পাড় এলাকার একটি ইট ভাটার ম্যানেজার ও কুলাউড়া উপজেলার সরিষাতলা এলাকার এএসবি ইট ভাটার মালিক কৃষি জমির উর্বর মাটি দিয়ে তৈরি ইট ভারতে রফতানি হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ভারতে ইট রফতানি হওয়ায় ইটের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ইট ভাটার মালিকরা লাভবান হচ্ছেন। ভারত ইট ক্রয় করায় ৪ হাজার থেকে ৬ ও সাড়ে ৬ হাজার টাকা দরে ইট বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে। চাতলাপুর শুল্ক অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ৭১৯৫ মেট্রিক টন প্রায় ৭ কোটি ২ লক্ষ টাকার ইট রফতানি করা হয়েছে, যা ৯ লক্ষ ৮৯ হাজার ডলার বৈদেশিক মুর্দ্রা অর্জন করেছে।
কৃষি জমির উর্বর মাটি ও গাছগাছালি ইট ভাটায় ব্যবহার করায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা’র) সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক এডভোকেট শাহ শাহেদা আক্তার। তিনি বলেন, আইন বহির্ভূতভাবে ফসলি জমির ৬ ইঞ্চি থেকে ৮ ইঞ্চি পরিমাণ মাটি গভীর হলে খুবই ক্ষতি। বিভিন্ন সময়ে এতে কৃষি চাষাবাদ সম্ভব হয় না। আর ইট ভাটায় ফসলি জমির উর্বর মাটি ও গাছ ব্যবহার কৃষি চাষাবাদ ছাড়াও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকাশ কান্তি চৌধুরী বলেন, কৃষির জন্য জমির উর্বর মাটি খুবই উপকারী।
এ মাটি ইট ভাটায় চলে যাওয়ায় কৃষিক্ষেত্রে প্রভাব পড়ছে। সেজন্য ইট ভাটায় জমির উর্বর মাটি যাতে না যায় সেজন্য সমপ্রতি মাইকিং করে সচেতনতা সৃষ্টি করা হয়েছে। তাছাড়া নতুন করে যাতে কেউ ইট ভাটার অনুমতি না পায় সে ব্যাপারেও সুপারিশ করা হয়েছে।
ফসলি জমির উর্বর মাটি রক্ষায় ভারতের পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক যত্রতত্র ইটভাটা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেখানে দিন দিন ইট ভাটার সংখ্যা কমে আসছে। অপরদিকে সীমান্ত এলাকায় ভারতীয়
অঞ্চলের চাহিদা পূরণে বাংলাদেশে প্রস্তুত করা ইটের গুণগতমান ও দাম কম হওয়ায় সরবরাহ বেড়েই চলেছে।
কৃষি জমির উর্বর মাটি সংগ্রহ করায় আগামীতে বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে কৃষি উত্পাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিনাশুল্কে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইট রফতানি হওয়ায় বাংলাদেশে ইটের দাম প্রায় দ্বিগুণ। বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের বিধি মোতাবেক লোকালয় ও বনায়ন এলাকা থেকে ৩ কিলোমিটার দূরত্বে ইটখোলা নির্মাণ করার বিধান রয়েছে। এমনকি কৃষি জমিতে ইটখোলা তৈরির আইনগত নিষেধ থাকলেও মৌলভীবাজারের বনায়ন সংলগ্ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ও কৃষি জমিসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ইট খোলা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।