রবার্ট ফিস্ক
প্রায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়া মধ্যবয়সি এক লোক, রাজনৈতিক ইতিহাসে যিনি ব্যর্থ হিসেবে চিহ্নিত, মারা গেলেন গতকাল পাকিস্তানে। এমন এক সময় তিনি মারা গেলেন, যখন স্বাধীনতা আর গণতন্ত্রের দাবিতে লাখ লাখ আরবের বিক্ষোভে উত্তাল মধ্যপ্রাচ্য। আর তার মৃত্যুতে পুরো পৃথিবী উন্মাদ হয়ে উঠলো।
নিজের জন্মসনদ সরবরাহ করার পরপরই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট মধ্যরাতের আঁধারে হুড়মুড়িয়ে উঠে আমাদেরকে ওসামা বিন লাদেনের প্রায় তাৎক্ষণিক মৃত্যুসনদ ধরিয়ে দিলেন, যাকে কি না সেনাবাহিনীর এক মেজরের নামে হওয়া সাবেক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের এক শহরে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের বলা হলো, তার মাথায় একটা মাত্র গুলি করা হয়েছিলো।
কিন্তু তার মৃতদেহ গোপনে আফগানিস্তানে নিয়ে যাওয়া, একই রকম গোপনীয়তায় তাকে সমুদ্রে সমাহিত করা, মাজারে পরিণত হওয়ার ভয়ে অদ্ভুত এবং অস্বস্তিদায়কভাবে তার মরদেহটি ফেলে দেওয়ার ঘটনা ছিলো প্রায় ওই মানুষটি এবং তার ভীতি জাগানো সংগঠনের মতোই অস্বস্তিদায়ক।
আমেরিকানরা উন্মত্ত হয়ে উঠলো। ডেভিড ক্যামেরন মনে করছেন এটা 'একটা বিশাল অগ্রগতি'। ভারত একে এক 'বিজয়ের মাইলফলক' হিসেবে বর্ণনা করলো। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গর্ব করে বললেন 'অনুপ্রেরণাদায়ক বিজয়'।
তবে ৯/১১-এ তিন হাজার আমেরিকানের মৃত্যু, মধ্যপ্রাচ্যে আরো অগণিত, ইরাক এবং আফগানিস্তানে প্রায় পাঁচ লাখ মুসলিম নিহত হওয়া এবং বিন লাদেনের খোঁজে ১০ বছর পার হওয়ার পর প্রার্থনা করুন যে আর যেন কোনো 'অণুপ্রেরণাদায়ক বিজয়' না দেখতে হয়।
প্রতিশোধমূূলক আক্রমণ? সম্ভবত তা আসবে, বিশেষ করে পশ্চিমের দেশগুলোতে থাকা ছোট ছোট দলছুট গ্র"পগুলোর কাছ থেকে, যাদের সঙ্গে আল কায়দার কোনো সরাসরি যোগাযোগ নেই। নিশ্চিত থাকুন, কেউ না কেউ ইতোমধ্যেই 'শহীদ ওসামা বিন লাদেনের সেনাদলের' স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে। হতে পারে তা আফগানিস্তানে তালেবানের মধ্য থেকেও।
তবে গত চার মাসে আরব বিশ্বে যে গণঅভ্যূত্থানগুলো ঘটেছে তার সামগ্রিক অর্থ হচ্ছে আল কায়দা ইতোমধ্যেই রাজনৈতিকভাবে মৃত।
বিন লাদেন সারা বিশ্বকে বলেছিলেন, অবশ্যই- আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বলেছিলেন, আরব বিশ্বের পশ্চিমমুখী শাসকদের, মুবারক ও বেন আলিদের স্বৈরতন্ত্র ধ্বংস করতে চান তিনি। এক নতুন ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠা তার স্বপ্ন। কিন্তু গত কয়েক মাসে লাখ লাখ আরব মুসলিম জেগে উঠেছিলো এবং শহীদ হতেও প্রস্তুত ছিলো। তবে এ শহীদ হওয়াটা ইসলামের জন্য নয়, নিজেদের মুক্তি ও গণতন্ত্রের জন্য। বিন লাদেন স্বৈরশাসকদের হাত থেকে রেহাই পাননি।
জনগণ পেয়েছে এবং তারা খিলাফত চায়নি।
আমি এ মানুষটার (বিন লাদেন) সঙ্গে তিন বার সাক্ষাৎ করেছিলাম, তবে একটা প্রশ্নই তাকে জিজ্ঞেস করা বাকি রয়ে গেলো আমার- ইসলামের পতাকাতলে না গিয়ে যার যার জাতির পতাকা নিয়ে, মুসলিম ও খ্রিস্টানরাও যে অভ্যূত্থানগুলোতে একসঙ্গে লড়েছে, তার দল আল-কায়দার সদস্যরা যাদেরকে খুশি মনেই খুন করতে ভালোবাসতো, এ বছরের ওই গণঅভ্যূত্থানগুলো দেখার পর তিনি কী ভাবছেন?
নিজের চোখে তার সাফল্য আল-কায়দা সৃষ্টি করা, যার সদস্য হওয়ার জন্য কোনো পরিচয়পত্র বা সনদ লাগে না। যে কোনো দিন সকালে উঠে আপনি ভাবলেন- আপনি আল-কায়দার সদস্য হবেন এবং আপনি তা হয়ে গেলেন। তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, তবে কখনোই ময়দানে লড়াই করা যোদ্ধা ছিলেন না। তার গুহায় কোনো কম্পিউটার ছিলো না, বোমা সক্রিয় করার জন্য ছিলো না কোনো মোবাইল ফোন।
আরব শাসকরা যখন বিনা চ্যালেঞ্জেই আমাদের (পশ্চিমের) সমর্থন নিয়ে শাসন চালিয়ে যাচ্ছিলেন, যারা প্রায় কখনোই আমেরিকার নীতি নিয়ে কিছু বলেননি; কেবল বিন লাদেনই এসবের বিরুদ্ধে কথা বলছিলেন।
আরবরা কখনোই কোনো উঁচু ভবনের ওপর বিমান নিয়ে আছড়ে পড়তে চায়নি, কিন্তু তাদের না বলা কথাগুলো বলার মানুষটিকে তারা পছন্দ করতো। কিন্তু এখন, ধীরে ধীরে, তারা এসব কথা বলতে পারছে। বিন লাদেনকে তাদের আর প্রয়োজন নেই। তিনি এখন অ-দরকারি মানুষে পরিণত হয়ে পড়েছিলেন।
কিন্তু গুহা বিষয়ক কথাবার্তায়, লাদেনের মৃত্যু পাকিস্তানকে স্পষ্টভাবেই সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি কয়েক মাস ধরে আমাদের বলে আসছিলেন, বিন লাদেন আফগানিস্তানের কোনো গুহায় লুকিয়ে আছেন। এখন দেখা যাচ্ছে, তিনি পাকিস্তানের একটি সুরম্য অট্টালিকায় ছিলেন। প্রতারিত? নিঃসন্দেহে তিনি প্রতারিত হয়েছেন। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী অথবা আন্তঃবাহিনী গোয়েন্দা সংস্থার দ্বারা? খুব সম্ভবত উভয়ের দ্বারাই।
পাকিস্তান জানতো, তিনি কোথায় আছেন।
১৮৫৩ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ মেজর জেমস অ্যাবোটের প্রতিষ্ঠিত অ্যাবোটাবাদ শহরটিতে শুধু দেশটির মিলিটারি কলেজেরই অবস্থান নয়, পাকিস্তানের নর্দার্ন আর্মি কর্পস এর সেকেন্ড ডিভিশনের সদর দপ্তরও সেখানে রয়েছে। খুব বেশি হলে এক বছর আগে আমি আরেক 'মোস্ট ওয়ান্টেডম্যান' এর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম, যিনি এমন একটি সংগঠনের নেতা যা মুম্বাই বোমা হামলার জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। তাকে আমি দেখেছি পাকিস্তানের লাহোর শহরে- মেশিনগান হাতে উর্দিধারী পাকিস্তানি পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে।
অবশ্যই, আরেকটি অবশ্যম্ভাবী প্রশ্ন থেকে যায়, যার উত্তর মেলে না- তারা কি বিন লাদেনকে গ্রেপ্তার করতে পারতো না? সিআইএ বা ইউএস নেভি সিলস বা ইউএস স্পেশাল ফোর্সেস বা যুক্তরাষ্ট্রের যে বাহিনীই লাদেনকে হত্যা করুক না কেন, তাদের কি তাকে জীবিত আটকে ফেলার সক্ষমতা ছিলো না? তার মৃত্যুকে বারাক ওবামা 'ন্যায়বিচার' বলে অ্যাখায়িত করেছেন।
আগের দিনে 'ন্যায়বিচার' বলতে বোঝানো হতো একটি যথাযথ প্রক্রিয়া- আদালত, শুনানি, আত্মপক্ষ সমর্থন, বিচার কার্যক্রম। সাদ্দামের ছেলেদের মতোই বিন লাদেনকেও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তিনি নিজেও কখনো জীবিত ধরা দিতে চাইতেন না- যে ঘরে তাকে হত্যা করা হয় সেখানে রক্তের দরিয়া দেখা গিয়েছিলো।
অবশ্য এ ধরনের বিচার প্রক্রিয়া বিন লাদেনের চেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় ফেলতো আরো কিছু মানুষকে। নিশ্চয়ই তিনি বলতেন আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের সময় সিআইএ'র সঙ্গে তার যোগাযোগের কথা, অথবা ইসলামাবাদে সৌদি আরবের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান প্রিন্স তুর্কির সঙ্গে তার সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠকের কথা।
সাদ্দামকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিলো মাত্র ১৫৩ জনকে হত্যা করার জন্য, গ্যাস প্রয়োগে হাজার হাজার কুর্দিকে মারার জন্য নয়। কারণ বলার সুযোগ পেলে সাদ্দামের কণ্ঠে শোনা যেত, এ গ্যাসের উপাদান এসেছিলো যুক্তরাষ্ট্র থেকেই। তিনি হয়তো বলতেন, ডোনাল্ড রামসফেল্ডের সঙ্গে তার বন্ধুত্বের কথা, ১৯৮০ সালে ইরান দখলের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে পাওয়া সহায়তার কথা।
মজার ব্যাপার হলো, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মানবতার বিরুদ্ধে বিশাল অপরাধের জন্য 'মোস্ট ওয়ান্টেডম্যান' হননি বিন লাদেন। তার 'ওয়াইল্ড ওয়েস্ট' উপাধি আসে তারও আগে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে হামলা এবং দাহরানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা অবস্থানের ওপর হামলার পর।
সবসময়ই ক্রুজ মিসাইল হামলার অপেক্ষা করতেন তিনি (বিন লাদেন)- তার সঙ্গে বসে থাকার সময় আমিও তা-ই করছিলাম। এর আগেও তিনি মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করেছেন- ২০০১ সালে তোরা বোরা পাহাড়ের গুহায়, যখন তার দেহরক্ষীরা তাকে সেখানে অবস্থান করে লড়াই করার বদলে পাহাড় ডিঙিয়ে পাকিস্তানে নিয়ে আসে। তিনি কিছু সময় কাটান করাচিতে- করাচির প্রতি মোহাবিষ্ট ছিলেন তিনি। পাকিস্তানের সাবেক রাজধানী করাচির বিভিন্ন স্থানে বিন লাদেনের সমর্থনে দেয়ালচিত্রের ছবিও দিয়েছিলেন আমাকে; প্রশংসা করেছিলেন ওই শহরের ইমামদের।
অন্যান্য মুসলিম গোষ্ঠীর সঙ্গে তার (বিন লাদেন) সম্পর্ক ছিলো খুবই ধোঁয়াশাচ্ছন্ন।
আমি যখন আফগানিস্তানে তার সঙ্গে দেখা করি, তখন তালেবান বাহিনীকেও ভয় পেতেন তিনি। তার প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে রাতের বেলা জালালাবাদে যেতে আমাকে ছাড়তে সায় দেননি তিনি। এর বদলে পরদিন সকালে আমার যাত্রার সময় তার লেফটেন্যান্টকে আমার নিরাপত্তার দায়িত্ব দেন তিনি।
তার অনুসারীরা শিয়া মুসলমানদের বিপথগামী ও স্বৈরশাসকদের নাস্তিক বলে মনে করতো এবং ঘৃণা করতো- কিন্তু ইরাকের প্রাক্তন বাথিস্টদের আমেরিকার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সহায়তা করতে প্রস্তুত ছিলেন তিনি, যা একটি অডিওটেপে ব্যক্তও করেন তিনি। তিনি কখনোই হামাসের প্রশংসা করেননি এবং গতকাল তাদের দেওয়া 'পবিত্র যোদ্ধা' উপাধির যোগ্য ছিলেন না।
২০০১ সালের পরে আমি বিন লাদেনের সঙ্গে অনিয়মিতভাবে বিভিন্ন অপ্রত্যক্ষ সূত্রে যোগাযোগ রাখি। এর মধ্যে একবার পাকিস্তানে তার বিশ্বস্ত সহযোগীর সঙ্গে গোপন এক স্থানে সাক্ষাৎ করি। আমি ১২টি প্রশ্নের একটি তালিকা তৈরি করেছিলাম, যার প্রথমটি ছিলো- তার কর্মকাণ্ডের ফলস্বরূপ দুটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের স্বীকার হওয়ার পর তিনি কী ধরনের জয় দাবি করেন?
বেশ কয়েক সপ্তাহ এরও কোনো উত্তর পাইনি আমি। এরপর এক সপ্তাহান্তে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইসে একটি বক্তৃতা দেওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে আমি জানতে পারলাম, বিন লাদেনের বক্তব্য সম্বলিত একটি অডিওটেপ প্রকাশ করেছে আল জাজিরা। আমার নাম উল্লেখ না করে একে একে আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলেন তিনি।
বললেন, হ্যাঁ, তিনি চান যুক্তরাষ্ট্র মুসলিম বিশ্বে প্রবেশ করুক, যাতে তিনি তাদের ধ্বংস করতে পারেন।
যখন ওয়াল স্ট্রিটের সাংবাদিক ড্যানিয়েল পার্ল অপহৃত হলো, আমি দি ইনডিপেন্ডেন্টে একটি বিশাল প্রবন্ধ লিখি যাতে আমি বিন লাদেনকে তার জীবন বাঁচানোর অনুরোধ জানাই। ২০০১ সালে আফগানিস্তানের সীমান্তে মার খাওয়ার পরে পার্ল ও তার স্ত্রী আমার দেখাশোনা করেছিলো। তার পরিচিত অনেকের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্যও সে আমাকে দিয়েছিলো। অনেকদিন পরে আমি জানতে পারি, বিন লাদেন আমার এ প্রবন্ধটি পড়ে অনেক দুঃখ পেয়েছিলেন।
কিন্তু পার্লকে ততদিনে হত্যা করা হয়েছে, অন্তত তিনি তাই জানতেন।
বিন লাদেনের নিজের উচ্চাভিলাষ ক্ষতিগ্রস্ত করেছিলো তার পরিবারকেও। একজন স্ত্রী তাকে ছেড়ে গিয়েছিলো, আরো দুজন রোববার যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় নিহত হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
১৯৯৪ সালে আফগানিস্তানে ওসামার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তার ছেলে ওমরের সঙ্গে আমার কথা হয়। সুন্দরদর্শন ওই কিশোরকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, সে কি খুশি? সে উত্তর দিয়েছিলো ইংরেজিতে, 'ইয়েস'।
কিন্তু গতবছর প্রকাশিত তার বই 'লিভিং বিন লাদেন'-এ লিখেছে কীভাবে তার প্রিয় কুকুরটিকে রাসায়নিক যুদ্ধাস্ত্রের পরীক্ষায় হত্যা করেন তার বাবা। বইটিতে বাবাকে 'শয়তান লোক' হিসেবে আখ্যায়িত করে সে। এ বইয়ে আমাদের সাক্ষাতের কথাও রোমন্থন করেছে সে; লিখেছে, ওই সময় আমাকে তার বলা উচিত ছিলো- না, সে সন্তান হিসেবে সুখী নয়।
গতকাল (সোমবার) দুপুরের মধ্যে আমি আরবদের কাছ থেকে তিনটি ফোন পাই, এদের প্রত্যেকেই নিশ্চিত, আমেরিকানরা বিন লাদেনের মতো দেখতে অন্য আরেকজনকে মেরেছে। যেমন অনেক ইরাকি এখনো বিশ্বাস করে- ২০০৩ সালে সাদ্দামের ছেলেদের মারা হয়নি, ফাঁসিতে ঝোলানো ব্যক্তিটিও সাদ্দাম নয়।
আর, আল-কায়দা নিশ্চয়ই আমাদের জানাবে।
যদি আমরা ভুল জানি আর এটা সত্যিই নকল বিন লাদেন হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই আবারো আসল বিন লাদেন আরেকটি ভিডিওটেপ নিয়ে হাজির হবেন আমাদের সামনে, এবং প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পরবর্তী নির্বাচনে নিশ্চিতভাবেই হারবেন।
ভাষান্তর : কাজী শাহরিন হক
WARNING: Any unauthorised use or reproduction of bdnews24.com content for commercial purposes is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.
Share |
শীর্ষ খবর
•'হত্যার সময় বিন লাদেন নিরস্ত্র ছিলেন'
•সংবিধান সংশোধন
সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে কমিটি
•খনির পর রাজপথ-রেলপথ অবরোধ বড়পুকুরিয়ায়
•আমদানিতে রেকর্ড, চাপের মুখে রিজার্ভ
•'পাকিস্তান জানতো ওসামার খবর, অবশ্যই জানতো'
•সপ্তম সংশোধনী
রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি মুলতবি
•আর্টস বৈঠক | মেহেরজান বিতর্ক (কিস্তি ৫)
•পূরবী বসু | জীবনবৃক্ষে রিপু-রঙ
•আর্টস ই-বুক | চণ্ডীচরণ মুনশী’র ‘তোতা ইতিহাস (১৮০৫)’
•সাইমন জাকারিয়া | বাংলাদেশের নাচ
আরো আর্টস >>
অন্যান্য খবর
•'হত্যার সময় বিন লাদেন নিরস্ত্র ছিলেন'
•পাকিস্তানের হেফাজতে লাদেনের স্ত্রী, সন্তানরা
•লাদেনের মৃত্যু পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সঙ্কট ও সুযোগ
•সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়বে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান
•লাদেন অভিযান নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন ওবামার সহযোগীরা
•ভিডিওতে দেখছিলেন ওবামা
•'ডিএনএ পরীক্ষায় লাদেনের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে'
•আরব সাগরে সমাহিত ওসামা বিন লাদেন
•পাকিস্তানের বাড়িটিতে ৫-৬ বছর ছিলেন লাদেন: যুক্তরাষ্ট্র
•ওসামা হত্যায় পাকিস্তান ছিলো না: জারদারি
সব খবর
সাম্প্রতিক খবর
•সংবিধান সংশোধন
সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে কমিটি
•খনির পর রাজপথ-রেলপথ অবরোধ বড়পুকুরিয়ায়
•দাউদকান্দিতে বাসচাপায় নিহত ৩
•সপ্তম সংশোধনী
রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি মুলতবি
•ড্র-ই ফাইনালে তুললো বার্সেলোনাকে
'পাকিস্তান জানতো ওসামার খবর, অবশ্যই জানতো'
Tue, May 3rd, 2011 8:53 pm BdST Dial 2000 from your GP mobile for latest news
রবার্ট ফিস্ক
প্রায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়া মধ্যবয়সি এক লোক, রাজনৈতিক ইতিহাসে যিনি ব্যর্থ হিসেবে চিহ্নিত, মারা গেলেন গতকাল পাকিস্তানে। এমন এক সময় তিনি মারা গেলেন, যখন স্বাধীনতা আর গণতন্ত্রের দাবিতে লাখ লাখ আরবের বিক্ষোভে উত্তাল মধ্যপ্রাচ্য। আর তার মৃত্যুতে পুরো পৃথিবী উন্মাদ হয়ে উঠলো।
নিজের জন্মসনদ সরবরাহ করার পরপরই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট মধ্যরাতের আঁধারে হুড়মুড়িয়ে উঠে আমাদেরকে ওসামা বিন লাদেনের প্রায় তাৎক্ষণিক মৃত্যুসনদ ধরিয়ে দিলেন, যাকে কি না সেনাবাহিনীর এক মেজরের নামে হওয়া সাবেক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের এক শহরে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের বলা হলো, তার মাথায় একটা মাত্র গুলি করা হয়েছিলো। কিন্তু তার মৃতদেহ গোপনে আফগানিস্তানে নিয়ে যাওয়া, একই রকম গোপনীয়তায় তাকে সমুদ্রে সমাহিত করা, মাজারে পরিণত হওয়ার ভয়ে অদ্ভুত এবং অস্বস্তিদায়কভাবে তার মরদেহটি ফেলে দেওয়ার ঘটনা ছিলো প্রায় ওই মানুষটি এবং তার ভীতি জাগানো সংগঠনের মতোই অস্বস্তিদায়ক।
আমেরিকানরা উন্মত্ত হয়ে উঠলো। ডেভিড ক্যামেরন মনে করছেন এটা 'একটা বিশাল অগ্রগতি'।
ভারত একে এক 'বিজয়ের মাইলফলক' হিসেবে বর্ণনা করলো। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গর্ব করে বললেন 'অনুপ্রেরণাদায়ক বিজয়'। তবে ৯/১১-এ তিন হাজার আমেরিকানের মৃত্যু, মধ্যপ্রাচ্যে আরো অগণিত, ইরাক এবং আফগানিস্তানে প্রায় পাঁচ লাখ মুসলিম নিহত হওয়া এবং বিন লাদেনের খোঁজে ১০ বছর পার হওয়ার পর প্রার্থনা করুন যে আর যেন কোনো 'অণুপ্রেরণাদায়ক বিজয়' না দেখতে হয়।
প্রতিশোধমূূলক আক্রমণ? সম্ভবত তা আসবে, বিশেষ করে পশ্চিমের দেশগুলোতে থাকা ছোট ছোট দলছুট গ্র"পগুলোর কাছ থেকে, যাদের সঙ্গে আল কায়দার কোনো সরাসরি যোগাযোগ নেই। নিশ্চিত থাকুন, কেউ না কেউ ইতোমধ্যেই 'শহীদ ওসামা বিন লাদেনের সেনাদলের' স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে।
হতে পারে তা আফগানিস্তানে তালেবানের মধ্য থেকেও।
তবে গত চার মাসে আরব বিশ্বে যে গণঅভ্যূত্থানগুলো ঘটেছে তার সামগ্রিক অর্থ হচ্ছে আল কায়দা ইতোমধ্যেই রাজনৈতিকভাবে মৃত। বিন লাদেন সারা বিশ্বকে বলেছিলেন, অবশ্যই- আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বলেছিলেন, আরব বিশ্বের পশ্চিমমুখী শাসকদের, মুবারক ও বেন আলিদের স্বৈরতন্ত্র ধ্বংস করতে চান তিনি। এক নতুন ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠা তার স্বপ্ন। কিন্তু গত কয়েক মাসে লাখ লাখ আরব মুসলিম জেগে উঠেছিলো এবং শহীদ হতেও প্রস্তুত ছিলো।
তবে এ শহীদ হওয়াটা ইসলামের জন্য নয়, নিজেদের মুক্তি ও গণতন্ত্রের জন্য। বিন লাদেন স্বৈরশাসকদের হাত থেকে রেহাই পাননি। জনগণ পেয়েছে এবং তারা খিলাফত চায়নি।
আমি এ মানুষটার (বিন লাদেন) সঙ্গে তিন বার সাক্ষাৎ করেছিলাম, তবে একটা প্রশ্নই তাকে জিজ্ঞেস করা বাকি রয়ে গেলো আমার- ইসলামের পতাকাতলে না গিয়ে যার যার জাতির পতাকা নিয়ে, মুসলিম ও খ্রিস্টানরাও যে অভ্যূত্থানগুলোতে একসঙ্গে লড়েছে, তার দল আল-কায়দার সদস্যরা যাদেরকে খুশি মনেই খুন করতে ভালোবাসতো, এ বছরের ওই গণঅভ্যূত্থানগুলো দেখার পর তিনি কী ভাবছেন?
নিজের চোখে তার সাফল্য আল-কায়দা সৃষ্টি করা, যার সদস্য হওয়ার জন্য কোনো পরিচয়পত্র বা সনদ লাগে না। যে কোনো দিন সকালে উঠে আপনি ভাবলেন- আপনি আল-কায়দার সদস্য হবেন এবং আপনি তা হয়ে গেলেন।
তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, তবে কখনোই ময়দানে লড়াই করা যোদ্ধা ছিলেন না। তার গুহায় কোনো কম্পিউটার ছিলো না, বোমা সক্রিয় করার জন্য ছিলো না কোনো মোবাইল ফোন। আরব শাসকরা যখন বিনা চ্যালেঞ্জেই আমাদের (পশ্চিমের) সমর্থন নিয়ে শাসন চালিয়ে যাচ্ছিলেন, যারা প্রায় কখনোই আমেরিকার নীতি নিয়ে কিছু বলেননি; কেবল বিন লাদেনই এসবের বিরুদ্ধে কথা বলছিলেন।
আরবরা কখনোই কোনো উঁচু ভবনের ওপর বিমান নিয়ে আছড়ে পড়তে চায়নি, কিন্তু তাদের না বলা কথাগুলো বলার মানুষটিকে তারা পছন্দ করতো। কিন্তু এখন, ধীরে ধীরে, তারা এসব কথা বলতে পারছে।
বিন লাদেনকে তাদের আর প্রয়োজন নেই। তিনি এখন অ-দরকারি মানুষে পরিণত হয়ে পড়েছিলেন।
কিন্তু গুহা বিষয়ক কথাবার্তায়, লাদেনের মৃত্যু পাকিস্তানকে স্পষ্টভাবেই সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি কয়েক মাস ধরে আমাদের বলে আসছিলেন, বিন লাদেন আফগানিস্তানের কোনো গুহায় লুকিয়ে আছেন। এখন দেখা যাচ্ছে, তিনি পাকিস্তানের একটি সুরম্য অট্টালিকায় ছিলেন।
প্রতারিত? নিঃসন্দেহে তিনি প্রতারিত হয়েছেন। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী অথবা আন্তঃবাহিনী গোয়েন্দা সংস্থার দ্বারা? খুব সম্ভবত উভয়ের দ্বারাই। পাকিস্তান জানতো, তিনি কোথায় আছেন।
১৮৫৩ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ মেজর জেমস অ্যাবোটের প্রতিষ্ঠিত অ্যাবোটাবাদ শহরটিতে শুধু দেশটির মিলিটারি কলেজেরই অবস্থান নয়, পাকিস্তানের নর্দার্ন আর্মি কর্পস এর সেকেন্ড ডিভিশনের সদর দপ্তরও সেখানে রয়েছে। খুব বেশি হলে এক বছর আগে আমি আরেক 'মোস্ট ওয়ান্টেডম্যান' এর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম, যিনি এমন একটি সংগঠনের নেতা যা মুম্বাই বোমা হামলার জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়।
তাকে আমি দেখেছি পাকিস্তানের লাহোর শহরে- মেশিনগান হাতে উর্দিধারী পাকিস্তানি পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে।
অবশ্যই, আরেকটি অবশ্যম্ভাবী প্রশ্ন থেকে যায়, যার উত্তর মেলে না- তারা কি বিন লাদেনকে গ্রেপ্তার করতে পারতো না? সিআইএ বা ইউএস নেভি সিলস বা ইউএস স্পেশাল ফোর্সেস বা যুক্তরাষ্ট্রের যে বাহিনীই লাদেনকে হত্যা করুক না কেন, তাদের কি তাকে জীবিত আটকে ফেলার সক্ষমতা ছিলো না? তার মৃত্যুকে বারাক ওবামা 'ন্যায়বিচার' বলে অ্যাখায়িত করেছেন। আগের দিনে 'ন্যায়বিচার' বলতে বোঝানো হতো একটি যথাযথ প্রক্রিয়া- আদালত, শুনানি, আত্মপক্ষ সমর্থন, বিচার কার্যক্রম। সাদ্দামের ছেলেদের মতোই বিন লাদেনকেও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তিনি নিজেও কখনো জীবিত ধরা দিতে চাইতেন না- যে ঘরে তাকে হত্যা করা হয় সেখানে রক্তের দরিয়া দেখা গিয়েছিলো।
অবশ্য এ ধরনের বিচার প্রক্রিয়া বিন লাদেনের চেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় ফেলতো আরো কিছু মানুষকে। নিশ্চয়ই তিনি বলতেন আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের সময় সিআইএ'র সঙ্গে তার যোগাযোগের কথা, অথবা ইসলামাবাদে সৌদি আরবের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান প্রিন্স তুর্কির সঙ্গে তার সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠকের কথা। সাদ্দামকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিলো মাত্র ১৫৩ জনকে হত্যা করার জন্য, গ্যাস প্রয়োগে হাজার হাজার কুর্দিকে মারার জন্য নয়। কারণ বলার সুযোগ পেলে সাদ্দামের কণ্ঠে শোনা যেত, এ গ্যাসের উপাদান এসেছিলো যুক্তরাষ্ট্র থেকেই। তিনি হয়তো বলতেন, ডোনাল্ড রামসফেল্ডের সঙ্গে তার বন্ধুত্বের কথা, ১৯৮০ সালে ইরান দখলের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে পাওয়া সহায়তার কথা।
মজার ব্যাপার হলো, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মানবতার বিরুদ্ধে বিশাল অপরাধের জন্য 'মোস্ট ওয়ান্টেডম্যান' হননি বিন লাদেন। তার 'ওয়াইল্ড ওয়েস্ট' উপাধি আসে তারও আগে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে হামলা এবং দাহরানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা অবস্থানের ওপর হামলার পর।
সবসময়ই ক্রুজ মিসাইল হামলার অপেক্ষা করতেন তিনি (বিন লাদেন)- তার সঙ্গে বসে থাকার সময় আমিও তা-ই করছিলাম। এর আগেও তিনি মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করেছেন- ২০০১ সালে তোরা বোরা পাহাড়ের গুহায়, যখন তার দেহরক্ষীরা তাকে সেখানে অবস্থান করে লড়াই করার বদলে পাহাড় ডিঙিয়ে পাকিস্তানে নিয়ে আসে। তিনি কিছু সময় কাটান করাচিতে- করাচির প্রতি মোহাবিষ্ট ছিলেন তিনি।
পাকিস্তানের সাবেক রাজধানী করাচির বিভিন্ন স্থানে বিন লাদেনের সমর্থনে দেয়ালচিত্রের ছবিও দিয়েছিলেন আমাকে; প্রশংসা করেছিলেন ওই শহরের ইমামদের।
অন্যান্য মুসলিম গোষ্ঠীর সঙ্গে তার (বিন লাদেন) সম্পর্ক ছিলো খুবই ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। আমি যখন আফগানিস্তানে তার সঙ্গে দেখা করি, তখন তালেবান বাহিনীকেও ভয় পেতেন তিনি। তার প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে রাতের বেলা জালালাবাদে যেতে আমাকে ছাড়তে সায় দেননি তিনি। এর বদলে পরদিন সকালে আমার যাত্রার সময় তার লেফটেন্যান্টকে আমার নিরাপত্তার দায়িত্ব দেন তিনি।
তার অনুসারীরা শিয়া মুসলমানদের বিপথগামী ও স্বৈরশাসকদের নাস্তিক বলে মনে করতো এবং ঘৃণা করতো- কিন্তু ইরাকের প্রাক্তন বাথিস্টদের আমেরিকার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সহায়তা করতে প্রস্তুত ছিলেন তিনি, যা একটি অডিওটেপে ব্যক্তও করেন তিনি। তিনি কখনোই হামাসের প্রশংসা করেননি এবং গতকাল তাদের দেওয়া 'পবিত্র যোদ্ধা' উপাধির যোগ্য ছিলেন না।
২০০১ সালের পরে আমি বিন লাদেনের সঙ্গে অনিয়মিতভাবে বিভিন্ন অপ্রত্যক্ষ সূত্রে যোগাযোগ রাখি। এর মধ্যে একবার পাকিস্তানে তার বিশ্বস্ত সহযোগীর সঙ্গে গোপন এক স্থানে সাক্ষাৎ করি। আমি ১২টি প্রশ্নের একটি তালিকা তৈরি করেছিলাম, যার প্রথমটি ছিলো- তার কর্মকাণ্ডের ফলস্বরূপ দুটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের স্বীকার হওয়ার পর তিনি কী ধরনের জয় দাবি করেন?
বেশ কয়েক সপ্তাহ এরও কোনো উত্তর পাইনি আমি।
এরপর এক সপ্তাহান্তে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইসে একটি বক্তৃতা দেওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে আমি জানতে পারলাম, বিন লাদেনের বক্তব্য সম্বলিত একটি অডিওটেপ প্রকাশ করেছে আল জাজিরা। আমার নাম উল্লেখ না করে একে একে আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলেন তিনি। বললেন, হ্যাঁ, তিনি চান যুক্তরাষ্ট্র মুসলিম বিশ্বে প্রবেশ করুক, যাতে তিনি তাদের ধ্বংস করতে পারেন।
যখন ওয়াল স্ট্রিটের সাংবাদিক ড্যানিয়েল পার্ল অপহৃত হলো, আমি দি ইনডিপেন্ডেন্টে একটি বিশাল প্রবন্ধ লিখি যাতে আমি বিন লাদেনকে তার জীবন বাঁচানোর অনুরোধ জানাই। ২০০১ সালে আফগানিস্তানের সীমান্তে মার খাওয়ার পরে পার্ল ও তার স্ত্রী আমার দেখাশোনা করেছিলো।
তার পরিচিত অনেকের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্যও সে আমাকে দিয়েছিলো। অনেকদিন পরে আমি জানতে পারি, বিন লাদেন আমার এ প্রবন্ধটি পড়ে অনেক দুঃখ পেয়েছিলেন। কিন্তু পার্লকে ততদিনে হত্যা করা হয়েছে, অন্তত তিনি তাই জানতেন।
বিন লাদেনের নিজের উচ্চাভিলাষ ক্ষতিগ্রস্ত করেছিলো তার পরিবারকেও। একজন স্ত্রী তাকে ছেড়ে গিয়েছিলো, আরো দুজন রোববার যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় নিহত হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
১৯৯৪ সালে আফগানিস্তানে ওসামার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তার ছেলে ওমরের সঙ্গে আমার কথা হয়। সুন্দরদর্শন ওই কিশোরকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, সে কি খুশি? সে উত্তর দিয়েছিলো ইংরেজিতে, 'ইয়েস'। কিন্তু গতবছর প্রকাশিত তার বই 'লিভিং বিন লাদেন'-এ লিখেছে কীভাবে তার প্রিয় কুকুরটিকে রাসায়নিক যুদ্ধাস্ত্রের পরীক্ষায় হত্যা করেন তার বাবা। বইটিতে বাবাকে 'শয়তান লোক' হিসেবে আখ্যায়িত করে সে। এ বইয়ে আমাদের সাক্ষাতের কথাও রোমন্থন করেছে সে; লিখেছে, ওই সময় আমাকে তার বলা উচিত ছিলো- না, সে সন্তান হিসেবে সুখী নয়।
গতকাল (সোমবার) দুপুরের মধ্যে আমি আরবদের কাছ থেকে তিনটি ফোন পাই, এদের প্রত্যেকেই নিশ্চিত, আমেরিকানরা বিন লাদেনের মতো দেখতে অন্য আরেকজনকে মেরেছে। যেমন অনেক ইরাকি এখনো বিশ্বাস করে- ২০০৩ সালে সাদ্দামের ছেলেদের মারা হয়নি, ফাঁসিতে ঝোলানো ব্যক্তিটিও সাদ্দাম নয়। আর, আল-কায়দা নিশ্চয়ই আমাদের জানাবে।
যদি আমরা ভুল জানি আর এটা সত্যিই নকল বিন লাদেন হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই আবারো আসল বিন লাদেন আরেকটি ভিডিওটেপ নিয়ে হাজির হবেন আমাদের সামনে, এবং প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পরবর্তী নির্বাচনে নিশ্চিতভাবেই হারবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।