ইসলামাবাদে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিশেষ একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ২ হাজার ৪০০ ফুট দূরত্বে লুকিয়ে ছিলেন ওসামা বিন লাদেন। সেখানেই একটি ভবনে রোববার রাতে মার্কিন সেনাবাহিনীর ছোট্ট একটি দলের অভিযানে নিহত হন আল কায়েদার শীর্ষ নেতা।
পাকিস্তানের ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিকে ব্রিটেনের সান্ডহার্স্ট সেনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সমপর্যায়ের বিবেচনা করা হয় বলে বিবিসি জানিয়েছে।
রাজধানী ইসলামাবাদের উত্তরাঞ্চলে আবোতাবাদ ক্যান্টনমেন্টের কাছেই এর অবস্থান। এলাকাটিতে প্রচুর সেনা ও অনেকগুলো চেকপয়েন্ট রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি জানায়, পাকিস্তানের স্থানীয় সময় রোববার রাত ১০টা ৩০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সাড়ে ১১টা) এ অভিযান শুরু হয়।
মাত্র ৪৫ মিনিনটের অভিযানেই মারা পড়েন ওসামা, যাকে গত ১০ বছর ধরে তন্নতন্ন করে খুঁজছিলো যুক্তরাষ্ট্র।
খুব স্বল্প উচ্চতা দিয়ে দুই থেকে তিনটি হেলিকপ্টার উড়ে যাওয়ার এলাকাবাসীরা কিছুটা আতঙ্কিত বোধ করেন।
ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ভেতরেই একটি বড় তিনতলা ভবন ছিলো অভিযানের লক্ষ্য। ভবনটির বাইরে হেলিকপ্টারগুলো অবতরণ করে।
হেলিকপ্টার থেকে নেমে সেনারা পশতু ভাষায় স্থানীয়দের সঙ্গে কথাও বলেন।
এরপর আশপাশের এলাকায় অবস্থানকারী মানুষদের বাতি নিভিয়ে ঘরের ভেতরেই থাকতে বলা হয়। কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় গোলাগুলি।
গোলাগুলির সময় স্থানীয়রা একটি হেলিকপ্টারে আগুন লাগতে দেখেছেন।
প্রায় ৯ হাজার বর্গফুট জমির ওপর ওই তিনতলা ভবনটির অবস্থান।
কিন্তু চতুর্দিকে ১৪ ফুট উঁচু দেওয়াল থাকায় বাইরে থেকে ভেতরের ঘটনা ভালোভাবে দেখা যায়নি। দেয়ালের ওপর কাঁটাতারের বেড়া ও বিভিন্ন পয়েন্টে ক্যামেরা লাগানো ছিলো।
ওই বাড়িতে প্রবেশে দুটি ফটক ছিলো। তবে টেলিফোন বা ইন্টারনেটের কোনো সংযোগ ছিলো না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, অভিযান শেষে সেনাদের ওই চত্বর থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।
এ সময় তারা অন্য কাউকে নিয়ে আসছিলো কি না, তা বোঝা যায়নি।
তবে নারী ও শিশুরাও ওই ভবনে ছিলো বলে স্থানীয়রা জানায়।
একজন পশতু ১০ থেকে ১২ বছর আগে ওই বাড়ি নির্মাণ করেন। সেখানে কে বা কারা বসবাস করছে, সে বিষয়ে স্থানীয়দের কোনো ধারণাই ছিলো না।
অভিযান শেষে পাকিস্তানি সেনারা সেখানে যায় এবং ওই অঞ্চলটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়।
*******************
আল কায়দার শীর্ষ নেতা হওয়ার নেপথ্যে...
সৌদি আরবে জন্ম নিলেও পারিবারিক ধারার বাইরে গিয়েই আল কায়দার শীর্ষ নেতায় পরিণত হন ওসামা বিন লাদেন, যাকে এক নম্বর শত্র" হিসেবে দেখতো যুক্তরাষ্ট্র।
রোববার পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ওসামা নিহত হন বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নিশ্চিত করেছেন।
ওসামার জন্ম ১৯৫৭ সালে, সৌদি আরবে। আবাসন শিল্পে যুক্ত মোহম্মদ বিন লাদেনের ৫০ সন্তানের এক জন তিনি।
১৭ বছর বয়সে ওসামা প্রথমবারের মতো বিয়ে করেন দূর সম্পর্কের এক সিরীয় বোনকে।
তার মোট পাঁচ বার বিয়ে ও কমপক্ষে ২৩ জন সন্তানের কথা জানা যায়।
মুসলমানরা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সন্ত্রাসবাদের শিকার হচ্ছে বলে বিশ্বাস করতেন ওসামা। ১৯৯০'র দশকে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন মার্কিন স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত ছিলেন তিনি।
এর পর তাকে পরিবার থেকে ত্যাজ্য করা হয়, বাতিল হয় সৌদি আরবের নাগরিকত্বও।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে ১৯৮০'র দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতায় অংশ নেন ওসামা।
ওই সময়ই 'আল-কায়েদা' গঠন করেন তিনি।
১৯৯০'র দশকে তিনি আবার আফগানিস্তানে ফিরে আসেন। এখানে তালেবান শাসনের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন ক্যাম্পে সারা বিশ্ব থেকে আসা ইসলামী জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ চালিয়ে যান তিনি।
১৯৯৮ সালে পূর্ব আফ্রিকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে বোমা হামলার পর আফগানিস্তানের ক্যাম্পে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অক্ষত ছিলেন ওসামা। কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০১ সালে তোড়া বোড়া পর্বতে জঙ্গি অবস্থানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমাগত বোমা হামলার সময় অল্পের জন্য বেঁচে যান আল কায়দা নেতা।
বলা হয়, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ও পেন্টাগনে হামলার অনুমোদন দেন লাদেন। ওই হামলায় প্রায় ৩ হাজার মানুষ নিহত হয়। পরে লাদেন গোপন স্থান থেকে এক বক্তব্যে বলেন, এ হামলা তার প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে।
এরপর গত এক দশক ধরে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাকড়াও অভিযান চলেছে লাদেনকে ধরতে। ধরিয়ে দিলে আড়াই কোটি ডলার পুরস্কারের খাঁড়া মাথায় নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে ছিলেন ওসামা।
২০০৯ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সচিব রবার্ট গেটস বলেন, লাদেন কোথায় আছে তা যুক্তরাষ্ট্র জানে না এবং আগের কয়েক বছর ধরে লাদেনের অবস্থান ও কার্যক্রম সম্পর্কেও তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।
২০০১ সালের সেপ্টেম্বর ১১'র ঘটনার পরে বিন লাদেন ও আল-কায়েদার দ্বিতীয় প্রধান আইমান আল-জাওয়াহিরির বক্তব্যসহ ৬০টির বেশি ভিডিও প্রকাশিত হয়।
২০০৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার হামলার ছয় বছর পূর্তিতে প্রকাশিত ভিডিওতে লাদেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার অর্থনীতি ও সামরিক ভিত্তি সত্ত্বেও দেশটি বেশ ভঙ্গুর। আগের বিভিন্ন ভিডিওতে নানা হুমকি দেওয়া হলেও এ ভিডিওতে কোনো ধরনের হুমকি দেওয়া হয়নি।
অনেক বারইতো শোনা গেলো ওসামা নিহত।
আসলে এবারওকি তেমনই কিছু ! না-কি কয়েকদিন পর আবারও দেখা যাবে নিত্য নতুন অডিও বা ভিডিও নিয়ে হাজির !...যদি সত্যিই তাই হয় তাহলে তখন কি বলবে আমেরিকা...
[কৃতজ্ঞতা:বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।