কি বলব
গ্রীষ্মের তপ্ত রোদে চারদিক যখন খাঁখাঁ করছে, প্রচণ্ড গরমে জীবন যখন ওষ্ঠাগত, শরীর থেকে ধরধর করে ঘাম ঝরছে—ঠিক এমন পরিস্থিতিতে তখন আপনি বাস, প্রাইভেটকার, রিকশা, সিএনজি অটোরিকশাসহ যে কোনো বাহনে কিংবা পায়ে হাঁটার সময় রাস্তার পাশে প্রকৃতিতে দেখতে পাবেন ব্যতিক্রমী এক দৃশ্য। নগরীর গাছে গাছে যেন মেলা বসেছে বাহারি ফুলের। যানবাহনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে দেখবেন প্রকৃতি তার আপন মহিমায় ঠিকই নিজেকে তুলে ধরেছে। দেখবেন কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, রেইনট্রি, জারুল, হিজল, সোনালু, অশোক, বসন্তরঞ্জিনী, মালতি, বকুলসহ অন্যান্য ফুলের গাছে বসেছে হাজারও রকম রঙ-বেরঙের ফুলের মেলা। রাজধানীর বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কিংবা ছাদের বাগানে বেলী, গোলাপ, মল্লিকা, বাটারফ্লাই, পর্টুলেকা, হাসনাহেনা, অ্যাস্টার, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা ইত্যাদি মৌসুমি ফুল ফুটে যেন বাড়ি আলো করে রেখেছে।
অনেকের বাসাবাড়ির ছাদেও ফুটে আছে হাজারও রকমের ফুল।
নগরজুড়ে বাহারি কৃষ্ণচূড়া দেখে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হয়তো আনমনেই আপনার মনে ভেসে উঠবে ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের চেতনায় কবি শামসুর রাহমানের লেখা সেই কালজয়ী কবিতা ‘আবার ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া থরে থরে শহরের পথে/কেমন নিবিড় হয়ে। কখনো মিছিলে কখনো-বা/একা হেঁটে যেতে যেতে মনে হয় ফুল নয়, ওরা/শহীদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ, স্মৃতিগন্ধে ভরপুর। ’
ঢাকার রমনা পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, সচিবালয়ের দক্ষিণে আবদুল গণি রোড, হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ, মানিক মিয়া এভিনিউ, জিয়া উদ্যান, নটর ডেম কলেজ, শাহবাগ, মিন্টো রোড, ধানমন্ডি, গুলশান এবং বনানীর বিভিন্ন রাস্তাসহ নগরীর অলিগলিতে যেখানেই কৃষ্ণচূড়া গাছ সেখানেই ফুলের বাহারি মনমাতানো রঙ চোখে পড়ে। ইটপাথরের জঞ্জালের মধ্যেও প্রকৃতি তার স্বমহিমায় রঙ বদলে দিচ্ছে।
যার প্রমাণ মেলে এই বৈশাখে কৃষ্ণচূড়া গাছগুলোর দিকে তাকালে। এত রঙ বোধহয় আর কোনো ফুলে নেই। শুধু ঢাকায়ই নয়, গ্রামগঞ্জেও যেখানে কৃষ্ণচূড়া গাছ সেখানেই যেন বাহারি ফুলের মেলা বসেছে। বাংলা বৈশাখ আর ইংরেজি এপ্রিল মাসে কৃষ্ণচূড়া ফুটতে শুরু করে। ফোটে জুন পর্যন্ত।
কৃষ্ণচূড়া গাছ বেশ বড় হওয়ায় লাল-কমলা রঙের ফুলে যেন আকাশ রঙিন হয়ে ওঠে। ঢাকার সংসদ ভবন এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে দিগন্তবিস্তৃত কৃষ্ণচূড়া গাছ দেখা যায়। ফুলবিষয়ক গবেষক-লেখক দ্বিজেন শর্মা তার একটি নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, কৃষ্ণচূড়ার আদিনিবাস মাদাগাস্কার।
নগরীর রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও জিয়া উদ্যানসহ বিভিন্ন স্থানে ফুটেছে প্রচুর পরিমাণ জারুল ফুল। ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব গাছ জারুল।
গোটা বাংলাদেশেই এর দেখা মেলে। শুকনো মাটি, নিম্নভূমি—সবখানেই জারুল নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে। শীতে জারুল গাছ থাকে পাতাশূন্য। বসন্তে কচিপাতা আসে। গ্রীষ্মের এ সময়ে ফোটা জারুল ফুলগুলো দেখতে অসম্ভব সুন্দর! বেগুনি রঙের থোকা থোকা ফুল।
জারুল ফুলগুলো থাকে শাখার ডগায়, পাতার ওপরের স্তরে। প্রতিটি ফুলের থাকে ছয়টি করে পাপড়ি, মাঝখানে পুংকেশরের সঙ্গে যুক্ত হলুদ পরাগকোষ। গ্রীষ্মের শুরুতেই এর ফুল ফোটে এবং শরত্ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে জারুল দেখা যায়।
কৃষ্ণচূড়া গাছের মতোই বড় গাছে থোকা থোকা ফুলের পসরা সাজিয়ে বসেছে রাধাচূড়া। রাজধানীর বিভিন্ন পার্ক, পাড়া-মহল্লা ঘুরে দেখা গেছে অসংখ্য রাধাচূড়ার গাছ।
মত্স্য ভবন থেকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, শাহবাগ হয়ে কাঁটাবনের দিকে রাস্তায় যেতে দেখা যায় বেশকিছু রাধাচূড়ার গাছ। বোটানিক্যাল গার্ডেন, জিয়া উদ্যান, সংসদ ভবন এলাকায়ও বেশকিছু রাধাচূড়ার গাছ দেখা গেছে। রাধাচূড়ার গাছ, পাতা ও ফুলের গড়ন কৃষ্ণচূড়ার কাছাকাছি; পার্থক্য শুধু রঙে। শীতে পাতা ঝরে গাছটি পাতাশূন্য হয়ে যায় আর নতুন পাতা গজায় বসন্তের মাঝামাঝি। ফুল ফোটে গ্রীষ্মের শুরুতে।
সবুজ পাতাভরা গাছের বড় বড় খাড়া মঞ্জরিতে থোকা থোকা হলুদ ফুল আর কড়া সুগন্ধ। রাধাচূড়ার গাছে বর্ষার শেষে ছোট ছোট চ্যাপ্টা, তামাটে রঙের ফল আসে। এর শোভাও অত্যন্ত মনোহর।
নগরীতে আছে অসংখ্য রেইনট্রি। এগুলোতে এখন এসেছে হাজারও ফুল।
সাদা, গোলাপি আর হালকা সবুজের পাড় দেয়া ফুটন্ত রেইনট্রি ফুল দেখতে অত্যন্ত চমত্কার। কাঠজাতীয় গাছ ও দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় গ্রামগঞ্জে ব্যাপকহারে রেইনট্রি লাগানো হয়। তবে এই রেইন্ট্রির নিচে অন্য কোনো ফসল হয় না। এমনকি যেসব পুকুরে রেইনট্রি গাছের পাতা পড়ে, সেগুলোতে মাছও ভালো হয় না।
নগরীতে আরেকটি ফুল দেখা যায়, নাম মালতী।
মালতী নাম হলেও এটি টগর গোত্রের ফুল। দেখতে অতিসুন্দর এই ফুলে পাঁচটি পাপড়ি থাকে, একটু বাতাস লাগলেই ঘুরতে শুরু করবে। সবুজ পাতার মাঝে সাদা ফুলগুলো দেখতে খুব ভালো লাগে।
থোকা থোকা বাহারি হলুদ ফুলের মেলা নিয়ে নিজেকে তুলে ধরেছে সোনালু। এই ফুল দিন দিন কমে যাচ্ছে।
এখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, রমনা পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও জিয়া উদ্যানে কিছু সোনালু গাছ দেখা যায়। গ্রামে বনজ গাছ হিসেবে পরিচিত সোনালু। গ্রামীণ জনপদে আগে যেখানে সোনালুর বাগান ছিল, এখন ওইসব স্থান দখল করে নিয়েছে রেইনট্রি আর মেহগনি।
নগরজীবনের হাজারও ব্যস্ততার ফাঁকে একটু প্রকৃতির দিকে তাকান। দেখবেন হাজারও ফুল আর প্রকৃতির সৌন্দর্যে মনে কিছুটা হলেও প্রশান্তি আসবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।