চলছে জ্যৈষ্ঠ মাস। টসটসে রসালো ফলের মৌসুম। আম, জাম, আনারস, লিচুতে রয়েছে নানান পুষ্টিগুণ। এ সম্পর্কে জানাচ্ছেন অ্যাপোলো হাসপাতালের পুষ্টিবিদ ডা. তামান্না।
আম
স্বাদ, পুষ্টি ও গন্ধে আম অতুলনীয়।
এ দেশের প্রায় সব জেলাতেই আম হয়। অনুকূল আবহাওয়া ও উন্নত মাটি আম চাষের উপযোগী। তবে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর আম চাষের জন্য বিখ্যাত। পাকা আমে রয়েছে প্রচুর ক্যারোটিন। আম লিভার বা যকৃতের জন্য ভীষণ উপকারী।
রাতকানা ও অন্ধত্ব প্রতিরোধে কাঁচা ও পাকা আম অতুলনীয়। বর্তমানে আমের দাম একটু বেশি হলেও কিছুদিনের মধ্যেই দাম কমে যাবে।
এই সময় আমের দাম কেজি প্রতি ৮০ থেকে ১৫০ টাকা হলেও ভরা মৌসুমে ৫০-৬০ টাকায় আম পাওয়া যায়।
জাম
বাংলাদেশের সুপরিচিত একটি ফল। কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেট, পাবনা, দিনাজপুর অঞ্চলে সাধারণত জাম বেশি পাওয়া যায়।
এই ফলের কচিপাতা পেটের অসুখ সারাতে সহায়ক। আম ও জামের রস একত্রে খেলে বহুমূত্র রোগ ভালো হয়। লোকমুখে প্রচলিত আছে, জামের রস রক্তকণিকা পরিষ্কারে সহায়তা করে।
১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় এক কেজি জাম পাওয়া যাচ্ছে।
লিচু
রাজশাহী, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম জেলায় লিচু বেশি উৎপন্ন হয়।
এই ফলের রসালো অংশ তৃষ্ণা মেটাতে সহায়ক। এর আঁটি চর্মরোগে বিশেষ উপকারী। কাশি, পেটে ব্যথা ও টিউমার বৃদ্ধি রোধে লিচু অনেক উপকারী। এ দিয়ে জ্যাম তৈরি করে সংরক্ষণ করা যায়। তবে যাদের গ্যাসট্রিকের সমস্যা রয়েছে তাদের লিচু কম খাওয়াই ভালো।
লিচু বিক্রি হয় একশত হিসেবে। এই সময় প্রতি শ’ লিচুর দাম ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
কাঁঠাল
জাতীয় এই ফল দেশের প্রায় সব জেলাতেই কমবেশি হয়। তবে ঢাকা জেলার গাজীপুর, টাঙ্গাইল, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, ময়মনসিংহ ও নরসিংদী এলাকায় কাঁঠাল বেশি জন্মে। গাজীপুরে রয়েছে এই ফলের সবচেয়ে বড় বাজার।
কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর শর্করা, আমিষ ও ভিটামিন-এ। কাঁচা কাঁঠাল তরকারি হিসেবে আর পাকলে ফল হিসেবে খাওয়া যায়। এর দানা ভেজে কিংবা রান্না করে খেতেও মজা।
কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর ভেষজগুণ। এর শাঁস ও দানা চীনে বলবর্ধক হিসেবে বিবেচনা করে।
ফলটি সাধারণত জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে পাকে। আকারভেদে কাঁঠালের দাম ৮০ থেকে ৩০০ টাকা। তাই ভালোভাবে দেখে কাঁঠাল কিনবেন।
তরমুজ
গরমে ক্লান্তি দূর করতে এই ফলের তুলনা হয় না। প্রায় সব জেলাতেই চাষ হয়।
এখন হাইব্রিড জাতের তরমুজ চাষ হচ্ছে। তরমুজ তৃষ্ণা মেটায়। রক্তস্বল্পতা দূর করে। রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে লৌহ পদার্থ।
বিভিন্ন আকারের তরমুজ প্রতিটি ১০০ থেকে ৩০০ টাকায় এখন বিক্রি হচ্ছে।
বাঙ্গি
রসালো ফল হিসেবে এই ফলের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। এর পুরোটাই জলীয় অংশে ভরপুর। দেশের প্রায় সব জেলায় বাঙ্গির চাষ হলেও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বেশি হয়ে থাকে। ভিটামিন সি, শর্করা ও সামান্য ক্যারোটিনসমৃদ্ধ হয় এই ফলটি।
বর্তমানে আকার অনুযায়ী ৬০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।
বেল
সারা বছর পাওয়া গেলেও গরমকালে এই ফলের চাহিদা বেশি দেখা যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য ও আমাশয় সারাতে বেল অনেক উপকারী। এই ফলের পাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে চোখের ছানি ও চোখ জ্বালা করা রোগের উপশম হয়।
ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের বেল জন্মে।
জামরুল
বাজারে ইতিমধ্যে উঠতে শুরু করেছে এই ফল।
রসালো ও হালকা মিষ্টি জামরুল গ্রীষ্মকালেই পাওয়া যায়। এটি ভিটামিন বি-২ সমৃদ্ধ ফল। বহুমূত্র রোগীর জন্য জামরুল অনেক উপকারী।
বর্তমানে সাদা, খয়েরি-লাল ও হালকা গোলাপি রংয়ের জামরুল দেখা যায়। কেজি প্রতি দাম ৫০ থেকে ৭০ টাকা।
আনারস
সিলেট, মৌলভীবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও নরসিংদী জেলায় এই ফর বেশি হয়। পাকা আনারস শক্তি বাড়ায়। কফ নিরাময়ে সহায়ক, পিত্তনাশক এবং হজম বৃদ্ধি করে। এ ফলের শাঁস ও পাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে কৃমি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আনারসের জ্যাম-জেলি তৈরি করেও সংরক্ষণ করা যায়।
হালি প্রতি আনারসের দাম ৭০ থেকে ১২০ টাকা।
ফলের বহুমাত্রিক ব্যবহার মানবইতিহাসের শুরু থেকেই চলে আসছে। শুধু মুখরোচক খাবার হিসেবেই নয়-- পুষ্টিগুণ, ওষুধ তৈরিসহ ফলের রয়েছে বহুমাত্রিক ব্যবহার। কিছু ফল সারা বছরই পাওয়া গেলেও জ্যৈষ্ঠ মাসে এসব ফল বাজারে আসে বেশি।
গরমে দেশি ফল বেশি খান।
সুস্থ থাকুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।