আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভয়াল ২৯শে এপ্রিলঃ সেই কালো রাত্রির ভয়ঙ্কর স্মৃতি।



আজ সেই ভয়াল ২৯শে এপ্রিল। ১৯৯১ সালের আজকের রাত্রে বাংলাদেশের উপকুলীয় অঞ্চলে নেমে এসেছিলো স্মরনকালের ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ সাইক্লোন১৯৯১,দশ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত। এতে কমপক্ষে দেড় হতে দুই লক্ষ লোকের সলীল সমাধি ঘটে মুহুর্তের মধ্যে,তাই ধবংশ লীলায় এটি ইতিহাসে কুখ্যাত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে আজীবন। কেমন ছিলো সেদিনটি?আজ যখন মনে করতে বসি পুরো ঘটনা মনের মাঝে ভেসে উঠে। আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি,সুতরাং সবকিছু বেশ ভালোই মনে আছে।

আমরা চট্টগ্রামবাসীরা সাধারনত প্রায়ই ঘুর্নিঝড় সংক্রান্ত যে কোন সিগনাল দেখতে অব্যস্থ। ৮,৯,১০ নং মহাবিপদ সংকেত পেলেই কেবল আমরা নড়েচড়ে বসি। তাই এটি আমাদেরকে বেশী চিন্তায় ফেলতে পারলো না,বরাবরের মতোই আমরা ্রামেচিন্তা করলাম এবারো এই ঝড় হয় সীতাকুন্ড না হয় বার্মার দিকে ধাবিত হবে। উপকুলীয় অঞ্চলের সাধারন লোকেরাও একিই রকম চিন্তা করেছিলো,তারা কেউই পর্যাপ্ত নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেইনি। ভুল হয়েছিলো,ভয়ঙ্কর ভুল হয়েছিলো।

তাই ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ছিলো অপুরোনীয়। সেদিন সকাল থেকেই ১০ নং মহাবিপদ সংকেত বারবার ঘোষনা করা হচ্ছিলো,সাথে সাথে গুড়ি গুড়ি বৃস্টি চলছিলো। বৃস্টি হয়া সত্ত্বেও আবহাওয়া গুমোট ছিলো। স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিকেল হতে বৃস্টির সাথে ঝড়ো হাওয়া আস্তে আস্তে বাড়ছিলো।

রাত ৯টা নাগাদ আমরা বুঝতে পারলাম,সাইক্লোন চট্টগ্রামে আঘাত হেনেছে। অদ্ভুত যে চট্টগ্রামের সমস্ত উপকুল আগুন লাগার মতো লাল হয়ে যায়,ঝড় বইছিলো ৩০০কিঃমি; মতো গতিতে। আমাদের বাসা ছিলো মুনছুরাবাদ ওয়াপদা কলোনীতে,আমরা ছিলাম দক্ষিন দিকে খোলা প্রান্তরের বিল্ডিং্যের ৪র্থ তলায়। স্বভাবতই সরাসরি সাইক্লোন আমাদের বাসাকে বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। সারা রাত আমার ভাইয়া,আব্বা ও আমি দরজা কাঠ দিয়ে আটকিয়ে রেখেছি।

আমাদের এতো শক্তিশালী জানালাগুলোকে ফ্রেমশুদ্ধ ছিড়ে নিয়ে বাইরে এনে ফেলেছে। এমন ধংশযজ্ঞ শুধু দুস্বপ্নে েদখা যায়। পরের দিন সমস্ত চট্টগ্রাম যেন মহাপ্রলয়ের নিশানা হয়ে টিকে রইলো। তখন আমাদের কোন ক্যামেরা ছিলোনা তাহলে আমি অনেক দূর্লভ ছবি তুলে রাখতে পারতাম। আমি পরেরদিন সাগর পাড়ে যেয়ে অগুনিত লাশ দেখেছি,আস্ত এক জাহাজ রাস্তায় এসে উঠেছিলো,তাতেই বুঝা যায় রাস্তায় কমপক্ষে ৪০ ফুট পানি উঠেছিলো।

এতোগুলো লাশ দেখার পর মানসিক অবস্থা খুব খারাপ ছিলো। এদিকে আমার খুব কাছের ছোট ভাই মাসুমদের লতিফপুর দঃকাট্টলীর বাড়ী ঘূর্নিঝড়ের কবলে পরে চুর্নবিচুর্ন হয়ে যায়,তার কিছু ছবি আমি গতকাল পেলাম। ছবি প্রমান করে যে সেখানে জীবিত কারো থাকার কথা না,সেই গ্রামেও অনেক লোক মারা যায়। আজ এই দিনে আমি আল্লাহর কাছে সেইদিনের হারিয়ে যাওয়া অগুনিত মানুষদের জন্য আবেদন জানাচ্ছি,হে রাব্বুল আলামিন তুমি তাদের বেহেস্তে নসীব করো। বিঃদ্রঃ-আমার স্কানার নাই বিধায় ছবি গুলো পরিস্কার করে দিতে পারলাম না।

ক্ষমা করবেন।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।