হুগো শ্যাভেজ: বিতর্কিত কিন্তু প্রভাবশালী
সহজাত দক্ষতাসম্পন্ন ও বিতর্কিত ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ ছিলেন তাঁর প্রজন্মের সবচেয়ে প্রভাবশালী ল্যাটিন আমেরিকান নেতা। তিনি ভেনেজুয়েলার স্বাধীনতার নায়ক সাইমন বলিভার দ্বারা অনুপ্রাণিত একজন মার্কিন "সাম্রাজ্যবাদ" বিরোধী স্পষ্টভাষী বক্তা ছিলেন। তিনি সফলভাবে বাম পন্থী নেতাদের ল্যাটিন আমেরিকার ক্ষমতা অর্জনে অনুপ্রাণিত করেন। ইরান এর মত মার্কিন শত্রুদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে তিনি ছিলেন বিশ্বের মঞ্চে এক সচল প্রতিরূপ!
১৯৯৮ সালে হুগো শ্যাভেজ ক্ষমতায় আসার পূর্বেই ভেনেজুয়েলার বাম পন্থী নেতাদের ধারা ল্যাটিন আমেরিকান নেতারা অনুপ্রানিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ে, ইকুয়েডর, পেরু –তে সকলে হুগো শ্যাভেজ এর দ্বারা কিছু মাত্রায় অনুপ্রাণিত হয়ে সব বাম পন্থীদের রাষ্ট্রপ্রধানের ভোট প্রদান করেছিল।
তাঁর অগ্নিসদৃশ বৈপ্লবিক ভাষার মাধ্যমে তিনি কিউবান নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর আদর্শের উত্তরাধিকারী হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর চেয়ে ২৮ বছরের বড় এই বিপ্লবী নেতা, তাঁর একজন ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং পরামর্শদাতা ছিলেন।
ভেনেজুয়েলা থেকে সস্তা তেল কিউবার টিকে থাকার সংগ্রামরত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিকে উদ্ধার করেছিল। বিনিময়ে, কিউবা ভেনেজুয়েলায় হাজার হাজার স্বাস্থ্যকর্মীদের পাঠিয়েছিল শ্যাভেজ এর দরিদ্র জনগণের উদ্দেশ্যে করা আর্থ- সামাজিক প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করার জন্য। যেহেতু ভেনেজুয়েলার সাথে বন্ধুত্ব সংকটপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল কিউবান বিপ্লবের জন্য, তাই হাভানা পাঠিয়েছিল সুরক্ষার পরামর্শদাতা ও তাদের তথ্যসংক্রান্ত প্রতিনিধিদের।
যদিও তিনি নেই, তবুও ভেনেজুয়েলার এই সস্তা তেল কিউবার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে,এমনকি অন্যান্য দরিদ্র ক্যারিবিয়ান দেশগুলির জন্য যেগুলো তাঁর দ্বারা উপকৃত হয়েছে।
উপরন্তু, আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে তাঁর ওপেক তেল রপ্তানিকারকের সাথে পুনঃচুক্তি অন্যান্য মার্কিন-বিরোধী নেতাদের সাথে নতুন মৈত্রের সূচনা করেছিল। লিবিয়ার মুয়াম্মার গাদ্দাফি এবং ইরানের আহমাদিনেজাদের মতো নেতারা তাঁর ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে উঠে। মার্কিনদের অনধিকারচর্চার বিরুদ্ধে যখন আরবদের প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল,তিনি গাদ্দাফি এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সমর্থন দিয়েছিলেন। সমর্থকবৃন্দ এই সমর্থনের ন্যায্যতা প্রমাণের জন্য আরবি প্রবাদবাক্য, “আমার শত্রু এর শত্রু আমার বন্ধু” এর ব্যবহার করেছিল।
সমালোচকরা একটি পুরানো স্প্যানিশ প্রবচনের সঙ্গে জবাব দিয়েছিল: “তুমি বল,কার সাথে চল, আমি বলে দেব,তুমি কেমন"।
ল্যাটিন আমেরিকায় তাঁর প্রভাব কমতে শুরু করে ২০০৬ থেকে যখন ভেনেজুয়েলার অর্থনৈতিক সমস্যা প্রকট হয়ে উঠে। তখনই একটি সুনিয়ন্ত্রিত বাম পন্থী সরকার লক্ষ লক্ষ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে উদ্ধার করছিল কোন ব্যবসা ও বিনিয়োগ ছাড়াই,সামাজিক পরিবর্তন এনেছিল কোন রাজনৈতিক সমবর্তন এবং আন্তর্জাতিক আভিমুখ্য ছাড়াই। ২০০৬ সালে যখন ‘ওলানটা হুমালা’ পেরুর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন,তাঁকে ‘পেরুভিয়ান শ্যাভেজ’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। ২০১১ তে তিনি নিজেকে ‘পেরুভিয়ান লুলা’ বলে প্রচার করেন, আর জিতে যান!
রাজনীতির বাহিরে,শ্যাভেজের ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর অলঙ্কৃত ঝঙ্কার,তাঁর রসিকতা, মানুষের সাথে তাঁর আচরণের জন্য তাঁর অনেক বন্ধু তৈরি হয়েছিল।
মার্কিন প্রভাব মুক্তিসহ ল্যাটিন আমেরিকায় তাঁর ব্যাপক অবদান তাঁর শ্রেষ্ঠত্বকে প্রমান করে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।