আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

'দাদা বড় ভুল করেছি'



ইকবাল হাসান, টরেন্টো থেকে ইন্টারনেটে সমকাল খুলতেই_ 'নৃশংস হত্যাকাণ্ড, লাশ বসে আছে গাড়িতে' শীর্ষক প্রধান খবরটিতে চোখ আটকে গেল। গাড়িতে মাথা ঝুঁকে বসা এক তরুণীর ছবির নিচে খবরের শুরুতে প্রতিবেদক লিখেছেন, 'উপরের ছবিটি দেখুন। এক তরুণী যেন সুখনিদ্রায় শায়িত। ঘুমিয়ে আছেন ঠিকই। তবে গৃহবধূ কামরুন নাহার নাদিয়ার এই ঘুম কোনোদিন ভাঙবে না।

চিরনিদ্রায় শায়িত তিনি। রায়েরবাজারে নিজ বাসায় তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন স্বামী শফিক। ' তখনও আমার জানা হয়নি, দৈনিক সমকাল যে পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড ও যার কথা লিখেছে সে আমারই মামাতো বোন কামরুন নাহার নাদিয়া। মর্মস্পর্শী এই প্রতিবেদনে থরথর করে কেঁপে উঠল আমার শরীর, চোখ ভিজে গেল জলে। আমি ওকে আর কোনোদিন দেখব না, আর কোনোদিন সে জানতে চাইবে না, দাদা কবে আসছেন? দু'মাস আগে একদিন আমাকে একটা মেসেজ পাঠিয়েছিল সে, নক করেছিল ফেসবুকে।

দাদা, আমি বোধহয় একটা বড় ভুল করে ফেলেছি। কী এমন ভুল করতে পারে আমার বোন আইনের ছাত্রী নাদিয়া? সে আমাকে চমকে দিয়ে বলল গোপনে বিয়ে করার কথা। আমি ভাবতেও পারিনি সেদিনের সেই ছোট্ট নাদিয়া সময়ের হাত ধরে এতটা এগিয়েছে। চার মাস আগে সে একজনকে ভালোবেসে বিয়ে করে ফেলেছে; কিন্তু বিয়ের খবর তো ভালো। এর ভেতর ভুল করার কথা আসছে কেন? বিয়ে আর ভুলের মধ্যে যোগসূত্র বের করতে আমার মন ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে উঠলে নাদিয়া বলল, দাদা আমি ভাবতেও পারছি না, এত বড় ভুল আমি কী করে করলাম! আগে বুঝতে পারিনি, ও খুব নিষ্ঠুর প্রকৃতির মানুষ।

ও কথায় কথায় গায়ে হাত তোলে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। ও একদিন আমাকে মেরে ফেলবে। নৃশংসভাবে সরিয়ে দেবে পৃথিবী থেকে। নাদিয়ার কথায় আতঙ্কিত হলাম; কিন্তু ভেবে পাচ্ছিলাম না এতদূর থেকে নিত্যদিন অমানুষিক নির্যাতনের শিকার এই অসহায় বোনটিকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি।

সে আমাকে অনুরোধ করেছিল, আমি যেন বিষয়টি নিয়ে সাবেক চিফ হুইপ ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সঙ্গে একটু কথা বলি। তার ধারণা ছিল, হাসানাত সাহেব একটু বললেই কাজ হবে, তার স্বামী আর নির্যাতন করবে না। তাকে আমি বোঝাতে চেষ্টা করেছিলাম, এ ধরনের লোকেরা কারও কথা শোনে না। বলেছিলাম, যারা মেয়েদের গায়ে হাত দেয়, নির্যাতন করে, তারা কাপুরুষ। তাদের সঙ্গে ঘর করার অর্থ নির্যাতন প্রশ্রয় দেওয়া, মুখ বুজে নিষ্ঠুরতা মেনে নেওয়া।

যত দ্রুত সম্ভব তুই ওকে ছেড়ে দে। নাদিয়া বলল, আমিও ভাবছি দাদা, ওকে ছেড়ে দেব। ওর সঙ্গে ঘর করা যায় না। তবে এতদিন যখন সহ্য করেছি আর ক'টা দিন দেখি ... আমার মন তার এ কথায় সায় দেয়নি সেদিন। নাদিয়া ছেড়ে দিতে চেয়েছিল তার ওই নিষ্ঠুর কাপুরুষ স্বামীকে; কিন্তু বড় দেরি হয়ে গেছে।

জীবনের সব সুখস্বপ্ন অপূর্ণ রেখেই নাদিয়াকে চলে যেতে হয়েছে দুই পা, হাত ও বুকে জমাটবাঁধা রক্ত এবং আঘাতের চিহ্ন বুকে নিয়ে। দেশের একজন সাধারণ নাগরিক ও একজন প্রবাসী হিসেবে এ নিষ্ঠুর, পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আশা করি, আমাদের পরিবার ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে না। Source: shamakal

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।