যতোবার আমি শান্তি খুঁজেছি, ঠিক ততোবার আমার মাথায় শুধু একটি চিন্তাই এসেছে। সেটা হচ্ছে একটা ড্রিল মেশিন দিয়ে মাথার খুলিটা ফুটো করে দেওয়ার চিন্তা।
ঘটনার নায়ক,নায়িকা এবং বলদ ভিলেন ( যে নির্দোষ হইয়াও ভিলেন ) ৩ জনই আমার সহপাঠী ।
নায়কের নাম বারী,আমরা সবাই অবশ্য "বারী ভাই" বলি। নামে ডন হইলেও আচার ব্যবহারে সে অতিশয় ভদ্র।
সারাদিন পড়াশুনা করে ,আর ফিফা খেলে তাহার ল্যাপটপে। ওহ ,আর সুন্দর একখানা প্রেম করে।
নায়িকা নায়কের সহপাঠী। প্রথম বর্ষের শুরুর দিকেই চার চোখের মিলন হইয়াছিল , অবশেষে প্রেম । নায়িকার আসল নাম বলিয়া দিলে নায়কের ধোলাই খাইবার সম্ভাবনা আছে আমার।
কারন নায়িকার বাসা অনেক কড়া। নায়িকার বাবা মা এখন পর্যন্ত জানিতে পারেন নাই তাহাদের সম্পর্কের কথা। জানিতে পারিলে কিছুটা ঝামেলা হওয়া অসম্ভব নহে । তাই বারী ভাইয়ের আপ্রান চেষ্টা চলিতে থাকে খবরখানা গোপন রাখিবার।
এইবার আসি ভিলেন চরিত্রে।
ভিলেনের নাম মেহেরদাদ । ভিলেন সাহেব আবার আমার রুমমেট ও বটে । যদিও কম থাকে হোস্টেলে ,বাসা ঢাকায় হওয়াতে বাসাতেই থাকে। উনার বিশেষ গুন হইল উনি টিউশনি করাইতে সিদ্ধহস্ত । ইনি আবার একটু পুংটা টাইপ ।
যত পুংটামি হয় ক্লাসে , সবার আগে উনাকেই সন্দেহ হয় সবার। দিনের মধ্যে উনি কত কি যে করেন ,তাহা লিস্টি করিয়া শেষ করা সম্ভব না বলিয়া বাদ দিলাম । বুঝিতেই পারিতেছেন তাহলে ভিলেন চরিত ।
আগেই বলিয়া রাখি , বারী ভাই এবং মেহেরদাদ ল্যাংটাকালের বন্ধু। স্কুলে ,কলেজে একসাথে বাঁদরামি করিয়া আসিয়া এখন জেলখানায় আটকা পরিয়া মাঝে মাঝেই দুইজনে গলা জড়াজড়ি করিয়া কাঁদে।
মাঝে মধ্যে অবশ্য কলেজ থেকিয়া উধাও ও হইয়া যায় কয়েকদিনের নিমিত্তে। পরে জানা যায় ,তাহারা বান্দরবন গিয়াছিলেন , অথবা সিলেট , অথবা কক্সবাজার ।
নাহ , নায়িকার তো একখানা নাম দিতেই হয়। আচ্ছা ,নায়িকার নাম দেওয়া হইল বৃষ্টি। বৃষ্টির খালাতো ভাই দুইখানা ।
দুইজনেই ছোট, তাহাদের মধ্যে একজন পড়ে ক্লাস ৫ এ ,আরেক জন ২ তে। বৃষ্টির খালা অনেকদিন ধরিয়াই তাহার গুণধর পুত্রদের জন্য একখানা ভালো টিউটর খুজিতেছিলেন। ঘটনাক্রমে তাহা বৃষ্টির কানে আসিল , বৃষ্টির কান থেকে বারী ভাই এর কানে। বারী ভাই অবশেষে টিউশনি খানা মেহেরদাদের হাতেই হস্তগত করিলেন। মেহেরদাদও মনের সুখেই তাহার ছাত্রদের শিক্ষা দান ! করিতে লাগিল ।
কয়েকমাস আগে কলেজ বেশ কিছুদিনের জন্য ছুটি হইল । বারী ভাই এবং মেহেরদাদ ,দুইজনেরই আবারো ভ্রমন পিনিক উঠিল। পিনিক উঠিলে আর আটকায় কে ??এইবার আবারো বান্দরবন।
সেইবার বান্দরবনের পাহাড়ে চড়া অবস্থায় বারী ভাইয়ের কাছে বৃষ্টি আপার ফোন আসিল । তিনি জানাইলেন যে তিনি অনেক সাজুগুজু করিয়াছেন এবং অনেকদিন পরে শাড়ি পরিয়াছেন।
একথা শুনিয়া নায়িকাকে দেখিবার জন্য নায়কের মন আকুল হইয়া উঠিল । নায়িকা বলিলেন ,তবে একখানা এমএমএস করা যাক । কিন্তু হায় , বারী ভাইয়ের মোবাইলের চার্জ তৎক্ষণাৎ ফুরাইয়া গেলো । বারী ভাই তাহাতে বিচলিত না হইয়া , মেহেরদাদের মোবাইল খানা লইলেন ,তাহাতে তাহার সিম ভরিলেন এবং ছবি খানা পাঠাইতে কহিলেন । ছবি পাঠানো হইলো , বারী ভাই দেখিলেন , এবং তাহার চক্ষু জুড়াইল।
এরপর মোবাইল খানা তাহার মালিকের কাছে ফিরিয়া গেলো ।
এদিকে মেহেরদাদের কিন্তু খেয়াল নাই যে বারী ভাই তাহার মোবাইল থেকে ছবি খানা ডিলিট করেন নাই। বারী ভাই ও মেহেরদাদ সাহেবকে ছবির কথা কিছু বলেন নাই । ছবি খানা সবার অলক্ষে মোবাইলের কোন এক স্থানে রহিয়া গেলো ।
ভ্রমন হইতে আসিয়া একদিন মেহেরদাদ সাহেব বাচ্চাদের পড়াইতে গেলেন ।
দুইটা বাচ্চাকে একই সাথে পড়ানো খুব একখানা সুখকর কাজ নহে । যখন তিনি ছোটটিকে পড়াইতেছিলেন তখন বড় জন হঠাৎ করিয়াই মেহেরদাদ সাহেবের মোবাইল খানা ধরিবার বায়না করিয়া বসিলেন । মেহেরদাদ সাহেবও ভাবিলেন , মোবাইলে তো তেমন কিছুই নাই , ধরিলে সমস্যা কি ? তিনি মোবাইল খানা পিচ্চির হস্তে দিলেন । পিচ্চি কিছুক্ষন মোবাইল টিপিল , অতঃপর মোবাইল রাখিয়া তাহার কনিষ্ঠ ভ্রাতার কানে কানে কি কি জানি বলিল । তারপর তাহারা পড়ার ফাকে ফাকে মুখ টিপিয়া খুব হাসিল ।
মেহেরদাদ সাহেব বাচ্চাদের এহেন আচরণের কারন বুঝিতে পারিলেন না । তিনি সেইদিন কার পাঠ দান শেষ করিয়া চলিয়া আসিলেন।
পড়া শেষ হইবা মাত্রই পুত্রদ্বয় যাইয়া তাহাদের মাতার কাছে কহিল-
"আম্মু ,আম্মু ,স্যারের মোবাইলে বৃষ্টি আপুর ছবি !!!!"
বৃষ্টি আপার খালা জানিতেন যে , বৃষ্টি এবং মেহেরদাদ এক ই জায়গায় লেখাপড়া করে । তাই তিনি তার পুত্রদ্বয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ নতুন একখানা অর্থ বাহির করিয়া ফেলিলেন । অল্প সময়ের মাঝেই বৃষ্টি কেও ফোন করিয়া বিষয়টি সম্পর্কে জানিতে চাওয়া হইল ।
মেহেরদাদের মোবাইলে বৃষ্টির ছবি আসে কি করিয়া উহার জবাব বৃষ্টি অনেক খুজিল ,কিন্তু পাইল না। সে তো আর জানিত না যে বারী ভাই মেহেরদাদের মোবাইলে কোনকালে সিম ভরিয়াছেন। বাসায় কঠোর জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তিনি বলিয়াই বসিলেন -
"ও হয়তো নেট থেকে আমার ছবি নামাইয়াছে । "
হায় !!! এ কি হইলো !!!! মেহেরদাদ তো পুরাই ভিলেন হইয়া গেলো । এইরকম নেট থেকে ছবি নামায় যেই ছেলে ,তার সম্পর্কে কিরূপ ধারনা করা যায় ?? খালা শুনিলেন , সাথে বৃষ্টি আপার বাবা মা রাও জানিলেন ।
ওই পরিবারে মেহেরদাদের অবস্থান একবার কল্পনা করিয়াছিলাম ,তাহাতে আমার কপাল থেকিয়াই ঘাম ছুটিতেছিল ।
এই পুরা ঘটনা মেহেরদাদ জানিতেও পারিত না । কিন্তু কাহিনী ঘটিবমাত্র নায়িকা তাহার নায়ককে উহা জানাইতে বিলম্ব করেনাই । পালের গোদা যে নায়ক নিজেই তাহা তিনি বুঝিলেও তিনি পরে মেহেরদাদ কে দোষারোপ করেন ,সে কেন ছবি ডিলিট করেনাই তাহা বলিয়া। ওদিকে মেহেরদাদের এই কাহিনী শুনিয়া মুখখানা হইয়াছিল দেখিবার মতো।
সেও বারী ভাইকে দায়ী করিল তাহার এইরূপ একখানা মূলী বাশ খাইবার জন্য । সে বলিতেছিল , আমি আগামিকাল্য যাইয়াই অ্যান্টি কে সব বুঝাইয়া বলিব যে আমি নির্দোষ। কিন্তু তাহা হইলে নায়ক এবং নায়িকা ধরা পড়িয়া যাইবে , এই ভাবিয়া বারী ভাই বলিলেন - দরকার হয় টিউশনি বাদ যাইবে কিন্তু তবু এইটা স্বীকার করা যাইবে না। অতঃপর একটানা কয়েকদিন তাহারা একে অপরকে দোষাইল আর নিজেদের কপাল খানা চাপড়াইল ।
শেষপর্যন্ত মেহেরদাদ নিজে ভিলেন হইয়াও বন্ধুর প্রেম খানা রক্ষা করিল ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।