আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘরের কাজের মেয়েটিকে মানুষ ভাবতে শিখি


বাংলাদেশ দরিদ্র দেশ হিসেবে চিহ্নিত সারাবিশ্বে। এই দরিদ্র দেশের বাসিন্দারা যত বেশি ধনীই হোন না কেন দেশের বাইরে গেলে আপনি গরীব দেশের মানুষ। এই দরিদ্র দেশটিতে আমরা আবার অনেক শ্রেণীবিন্যাস তৈরি করেছি নিজেদের সুবিধার্তে। একটু টাকাপয়সা হলেই আমাদের কাজের ছেলে বা মেয়ে প্রয়োজন হয়। আমরা দরিদ্র বলেই আমাদের কাজের মেয়ের দরকার হয়।

আমেরিকা, ইউরোপ বা শিল্পোন্নত কোন দেশে আমাদের দেশের মতো কাজের মেয়ে নেই। গৃহস্থালির সব কাজ ঘরের লোকজন মিলেই করে এবং সেখানে অবশ্যই গৃহকত্রীর দায়িত্বটা বেশি থাকে। এখন আমরা যারা কাজের মেয়ে রেখেছি, তারা কেন ভাবতে পারি না যে, এই মেয়েটি আমার নিজের মেয়ে হতে পারতো। একটি গানের কথা আমার প্রায়ই মনে পড়ে। গানটি খান আতাউর রহমান পরিচালিত নবাব সিরাজউদ্দৌলা সিনেমায় ব্যবহৃত হয়েছে।

সিরাজ যখন রায়দুর্লভ-উমিচাঁদদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে রাজ্য হারিয়ে নৌকায় করে পাটনা যাচ্ছিলেন, তখন নৌকার মাঝি গানটি গাইছিলেন- সকাল বেলা আমীর রে তুই, ফকির সন্ধ্যা বেলা... এর চেয়ে মর্মান্তিক বাস্তবতা বোধ হয় আর হতে পারে না। আমি আজ অমুক অফিসের পরিচালক, সচিব, ম্যানেজার, সেনা অফিসার....কোটিপতি ব্যবসায়ী... যাই হই না কেন, যত টাকাই আমার থাক না কেন.. যে কোন মুহুর্তে আমার অবস্থা নবাবের ফকির হয়ে যাওয়ার মতো হতে পারে। তখন যদি আমার নিজের মেয়েটিকে অন্য কারো বাসায় কাজ করতে পাঠাতে হয়.... তখন কী হবে? একটি সেকেন্ডের জন্য চোখ বন্ধ করে চিন্তা করুন কাজের মেয়ের ওপর নির্যাতন করার আগে। আপনার ঘরের কাজের মেয়েটিরও রাত ১০টা হলে ঘুম আসে ক্লান্তিতে। আপনার মেয়ে নরম বিছানায় গা এলিয়ে দিলেও কাজের মেয়েকে ঘুমাতে হয় সবার শেষে, রাত ১২টারও অনেক পরে।

কাজেই এই মেয়েটির ঘুম সকালে ভাঙে না। তারও ইচ্ছে করে ৮টা/৯টা পর্যন্ত ঘুমাতে। কিন্তু তার ঘুম সবার আগে ভাঙ্গানো হয়। তার ঘুম না ভাঙলে লাঠির বাড়ি, গরম খুন্তি জোটে। আমি কি ভাবতে পারি, আমার মেয়ের ওপর অন্য কেউ এরকম আচরণ করবে? আমি যে ছবিটি তুলে ধরেছি, এটি আজ ঢাকার একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

মেয়েটি জন্ডিস ও কিডনির জটিলতায় ভুগছিল। সাথে বাড়িওয়ালি নির্যাতনও করতো। দুটি রোগের কথা বলা হয়েছে যা প্রাথমিকভাবে ধরা পড়লে জটিলতায় যায় না। আপনার মেয়েটি কাশি দিলেই ডাক্তারের কাছে দৌড়ান, কাজের মেয়েটির কি অধিকার নেই সুচিকিৎসা পাবার? কতখানি কষ্ট ও নির্যাতন বুকে নিয়ে চলে গেল তাসলিমা। মৃত্যুর আগে তারও মনে পড়েছিল মায়ের মুখ।

কিন্তু দেখা সম্ভব হয়নি। জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে কিংবা কিডনি জটিলতায় কষ্ট পেয়েও যখন চিকিৎসার মুখ দেখা সম্ভব হয়নি, তখন সেও হয়তো ভেবেছিল, আহা! আমার বাবা আজ আমার কাছে থাকলে তাকে বলতাম ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে। হয়তো বাড়িওয়ালির কাছে ডাক্তারের কথা বলায় তাকে গরম খুন্তির ছ্যাকা খেতে হয়েছে। যারা আমরা আজ নিজেকে মানুষ ভাবি, মানবাধিকার মানবাধিকার বলে গলা ফাটাই, তারা কী জবাব দেবো তাসলিমাকে? তাসলিমার বাবা-মা'র আর্তনাদ শুনতে এগিয়ে আসবো কি আমরা? তাই বলি, ওদেরকে নিজের মেয়ে ভাবতে না পরি, অন্তত মানুষ ভাবি। সব মানুষেরই ক্ষুধা লাগে, অসুস্থ হলে চিকিৎসা করাতে হয়, উপযুক্ত পোশাক দিতে হয়, এই কথাগুলো যেন আমরা ভুলে না যাই।

আর যদি ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে কাজের মেয়ে যেন আমরা বাসায় না রাখি। নিজের ঘরের কাজ নিজে করতে শিখি। Click This Link
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।