আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলায় ইংরেজদের শোষণকাল (২)

দেশের মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন।

আগের পর্বের লিঙ্ক দেখুন এখানে (Click This Link) ................................................. * ১৭৯৮ সালের ২৯ আগস্ট কলকাতায় অনুষ্ঠিত একটি সভায় কলকাতার নব্য-সৃষ্ট ধনিক গোষ্ঠীর প্রতিভূ গৌরচন্দ্র মল্লিক, নিমাইচরণ মল্লিক, গোপিমোহন ঠাকুর, কালিচরণ হালদার, রসিকলাল দত্ত প্রভৃতিরা ব্রিটিশ্রাজের প্রতি তাদের পূর্ণ আনুগত্য ও সমর্থন ব্যক্ত করেন। * ১৭৯৯ সালের ৪ মে মহীশূরের বাঘ টিপু সুলতান স্বাধীনতার জন্য জীবন দিলেন। * ১৮০১ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ গ্রন্থমালা প্রকাশের মধ্য দিয়ে এবং ইংরেজপ্রসাদপুষ্ট ইংরেজী শিক্ষিত হিন্দু মধ্যবিত্ত ও ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃত পন্ডিতদের হাতে বাংলা ভাষার রূপ ও সাহিত্যের গতি পাল্টাতে শুরু করে। * ১৮০৩ সালে শাহ আবদুল আযীয ইংরেজ পদানত হিন্দুস্থানকে সর্বপ্রথম ' দারুল হরব ' বলে ঘোষণা করেন এবং স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের জন্য জিহাদের আহবান প্রচার করেন।

* ১৮১২ সালে মোমেনশাহী ও জাফরশাহী পরগণায় জমিদার- বিরোধী কৃষকবিদ্রোহ সংঘটিত হয়। * ১৮১৩ সালে স্যার জন ম্যালকম বলেন, "ভারতের হিন্দুদের সহযোগিতাই আমাদের নিরাপত্তার প্রধান সহায়। " * ১৮১৪ সালে ইংরেজ সরকার ভারতবাসীর শিক্ষার আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহণ করে। * ১৮১৬ সালে তারা মুসলমানদের শিক্ষার জন্য বিশেষভাবে নির্ধারিত হাজী মুহম্মদ মুহসিন ওয়াকফ তহবিলের সাড়ে বাইশ লাখ টাকা হস্তগত করে। * ১৮১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হিন্দু কলেজে কোন মুসলমান ছাত্র ভর্তির সুযোগ ছিলনা।

* ১৮১৮ সালে হাজী শরীয়তউল্লাহর নের্তৃত্বে ফরায়েজী আন্দোলনের সূচনা হয়। * ১৮১৮ সালের এপ্রিলে জন ক্লার্ক মার্শম্যান নামের একজন ইংরেজ পাদ্রির সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় বাংলাভাষায় প্রথম সাময়িকপত্র "দিগদর্শন"। * ১৮১৯ সালের ডিসেম্বরে তারই সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় আরেকটি সাময়িকপত্র "সমাচার দর্পণ" * ১৮২১ সাল থেকে সাইয়েদ আহমেদ বেরেলভী জিহাদ আন্দোলনের নের্তৃত্ব দেন। এই লড়াইয়ের এক পঞ্চমাংশই গিয়েছিল বাংলা থেকে। * ১৮২৮ সালে নিষ্কর ভূমি বাজেয়াপ্ত আইন পাস করে ইংরেজরা বাংলায় বাদশাহ-সুলতানদের দেয়া নিষ্কর সম্পত্তিগুলো দখল করে।

ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠার পুর্ব পর্যন্ত বাংলার এক-চতুর্থাংশ সম্পত্তি ছিল নিষ্কর। * ১৮২৮-১৮৪৫ সাল পর্যন্ত শুধু বাংলাদেশেই অন্তত কুড়ি হাজার নিষ্কর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। ফলে মসজিদ-মাদ্রাসাসহ অনেক জনহিতকর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লুপ্ত হয়। ম্যাক্সমুলার উল্লেখ করেছেন যে, ইংরেজদের ক্ষমতা দখলকালে বাংলায় আশি হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব ছিল। উপমহাদেশের বাইরে থেকেও উচ্চশিক্ষার জন্য বহু ছাত্র বাংলার এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে আসতেন।

* ১৮৩০ সালে রামমোহন রায় দিল্লীর সম্রাটের কাছ থেকে 'রাজা' উপাধি নিয়ে ইংল্যান্ডে গিয়ে রাজ-দরবারে আবেদন জানালেন রাষ্ট্রভাষা ফারসীর পরিবর্তে ইংরেজী চালুর জন্য। * ১৮৩১ সালের ৬ মে বালাকোটের প্রান্তরে সাইয়েদ আহমেদ বেরেলভী ও মওলানা শাহ ইসমাঈলের সাথে দুই শতাধিক মুজাহিদ শাহাদাত বরণ করেন। * ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বর তিতুমীর শহীদ হন। * ১৮৩৫ সালে লর্ড টমাস ব্যারিংটন-এর পরামর্শে শিক্ষা সংক্রান্ত আইনবলে কেবলমাত্র ইংরেজি স্কুল ছাড়া অন্য কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারী সাহায্য লাভের অনুপযুক্ত ঘোষিত হয়। * ১৮৩৬ সালে মুহসিন ফান্ডের বিরাট আয় থেকে ইংরেজী শিক্ষার জন্য হুগলী কলেজ খোলা হয়।

অথচ ৩০০ ছাত্রের মধ্যে বছরের পর বছর সেখানে এক ভাগ মুসলমানও ছিলনা। * ১৮৩৭ সালে ফারসির পরিবর্তে ইংরেজিকে সরকারী ভাষারূপে ঘোষণা করা হয়। * ১৮৩৭ সালেই হিন্দু জমিদাররা প্রতিষ্ঠা করে ' ল্যান্ড হোল্ডারস এসোসিয়েশন ' * ১৮৪১ সাল পর্যন্ত বর্তমান বাংলাদেশ এলাকায় কোন কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়নি। * ১৮৪৩ সালে স্যার জন ম্যালকম ডিউক অব ওয়েলিংটনকে এক পত্রে লিখেন, "মুসলমানরা বরাবরই আমাদের শত্রু । ভারতে আমাদের নীতি হবে হিন্দুদের প্রতি আমাদের হস্ত প্রসারিত রাখা।

" * ১৮৪৩ সালে হিন্দু জমিদাররা প্রতিষ্ঠা করে ' বেঙ্গল-ইন্ডিয়া সোসাইটি ' * ১৮৪৪ সালে লর্ড হার্ডিঞ্জ ঘোষণা করেন যে, ইংরেজীতে ডিগ্রীপ্রাপ্তরাই সরকারী চাকরীতে প্রাধান্য পাবে। * ১৮৪৬ সালে ধাকার স্কুল-কলেজে ২৬৩ জন ছাত্রের মধ্যে মুসলমান ছিল মাত্র ১৮ জন। * ১৮৫৩ সালে হিন্দু জমিদাররা প্রতিষ্ঠা করে ' ব্যাঙ্গল ল্যান্ড লর্ডস এসোসিয়েশন ' * ১৮৫৬ সালে কলকাতার বর্ণহিন্দু বুদ্ধিজীবীদের নের্তৃত্বে ইংরেজ-হিন্দু স্বার্থের দুর্গরূপে প্রতিষ্ঠিত হয় ' ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশন '। এই সমিতির সকল সদস্য ছিলেন ইংরেজদের দ্বারা সৃষ্ট জমিদার, ব্যবসায়ী ও ধনিক গোষ্ঠীর লোক। এরাই আইন সভার সদস্য হতেন।

তাদের মধ্যে ঠাকুর বংশই ছিলো অগ্রগণ্য। * ১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর মাত্র চার দশকে ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় পঁচিশ গুণ। এই ছাত্রদের প্রায় সবাই বর্ণহিন্দু। * ১৮৫৭ সালে সারা ভারতে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠে। বিদ্রোহের সূচনা হয় রাজধানী কলকাতার ব্যারাকপুরে।

এ সময় দুদু মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। * ১৮৫৭ সালের এপ্রিল মাসে মওলানা আহমদউল্লাহর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারপত্র বিলির অপরাধে তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শহীদ করা হয়। ............ বাংলার মুসলমানদের জন্য যা ছিল ইতিহাসের ভয়াবহতম বিপদ-বিপর্যয়, বর্ণহিন্দু শ্রেণীর জন্য তা ছিল প্রভু পরিবর্তন এবং নব্য-প্রভুর কিঞ্চিৎ আশীর্বাদে জীবনের সকল দিক কানায় কানায় পূর্ণ ও পুষ্ট করার সুযোগ। ১৮৩৯ সালের সরকারী নথিপত্র থেকে সেকালের কলকাতার শ্রেষ্ঠ ধনীদের যে তালিকা পাওয়া যায় সেই ত্রিশটি পরিবারের সবক'টিই বাঙ্গালী হিন্দু। তাদের অধিকাংশই উচ্চ-বর্ণজাত।

তাদের হাতেই কলকাতায় জন্ম নিল এক নতুন সংস্কৃতি, যার নাম "বাবু কালচার"। সারা বাংলায় তখন চলছিল ইংরেজ ও তাদের দোসর এই কলকাতা-বাবুদের লুন্ঠন-শোষণ। বাঙ্গালী হিন্দুঘরের ছেলেরা যখন ইংরেজী শেখার জন্য হেয়ার সাহেবের পাল্কীর সঙ্গে দৌড়াচ্ছে তখনকার মুসলমান মাত্রই ছিল লর্ড ক্যানিং-এর ভাষায়, " রাণীর বিদ্রোহী প্রজা "। ............................ (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.