যদিও তুমি ধ্রুবতারা তবুও আমি দিশেহারা আমাদের বাসায় মেখমান আসছিল, কাজিন আর তার বউ। প্রফেসর দম্পতি, সুশীল পরিবার। তাদের সাড়ে তিন বছরের একটা মেয়ে আছে নাম ওয়াফা। খুবই সুইট। এই ক’দিন ওকে নিয়েই ছিলাম।
যাইহোক মুল ঘটনায় আসি।
ব্যাপার হইছে পরশু সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে দেখি ওয়াফা খেলছে, খাতির জমানোর জন্য বললাম, ও ওয়াফা কি হরবালাক্স? উল্লেখ্য, আমার ভাষা ভালোই ক্ষ্যাত মার্কা, বেশির ভাগ সময়ই খাটি দেশি ভাষায় কথা বলি। এক ধরনের কমফোর্ট ফিল করি। খুব সুন্দরী মাইয়া ছাড়া শুদ্ধ ভাষা তেমন একটা বলিনা।
যাইহোক ওয়াফাকে ওইটা বলার সাথে সাথে ভাবিজান মাথায় ঠুয়া দিয়া বলল, এইগুলা কি ভাষা! ভালো ভাবে কথা বলতে পারোনা? আমি বললাম, এইডা কি কইলা ভাবিজান! বাপ-দাদার ভাষা, এইডাইতো সকল ভালোর সেরা ভালো।
তিনি মোড় কেটে বললেন, তুমি এই ভাষায় কথা বলবানা, বিশেষ করে ওয়াফার সামনেতো নাইই। যতবার বলবা ততবার ঠুকা দেব (“ঠুকা দেব” শুইনা আমি হাসতে হাসতে শেষ) । আমি শয়তানি হাসি দিয়া বললাম ভালো কথা মনে করায় দিলা, ওতো আমাগো রক্ত, ওরে শিখানো আমার নৈতিক দায়িত্ব। এই কথা শুইনা ভাবিজান বলল আরেকবার বলতে শুনলে ঠুকাইতে ঠুকাইতে পাগল বানায় ফেলব। (আমি আবারো হাসতে হাসতে শেষ) আমি বললাম, কুন সমস্যা নাই, পাগল হই আর যাই হই আমি আমার দায়িত্বে অনড়।
যেই কথা সেই কাজ, পরের দিন বিকেলে ওয়াফাকে ঘুরতে নিয়ে গেলাম, একটা ক্যটবেরি ধরিয়ে দিয়ে বললাম, আম্মুনি কবিতা জান? ও বলল হু জানি। আমি বললাম, আমাকে একটু শুনাবা, প্লিজ।
কেন?
কারন, না চাইতেই আমি তোমাকে ঘুরতে নিয়ে আসছি, ক্যাটবেরি কিনে দিয়েছি, এখন আমি একটা রিকোয়েষ্ট করছি, এইটা তোমার রাখা উচিত।
সে কিছুক্ষন চিন্তা করে বলল, ওকে, বাংলাতা বলব না ইংলিছ তা বলব।
আমি বললাম, ইংলিশটা বলনা, প্লিজ।
সে বলা শুরু করল,
জনি-জনি।
ইয়েছ পাপা।
ইতিং ছুগার?
নো পাপা।
তেলিং লাই?
নো পাপা।
ওপেন ইওর মাউথ।
হা!হা!হা
আমি খুবই আনন্দিত হয়ে বললাম, ভেরি ভেরি ভেরি বেষ্ট। তুমি তো আরো অনেক পারো, না?
পারি কিন্তু আর বলবনা।
আমি হেসে দিয়ে বললাম আর বলতে হবেনা, কিন্তু আমি তোমাকে নতুন একটা বাংলা কবিতে শেখাতে চাই, তুমি শিখবে?
না, এখন ঘুরতে আসছি না?
হু, সেইটা ঠিক আছে, কিন্তু আমরা ঘুরতে ঘুরতেওতো শিখতে পারি।
ওকে দেখলাম একটু অন্যমনস্ক হয়ে বোটের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি সুযোগের সৎ-ব্যাবহার করে বললাম।
আমরা নৌকায় যেয়েও শিখতে পারি।
অবশেষে পরিকল্পনা সফল হলো দীর্ঘ তিরিশ মিনিটেরও বেশি সময়ের প্রচেষ্টায়।
বীজয়ির বেশে বাসায় ফিরে বললাম, ভাবিজান কামতো হইয়া গেছে, ভাবিজান চোখ কুচকে বলল, কিসের কাজ!
আমি ওয়াফাকে বললাম, আম্মুনিকে কবিতাটা শুনাও না, প্লিজ।
ওয়াফা খাটের উপরে উঠে লাফাইতে লাফাইতে আর চিল্লাইতে চিল্লাইতে কবিতা আবৃতি করল,
জনি-জনি।
কি কও আব্বা?
চিনি খাবালাক্স?
নারে আব্বা।
মিথ্যা কথা কও?
আলো না, আব্বা।
আ হর দি।
হা, হা, হা
কবিতা শুনে ভাবিজান রাগ করতে গিয়েও হেসে ফেলল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।