আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বাস্থ্য মন্ত্রী কেন স্বাচিপের সভাপতি? এখনও কেন পদত্যাগ করেন নাই?

থেমে যাবো বলে তো পথ চলা শুরু করিনি।

“সরকারী চিকিৎসকদের বদলী নিয়ে যাচ্ছেতাই” শীর্ষক একটি খবরের মাধ্যমে জানা গেল বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সমর্থনপুষ্ট চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)-এর সভাপতি। আমাদের দুই পুরুষ্ট-ধারায় বিভিক্ত সমাজের ভেতরে বুদ্ধিবাজ, উকিল-মোক্তার, স্থপতি, চিত্রকর, সাহিত্যিক, শিক্ষক, কৃষিবিদ, ইত্যাদি সকল শ্রেনীপেশায় আজ বিভক্তির রেখা দ্বোদ্বিপ্যমান। এই ভাবে জাতি ও সমাজকে দুই ভাগে ভাগ করার প্রক্রিয়া শুরু করে এমন একটি দল যারা আবার দেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি বলে নিজেদের পরিচয় দিতেই ভালোবাসে। তাদের মূল্যায়নে যারা তাদের দলভুক্ত, তারাই কেবল দেশের পক্ষের, জাতির পক্ষের, জনগণের পক্ষের।

তাদের মূল্যায়নে তারা এও প্রচার করে যে, তাদের রাজনৈতিক বিরোধীরা শুধু যে দেশেরই শত্রু, তাই নয়, তারা জাতির এবং জনগণের বিরুদ্ধে আমাদের মুক্তি সংগ্রামে শত্রুদের সমগোত্রীয় বটে। এমন একটি সরলীকৃত রাজনৈতিক তত্ত্ব আমাদের দেশে এখনও বাজার গরম করে এই কারনে যে, আমাদের বিভক্ত শিবিরের ভেতরে ক্ষমতায় যাবার জন্য এবং ক্ষমতা আঁকড়ে পড়ে থাকবার জন্য অনেক কূটিল কর্ম করতে ইনারা অভ্যস্থ। প্রতিটি গোষ্ঠিরই একেকটি সমিতি বা দল আছে। এই সব দলগুলোকে আমরা সাধারণত ‘পেশাজীবি’ সংগঠন হিসাবেই চিনে থাকি। স্বাচিপ তেমনই একটি সংগঠন।

এর প্রধান একজন চিকিৎসক হবেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সংগঠনের প্রধান যে স্বাস্থ্য মন্ত্রী হবেন, এইটাই চরম দুশ্চিন্তার কথা। আমাদের জানা মতে, এবং বর্তমান ক্ষমতাসীনদের ভাষায়, গেল ‘আইওয়ামে জাহেলিয়াত’ যুগে ড্যাব নামক চিকিৎসকদের বিএনপি-পন্থী সংগঠনের প্রধান কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রী পদে অসীন ছিলেন না। এমন কি জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরামের প্রধানও আইনমন্ত্রী ছিলেন না কোন কালেই। কিংবা, কৃষিবিদদের তেমন সংগঠনের প্রধান ছিলেন না কোন কৃষিমন্ত্রীই।

আমাদের জানা মতে এই ‘স্বর্ণযুগ’ আমলের আইনমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী কিন্তু স্ব-স্ব মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কোন পেশাজীবি সংগঠনের প্রধান নন। এমন কি সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের একজন নিষ্ঠাবান কর্মী কিন্তু আইনজীবিদের আওয়ামী-অংশের প্রধান নন। একজন প্রাক্তন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বর্তমানে হাইকোর্টের বিচারপতি, তিনি কিন্তু তাঁর পূর্বতন পরচয়ের খোলস ছেড়েছেন। এমন কি কোন এক কালে প্রধান বিচারপতির অফিসের দরজায় লাথি দেওয়া আইনজীবিটি আজ বিচারপতি। তিনিও কিন্তু তাঁর পুরোনো খোলসটি যথাসাধ্য ছাড়ার চেষ্টা করছেন।

তাহলে কেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী তারই অধীনস্থ মন্ত্রণালয়ের কিছু পেশাজীবিদের সংগঠনের প্রধানের পদ ছাড়তে পারছেন না? এটা কি এই জন্য যে, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা যাঁকে করা হয়েছে, তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রীর জন্য একটি হুমকী বা প্রতিদ্বন্দ্বী? রাজনীতিতে এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতেই পারে। কিন্তু অশোভনীয় হয় তখনই যখন স্বাস্থ্য মন্ত্রী গোষ্ঠি স্বার্থের উর্দ্ধে উঠবার ক্ষমতাটুকুও হারিয়ে ফেলেন আমাদের আ ফ ম রুহুল হকের মত। এর প্রভাব পড়ে সরকারের উপরে – তার দুর্নামের বোঝা বেড়ে যেয়ে; আর পড়ে সাধারনের উপরে – যারা ক্ষেপে গিয়ে সফল সরকারকে পরবর্তি নির্বাচনে গদিচ্যূত করে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।