good
মহাজোট সরকারের অন্যতম শরীক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সম্প্রতি বাংলাদেশে ধর্মীয় জঙ্গিবাদ সৃষ্টির জন্য সংবিধানে ‘‘বিসমিল্লাহ'' সংযোজন ও ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম' যুক্ত করাকে দায়ী করেছেন। কিন্তু পর্যবেক্ষক মহল এই মন্তব্যকে সত্যের চরম অপলাপ আখ্যা দিয়েছেন। তাঁদের মতে ‘বিসমিল্লাহ' বা রাষ্ট্রধর্ম নয়, বামপন্থীরাই সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে বাংলাদেশে ‘জঙ্গিবাদ' ও উগ্রবাদ আমদানি করেছে, এর চাষবাস করেছে এবং এখনো তারা এই জঙ্গিবাদের হাতিয়ার ব্যবহার করে নানা ফায়দা লুটে চলেছে। স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকেই দেশে অসংখ্য জঙ্গিবাদী-উগ্রবাদী কর্মকান্ড তারা ঘটিয়ে চলেছে। বরং প্রকৃত ইসলাম চর্চাকারীরা সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক পন্থা ও পদ্ধতিতে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে শরীক আছেন বলেও পর্যবেক্ষকদের অভিমত।
রাশেদ খান মেনন একটি বিদেশী বেতারে দেয়া সাক্ষাৎকারে দেশে ধর্মীয় জঙ্গিবাদ সৃষ্টির জন্য ১৯৭৫ সালের পরবর্তীকালে ধর্মের নামে রাজনীতি করার অনুমতি এবং পরবর্তীতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার মধ্য দিয়ে এর স্বীকৃতি দেয়া হয় বলে দাবি করেন। তিনি রাষ্ট্রধর্মের আগে দেশে উগ্রপন্থা থাকার কথা স্বীকার করলেও তা সেভাবে ছিল না বলে উল্লেখ করেন। অথচ ইতিহাস বলে উল্টো কথা। দেখা গেছে, দেশের বুকে বিদেশী দূতাবাসে হামলা করে চরম জঙ্গিবাদের সূচনা করেছে এবং বাংলাদেশের বুকে এ ধরণের জঘন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তারাই। শ্রেণী শত্রু খতমের নামে আজ পর্যন্ত আইনের বাইরে বিচারবহির্ভূত নৃশংস হত্যাকান্ড সংঘটিত করে চলেছে এই বামপন্থীরাই।
তারা গত ৩৭ বছরে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষকে নিজেরা হত্যা করেছে অথবা হত্যার মুখে ঠেলে দিয়েছে। থানা-পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা এবং সেনাসদস্যসহ আইন প্রয়োগকারী সদস্যদের হত্যা ও অস্ত্র- গোলাবারুদ লুণ্ঠন করেছে। দেশে গণতন্ত্রের অভিযাত্রাকে বারবার ব্যাহত করতে ষড়যন্ত্রের ঘোট পাকাতেও এদের জুড়ি নেই বলে মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
বামপন্থীরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সবচেয়ে বড় লড়াকু হিসেবে নিজেদের জাহির করার প্রয়াস চালালেও ইতিহাস বলে অন্য কথা। সে সময় এদের একটি বড় অংশই মুক্তিযুদ্ধকে ‘দুই কুকুরের লড়াই' হিসেবে আখ্যা দিয়ে একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালিয়েছে।
একটি অংশ আবার ভারতকে সম্প্রসারণবাদী আখ্যা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাও করেছে। এমনকি তারা বহু মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যাও করেছে। বৃহত্তর পাবনা অঞ্চলে বামপন্থীদের হাতে মুক্তিযোদ্ধা নিহত হবার বেশ কিছু ঘটনার কথা জানা যায়। স্বাধীনতার পরও কোন কোন বামপন্থী গ্রুপ নামের আগে ‘পূর্ব পাকিস্তান' ব্যবহার অব্যাহত রাখে। এর অন্যতম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তানের বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কস-লেনিন)।
' স্বাধীনতার পরপরই ২/৩টি ছাড়া বাকি বামপন্থী দলগুলো আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকেই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শুরু করে।
রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি মূলতঃ একটি গোপন সংগঠনের ধারাবাহিকতায়ই গড়ে ওঠে। ১৯৭৮ সালের নবেম্বর মাসে লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসে নাম পরিবর্তন করে বর্তমান নাম রাখা হয়। কিন্তু তখনো তা প্রকাশ্যে আসেনি। ১৯৮০ সালের মে মাসে পার্টির কৌশল নিয়ে অনেক দেন-দরবার ও দ্বিধাবিভক্তির পর পার্টি প্রকাশ্যে রাজনীতি শুরু করে।
এই প্রকাশ্যে রাজনীতি শুরুর আগে পর্যন্ত এই দলের মূল নেতৃবৃন্দ সশস্ত্র গোপন সংগ্রামের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
বাম আন্দোলনের ইতিহাসে দেখা যায়, বর্তমান সিপিবি ও ন্যাপ ছাড়া বাকি বামপন্থী সংগঠনগুলো প্রধানতঃ পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) থেকে উদ্ভূত। ১৯৭০ সালে এই দল নকশালপন্থী ধারায় প্রবেশ করে। সে সময় নকশাল আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা চারু মজুমদারের দৃষ্টিভঙ্গি এতোটাই কঠোর ছিল যে তিনি বলতেন, ‘যে শ্রেণী শত্রুর রক্তে নিজের হাত রাঙায়নি, সে কমিউনিস্ট নামের উপযুক্ত নয়। ' ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এদের একটি অংশ ভারতে চলে যায় এবং অপর অংশটি দেশে থেকে গিয়ে একই সঙ্গে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের উপর হামলা চালাতে থাকে।
এদের লক্ষ্য ছিল এর মধ্য দিয়ে নিজেদের পৃথক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। এসময় তারা বহু মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে। কুষ্টিয়া, যশোর, পাবনা, রাজশাহী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম প্রভৃতি অঞ্চলে এই ঘটনা ছিল উল্লেখযোগ্য।
নকশালপন্থী পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) ভেঙ্গে ১৯৭৩ সালে ‘কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ববাংলা সমন্বয় কমিটি' হিসেবে কাজ করতে থাকে। এরা নিজেদের খাঁটি নকশালপন্থী হিসেবে তুলে ধরতে চেষ্টা করেন।
পরে নানা লাইন আর কৌশলের বিবর্তন-পরিবর্তন-রূপান্তর শেষে তা বর্তমান বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রূপ লাভ করে। প্রকাশ্য রাজনীতিতে নামলেও এই দলটির মনোগত গঠন ও চিন্তাধারা আগের সেই চরমপন্থী অবস্থানেই রয়ে গেছে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত। তাদের অঙ্গ সংগঠন বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর '৮০-র দশকজুড়ে প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের উপর হামলার অসংখ্য ঘটনাবলী তারই উদাহরণ হয়ে রয়েছে। ১৯৯২ সালের ১৭ আগস্ট ওয়ার্কার্স পার্টির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান মেনন ঢাকায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার সময় আততায়ীর গুলিতে আহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পূর্ণ রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হন। তাঁর উপর হামলার সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবেই এই ঘটনার জন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করা হয়। আর তার জের ধরে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভাংচুর চালানো এবং জামায়াত-শিবির কর্মীদের আহত করা হয়। পরে অনুসন্ধানী রিপোর্টে জানা যায়, এই হামলার সঙ্গে রাশেদ খান মেননের নির্বাচনী এলাকা বরিশালের উজিরপুরের চরম বামপন্থী গ্রুপ দায়ী। নির্বাচনে মেননের প্রতিদ্বনিদ্বতা নিয়ে বিরোধের জের ধরে তার উপর হামলা করা হয়।
এই বাম চরমপন্থী জঙ্গিবাদীদের কর্মকান্ডের এক রিপোর্টে দেখা যায়, ১৯৭৩ সালের জুলাই-আগস্ট এই দুই মাসে বাম উগ্রপন্থীরা ১৩টি পুলিশ ফাঁড়ি ও ১৮টি বাজার আক্রমণ করে, ১৪০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৬ হাজার ৬শ' ৮০টি গোলাবারুদ লুট করে। হত্যা করে ২৬ জন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে। প্রবীণ রাজনীতিক মিজানুর রহমান চৌধুরী তাঁর ‘রাজনীতির তিনকাল' গ্রন্থে থানা ও ফাঁড়ি লুটের ১৯৭৩ সালের একটি বিবরণ দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ১২ জুন খুলনার ফকিরহাট থানার বেতাগী পুলিশ ফাঁড়ি, ১৩ জুন বগুড়ার গাবতলী থানা, ১৮ জুন নওগাঁর নিয়ামতপুরের ছাত্রা ফাঁড়ি, ১৯ জুন বরিশালের নলছিটি থানার কাঁটাখালি ফাঁড়ি, ২২শে জুন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার মাড়িয়া ফাঁড়ি, ২৬ জুন বরিশালের কাঁঠালিয়া থানার আমুয়া ফাঁড়ি, ২৮ জুন বরিশালের চরফ্যাশন থানা এবং ২৯ জুন রামগড়ের জালিয়া ফাঁড়িতে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়। আরেক রিপোর্টে জানা যায়, ১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে তারা সিরাজগঞ্জের নিমগাছি পুলিশ ফাঁড়ি, ১৯৮৭ সালের জানুয়ারিতে শেরপুরের চন্দ্রকোণা পুলিশ ক্যাম্প, একই বছরের মার্চে নাটোরের গুরুদাসপুর থানা, '৮৮-র এপ্রিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল পুলিশ ফাঁড়ি এবং একই বছরের মে মাসে মাগুরার শ্রীপুর থানা লুট করে।
কোন কোন থানা দুইবার পর্যন্ত লুট করা হয়।
এই গোপন বাম রাজনীতির শ্রেণী শত্রু খতমের নৃশংসতার মৃগয়াক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তর যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, সাতক্ষীরা, রাজবাড়ি এবং বৃহত্তর রাজশাহীর বিস্তীর্ণ অঞ্চল। সর্বহারার বধ্যভূমি হিসেবে আজো খ্যাত হয়ে আছে রাজশাহীর তানোর ও বাগমারা, নওগাঁর আত্রাই ও রানীনগর, নাটোরের সিংড়া ও গুরুদাসপুরের নাম। পাবনা ও সিরাজগঞ্জের কোন কোন প্রত্যন্ত এলাকায় থানা লুট ও পুলিশ খুনের ঘটনা সাম্প্রতিককালেই ঘটেছে। আত্রাই ও রানীনগরের ইতিহাসের জন্য সর্বহারা-বামপন্থীরা গর্ববোধ করে।
বাম চরমপন্থীদের তৎপরতার শুধুমাত্র ঝিনাইদহ জেলার যে চিত্র পাওয়া তা রীতিমত ভয়ানক। স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত দুই দশকে এই একটি জেলাতেই চরমপন্থী দলের হাতে ও নিজস্ব সংঘাতে ৩ হাজার মানুষ খুন হয়। শুধু '৯২-৯৩-এর মাঝামাঝি সময়ে যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলে অন্ততঃ ৭৫ জন নিহত হয়। বন্দুকযুদ্ধে একদিনে নিহত হয় ১২ জন। '৯৩-এর ৩ মার্চ একসঙ্গে জবাই করে হত্যা হয় ৭ জনকে।
২০০৪ সালের এক রিপোর্টে দেখা যায়, সে বছর একই জেলায় ১০১টি হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। এর মধ্যে ৫০টি ঘটায় চরমপন্থীরা। এর আগে ২০০৩-এ ৭৫ জন, ২০০২-এ ৭৩ জন এবং ২০০১ সালে ৫৯ জন নিহত হয় বিভিন্ন ঘটনায়। এই জেলায় তৎপর গোপন সংগঠনগুলো ছিলো, পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল), পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (লালপতাকা), পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (জনযুদ্ধ), বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি, নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি, জাসদ গণবাহিনী, গণমুক্তিফৌজ প্রভৃতি।
গোপন বামপন্থী আন্দোলনকারীদের এই তৎপরতার জন্য ছিল সমৃদ্ধ অস্ত্র-ভান্ডার।
ব্যবহৃত হয়েছে নানা দেশী-বিদেশী অস্ত্র। সাপ্তাহিক বিচিত্রার এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, এসব অস্ত্র প্রধানতঃ ভারত থেকে আসলেও চট্টগ্রামের শান্তিবাহিনীর কাছ থেকেও অস্ত্রের চালান আসতো। ১৯৯৩ সালে পুলিশ স্বপন বাহিনীর স্বপনের কাছ থেকে হাঙ্গেরীর বুদাপেস্টে তৈরী সম্পূর্ণ অটোমেটিক এম. ৯৫-এম রাইফেল উদ্ধার করে। এই অস্ত্রটি ওয়ারশ জোটের সদস্যরা ব্যবহার করতো। পরে তা ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা ব্যবহার করেছে।
১৯৯১ সালে শৈলকুপার গণবাহিনীর সদস্য ইদ্রিস আলী একটি মর্টারসহ আত্মসমর্পণ করে। যশোরে সর্বহারাদের স্থল মাইন ব্যবহারের রিপোর্টও পুলিশের খাতায় আছে।
গোপন বামপন্থীরা নিজেদের ইচ্ছেমত মানুষকে ‘মৃত্যুদন্ড' দেয়ার রীতি চালু করে। ১৯৭৩-৭৪ সালে নোয়াখালী অঞ্চলে তারা প্রথম তথাকথিত ‘গণআদালত' গঠন করে এ ধরণের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পদ্ধতি চালু করে। ১৯৯৪ সালের অক্টোবরে নড়াইল সদর থানার সিংরাশোলপুর বাজারে জনৈক কৃষক নেতাসহ কয়েকজন এক জনসভায় ‘সন্ত্রাসবিরোধী' বক্তব্য রাখলে ১৯ অক্টোবর এদের ৫ জনের মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করা হয় রীতিমত মাইক বাজিয়ে ও দেয়ালে পোস্টার সেঁটে।
এরমধ্যে মূল ‘আসামী' মহববত হোসেনকে ১৩ নবেম্বর শহর থেকে বাড়ি ফেরার পথে পিটিয়ে হত্যা করে মৃত্যূদন্ড কার্যকর করা হয়।
গোপন রাজনীতির নামে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানোর মাধ্যমে মূলতঃ বিপুল অঙ্কের অর্থ আদায় হয়ে থাকে। পার্টি চালানো, বাহিনী তৈরী এবং অস্ত্র সংগ্রহের নামে এই অর্থ সংগ্রহ করা হলেও এর একটা বড় অংশই শহর-নগরীতে বসবাসরত প্রকাশ্য রাজনীতির গডফাদারদের কাছে পৌঁছে দিতে হয়। গোপন রাজনীতির অনেকের সুতো ঐ গডফাদারদের হাতের নাটাইয়ের সঙ্গে বাঁধা বলেও প্রচার আছে। ১৯৯৩ সালের এক রিপোর্টে জানা যায়, ‘প্রকাশ্যে রাজনীতিতে আসার খরচ' হিসেবে সর্বহারা পার্টি যশোর, কুষ্টিয়া, নড়াইলের গ্রাম-জনপদগুলো থেকে ৩ কোটি টাকার ‘তহবিল' সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়।
নড়াইলের একটি মাত্র ইউনিয়ন নন্দীতেই চাঁদা ধরা হয় ২০ লাখ টাকা। এসব ব্যক্তির কেউই মহাজন কিংবা জমিদার নয়। বাজারের ছোট দোকানী, মাঝারী কৃষক, এমনকি স্কুল মাস্টারকেও চাঁদা দেয়ার নির্দেশ দেয় পার্টির কর্মীরা। কিন্তু এখন পর্যন্ত সর্বহারা নামে কোন প্রকাশ্য রাজনৈতিক দল মাঠে দেখা যায়নি। তাহলে ঐ বিপুল অঙ্ক কাদের পকেটে গেল তা প্রশ্ন হয়ে রয়েছে।
রাশেদ খান মেননদের অপর সহযোগী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের জঙ্গিবাদী ও উগ্রবাদী তৎপরতাও কোন অংশে কম নয়। ১৯৭৫ সাল থেকেই এর শুরু। তাদের তত্ত্ব-গুরু কর্নেল তাহেরের বিরুদ্ধে মে.জে. খালেদ মোশাররফ, কর্নেল হুদা ও কর্নেল হায়দারকে হত্যারও অভিযোগ করা হয়েছে একটি ওয়েবসাইটে। উল্লেখ্য, কর্নেল তাহের ১৯৭৪ সালের জুন মাসে গোপন ও সশস্ত্র সংগঠন হিসেবে ‘বিপ্লবী গণবাহিনী' গঠন করেন, যা আজো দেশের কোন কোন এলাকায় ‘জাসদের গণবাহিনী' নামে সক্রিয় রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মিজানুর রহমান চৌধুরী তাঁর ‘রাজনীতির তিনকাল' বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ‘১৯৭৪ সালের মার্চে জাসদের প্রকাশ্য রাজনৈতিক তৎপরতা বন্ধ হয়ে গেলে গোপন অবস্থায় থেকে এরা গঠন করে গণবাহিনী নামের সশস্ত্র সংগঠন।
জাসদের নেতৃস্থানীয় অধিকাংশই ছিলেন সাবেক মুজিব বাহিনীর সদস্য। যাদের অনেকেই স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে এসে অস্ত্র জমা না দিয়ে লুকিয়ে রেখেছিল সময়ের অপেক্ষায়। গণবাহিনী গঠনের পর তাদের সেই সময় এসে যায়। ফলে সশস্ত্র তৎপরতা চালাতে তাদের আর অস্ত্রের অভাব হয়নি। ' (পৃঃ ১৪৯)।
১৯৭৫ সালের ২৬ নবেম্বর জাসদের উদ্যোগে ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসে বোমা হামলা চালানো হয়। সে সময় সমর সেন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তাঁকে জিম্মি করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। তিনি অল্পের জন্য বেঁচে যান। এই হামলাকালে আসাদ, মাসুদ, বাচ্চু ও হারুণ নামে ৪ ব্যক্তি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়।
একটি ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, এই অভিযান-পরিকল্পনার নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতা প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন। এই ঘটনা বাংলাদেশে সন্ত্রাসের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন অধ্যায়ের সূচনা করে। জাসদ ১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বাসভবনেও হামলা চালায়। এসময় পুলিশের গুলিতে জাসদের দাবী অনুযায়ী ৫০ জন এবং পুলিশের দাবী অনুযায়ী ৬ ব্যক্তি মারা যায়। এই দু'টি বড় ঘটনা বাংলাদেশে চরম জঙ্গিবাদী তৎপরতার দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
গণবাহিনী ১৯৭৪, '৭৫ ও '৭৬ সালে বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও রাজবাড়ী অঞ্চলে থানা আক্রমণ, ট্রেজারি লুট এমনকি সেনাবাহিনীর উপর হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। ১৯৭৪ সালে তারা হরিণাকুন্ডু থানা, মেহেরপুর ট্রেজারি, আল্লারদরগা ও লাঙ্গলবন্দ পুলিশ ফাঁড়ি লুট করে। '৭৫-এর ১৯ মার্চ কুষ্টিয়ায় ট্রেজারি লুটকালে পুলিশের হাতে নিহত হয় গণবাহিনীর ক্যাডার নুরু মাস্টার, জামান, ফয়েজুর, মন্টু, আন্টু প্রমুখ। একই বছর গাংনী থানা আক্রমণ করে গণবাহিনী। এতে পুলিশের গুলি খেয়ে মারা যায় পান্না নামের এক ক্যাডার।
'৭৬ সালের ৩১ মার্চ কুস্টিয়ায় সেনা সদস্যদের উপর আক্রমণ চালায় তারা। এই ঘটনার জের ধরে নিহত হয় গণবাহিনী ক্যাডার আবদুল জববার, আবদুল কুদ্দুস, কাইউম, সফোগাজী প্রমুখ। ১৯৮৭ সালে মাগুড়ার কংসী গ্রামে সর্বহারা বনাম গণবাহিনীর লড়াইয়ে গণবাহিনীর ৭ ক্যাডার মারা যায়।
তারা নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলেও নিজেদের লোকদের হত্যা করতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়নি। ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি দলীয় সভাপতি কাজী আরেফ আহমেদ কুষ্টিয়ায় এক জনসভায় বক্তৃতা দেয়ার সময় ব্রাশ ফায়ার করে তাকে হত্যা করা হয়।
এসময় আরো নিহত হন জাসদের কুষ্টিয়া জেলা সভাপতি লোকমান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. ইয়াকুব আলী, জাসদ নেতা ইসরাইল হোসেন ও শমসের মন্ডল। এই হত্যাকান্ডের জন্য পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টিকে দায়ী করা হলেও অনুসন্ধানী রিপোর্টে এজন্য জাসদ ও গণবাহিনীর মধ্যে আধিপত্য ও নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার কোন্দলই দায়ী বলে জানা যায়। একটি দলের প্রথম সারির কয়েকজন নেতার এমন করুণ পরিণতি দলের চরমপন্থার করুণ উদাহরণ বলে মনে করেন সচেতন রাজনীতিকরা।
এই বিপুল প্রাণহানির বিনিময়ে বাংলাদেশের মানুষের কী উপকার হয়েছে তার কোন জবাব আজো দেননি ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের তাত্ত্বিক রথী-মহারথীরা। আর বাংলাদেশের ইতিহাসে চরমপন্থী, জঙ্গিবাদী ও উগ্রবাদী তৎপরতার জনক হিসেবে রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনুদের রাজনৈতিক আদর্শই যে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে সে কথাও কোনদিন মুছে যাবার নয় বলে মনে করেন অভিজ্ঞমহল।
১৯৭৫ সালে বাম জঙ্গিবাদীরা ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসে বোমা হামলা চালায়-----সরদার আবদুর রহমান
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।