“ সত্য পথে কেউ নাই রাজি
সবই দেখি তানানানা,
জাত গেলো জাত গেলো বলে
এ কি আজব কারখানা।
যখন তুমি ভবে এলে
তখন তুমি কি জাত ছিলে,
যাবার কালে কি জাত হবা
সেই কথা কেনে বলনা।
জাত গেলো জাত গেলো বলে
এ কি আজব কারখানা ”
খুব বেশি যে আমি বাউলদের সম্পর্কে জানি, তা বলবো না। তবে বাউলদের মনের বাসনা আর একাগ্রতা আমাকে কেন জানি টানে। হতে পারে এতটুকুই আমার বোধ বাউলদের নিয়ে।
প্রকৃত বাউলগন বাস্তবিক লোভ-লালসার একদমই উপরে। ধ্যান যদি একটি শিল্প হয় কোন কিছু অর্জনের। বাউলগন তাদের নিজস্ব গণ্ডির ভেতরেই তাদের এই মহৎ কর্ম, যা সুনির্দিষ্ট একটি তত্ত্বর উপর দাঁড়ানো। তা সম্পাদন করার চেষ্টায় থাকেন। নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা নিজেদের মত করেই নিজেদের গণ্ডির মধ্যেই প্রকাশ করেন বাউলগন।
কিন্তু তা’ই ছড়িয়ে যায় দেশ থেকে বিদেশেও। শুনেছি লালন শাহ কে নিয়ে বিদেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রীতিমত পাঠদান করা হয়। কেউ কেউ এই বাউলতত্ব এবং লালন নিয়ে গবেষণাও করে থাকেন। যা এখনও চলমান।
রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার চর রামনগর গ্রামে বাউলদের ওপর হামলা! খবরটা যখন শুনি এই ধরনের মহৎ মনের অধিকারী একেকজন বাউলগনকে যা সংখ্যায় প্রায় জনা তিরিশেক হবে।
তাদের কে ধরে চুল-দাড়ি কেটে বাধ্য করা হয়েছে । পানিতে চুবিয়ে শাস্তির ষোল আনা পূরণ করেছে কিছু বিকৃত মনা মানুষ। অবাক করার ব্যাপার হল এই নিয়ে খুব একটা মাতামাতি হয়ে নি! বরঞ্চ যারা এই সব ঘৃণ্য কাজগুলো করেছে। তারাই বীর দর্পে বলে বেড়াচ্ছে এবং ভুক্তভোগী বাউলদের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। বাউলগন অভিযোগ করেন- ‘আসামিরা এখন আমাদের হুমকি দিচ্ছে।
নানা ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। তারা বলছে, কত দিন তোমাদের মামলা থাকবে? মামলা তো একদিন আপস-মীমাংসা হবেই, তখন দেখা যাবে কে তোমাদের বাঁচায়। তারা ফোনে, আবার বাড়ি গিয়ে আমার পরিবারকে (স্ত্রী) হুমকি দিয়ে আসছে। ’
এই নিয়ে অবশ্য মামলা হয়েছে। মামলার বাদী চর রামনগর গ্রামের ফকির মোহাম্মদ আলী শাহ বলেন, ‘অন্তত ২০ বছর ধরে আমার বাড়িতে সাধুদের আসর বসে।
এবার আমার ৪০ বছরের সাধনার চুল কাঁচি, বঁটি দিয়ে সব কেটে দিয়েছে স্থানীয় মোসা মোল্যা, জিন্দার শেখ, জয়নাল, রিয়াজ শিকদার, ইউনুছ ক্বারী, চৌবাড়িয়া গ্রামের মুফতি রিয়াজুলসহ কয়েকজন। সাধুদের কাটা চুল থানায় জমা রাখা আছে। ’
আর আমাদের মহামান্য পুলিশের ভাষ্য- আসামিরা পালিয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান চলছে।
এত কিছুর পরও অবাক লেগেছে এই নিয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে খুব বেশি আলোড়ন হয় নি! নাকি বাউলগন সামাজিক জৌলুষতা এবং ক্ষমতা ধারণ করেন না বিধায় উনাদের নিয়ে বলার মতনও লোকজনের অভাব।
তবে যারা এই বাউলিয়ানাকে পুঁজি করে, লালনতত্ব এবং লালনের গান কে গলায় ধারণ করে আধুনিক শিল্পী থেকে ফোক শিল্পী হয়ে সুনাম কুড়িয়েছেন। তারাও আজ নিশ্চুপ! আবার তারাই নির্লজ্জের মতন এই বাউলতত্ব মানে লালনতত্ব নিয়ে কথার ফুলঝুরি ছোটাবেন! আবার তারাই খুব ঢং করে হয়ত আধুনিক দর্শকদের সামনে ভালো ভালো কথা, যা বাউলদের মুখনিঃসৃত বানীকেই নিজের বলে চালিয়ে দিবেন! কিন্তু মূল বাউল ধারার এই লোকগুলোর উপর এই ধরনের অমানবিক নির্যাতনের খুব বেশি প্রতিবাদও করবেন না! হয়ত করবেন মিহি গলায় কেউ কেউ। তা যে এ বাড়ি থেকে ও বাড়িও শুনা যাবে না! ঘটনার পরের সময়গুলোতে তাদের অবস্থান দেখলেই তো বুঝতে পারি আমরা। তাহলে সরকার কে চাপ দিবে কে? এর মানে যে সরকারের সদিচ্ছার অভাব তা বলবো না। তবে হালের আমিনিদের ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়িতে সরকার হয়ত এই সেনসিটিভ বিষয়গুলো এড়িয়ে যেতে চাইবে।
রংচং মাখানো রাজনীতিবিদ এবং সুবিধাবাদীদের এয়ারপোর্ট এর সামনের মনুমেন্ট নিয়ে খেলা তো আমাদের দেখাই আছে।
খুব বেশি ক্ষমতা এবং শক্তি হয়ত আমার নেই। আমি বলবো তাদের এই কার্যক্রম অবশ্যই অবশ্যই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, যারাই এই ঘৃণ্য কাজ করেছেন বাউলদের সাথে। তাদেরকে উপযুক্ত এবং দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি যেন দেয়া হয়। তার জন্য আর কিছু না পারি।
প্রতিবাদ তো করতে পারবো লিখার মাধ্যমে। সে থেকেই এই অধমের ক্ষুদ্র প্রয়াস। আপনারাও লিখুন এবং বলুন। না হয় যে এই ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা সামনে আরও বাড়বে বৈ কমবে না। তখন কিন্তু এর থেকে আপনি-আমি কেউই গা আড়াল করে থাকতে পারবো না।
সাম্প্রদায়িক শক্তি কিন্তু মাথাচারা দেয়ার পায়তারায়। তারা হয়ত এইভাবেই সমাজে অরাজকতা এবং বিভেদ সৃষ্টি করার পায়তারায় থাকবেন।
অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ঘৃণা এবং ক্রোধ প্রকাশ করছি ঐ সব নরপিশাচ রুপি মনুষ্য জানোয়ারদের প্রতি। যারাই এই বাউলবেশি সাদা মনের মানুষদের উপর এই ধরনের নগ্ন হামলা চালিয়েছে। সাথে সাথে দাবী করছি ওদের উপযুক্ত শাস্তি, যা হবে ভবিষ্যতের দৃষ্টান্তমুলক।
আমরা সবসময়ই চাই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।
সহমর্মিতা প্রকাশ করছি সেই সব ভুক্তভোগী শ্রদ্ধেয় বাউলদের প্রতি।
ছবি কৃতজ্ঞতায়ঃ নিষাদ ভাই
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।