নিজেকে একটু কি দূরে সরিয়ে রাখতে চাইছেন মুশফিকুর রহিম! কুইন্স স্পোর্টস ক্লাব মাঠে কাল ওয়ার্মআপের সময় কী একটা নতুন ড্রিল করাচ্ছিলেন ট্রেনার ডেভিড ড্রয়ার। সামান্য দূরত্বে একজন খুব জোরে দৌড়ে যাচ্ছেন। পেছন থেকে আরেকজন তাঁকে ধরার চেষ্টা করছেন। সবাই বেশ মজাই পাচ্ছিলেন। শুধু মুশফিকের কেমন যেন ছাড়া ছাড়া ভাব।
একটু পর ক্যাচ প্র্যাকটিসেও তাই। অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে কি তাহলে সিরিজ থেকেই মন উঠে গেল তাঁর?
মুশফিকের অধিনায়কত্ব ছাড়াটাকে রহস্যময় ভাবলে এ রকম প্রশ্ন উঁকি দিতেই পারে। যদি ভাবেন এটা একান্তই ওয়ানডে সিরিজ হারজনিত আবেগতাড়িত সিদ্ধান্ত নয়, পেছনে আরও কারণ লুকিয়ে; তখন স্বাভাবিক বিষয়গুলোও অস্বাভাবিক ঠেকে। বাস্তবতা হলো, অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর দ্বিতীয় দিনেও বুলাওয়েতে নতুন কিছুর গন্ধ সামান্যই মিলেছে। দলের একটি সূত্রের তথ্য, বাজে আউট হওয়ার পরও ড্রেসিংরুমে ফিরে কোনো কোনো ব্যাটসম্যানকে অনুতপ্ত না হতে দেখে অসন্তুষ্ট ছিলেন মুশফিক, যে রকমটা হলে অসন্তুষ্ট হন সব অধিনায়কই।
তবে এটাকে কেউ পদত্যাগের মতো বড় সিদ্ধান্তের কারণ মানতে নারাজ। এ ছাড়া ঢাকায় বোর্ড সভাপতি মুশফিককে উদ্ধৃত করে টিমওয়ার্কের যে অভাবের কথা বলেছেন, সেটাও দলের মধ্যে বিস্ময়ের জন্ম দিচ্ছে। যাঁরা বোর্ড সভাপতির সঙ্গে মুশফিকের ওই কথোপকথন শুনেছেন তাঁরা তো বটেই, অন্যরাও বাজি ধরে বলছেন, ‘টিমওয়ার্ক নেই’ এমন কথা বোর্ড সভাপতিকে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেননি।
মুশফিকের কথা নিয়ে ঢাকা-বুলাওয়ের মতপার্থক্যটুকু না থাকলে অধিনায়কত্ব ছাড়ার বিতর্ক বোধ হয় এই দুই দিনে কিছুটা থিতিয়ে আসত। অত বড় একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মুশফিকের মনে নানা রকম ঝড় বয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক।
এমনিতেই শান্ত স্বভাবের মানুষ, বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজেকে আরেকটু গুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও তিনি করতে পারেন। দল সূত্রে সে রকম টুকটাক তথ্য পাওয়া গেলেও সেগুলোর কোনোটাই ধর্তব্য বলে মনে হয় না। বরং কাল অনুশীলনে নামার আগে দীর্ঘ টিম মিটিংয়ে অধিনায়ক টি-টোয়েন্টি সিরিজের ব্যাপারে সবাইকে অনুপ্রাণিত করারই চেষ্টা করেছেন। সংবাদমাধ্যমকে পেসার জিয়াউর রহমানও বলে গেলেন সে রকম, ‘আমরা আজ (গতকাল) একসঙ্গে বসেছি। ব্যাটিং-বোলিং নিয়ে, ওয়ানডেতে কী সমস্যা ছিল, এখানে কী করলে আমরা আরও ভালো করতে পারব—এসব নিয়ে কথা বলেছি।
সবই ঠিক আছে। কোনো সমস্যা নেই। ’
ওয়ানডে সিরিজ হারের পর এখন শুধু টি-টোয়েন্টির সাফল্যেই কিছুটা হাসতে পারে বাংলাদেশ দল। কাঙ্ক্ষিত সেই হাসির জন্য শুরু থেকেই সবাই সতর্ক। প্রথম সতর্কতা ছিল দল নির্বাচন নিয়ে।
আজকের ম্যাচের প্রথম একাদশ নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে গত দুই দিনে। গবেষণার ফলাফল প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে একাদশে থাকবেন না মোহাম্মদ আশরাফুল, জহুরুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম ও মমিনুল হক। কাল ঊরুর মাংসপেশিতে চোট পেয়ে বিভব সিংয়ের সঙ্গে শফিউলের নেট ছেড়ে যাওয়ার দৃশ্যে কাহিনিতে আরও টুইস্ট আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। তবে ফিজিও ড্রেসিংরুমে তাৎক্ষণিকভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন, এতে শফিউলের খেলতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আশরাফুলের বাদ পড়াটা বিস্ময়করই।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও ওপেনিংয়ে নেমে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেছিলেন। সূত্র জানিয়েছে, ওয়ানডে সিরিজে না খেললেও টি-টোয়েন্টিতে শামসুর রহমানকে খেলানোর চাপ আছে নির্বাচকদের দিক থেকে। ঢাকা থেকে প্রধান নির্বাচক আকরাম খান ও বুলাওয়েতে থাকা নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন দুজনই আজ শামসুর রহমানকে খেলানোর পক্ষে। আশরাফুল বাদ পড়ছেন সে কারণেই। তবে মুশফিক নাকি চেয়েছিলেন তাঁকে দলে রাখতে।
ওয়ানডে সিরিজ জয় এমনিতেই আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে জিম্বাবুয়ের। তার ওপর মুশফিকের অমন সিদ্ধান্ত! শেষ পর্যন্ত যা-ই হোক, মাঠে নামার আগে অন্তত নড়বড়ে এক প্রতিপক্ষই নিশ্চয় আশা করছে জিম্বাবুয়ে। আর সবার মতো জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেলরও অবাক মুশফিকের সিদ্ধান্তে, ‘শুধু অবাক নই, আমি খুবই অবাক মুশফিকের এই সিদ্ধান্তে। আমার তো মনে হয়, বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হিসেবে সে-ই সবচেয়ে যোগ্য। ’ জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক অবশ্য বললেন, মুশফিককে নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা বাংলাদেশকে আরও নাড়িয়ে দেবে বলে তিনি মনে করেন না, ‘দলটা পেশাদার।
আমার তো মনে হয়, এসব থেকে বেরিয়ে এসে তারা ঠিকই ভালো খেলবে। বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য আছে। আমি নিশ্চিত, তারা চাইবে টি-টোয়েন্টি সিরিজটা জিতে আবারও ভালো ক্রিকেট খেলা শুরু করতে। ’
মুখে বললেও ব্রেন্ডন টেলর কি তা মন থেকে চাইবেন? কিন্তু জিম্বাবুয়ে-কলঙ্ক কিছুটা হলেও মোচন করতে আজ এটাই ১৬ কোটি মানুষের প্রার্থনা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।