আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দিনের শেষে-১২



`নাস্তা খাবেন। নাস্তা' কোন স্টেষন থেকে ট্রেন ছাড়ার ৫ মিনিট পরই স্টাফরা নাস্তার ট্রে নিয়ে এ কথা বলতে বলতে বগি থেকে আরেক বগি তে হেটে বেড়ায়। স্বভাবতই ক্ষুধার্ত মানুষ জিজ্ঞেস করে- ভাই! দাম কত? তারা বলে- প্লেট প্রতি বিশ টাকা। আর অমনি প্লেট সাবার করে ফেলা। স্টাফ প্লেটসহ দাম নিতে এলে বলে- ভাই! একশত বিশ টাকা দেন।

যাত্রী তো অবাক। বিশটাকার নাস্তা আবার একশত বিশ টাকা কেন। স্টাফ বলে না ভাই নাস্তার দাম ১২০ টাকাই। তাহলে প্রথমে যে বললেন ২০ টাকা। না, আমি ১২০ টাকা বলেছি।

যাত্রী বলে- না আপনি ২০ টাকা বলেছেন। লেগে যায় ঝগড়া। মারামারি। অবশেষে পুলিশ এসে একটা মধ্যস্থায় নিয়ে এসে পরিসিথতি শান্ত করে দেন। স্টাফদের এটা চালাকি যে, দাম বলার সময় যখন ২০ টাকা বলে তখন আস্তে একশত শব্দটি উচচারণ করে যাতে যাত্রী শুনতে না পারে।

এ ঘটনা চলে আসছে প্রতিদিন। আর প্রতিনিয়ত লাঞ্জনার শিকার হচেছন অসহায় যাত্রীরা। এরকমই একটা চিত্র চোখে পড়লো। যখন যশোর থেকে রাজশাহী আসছিলাম। যশোর গিয়েছিলাম আমার বনধু রুমির ছোট বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে।

অনেক মজা হলো। অনুষ্ঠানে যাওয়ার ব্যাপারে আমরা আগে থেকেই অনেক প্রিপারেশন নিয়েছিলাম। আমরা আট বন্ধু । আমি, ইমন, লিটন, উজ্জল, তরিকুল, পরশ, হুমায়ন এবং জুয়েল। আমি বন্ধুদের সাথে সময় দিতে খুব বেশী ভালবাসি।

আমি বন্ধুপ্রিয়, বনধু পাগল, বন্ধু বাৎসল্য। বন্ধুদের সাথে এক সাথে যাওয়া –থাকা, খাওয়া। এগুলোকরলে মানুষ সঠিক উপায়ে সামাজিকিকীকরণের মধ্য দিয়ে বড় হয়ে ওঠে। মানুষ শেয়ার করতে শেখে। একে অপরকে চিনতে পারে।

অন্যের মতকে অগ্রাধিকার দিতে শিখে। নিজের দোষক্রটি গুলো শুধরে নিতে পারে। নিজের মাঝে অসমতার গুণগুলো শুধরে নিতে পারে। আমি ছোট থেকে ইন্টার পযৃন্ত আমি বন্ধুদের সাথে তেমন সময় দিতে পারিনি। বন্ধুদের সাথে সময় না পারার কারণে অনেক কিছুর অভাব থেকে যায়।

এগুলো একমাত্র পূরণ বা অর্জন হয় বন্ধুদের সাথে সময় দেয়া। আড্ডা দেয়া। ঘুড়তে যাওয়া। এই জন্য তাদের সাথে যাওয়া। বন্ধু সার্কেলের সাথে নিয়মিত চলাফেরা করলে অনেক কিছু শেখা যায়।

নিজের ত্রুটিগুলো দূর হয়। আমার এই বন্ধু সার্কেটি সদস্যরা একেকজন একেকধরনের বৈশিষ্টের অধিকারী। কারো ভালো গুনগুলো আমি গ্রহণ করে নিই । কারো বদঅভ্যাসগুলো পরিহার করি। লিটন, তরিকুল, জুয়েল।

ওরা একটু কেমন যেন আমার প্রতি। আমি কোন কথা বললেই তারা বলে এটা হবে না এটা হবে। তু্‌ই এটা বললি কেন। কি আশ্চর্য। আমার রাগ হয়ে যায় মাঝে মধ্যে।

এরা আমাকে খুব বেশী কষ্ট দেয়। এরা অনেকটা রগচটা। একটুতেই রেগে যায়। কারো কথার উদ্দেশ্য বুঝেনা। তবে আমি এদেরকে আমি আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু মনে করি।

তাদের কারণে আমি ভুলগুলো শুধরে নিতে পারি। তারা কথায় কথায় আমার ভুল ধরে। যে গুলো আমার সত্যি ভুল সেগুলো আমি শুধরে নিতে পারি। তাদের বদআচরণগুলো থেকে আমি শিক্ষা নিই। এই জন্যই আমি তাদের সাথে মিশি।

হুমায়ন, ইমন, উজজল, রুমি। ওদেরকে আমি ইতিবাচক মনে করি। কারণ ওরা আমার কথায় কথায় কোন ভুল ধরে না। আমি ওদেরকে আমার শুভাকাঙ্খী মনে করি। বিয়ের অনুষ্ঠান ৮ এ্রপ্রিল।

আমরা ৭ এ্রপ্রিল সকালে যশোরের ট্রেনে রাজশাহী থেকে রওয়ানা দিই। খুব মজা হল। ট্রেনে টিকেট পাইনি। পরে ট্রেনের ভিতর উঠে ৫টি টিকেট কাটলাম। যে যার মতো করে বসে বসে..গল্প আড্ডায় হাসা হাসিতে ট্রেনে কাটিয়ে দিলাম।

আমি আর তরু শেষের বগির দরজাতে বসেছিলাম। প্রকৃতির দৃশ্য, ফসলের মাঠ, গ্রামের বাড়িঘর দেখলাম। সেই সাথে নির্মল বাতাশ আমাদের দুজনের গায়ে লাগছে। আমাদের ভালো লাগার অনুভূতি আরো বেড়ে গেল। যাওয়ার পথে ট্রেন থেকে আমরা দেখলাম কলার চাষ, ভূট্টার চাষ বেশী।

দুপুরে যশোরে নেমে আমরা পরশের বাড়িতে যাত্রা বিরতি করলাম। দুপুরে ওদের বাসায় গিয়ে উঠলাম। সবাই গোছল করে ফ্রেস হলাম। পরশের আম্মুর নিজ হাতের রান্না খেলাম। খুব ভালা লাগল।

হলে খেয়ে খেয়ে খাবারে অরুচি চলে আসছিল। আম্মুর হাতের রান্না খেয়ে মনে হল এটা বুঝি বেহেশতের খাবার। বিকাল চারটায় আমরা রুমির বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। এখানে পরশের আব্বু ও আম্মুর সাথে আমরা একাধিক গ্রুপ ছবি উঠালাম। ওর আব্বু আম্মু খুব আ্ন্তরিক ছিলেন আমাদের প্রতি।

বিকাল ছয়টায় আমরা রুমির বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হই। ওদের বাড়িটা মেইন রোডের সাথে। ওদের সমিল আছে। ওদের বাসা শার্শা থানার বাগআচড়া ইউন্য়িনে। ওদের বাড়ির সাথই ওর স্কুল।

আমাদের দেখাল রুমি। স্কুলে আাছে বড় একটি মাঠ। স্কুলটি ওদের বাড়ির দক্ষিণে। উত্তরে একটি সিনেমা হল আছে। আমার ইচছা ছিল বেনাপোল বন্দর দেখব।

কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে আমরা ওখানে যেতে পারিনি। রুমির পরিবার আমাদের খুব আন্তরিকতা দেখিয়েছে। বাঙালি জাতি খুব অতিথিপরায়ন। অতিথিকে আতিথ্য করতে পেরে তারা খুশি হয়। বাড়িতে উঠা মাত্রই রুমির মা আমাদের জন্য পিঠা-ঝুরি, মিষ্টি খেতে দিলেন।

পরে আমরা রুমিকে সাথে নিয়ে ওদের এলাকাটা একটু ঘুড়ে দেখলাম। তথন অবশ্য অন্ধকার পুরো পৃথিবীকেগ্রাস করে ফেলেছে। মৃদু অন্ধকার, মৃদু দিনের আলোয় আমরা হাটতে বেরুলাম। রুমির বাড়িরে পাশেই একটি স্কুল অবসিথত যার নাম বাগআচড়া ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। স্থাপিত ১৯৪৬ সাল।

এখানেই এখানেই রুমির প্রাইমারী, হাই স্কুল কেটেছে। তার দুরন্তপনা শৈশব কেটেছে এখানে। আমরা সবাই স্কুলের মাঠে বসে আড্ডা দিলাম। আড্ডার মঞ্চটাকে সাজানো হয়েছিল অপরুপ সৌন্দর্য্যে। মৃদু অন্ধকার, আকাশে তখন তারা দেখা যাচিছল, রয়েছে একটি বড় চাঁদ।

রাস্তার পাশে হওয়ায় গাড়ির ভেপু আওয়াজ। সন্ধ্যা বেলার মৃদু বাতাস, আামাদের গায়ে এসে পরছিল। সন্ধ্যা পেরিয়ৈ রাত শুরুর দিকে আমরা আবার রুমির বনধু সার্কেলের সাথে আড্ডায় বসলাম। ওরা রুমির শৈশব কালের বন্ধু। জমিয়ে আড্ডা হল।

রাতের খাবার। পরে রুমি’র এক পারভেজ সোহেল , ওদের বাসায় আমরা রাত কাটালাম। যা মজা হল না ওদের বাসায়। আমরা আটজন দুটি রুমে গেলাম। আমাদের রুমে ছিল আমি, ইমন, তরু, উজ্জ্বল, পরশ।

অনেক দুষ্টুমি হল, টাস খেলা হল। রুমটি এসি থাকায় আমার শীত লাগছিল। পরে মাঝ রাতে একটি খাতা নিয়ে দারুণ একটা ঘুম দিলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠেই সোহেলের আম্মুর রান্না করা তেলের পিঠা খেলাম। খুব ভাল লাগল।

সকাল নয়টায় আমার কয়েক বন্ধু পুকুরে গোছল করল। আমি তাদের ছবি উঠালাম। খুব ভাল লাগল। দুপুর বারটায় আমরা খাবার খেয়ে নিলাম। একটার দিকে বর আসল।

তারপর আমরা সবাই রুমির নতুন ভাই , ওর আব্বু -আম্মু এবং ওর বোনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম। আমাদের একটি টিউটোরিয়াল পরীক্ষা ছিল। তাই আমরা কালক্ষেপন না করে এই সময় বিয়ে বাড়ি থেকে চলে আসলাম। বিকাল চারটার ট্রেন ধরার জন্য। শাকির ইকরাম ৯ এপ্রিল সময়: রাত ২:০০ শের-ই-বাংলা হল


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।