আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা ।
৩টি তেলাপোকা নিজেদের আপনমনে ঘরটিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে । কেউ প্রবেশ করলে টের পেতো কত অবহেলা নিয়ে ঘরটির চারপাশ দিনানিপাত করে । দেয়াল থেকে শুরু করে দেয়ালের চুন ক্রমশ নোংরা রঙ ধারণ করছে । উপরে ঘরের কোনায় জাল সমেত স্বগর্বে মাকড়সার বিচরণ ।
চিটচিটে বিছানার পাশে একটি ছোট গ্লাস পড়ে রয়েছে । গ্লাসের উপর সারি সারি পিঁপড়া নিজেদের খুশীতে দৌড়ায় । তারা নিশ্চিন্তমনে ছোটাছুটি করে । ৩ দিন যাবত নির্বিঘ্নে তারা চলাচল করে যাচ্ছে কিন্তু আক্রমন করবার কেউ নেই । এ তাদের বড্ড সুখের সময় ।
ঘরে প্রবেশ করতেই ডান দিকের যেই টেবিলটা চোখে পড়ে সেখানে পুরনো ন্যাপথলিন , বহু আগের কিছু অদরকারী কাগজ ছাড়া খোলা চোখে কিছু দেখা যায়না । একটু ভিতরে হাতড়িয়ে তার থেকে ছোট কাগজে গোটা বিশেক বাক্যের সমাহারে একটা চিঠি উদ্ধার হয়েছিলো সেই চিঠি পরম অনাদরে পড়ে রয়েছে এখনো । শোবার রুমের পাশেই এটাচড বাথরুমের ছাড়া কল থেকে ক্ষীণ শব্দে পানি পড়তে থাকার শব্দ শোনা যায় । পানি নিজের ইচ্ছা মত পড়তেই থাকে । অফুরন্তভাবে মুক্ত হতে থাকে কল থেকে ।
প্যানের উপর দিকে যেই নেট এবং স্লাইড খোলা পড়ে ছিলো তা দিয়ে প্রচুর ধুলার সাথে সাথে মশাও প্রবেশ করেছে । সেদিকে নজর দেওয়ার কেউ নেই । ঘরটির মত বাথরুমটিও খাঁ খাঁ করে । শেভিং ক্রিম থেকে শুরু করে রেজর , টুথপেস্ট , টুথব্রাশ একটা একসেরসরিও পাওয়া যায়না সেখানে । আয়নায় কেউ নিজের অবয়ব ভালো করে দেখতেও পাবেনা এমন ধূলা জমেছে সেখানে ।
প্রতিটি কোনা , প্রতিটি জিনিস একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন ।
জানালাটা খুলে দিলে শীতের দুপুরের রোদে মন সিক্ত হবার সম্ভাবনা ছিলো । কিন্তু সিক্ত হবার কোন উপকরণ কিংবা চরিত্র নেই । নোংরা পর্দা জোড়া ইমিটেশনের অলংকারের মত ঝুলছে । ঢেকে দিয়েছে চমৎকার রৌদ্রোজ্জ্বল শীতের দুপুরকে ।
পাখির ডাকাডাকিকেও জানালা খুলে আমন্ত্রণ জানানো যায়নি । অথচ পাখির কিচিরমিচির হতে পারতো ঘরটির অমূল্য সম্পদ । পেছনে তার সাথে গাছগাছালির ফ্রেশ বাতাস । আটপৌরে কিন্তু সজীব , স্নিগ্ধ এক অবয়ব প্রতিদিন জানালা খুলে দিলে মানুষটিকে স্বাগতম জানাতো । প্রাণ খুলে হেসে উঠতে পারতো গোটা ঘরটি ।
কিন্তু আজ তার মাঝে জীবনের কিছুই অবশিষ্ট নেই । দেয়াল নোংরা হতে শুরু করেছে । কারোর হাতের স্পর্শ ছাড়া অভিমান করে ধীরে ধীরে ঝরে যেতে শুরু করেছে চুনকাম করা দেয়ালের অংশ । ঘরের মেঝেতে সহস্রকালের অনাদরের পুরাদস্তুর চিত্র । কোন এক বিরুপতায় ঘরের মেঝেও যেন অস্পৃশ্য হয়ে পড়েছে ।
যেই ঘর এমন অবহেলিত হয়ে পড়ে থাকতে পারে । বাবা-মা হীন এতিম সন্তানের ন্যায় যেই ঘরের দশা দিনের পর দিন ধরে সেই ঘরের মানুষটি কিভাবে দিনানিপাত করতো অনুমান করাই যায় । ঘরটির মানুষ এই অনাদর সহ্য করতে পারেনি । তার ঠিকানা অন্যত্র এখন । সেখানেও দেয়ালের চুনকাম ঝরে ঝরে পড়ে কিনা সেটা জানবারও কেউ নেই ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।