সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসৃত...............।
বছরখানেক আগের কথা। প্রয়াত হুমায়ুন আজাদের উপর একটু পড়াশুনা করতে গিয়ে হুট করেই বহুদিন আগে (সম্ভবত '৯০ দশকের মাঝামাঝি) নেয়া তাঁর একটা সাক্ষাৎকার পেয়ে গেলাম। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ব্রাত্য রাইসূ। একটু বিরল ধরনের নাম হওয়ায় নামটা ভুলিনি! যে কোন সাক্ষাৎকারেই প্রশ্নোত্তরের বিষয়বস্তুর গভীরতা, সম্পুরক প্রশ্নোত্তর ইত্যাদির মাধ্যমে দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ের মানসিকতা ও প্রজ্ঞা বেশ ভালোভাবেই ধরা পড়ে।
এ কারনেই সে সাক্ষাৎকার পড়ার পর হতে ব্রাত্য রাইসু সম্পর্কে আমার বেশ উঁচু ধারনা। পরবর্তীতে ফেইসবুক ফ্রেন্ড হবার কারনে তাঁর আরও অনেকগুলো লেখা পড়বার সুযোগ হয়েছে এবং হচ্ছে। art.bdnews24.com -এ তাঁর লেখাগুলো তিনি আমাকে ফরোয়ার্ড করে দেন, আমি পড়ার চেষ্টা করি। অনেক ব্যাপারেই মতের অমিল থাকলেও তাঁর লেখার প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। এতক্ষন ধরে এতো কথা বলার কারন সম্প্রতি প্রচারিত তাঁর এই লেখাটি।
লেখাটি পড়েই আমার মনে হয়েছে, পৌত্তলিকতা সম্পর্কে তাঁর ধারনাটি একেবারেই গতানুগতিক। এ ব্যাপারে আমিও তেমন কোন হাতি-ঘোড়া জানি না। তাই আশা করেছিলাম অন্য কেউ এটা নিয়ে লিখবেন; কিন্তু এই লেখাটা বাদ দিলে এ নিয়ে আর কোন আলোচনা সমালোচনা চোখে পড়লো না এবং তাও কোন সুচিন্তিত সমালোচনা নয় বরং একটা তাৎক্ষনিক আবেগমথিত প্রতিক্রিয়া মাত্র।
এ কারনেই খুব সংক্ষেপে দু'কলম লিখছি। প্রথমেই বলি পৌত্তলিকতা নিয়ে।
ইসলামে পৌত্তলিকতা কোন মুর্তিকেন্দ্রিক ধারনা নয় বরং সত্ত্বাকেন্দ্রিক। কেউ যদি কোন সত্ত্বাকে আল্লাহর ক্ষমতার অংশীদার বানায় (হোক তা মূর্ত বা বিমূর্ত) ইসলাম তার এই কাজকে শিরক আখ্যা দেয়। একারনেই তৎকালীন ইয়াহুদীদের ব্যাপারে যখন কোরআনের আয়াত "এরা পুরোহিতদেরকে নিজেদের রব বানিয়ে নেয়" নাযিল হলো তখন এর ব্যাখ্যা দেয়া হল এভাবেই যে, "সাধারন ইয়াহুদীরা খোদার বাণীর চাইতে তাদের পুরোহিতদের কথাকেই বেশী বিশ্বাস করতো। "
আর মূর্তিসমূহ যেহেতু ঐসব বিমূর্ত সত্ত্বারই বহিঃপ্রকাশ মাত্র, সেহেতু ইসলাম মূর্তিপূজার ঘোরবিরোধী।
এরপর আসি কাবামুখী হয়ে প্রার্থনা বিষয়ে।
এক্ষেত্রে ইসলামের অবস্থান সুরাহ বাক্বারা রুকু ১৬ ও ১৭ তে সুষ্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। অর্থ-ব্যাখ্যা সহ পড়লে যে কেউই তা বুঝতে পারবেন। আমি শুধু বলতে চাইছি, ইসলাম প্রচারের শুরুতে ও মুসলমানেরা অনেকদিন কাবাকে বাদ দিয়ে বাইতুল মুকাদ্দাস অভিমুখী হয়ে নামায পড়েছেন। এটা ছিলো সেই আরব জাতীয়তাবাদের মূলে কুঠারাঘাত যা কেবলমাত্র আরবে অবস্থানের কারনে কাবাকে শ্রেষ্ঠ মনে করতো। এছাড়া তৎকালীন পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী বনী ইসরাঈলীদের প্রতি এক প্রকার সম্মানসূলভ দৃষ্টিকোন হতেও এটা করা হয়ে থাকতে পারে।
তবে, ইসলামের মৌলিক নীতিসমূহ যখন সুষ্পষ্ট হয়ে উঠলো এবং তা একটি শক্ত ভীতের উপর দাঁড়িয়ে গেলো তখন পৃথিবীর নেতৃত্ব মুসলমানদের হাতে দেয়া হলো এবং তার নিদর্শন স্বরূপ কাবাকে কিবলাহ্ রূপে মনোনীত করা হলো।
অতএব, কিবলাহের আসল উদ্দেশ্য মুসলমানদেরকে একমুখী করা। আর বায়তুল্লাহ (আল্লাহর ঘর) মানে যে ঘরে আল্লাহ থাকেন তা নয়, মুসলমানেরা তা মনে ও করে না! বরং এর মানে হলো "আল্লাহ মনোনীত ঘর"। মূর্তিপূজা এবং কাবামুখী হয়ে প্রার্থনা করার মাঝে মূল পার্থক্যটা ধরতে পেরেছেন- আশা করি!
ধন্যবাদ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।