ছন্নছাড়া বাঁধনহারা দস্যি একটা ছেলে ,, দিবানিশি ক্যামেরা চালায় আহার নিদ্রা ফেলে :) :)
(বিঃদ্রঃ - যারা দুর্বল চিত্তের লোক তারা এই পোস্ট পড়বেন না ,,, আর পড়লেও শেষের দিককার অংশ টুকু নিয়ে ভাববেন না ,, )
বিকাল বেলা অফিস থেকে ফিরেই তোড়জোর শুরু করেছে আরিফ সাহেব ।
"সাহেব" তকমা সে কিছু দিন হলো পেয়েছে তার নতুন চাকুরী স্থল থেকে । বড় ও বিদেশি নামকরা কোম্পানীর অ্যাসিসটেন্ট এক্সিকিউটিভ পদে চাকুরি সাথে বিশাল অংকের সেলারী । "
চাকুরির বয়স চার মাস হয়েছে । বেশ ভালই কাটছে তার দিন ।
বিয়েও করেছে বড় লোকের এক সুন্দরী মেয়ে কে ।
আজ রাত ৮টায় অফিসের প্রধান মি.হ্যারল্ড এর সাথে একটা বোর্ড মিটিং এ অংশ নেওয়ার পাশাপাশি রাত ১০টায় তার বস এর মেয়ের বার্থডে পার্টিতেও যেতে হবে ।
অফিস থেকে ফিরে সেই বন্দোবস্ত করতেই এত লম্ফঝম্ফ ।
স্ত্রী আয়শা তাকে একটু ধীরেসুস্থে কাজ গোছাতে বলে .. তা না হলে আবার কোথায় কি ভুল করে ফেলবে ..
--তোমাকে নিয়ে আর পারি না , এমন ভাব করছো যেন সবাই ওখানে তোমার সার্কাস দেখতে আসছে ..!!!
বৌ এর এমন খোঁচা মারা কথা শুনে আরিফ সাহেব বলেন .....
-- জান তুমি আবার আমাকে বানর বললে ???
স্ত্রী আয়শা তার কথা শুনে হাসতে হাসতে বলে .....
-- আমি কি উল্লেখ করে বলেছি ,, তুমি যে একটা বানর তা তুমি নিজেই প্রকাশ করলে হা হা হা হা ..!!
আরিফ সাহেব অনুষ্ঠান থেকে ফিরে এসে বৌ কে সাইজ করার প্লান করতে করতে তার সবকিছু গোছগাছ করে নেয় .।
সদ্য কেনা দামী জামাকাপড় পরে নতুন জুতা পায়ে দিয়ে গলায় বৌ এর দেওয়া টাই ঝুলিয়ে একেবারে হিরো সেজে বাসা থেকে বের হয় আরিফ সাহেব ।
নিজের গাড়ী না থাকায় সিএনজি তে চড়েই যাবে বলে ঠিক করে এবং বাসা থেকে বের হয়ে সিএনজি পাওয়ার আশায় রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকে ।
কিছুক্ষন পর একটা সিএনজি আসলে আরিফ সাহেব হাত তুলে সিএনজি থামাতে বলে ......
-- স্যার কই যাইবেন ??
-- ধানমন্ডি ................। এই বলে ভাড়া ঠিক না করেই উঠে পড়েন আরিফ সাহেব ..।
সিএনজি চালকও কিছু না বলেই ধানমন্ডির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে ।
প্রায় দেড় ঘন্টা পর যখন সিএনজি ধানমন্ডিতে আরিফ সাহেবের অফিসের সামনে গিয়ে থামে তখন ভাড়া দিতে গিয়ে বাধে বিপত্তি ।
আরিফ সাহেব যখন চালক কে বলে ...
-- এই তোর ভাড়া কত হয়েছে ??
-- ৩০০ ট্যাকা স্যার !!
আরিফ সাহেব যেন আকাশ থেকে পড়েন .....
-- ৩০০ টাকা !!! ব্যাটা মগের মুল্লুক পাইছোস ..?? এক চড়ে তোর সব গুলা দাঁত ফালাইয়া দেব । শালা ছোট লোকের বাচ্চা.. । এই নে ১৫০ টাকা আর একটা কথাও না কইয়া আমার সমানে থেকে দুর হয়ে যাবি । আর কথা কইবি তো মাইর খাবি সিউর .।
সিএনজি চালক মনে হয় ঢাকায় নতুন তাই তেমন কিছু না বলে ছলছল চোখে টাকা না নিয়েই চলে যায় ।
যাবার আগে শুধু একটা কথা বলে যায়..
-- স্যার আপনের এই ব্যাবহারের বিচার আল্লাহই একদিন অবশ্যই করবো !!!
আরিফ সাহেব রাগে গজগজ করতে করতে এবং ফ্রি ফ্রি উত্তরা থেকে ধানমন্ডি আসতে পারার আনন্দে মনে মনে হাসতে হাসতেই আফিসে প্রবেশ করে ।
তারপর দীর্ঘ এক ঘন্টার মিটিং শেষে আরিফ সাহেব বের হন অফিস থেকে । এবার তিনি যাবেন হোটেল রেডিসন এ বস এর মেয়ের জন্মদিনের পার্টিতে ।
গিফট আগেই কেনা আছে এবং সেটা তার স্ত্রী আয়শা যত্ন করে ব্যাগ এ পুরে দিয়েছেন ।
দেরি করলে লেট হয়ে যাবে তাই সে একটা সিএনজি খুঁজতে খুঁজতে রাস্তার পাশ দিয়ে হাটতে থাকে ,,,,,,,,,
রাস্তার পাশের একটি দোকানে বসে পান খাচ্ছিলেন ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধ লোক ।
হঠাৎ তিনি পানের পিক ফেলেন রাস্তায় ,, কিন্তু সেটা রাস্তায় না পড়ে সরাসরি গিয়ে পড়ে আরিফ সাহেবের প্যান্ট এ ।
সাথে সাথে বৃদ্ধ লোকটি আরিফের উদ্দেশ্যে বলে ..
-- আমি দুঃখিত এবং লজ্জিত বাবা !! আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি । আর তুমি একটু এদিকে সরে এসো আমি ঐখানটা মুছে দিচ্ছি ..
তারপর এক সময়ের রগচটা আরিফ খ্যাত বর্তমানের আরিফ সাহেব হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে কোন কথা না বলে বৃদ্ধ মানুষটির গালে সজোরে একটা চড় বসিয়ে দেয় .। এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে ।
তারপর ওখানে জড়ো হওয়া জনসাধারণনের পীড়াপীড়িতে শেষ পর্যন্ত আরিফ সাহেব ওখান থেকে সরে আসেন ।
এবং বার্থডে পার্টিতে না গিয়ে একটা সিএনজি ভাড়া করে সরাসরি বাসায় চলে আসেন ।
তখন রাত প্রায় সাড়ে এগারো কি বারোটা বাজে এমন । আরিফ সাহেব বাসায় ফিরে গোসল করার জন্য বাথরুমে প্রবেশ করেন । ঠিক তখনই কারেন্ট চলে যায় ।
আরিফ সাহেব বাথরুমে ঢুকে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে গোসল করছেন আর মনে মনে ঐ বৃদ্ধ লোকটিকে গালাগালি করছেন ।
প্রায় দশ মিনিট পরে ... মাথা, শারীর , হাত পা মুছে আরিফ সাহেব বাথরুম থেকে বের হওয়ার জন্য কেবলই বাথরুমের দরজার সিটকিনি অর্ধেক খুলেছেন ..।
তখনই তিনি অনুভব করেন তার কাধে যেন কেউ একজন হাত রেখেছেন। নিজের অজান্তেই পিছন ফিরে তাকান আরিফ সাহেব । দেখতে পান রাতের সেই বৃদ্ধ ভদ্রলোক তার দিকে তাকিয়ে আছে । মুখে একচিলতে হাসির আভা ফুটে আছে ।
তারপর আরিফ সাহেবের উদ্দেশ্যে বৃদ্ধ লোকটি বলে ..
-- এখনও তোমার গোসল শেষ হয়নি বাবা ... তোমার গায়ে যে এখনও অনেক ময়লা , অনেক দুর্গন্ধ মেখে আছে । আগে গোসল শেষ করো তারপর বের হও ।
কথাগুলো শুনে হতবিহ্বল আরিফ সাহেব কোন মতে দরজা খুলেই দৌড়ে তার রুমে চলে যায় এবং জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে ..।
তারপরের কাহিনী আরও মর্মান্তিক । ঐ ঘটনায় আরিফ সাহেবের মস্তিস্কে এতটায় আঘাত লাগে যে উনি সাময়িক ভাবে স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে যান ।
এবং তারপর তাকে দেশ বিদেশ অনেক জায়গাতে নিয়ে গিয়েও তাকে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলা যায় নি ।
অনেক টাকাপয়সা খরচ করেও কোন লাভ হয়নি ।
ঐদিন বাসায় ফিরে আরিফ সাহেব তার স্ত্রীকে প্রতিদিনের মতই সারাদিনের সব কথা ও ঘটনা খুলে বলায় স্ত্রী আয়শা আরিফ সব জানতেন । এবং পরবর্তিতে দুজন মিলেই সেই সিএনজি চালক ও বিশেষ করে সেই বৃদ্ধ ব্যাক্তিকে খুঁজতে থাকেন ...।
গল্পের শেষ টা না হয় এখানেই হলো ।
হয়তো আরিফ সাহেব খুঁজে পেলেন বা পেলেন না ঐ বৃদ্ধ লোকটিকে । তারপর ক্ষমা চেয়ে সুস্থ হলেন অথবা ধুঁকে ধুঁকে মারা গেলেন .।
কিন্তু আপনারা কি একবারও আপনাদের বিবেক নামক আর এক আরিফ সাহেবের ধুঁকে ধুঁকে মরার হাত থেকে বাঁচাতে পারেন না ...!!!
আসুন না সবাই আজ শপথ করি ,, আমরা খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষগুলোকে কখনও ঠকাবো না , তাদের সাথে বড়লোকি ভাব দেখিয়ে অসদাচারণ করবো না । তাদের গায়ে বিনা অন্যায়ে হাত ওঠাবো না ।
আমরা যদি মানুষকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করি তবে তার সুফল অবশ্যই পাবো ।
যেমনটি পাবো অসম্মান ও অশ্রদ্ধা করলে ..।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।