পরম করুণাময় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর প্রিয় বান্দাদের বছরের পূর্ববর্তী ১১ মাসের কৃত গুনাহ, দোষ-ত্রুটি, অপরাধ সনাক্ত করে মার্জনা করার জন্য এবং ১১ মাস আল্লাহর নির্দেশিত বিধি-বিধান ও র্ধমীয় অনুশাসনের উপর ঈমানি শক্তি ও মনোবল নিয়ে অবিচল থাকার জন্য রমজানুল মোবারক মাসটি প্রশিক্ষণের মাস হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তাই সিয়াম সাধনার রমজানুল মোবারক মাসে রোজা এমন মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ, যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাদকাসক্তি, গীবত, যবানের হিফাযত, দৃষ্টি হিফাযত- এ ষড়রিপুর তাড়না অবদমিত করে ত্যাগ-তিতিক্ষা, সংযম, সহানুভূতি, সাম্য ও যাবতীয় ভাল মানবিক গুণাবলি অর্জন করতে পারে।
মহান আল্লাহ পাক এরশাদ করেন-"হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর রমাজানের রোজাকে ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা মুত্তাকী (তাকওয়া বা পরহেযগার) হতে পারো। "
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন-"যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের উদ্দেশ্যে রোজা রাখে আল্লাহ তার পিছনের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন।
" (বুখারী শরীফ)
মুত্তাকী বা তাকওয়া অর্জনের কিছু বিষয়ে আমাদের লক্ষ্য রাখা চাই। নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলোঃ
১) ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হলো হালাল রিজিক দ্বারা যাবতীয় আহার গ্রহণ এবং বস্ত্র পরিধান করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন-"যারা হারাম খায় ও হারাম বস্ত্র পরিধান করে তাদের ইবাদত কবুল হয় না। " (মুসলিম ও তিরমিজি)
২) পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-"আল্লাহ তায়ালা অতি পবিত্র।
তাই তিনি পবিত্রতাকে পছন্দ করেন। " (তিরমিজি)। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-"হে আদমের বংশধর! প্রত্যেক নামাজের সময় সুন্দর পোশাক পরিধান করবে, পানাহার করবে, কিন্তু অপচয় করবে না। তিনি অপব্যয়ীদের পছন্দ করেন না। " (সূরা-আল-আরাফ, আয়াত-৩১)
অনেকে পার্থিব প্রাচুর্য়ে ইফতার ও সেহরির সময়ে অনাবশ্যক আয়োজনে অপব্যয় করে, যা গর্হিত কাজ।
পরিমিত আহার গ্রহণ করে অবশিষ্ট খাবার গরিব-মিসকিনদের মধ্যে বিতরণ করা সওয়াবের কাজ।
৩) রোজা অবস্থায় মিথ্যা বললে এবং গীবত বা পরনিন্দা করলে তার রোজা কবুল হয় না। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ বলেছেন-"যে ব্যক্তি মিথ্যা ও অন্যায় কাজ পরিত্যাগ করতে পারলো না, তার পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। " (বুখারী শরীফ)
পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করা হয়েছে-"স্মরণ করো তোমাদের রব ঘোষণা করেন তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদের অবশ্যই আরো বাড়িয়ে দেব আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি কঠোর হবে। " (সূলা-আল-ইবরাহীম, আয়াত-৭) দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, অনেকে সামাজিক কারণে রোজা রাখেন অথচ ফরজ নামাজ আদায় করেন না।
তারা আল্লাহ ও তাঁর হুকুম মনেপ্রানে বিশ্বাস করেন না, কাজেই তাদের রোজা শুধুই লোক দেখানো বিধায় রোজার ফযীলাত থেকে তারা বঞ্চিত হবেন। বিনা ওজরে এক ওয়াক্ত ফরজ নামাজ তরক করলে ৮০ হোকবা (প্রতি হোকবা = ৮০ বছর) দোজখের শাস্তি নির্ধারণ হবে।
৪) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন-"তোমরা অপরের দোষ অন্বেষণ করো না। কারো ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে গোপন খবর উদঘাটনের চেষ্টা করো না" (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)।
৫) পবিত্র আল-কোরআনে ইরশাদ হয়েছে যে-"হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা অনুমান করা থেকে বিরত থাকো, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনুমান করা পাপ।
তোমরা একে অপরের দোষ খুজোঁ না বা পশ্চাতে নিন্দা করো না। কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে চাও? মূলত তোমরা এক ঘৃণা করো। আল্লাহকে ভয় করো, আল্লাহ তওবা গ্রহণকারী ও দয়ালু। " (সূরা-আল-হুজুরাত, আয়াত-১১-১৪)
৬) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন-"রোজা জাহান্নাম ও গুনাহ মুক্তির ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ রোজা রাখলে তার মুখ থেকে যেন খারাপ কথা বের না হয়।
কেউ যদি তাকে গালমন্দ করে বা বিবাদে প্ররোচিত করতে চায়, সে যেন বলে আমি রোজাদার। " (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-"ফিতনা-ফ্যাসাদ (অশান্তি) হত্যা অপেক্ষা জঘন্যতম অপরাধ। আল্লাহ তায়ালা অশান্তি পছন্দ করেন না। " (সূরা-আল-বাকারা, আয়াত-২০৫/২১৭/২৯১)
তাই রোজা অবস্থায় ঝগড়াঝাটিঁ, ফেতনা-ফ্যাসাদ না করা চাই।
৭) রোজা অবস্থায় অন্যায়, অত্যাচার, অপকর্ম, পাপাচার করলে রোজা কবুল হয় না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-"যে ব্যক্তি রোজা অবস্থায় পাপ কাজ করে সে শুধুই অনাহারী, কোনো সওয়াব পেল না। " (মিশকাত শরীফ)
৮) অহেতুক কথা থেকে বিরত থাকা, কঠিন প্রয়োজন ব্যতীত দুনিয়াবী কথা না বলা।
৯) সর্বপ্রকার গোনাহ বিশেষতঃ সিনেমা দেখা, কৃ-দৃষ্টি দেওয়া, জুয়া, লটারী ইত্যাদি ত্যাগ করা।
১০) রেডিওতে ও মোবাইলে গান-বাজনা না শোনা, মোবাইলের গানের রিংটোন বন্ধ করা।
১১) শরীয় পর্দা করা।
অশ্লীল ও উগ্র পোশাক ত্যাগ করা।
১২) দাড়ি মুন্ডানো বা একমুঠের চেয়ে ছোট করে দাড়ি না কাঁটা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-"রোজা জাহান্নাম থেকে বাঁচার ঢালস্বরূপ, যতক্ষণ না ভেঙ্গে ফেলা হয়, ঢাল ভেঙ্গে ফেলার অর্থ হলো, গোনাহে লিপ্ত হওয়া। " (মিশকাত শরীফ)
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-"ঐ ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে, রমাজান মাস পেয়েও নিজের গোনাহ মাফ করাতে পারলো না। "
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।