আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রমযান মাস আত্মশুদ্ধি ও নৈতিকতা অর্জনের মাস

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি আমাদেরকে নিয়ামত হিসেবে দিয়েছেন সৎ কাজ করার বিভিন্ন মেীসুম। যিনি রমযানকে করেছন মহিমান্বিত ও বরকতময়। এ মাস এমন একটি মহিমান্বিত মাস, যে মাসের ১৭ই রমযান বদর প্রান্তরে বাতিলের বিরুদ্ধে মুসলমানদের প্রথম সামরিক যুদ্ধ সংগঠিত হয় এবং বিজয় অর্জন হয়, লাইলাতুল ক্বদরের মতো বরকতময় রজনীসহ অসংখ্য ফযীলত এ মাসে অন্তর্ভূক্ত। আর এর অন্যতম কারণ হল মহাগ্রন্থ আলকুরআন। একটি সমৃদ্ধশালী জাতিগঠনে সংযম প্রয়োজন।

পবিত্র মাহে রমযান মাসের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ ও কল্যানকামী তাকওয়া সম্পন্ন জাতি গঠন সম্ভব। আমরা রমযান মাসে অনেক আলোচনা শুনি, অনেক ইফতার অনুষ্ঠান হয়। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, রমযানের রোজা পালনের মাধ্যমে আমাদের চরিত্রের উন্নতি হচ্ছে খুবই কম। লোভ, পাপাচার, প্রবৃত্তির খায়েশ, কৃত্রিম দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ইত্যাদি দমন করাই যেখানে রোজার উদ্দেশ্য সেখানে দেখা যাচ্ছে, এসব দমন ন হয়ে বরং দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের ইবাদতের অনেকগুলো উপলক্ষ্য থাকলেও কালের বিবেচনায় এসর উপলক্ষ্যের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট, সম্মানের বিবেচনায় সর্বশ্রেষ্ট, প্রবাবের বিবেচনায় সুদূর বিস্তৃত উপলক্ষ্য হল সম্মানিত মাহে রমযান।

এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় আর দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। উনিশ শতকে অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলে মার্কস এবং অ্যাঙ্গেল সমাজতন্ত্রের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়নকে খণ্ড-বিখণ্ড করার মাধ্যমে সমাজতন্ত্রের অপমৃত্যু ঘটিয়েছেন। হিটলার জার্মানিতে নাৎসী বাহিনীর মাধ্যমে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন সেটি আজকে পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। চীন এবং জাপানকে কেন্দ্র করে যে শিল্প বিপ্লবের উত্থান তাও আজ প্রায় মৃত। সম্প্রতি গণতন্ত্রই একটি মুখরোচক শ্লোগান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও তা বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদ এবং পুঁজিবাদের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

অথচ শত শত বছর আগে মহান রাব্বুল আলামিন জীবন পরিচালনার একমাত্র বিধান আল কুরআন নাজিল করে ঘোষণা করেছেন, “রমজান মাস, যে মাসে নাজিল করা হয়েছে আল কুরআন, যাতে মানুষের জন্য রয়েছে নির্দেশাবলি এবং উজ্জ্বল হেদায়েত ও সত্য এবং মিথ্যার পার্থক্যকারী। ” (সূরা কদর) এটি এমন এক কিতাব যার মধ্যে রয়েছে মানুষের কল্যাণ উন্নতি, সমৃদ্ধির দিকদর্শন। অন্ধকারের অমানিশা যখন মানবতাকে ঢেকে নিয়েছিল, চারদিকে অসভ্যতা, নগ্নতা আর বর্বরতার বীভৎস তাণ্ডব চলছিল, সম্পূর্ণ বিবস্ত্র মানব-মানবীরা কাবা শরীফ তাওয়াফ করছিল। হত্যা, শরাব, ব্যাভিচার যখন প্রকাশ্য দিবালোকে সংঘটিত হচ্ছিল। জুলুম, অত্যাচার, নিপীড়নের আহাজারি আল্লাহর আরশকে কাঁপিয়ে তুলেছিল।

মা, বোন, কন্যা পরিচয় হারিয়ে যখন তাদেরকে জীবন্ত পুতে ফেলার মাধ্যমে পাশবিকতার চরম অবস্থা বিরাজ করেছিল। মানবতার এক কঠিন দুর্দিনে লক্ষ কোটি জ্যোতিষ্কের আলোকবর্তিকা হাতে কুফরির জমাট বাঁধা অন্ধকারকে পায়ে ঠেলে অবতীর্ণ হল আল কুরআন। গোমরাহির কুৎসিত চেহারাকে মাটিচাপা দিয়ে তার ধ্বংসস্তূপের ওপর জ্বালিয়ে দিল হেদায়েত দীপ্ত মশাল। আজকে এ মাসকে উপলক্ষ্য করে কুরআনের উপর খুববেশী ঘষা মাজা হলেও এ মাস শেষে এই পবিত্র কুরআনকে গিলাফবন্দী করে সযত্নে পেলে রাখা হয়। আমাদের বাস্তব জীবনে পেড়েনা এ কুরআনের মহান শিক্ষার কোন আলামত।

যার কারনে রমযানের ১ম দিকে আমাদের মসজিদগুলোতে দাঁড়ানোর কোন ঠাই না থাকলেও পরবর্তী দিনগুলোতে তাতে ভাটা পড়তে শুরু করে। সুতরাং রমজান মাসে সিয়াম সাধনাকে শুধুমাত্র অনুষ্ঠানসর্বস্ব একটি ধর্মীয় ইবাদাতে পরিণত না করে বরং আত্মশুদ্ধি ও প্রশিক্ষণের যে সুযোগ আল্লাহ আমাদের জন্য রেখেছেন সেই টার্গেট বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে হবে। নফসের গোলামি থেকে বের হয়ে নিজেকে পরিপূর্ণ আল্লাহর গোলাম এবং তার কাছে আত্মসমর্পণকারীদের কাতারে শামিল করতে, এই রোজা যেন আমাদেরকে ব্যর্থ এবং নিষ্ফল শুধুমাত্র উপবাসকারী হিসেবে পরিণত না করে। রমযান সেই আধ্যাত্মিক মূহুর্ত যেখানে আমরা মুসলমানরা বিভিন্ন অবস্থা সংস্কার করার সুযোগ পাই। আমাদের অতীত ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকানোর সুযোগ পাই, আমাদের অতীত ফিরিয় আনার সুযোগ পাই।

আর তাই রমযানের এই পবিত্র মাসে মুসলমান হিসেবে আমাদের ১ম ও প্রধান দায়িত্ব হলো আল কোরআন পড়া, কোরআন বুঝা এবং কোরআন অনুযায়ী জীবন গড়া। বিশেষ করে যারা কোরআন পড়তে জানেন না তাদেরকে এ মাসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কুরআন শিখে তা বাস্তবায়নে তৎপর হওয়ার। রাসূল (সা) এবং জিবরাইল (আ)-এর পারস্পরিক আলাপে যেভাবে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি রমজানকে পেল অথচ তার মাধ্যমে সে নিজের গুণাহসমূহ মাফ করিয়ে নিতে পারলো না, তার জন্য ধ্বংস। ” আমরা যেন সেই শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত না হই। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমরা প্রশিক্ষণের সেই মাপকাঠিতে উন্নীত হতে পারি, যেন রাসূল (সা)-এর নেতৃত্বে দ্বিতীয় হিজরি ১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদরের প্রান্তরে ইসলাম এবং কুফরির প্রথম সংঘাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সংখ্যার স্বল্পতা, অস্ত্র রসদ এবং খাদ্য ঘাটতির পরও ঈমান, তাকওয়ার বদৌলতে হকের বিজয়কে নিশ্চিত করেছেন।

ঠিক একইভাবে আজকে নব্য জাহেলিয়াত ইসলামের বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যড়যন্ত্র, ঈমান আকিদা পরিপন্থী সকল নীল নকশাকে প্রতিহত করার শক্তি অর্জন করতে হবে। শানিত করতে হবে ঈমানের তেজকে, টপকে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে বাধার সকল দেয়ালকে, গতি পরিবর্তন করে দিতে হবে অপসংস্কৃতি এবং নগ্নতার স্রোত ধারাকে। কুফরী এবং ফাসেকির ফানুসগুলোকে জ্বালিয়ে দিয়ে উড়াতে হবে দ্বীনের বিজয় কেতন। আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে এ রমাযানকে কাজে লাগাতে হবে। সকল পাপ গুনাহ থেকে তাওবার মাধ্যমে এ রমযানকে কাজে লাগাতে হবে।

ভাল কাজের মাধ্যমে রমযানের দিবস রজনী যাপনের মানসিকতা নিয়ে এ রমযানকে পালন করতে হবে। যারা আনুগত্যশীল, এ মাস তাদের নেক কাজ বাড়ীয়ে দেয়ার মাস। যারা পাপী, তাদের জন্য এ মাস পাপ থেকে ফিরে আসার। রাসূল (সা) বলেছেন, ‘‘আল্লাহর রাহে মুজাহিদের উদাহরণ সেই ব্যক্তির ন্যায় যে রোজাও রাখে, রাতে নামাজও পড়ে এবং কালামে পাক তেলাওয়াত করে। কিন্তু রোজায় সে কাতর হয় না।

নামাজেও তার শৈথিল্য আসে না। ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহর পথে জিহাদকারীর অবস্থাও অনুরূপ থাকে। ” (বুখারী ও মুসলিম) রাসূল (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা, সে অনুযায়ী কাজ এবং মুর্খতা পরিত্যাগ করল না, তার খাদ্য ও পানিয় থেকে বিরত থাকায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। কবিতার ভাষায়: রক্ষিত যদি না হয় কর্ণ দৃষ্টিতে না থাকে বাধা; তবে বুঝে নিও আমার রোযা কেবলই তৃষ্ঞা ও পিপাসা। যদি বলি আমি আজ রোযা মনে করিও আমি আদৌ রোযাদার নই।

তাই আসুন আমরা সংযমী হই, নিজেদের লোভ ও প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রন করি। আল্লাহ আমাদেরকে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ ও কল্যাণকামী জাতি গঠনের তাওফিক দিন এবং আমাদের এই ইফতার এবং রোজা কবুল করুন। আমিন ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।