আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিথ্যা ও ত্রিশলাখ তেলেসমাতি



মিথ্যা বলা মহাপাপ। মিথ্যা সবার কাছেই অপছন্দের তালিকায়। মিথ্যাকে ঘৃনা করেনা এমন লোক পাওয়া খুবই দুষ্কর। মিথ্যা নিয়ে গবেষণা জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। আদি জগত থেকে মিথ্যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলে আসছে।

মিথ্যা বলতে গেলে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে এক চরম অপরাধ। কিন্তু বর্তমান সময়ে এই মিথ্যা সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি হাতিয়ার। জাতি, ধর্ম, আবাল, বৃদ্ধ বণিতা সবার কাছেই সমাদৃত এই মিথ্যা। মিথ্যার আছে হরেক রকম রুপ,গুণ ও জৌলুস। মিথ্যার প্রসার সাজিয়ে অনেকেরই পোয়া বারো মিথ্যা সম্পর্কে ব্যাপক ভুমিকা দিলে কলেবর বৃদ্ধি পাবে বিধায় মিকা সংক্ষেপ করে মূল আলোচনা তুলে ধরাই আমার উদ্দেশ্যে।

যদিও মিথ্যা শুনতে শুনতে এখন অভ্যস্থ। আমার কাছে মিথ্যা একেক সময় একেক রকম ধরা দিয়েছে। ব্যক্তিজীবন থেকে ব্যবসায়ী জীবন ও সামাজিক জীবনে আমিও চরম মিথ্যাচারের আক্রমনে আক্রান্ত। যতই আমি সত্যে প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম করি না কেন তবু যেন হারাই সৈন্য সামন্ত । মিথ্যা যেন সমাজে চলতে পথে ধর্মে কর্মে শিল্প সাহিত্যে এক অভিচ্ছেদ্য অংশ।

একটি উপন্যাস বা গল্প লেখা শুরু হয় মিথ্যা কল্পনায়। কবিতা লেখা হয় অবাস্তবের খেয়াল খুশিমত অনেকটা। বাচ্চাদের কার্টুন তৈরি হয় সম্পূর্ন অলীক কাহিনী দিয়ে, ইবাদত করা হয় বাস্তব বিবর্জিত ইচ্ছার মাধ্যেমে, সম্পর্ক গড়ে তোলা হয় মিথ্যা বাহানা দিয়ে। এমন কিছু অভিনয় করা হয় যেন না ছুঁই পানি কিন্তু ধরিব মাছ। মিথ্যার গোলক ধাঁধাঁয় ব্যক্তি সমাজ রাষ্ট্র এমন ভাবে চক্কর কাটছে যেন মিথ্যা ছাড়া পরিত্রান নেই।

মিথ্যায় আমি দেখি অনেকের মুখে বিজয়ের হাসি। আবার দেখি অনেকের বেলায় মিথ্যাই হয় ওর জীবনের সর্বগ্রাসী। আমাদের মিথ্যা থেকে বাঁচতে হলে যে যে পন্থা অবলম্বন করতে হয় এর আশে পাশে যেতে চাই না। বা সত্য অনুসন্ধানে আমরা আগ্রহী নয়। নিজের খেয়াল খুশিকে প্রতিষ্ঠিত করতে ইচ্ছে মত সত্যকে ব্যবহার করার প্রবণতার দরুণ সত্য এক সময় দূরে সরে পড়ে।

আমাদের সমাজে এই মিথ্যা পোষনে বাহবা পাওয়ায় মিথ্যা যেনো আরো মাথা চারা দিয়ে উঠেছে। বন্ধুদের আড্ডায় ঠিক এই কথাগুলোই হচ্ছিল একুশ উপলক্ষে। একুশে ফের্রুয়ারী বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার যে আন্দোলন হয়েছিল তাহা বিশ্ব ইতিহাসে অবিশ্বাস্য ও বিরল। তখন আন্দোলন হয়েছিল বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে। এই সেই আ-ল-হ-ম-দকে প্রতিষ্টিত হরতে।

আমাদের তা গর্বের বিষয়। ইতিহাস তার স্বকীয়তায় এই বাংলা ভাষা আন্দোলনকে মর্যাদা দিয়েছে। গোটা বিশ্বে এই ভাষা দিবসকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদেশ তা ভিন্ন জাতীর বাংলা ভাষা প্রেমে আমরা খুশিতে তৃপ্তিতে আত্মহারা কিন্ত নিজেরা করছি ভিন দেশী ভাষা পুজা। আমরা ফাল্গুনের পরিবর্তে বলি ফেব্রুয়ারী।

আমাদের টিভি চ্যানেলগুলোর নামও বহন করে ভিন্ন ভাষা যেমন- চ্যানেল আই, চ্যানেল ওয়ান, বাংলা ভিষন, এটিএন, এসটিভি, চ্যানেল এস সহ আরো অনেক। কিন্ত তাদের কাছে ভাষা প্রেম দেখলে হাসবো না কাঁদবো ঠিক করে উঠতে পারিনা। ভাষা দিবসে দেশে বিদেশে আমাদের কর্মকান্ডে আমি বিচলিত হই। যে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই ফুল দিয়ে তাদের আত্মা যে অভিশাপ দিচ্ছে না তা-ই বা বলি কি করে? পবিত্র ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাই তাড়াহুড়ো ও লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে। কিন্তু এই শহীদ পরিবার করছে ভিক্ষা নয়তো হচ্ছে নির্যাতিত লাঞ্চিত বঞ্চিত।

লোক দেখানোর আবেগ সস্তা বাহবা না দেখিয়ে আমরা তাদের মর্যাদা দিলে হয়তো জাতি কিছুটা দায় মুক্তি পেত। ইংরেজী ভাষায় বাংলা অক্ষর লিখে যেমন সুখ পাওয়া যায় না তেমনি বাংলাকে ইংরেজি অক্ষরে লিখে মোটেই মর্যাদা রক্ষা করা হয় না। বাস্তব অবস্থা অবলোকনে বর্তমান সময়ে ভাষা দিবস পালনকে বিদেশে বসে আমার কাছে অর্থহীন মনে হয়। মিথ্যা তেলেসমাতি না করলেই বরং শহীদরা শান্তি পাবে। এবারে আসি মূল কথায় যে জন্য মিথ্যার মত একটি ঘৃনিত শব্দ নিয়ে লিখতে বসলাম।

মিথ্যার যদিও কোন সীমা নেই। ঠিক সেই রকম অবস্থা শৈশবে কৈশরে আসতো শ্রদ্ধা। থাকতো দুঃখবোধ। মনে মনে ভাবতাম আহা যদি মুক্তিযোদ্ধা আমি হতে পারতাম। কিন্তু কি আর করা জন্ম যেহেতু আমার হয়নি তখনো।

তুমুল যুদ্ধকালীন সময়ে আমি আমার মায়ের পেটে। সেই ৭১ সালে আমার জন্ম। যাক, রেহাই পেলাম, না হলাম মুক্তিযোদ্ধা আবার না হলাম রাজাকার আল বদর। যখন শুনতাম ত্রিশ লাখ শহীদের ও দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পেয়েছি স্বাধীন দেশ আজ দীর্গদিন পরে সেই হিসেবে বসেই পেলাম মিথ্যার বেসাতি। কোন যুক্তির নিরিখেই ত্রিশ লাখ ও দুই লাখের হিসেব মিলে না।

এরপরে ও মেনে নেওয়া যেত যদি শহীদদের তালিকা জানানো হত। স্বাধীনতা পরবর্তিতে যত সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন সবাই মুক্তিযুদ্ধের সময়কার তালিকা প্রকাশ করার প্রস্তাব পেশ করেও তালিকতা করেননি। এমন কি বর্তমান সরকার পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা সর্বমোট কত জন পাচ্ছেন তা প্রকাশ করতেও রাজী নয়। কোটি কোটি টাকা খরচ করে গোটি কয়েকজনকে বিচার করার লক্ষে আলাদা আদালত পর্যন্ত গঠন করা হল। অথচ যে কোন আদম শুমারীর সময় বাড়ি ভাড়া গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে কতজন লোক প্রাণ দিয়েছেন তার হিসাব বের করা যেত।

অনুমান ভিত্ত্বিক কল্পনা প্রসুত মিথ্যা হিসাব মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের মুখ দিয়ে বলিয়ে উনাকে এখন জাতির কাছে তামাশায় পরিণত করা হয়েছে। এই বালখিল্যতায় এখন নিয়ে উপহাস করছে অনেকেই। আমার মতো অনেকেই ত্রিশ লাখ শহীদ হয়েছে বিশ্বাস করাটা বোকামী বৈ কিছু নয়। বাংলাদেশের আয়তনের দিকে তাকালে বা জনসংখ্যার দিকে দেখলে এই সব হিসেব নিকেশ বের করা কষ্টকর নয়। তা জানার পরে এখনো নেতা নেত্রীরা অহরহ বলে বেড়াচ্ছেন ত্রিশ লাখের কথা।

বর্তমান প্রযুক্তি নির্ভর যুগে এমন ডাহা মিথ্যা বলে গোটা জাতিকে তামাশায় পরিণত করছেন আমাদের অগ্রজ ও গুরুজনরা পাঠ্য বই। আইন-আদালত এমন কি সংসদে ও এই মিথ্যা সংখ্যাটিকে বসানো হয়েছে। বর্তমান সরকারের অনেকেরই আছেন অনর্গল মিথ্যা বলে যাচ্ছেন আরো অন্যান্য বিষয়ে। পাশ্চাত্য সমাজের মিথ্যা শুনতে শুনতে এখন তাদের এই স্ব মিথ্যা শুধু মাত্র হাসির খোরাক। মিথ্যায় জীবন নষ্ট নয় গোটা জাতি বিপদগ্রস্থ হতে পারে।

মায়ের জীবন যদি মিথ্যা দিয়ে হয় তা হলে সন্তানকে আক্রান্তহতে সময় লাগবে না। মিথ্যা যতই সুনীপূনভাবে বলুন না কেন বা অভিনয় করে উপস্থাপন করুন না কেন মিথ্যা কখনো প্রতিষ্ঠা পায় না। সত্যের মোকাবেলায় মিথ্যা খুবই ভিতু সমাজের প্রত্যেকটি রপ্তে রপ্তে মিথ্যা ঢুকিয়ে এমন একটি গোলমেলে অবস্থার সৃষ্টি হয়। কঠির শিলায় ফাটল ধরতে চায়। চারিদিকেই চলছে মিথ্যার বেসাতি, চলছে মিথ্যার পুজা, কিন্তু সাধু জেনে শুনেই বলছে ওম শান্তি।

আমরা যাহারা সত্য নিয়ে তৃপ্ত আমাদের কষ্ট স্বীকার্য তবু মিথ্যায় থাকবে অনীহা চিরক্ষণ। মিথ্যায় সাময়িক তৃপ্তি থাকতে পারে কিন্তু জীবন চলার পথে মিথ্যা একটি বিষধর সর্প। যতই দেখছি এবং শিখছি ততই যেন দেখতে পাচ্ছি মিথ্যার অধপতন। মিথ্যা এমন একটি ব্যাধি যা সংক্রামক হয়ে গোটা জাতিকে পঙ্গু করে ধ্বংস করতে পারে। যার ইতিহাস আমরা পড়েছি, হিটলার, মুসোলিনি, ব্লেয়ার, বুশ কেউই মিথ্যা বলে সুবিধা করতে পারেনি।

এই জগতে মিথ্যা এতই ক্ষস্থায়ী যা সত্যের ফুৎকারেই উরে যায়। আসুন আমরা ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রে মিথ্যা পরিহার করে সত্যের আশ্রয় নেই। চৌধুরী হাফিজ আহমদ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.