আল্লাহু আকবর! হারাম শরীফে কাতারবন্দী সবাই। আমার পাশে ইন্দোনেশিয়ার এক মহিলা, অন্যপাশে নাইজিরিয়ার এক দীর্ঘদেহী যুবক। সামনে বিভিন্ন বয়সের কিছু পাকিস্তানী মহিলা ও পুরুষ। দেখি, আমার নামাজ পড়ার ভঙ্গি একরকম, আশপাশের একেকজনের একেকরকম। আলস্নাহু আকবর! সেজদায় আছি, অনুভব করি [আগে পরে এসব দৃশ্য দেখার পর] আমাকে ডিঙ্গিয়ে চলে গেল দীর্ঘদেহী এক সোমালি এবং তুরস্কের গাট্টাগোট্টা এক মহিলা।
মাথা তোলার টেনশনে আছি। কখন কার আলখাল্লায় মাথা আটকে যায়। দিব্যি যে যার মতো আল্লাহর এবাদত করছেন উম্মতেরা। হারামেই মনে হয়েছে, আমিনীর মতো, দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মতো কেউ তো হুঙ্কার দিয়ে বললেন না, এক সারিতে নারী-পুরম্নষ দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া যাবে না। বা একই ভঙ্গিতে বা হানাফীরা যেভাবে পড়ে সেভাবে পড়তে হবে।
কাবা শরীফে নারী-পুরুষ এভাবে বসতে পারবে না গায়ে গায়ে গা ঠেকিয়ে বা নারী-পুরুষ ভিড়ে চিড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে একই সঙ্গে কাবা প্রদৰিণ করতে পারবে না_আমিনী কি এ ধরনের ফতোয়া দিতে পারবেন সেখানে?
তবে, হঁ্যা, ঢাকার বায়তুল মোকাররমে এ রকম হলে, আমিনী ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা সেখানে ফতোয়া শুধু নয়, দাঙ্গা লাগিয়ে দিতে পারবেন। কাবাতে ও-রকম ফতোয়া দেবেন আমিনী এ্যান্ড গং? দেবেন না, কারণ তারা জানেন, ঐ রকম কিছু করার কথা পরে, উদ্যোগ নিলেই পিঠের ছাল তুলে নেবেন সৌদি বাদশাহ। সে জন্য তারা সেখানে ফতোয়া দূরের কথা ধর্ম সম্পর্কেও বেশি বাতচিত করবেন না। লম্ফঝম্প এরা শুধু করেন শেখ হাসিনার জামানায়। কারণ শেখ হাসিনা সৌদি বাদশাহ দূরে থাকুক খালেদা জিয়ার মতোও নির্বিকার নিষ্ঠুর হতে পারেন না।
হলে বিএনপি সমর্থক অনেক লেখককে জেলে যেতে হতো, যেমন যেতে হয়েছিল আমাকে বা শাহরিয়ারকে। প্রশ্ন হলো, খালেদা জিয়া অঙ্গুলি ইশারা করলে কেন আমিনীরা কুলকুচা করে, ঠোটে পানের রস মুছে, শ্মশ্রম্নতে মেহেন্দী মেখে, আতর ঢেলে খালেদার দরবার শরীফে হাজির হন? এগুলো নিয়ে শুধু ভাবার নয়, কথা বলার সময় এসেছে।
ভাষ্য লেখা থেকে প্রায় অবসর নিয়েছিলাম। কিন্তু আমিনী বিতর্ক, ড. ইউনূস বিতর্ক এবং বিভিন্ন কর্মকা- দেখে মনে এমন বিতৃষ্ণা জমেছে যে, উগরে দেবার জন্য লেখা ছাড়া অন্য কোন মাধ্যম পেলাম না। ড. ইউনূস ও মার্কিনীদের সে পরিপ্রেৰিতে বাংলাদেশকে দেখে নেয়ার হুমকির চেয়েও আমিনীর হুমকি নিয়ে বলাটা এখন জরম্নরী মনে হয়েছে।
মাসখানেক ধরে আমিনী নানা হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। এতদিন চুপ ছিলেন। যুদ্ধাপরাধী বিচার নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন, কারণ তিনি নিজে তালেবান ভক্ত। কিন্তু সরকারের সমন্বয়হীনতার কারণে, বিচার শুরম্ন হচ্ছে না দেখে এবং সুপ্রীমকোর্টে ফতোয়া নিয়ে শুনানি শুরম্ন হওয়ায় তিনি মাঠে নামার অজুহাত পেয়ে গেলেন। নামাজী হাসিনাকে হুমকিধমকি দিয়েই যাচ্ছেন।
শুধু তাই নয়, ৪ তারিখ হরতালও ডেকেছেন। আমিনীদের পৰাবলম্বী 'আমার দেশ'-এ আমিনীর বক্তব্য বিসত্মৃত আকারে ছাপা হয়েছে। ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান আমিনী বলেন, "ফতোয়া নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া, কোরানবিরোধী নারীনীতি, ইসলামবিরোধী শিৰানীতি এবং পর্দাবিরোধী আইন করে এ সরকার প্রমাণ করেছে, তারা এদেশ থেকে ইসলামকে বিদায় করতে চায়। তারা কোরান ও ইসলামকে লালবাতি দেখিয়েছে। তাই এ সরকারের সঙ্গে আপসের কোন সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, কোরান-সুন্নাহ রৰার জন্য ঈমানী দায়িত্ব হিসেবে ৪ এপ্রিলের হরতাল সফল করা হবে। আমাকে জেল-ফাঁসির ভয় বা পাকিসত্মানী, জঙ্গিবাদী প্রচারণা করে কোন লাভ হবে না। লাখ লাখ লোক কোরান নিয়ে হরতালে নামবে। এতে বাধা দিলে লাগাতার হরতাল ডাকা হবে। প্রয়োজনে দেশ অচল করে দেব।
এবার আমরা শুধু ইসলাম রৰার জন্য মাঠে নামিনি, জীবন দিয়ে হলেও এবার ইসলামী আইন বাসত্মবায়ন করেই ছাড়ব ইনশালস্নাহ।
মুফতি আমিনী বলেন, আধুনিক রাজনীতিতে যারা দেশ চালায় তারা অযোগ্য। তারা মিথ্যা বলে ও মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিসভা এত মিথ্যা কথা বলেন যে তার কোন শেষ নেই। তারা কোরানবিরোধী নীতি করে আবার বলেন, এতে কোরান বিরোধী কিছু নেই।
হয় তারা কোরান বোঝেন না অথবা নীতি বোঝেন না মনত্মব্য করে তিনি বলেন, মাদ্রাসা শিৰায় শিৰিতরাই দেশ চালাতে সৰম। এই শিৰার বিরম্নদ্ধে যারা কথা বলে, মাদ্রাসাকে যারা জঙ্গী শিৰার জায়গা বলে তারা মুসলমান না। কারণ, মাদ্রাসায় কোরান-সুন্নাহ ও ইসলামের শিৰা দেয়া হয়।
তিনি বলেন, হরতালকারীদের ওপর অত্যাচার করবেন না। নারীনীতি স্থগিত না করা পর্যনত্ম কারও সঙ্গে আপস হবে না।
আমি কারও সঙ্গে দেখা করব না। কেউ চাইলে আমার সঙ্গে দেখা করতে হবে। কোরানবিরোধী হলে আমি ওবামা'রও বিরোধী। মুফতি আমিনী বলেন, কোরানবিরোধী বাকশাল আর কোনদিন ভোট পাবে না। মইনুদ্দিন-ফখরম্নদ্দীনের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর ৰমতায় আসবে না।
কোরানবিরোধী আওয়ামী সরকারকে ৰমতায় আনার ব্যবস্থা করার অভিযোগে ফখরম্নদ্দীন-মইনউদ্দিনের ফাঁসি দাবি করেন তিনি। " [৩১.৩.২০১১]
ভাষ্যে সাধারণত এতবড় উদ্ধৃতি দেয়া হয় না। কিন্তু দিলাম দু'টি কারণে। জনকণ্ঠ যারা পড়েন তারা আমিনীরা কি বলছেন তা খুব একটা জানেন না, কারণ অন্যান্য পত্রিকাগুলো তাদের এক প্যারার বেশি কভারেজ দেয় না। আর পুরো টেঙ্ট পড়লে বোঝা যাবে তাদের বক্তব্যের অনত্মর্নিহিত কারণ কী?
বিবৃতিটি পড়লে বোঝা যায়, হাসিনা সরকার আসাতে তাদের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
কারণ, মাদ্রাসা আধুনিকায়ন হলে, জঙ্গী দমিত হলে আমিনীদের কার্যক্রম হ্রাস পায়। তাদের বৃদ্ধির জন্য দরকার খালেদা সরকার। সুতরাং, যেভাবেই হোক এই সরকারের পতন আনতে হবে এবং সে জন্য পাকিদের মতো ধর্মের ব্যবহার করাটাই উত্তম।
ফজলুল হক আমিনী যা বলছেন, তার কোনটাই সত্য নয়। তাদের মূল বিষয় নারীদের ৰমতায়নের বিরোধিতা করা।
এ জন্য নারী নীতিকে বেছে নেয়া হয়েছে। এবং বলা হচ্ছে, ফতোয়া, শিৰানীতি, যা কিছু নারীনীতির সঙ্গে যুক্ত তা কোরানবিরোধী।
নারীনীতিতে (২০০৮), 'সম্পত্তিতে নারী-পুরম্নষের সমান অধিকার' প্রসত্মাবই তথাকথিত ইসলামীদের চৰুশূল। আমি অনেক প্রগতিশীল মুসলমানকে দেখেছি, ইসলাম সম্পর্কে যারা আদৌ ভাবেন না, সম্পত্তির কথা উঠলেই বোনরা থাকলে তাদের সম্পত্তিতে সমানাধিকার দেন না। তখন ধর্মের দোহাই দেন।
অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বীকেও দেখেছি একই মত পোষণ করেন। আমার কন্যা ও পুত্রদের মধ্যে সম্পত্তি সমানাধিকার দেব না_এ কথা ভাবতেও আমার নিজেকে পাষ- মনে হয়। পারলে কন্যাকে কিছু বেশি দিয়ে যাব। আমিনীদের বক্তব্য হলো, কোরানে আছে_ "একজন পুরম্নষের অংশ দু'জন নারীর সমান। " [সূরা নিসা ১১ ও ১৭৬] এটি না মানলে কোরান সুন্নাহর বিরোধিতা করা হয়।
ঠিক আছে কোরান-হাদিস থেকে এবার কিছু উদ্ধৃতি দিই_
১। উটের মূত্র পান করা [পবিত্র] [সহি বোখারী, ৮ম খ-, হাদিস ৭৯৭]
২। শনিবারে সীমা লঙ্ঘন করো না [নাহল ১২৪, আল আরাফ ১৬৩, নিসা ১৫৪]
৩। দাসপ্রথা চালু করা ও বহু দাসীর সাথে শোয়া (প্রখ্যাত এবং সর্বোচ্চ সৌদি শিৰাবিদ ড. ফওজান এ প্রথাকে ইসলামী প্রথা বলেছেন) [মুমিনূন ৫, ৬; আহযাব ৫০]
৪। কাউকে ইসলামের 'শত্রম্ন' মনে হলে তাকে খুন করা ও খুন করার জন্য মিথ্যা বলা [বোখারি, ৫ম খ-, হাদিস ৩৬৯]
৫।
যুদ্ধবন্দীদের ধর্ষণ করা (বোখারি ৩ খ- হাদিস ৭১৮, ৫ খ-, হাদিস ৬৩৭]
৬। প্রমাণ ছাড়াই স্ত্রীর ওপরে চরিত্রহীনতার অভিযোগ এনে তাৎৰণিক তালাক দেয়া [নূর, ৬, ৭]
আজ, এগুলো কী মানবেন? না মানলে কি আমি ধর্মচু্যত হয়ে গেলাম? এ বিধানগুলো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পটভূমিতে দেয়া। জামায়াতে ইসলামের অপ্রকাশ্য নেতা শাহ আবদুল হান্নান লিখেছেন জিজিয়ার কথা উলেস্নখ করে, 'জিজিয়ার বিষয়টি অত্যনত্ম স্পষ্ট। ইহা কেবল বিশেষ পরিস্থিতিতেই প্রযোজ্য। যদি সেই পরিস্থিতি না থাকে তবে ইহা প্রয়োগের প্রয়োজন নাই।
ইহা দাসপ্রথার মতোই। যেহেতু দাসপ্রথা নাই, তাই কোরান-সুন্নাহ-এ ইহার আইনগুলোও এখন প্রযোজ্য নহে। '
প্রাচীন আমলেও মানুষজন তা বুঝেছিল। যেমন, তওবা আয়াত ৬০-এর ভিত্তিতে মুয়ালস্নাফাগোত্র যে যাকাত পেত সেটি হযরত উমর বন্ধ করে দেন। দুর্ভিৰের সময় চোরের হাত কাটা ও বিশেষ ৰেত্রে ইহুদী ও খ্রীস্টান নারীকে বিয়ে করা তিনি বন্ধ করেন।
কিন্তু সূরা মায়েদা (৫ ও ৩৮) দেখুন, সেখানে বলা হয়েছে জিজিয়া নেয়া, চোরের হাত কেটে দেয়া, ইহুদী ও খ্রীস্টান নারীকে বিয়ে করা যাবে। তা'হলে হযরত উমরকে কী বলবেন? শুধু তাই নয়, নবীজী (সা.)র সময়ের তামাত্তু হজের পদ্ধতিও তিনি বদল করেছেন।
নবীজী (সা.) মৃতু্যর আগে তো তাঁর পরে নেতা কে হবেন তা বলে যাননি। হযরত আবু বকর নেতা হলেন, কিন্তু নবীজীর আদর্শ অনুসরণ না করে তিনি তো নেতৃত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন হযরত উমরকে এবং তিনিও একই কাজ করে গেছেন।
আর নবীজী (সা.)? তিনি কি তাঁরই দেয়া বিধান অনেক ৰেত্রে, প্রয়োজন অনুসারে, সামাজিক ও সময়ের পটভূমিতে বদল করেননি? উদাহরণ স্বরূপ_
১।
মু'তা বিয়ে চালু করেছিলেন। অনেক পরে তা নিষিদ্ধ করেন।
২। প্রথমদিকে নামাজ ছিল দু'ওয়াক্ত (খবর কাগজে দেখেছিলাম মুন্সিগঞ্জের এক মহিলা এ রকম বিধান দিয়েছিলেন) পরে করলেন পাঁচ ওয়াক্ত।
কোরানে দেখুন_
১. বায়তুল মোকাদ্দেসের দিকে মুখ করে নামাজ পড়া চালু ছিল ১৪ বছর।
তার নির্দেশ হলো কাবার দিকে [বাকারা ১৪২-৪৪]।
২. বিধবার ইদ্দত পালনের সময় কাল ছিল এক বছর। পরে তা করা হয় ১৭০ দিন (বাকারা ২৩৪ ও ২৪০)।
৩. দু'বোনকে এক সঙ্গে বিয়ের প্রথা বহু বছর চালু থাকার পর নিষিদ্ধ করা হয়েছে [নিসা ২৩]।
৪. আগে অনেক বিয়ে করা যেত।
পরে সর্বোচ্চ চার স্ত্রী করা হয়েছে (নিসা ৪)।
৫. নবীজীর সঙ্গে একানত্মে কথা বলতে হলে সদকা দিতে হবে এ আয়াত ও নাজিল হওয়ার পর রহিত করা হয় (মুহিউদ্দিন খানের অনূদিত কোরান, পৃ-১০৪৭]।
এ প্রসঙ্গে টরেন্টো প্রবাসী শরীয়া বিশেষজ্ঞ হাসান মাহমুদ লিখেছেন_'একটু খুঁটিয়ে দেখলেই দেখা যাবে যেটাতে 'কখনো পরিবর্তন পাবেন না' (কোরান/সুন্নাহ) তা হলো মূল্যবোধ ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, আর যেটাতে পরিবর্তন পাবেন তা হলো সামাজিক বিধানের প্রণয়ন, পরিবর্তন ও বাতিল... কোরানে দেয়া মানব কল্যাণের মূল্যবোধ বজায় রেখে সামাজিক বিধান বদলানো ইসলামের অপরিহার্য শর্ত। ' প্রিন্সিপাল অব ইসলামিক জুরিসপ্রম্নডেন্সের লেখক ড. হাশিম কামালী ও 'স্থান ও কালের বিষয়টির' ওপর গুরম্নত্ব দিয়েছেন। শরীয়া সমর্থক বিলাল ফিলিপ তার ইভু্যলেশন অব ফিকাহ গ্রন্থে বলছেন, 'আলস্নাহ কখনও কোন তাৎৰণিক কারণে মানুষের উপযোগী আইন দেন।
কিন্তু পরে এর উদ্দেশ্য হাসিল হলে এর উপযোগিতা লোপ পায়। এর আর অসত্মিত্ব থাকে না। ' আমিনীদের সহযোগী যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতের গুরম্ন মওদুদীও লিখেছেন...'কোরান-সুন্নাহ'র সুস্পষ্ট নির্দেশ বদলাইবার অধিকার কারও নেই। অন্যদিকে আমি এও বলছি, ভিন্ন পরিস্থিতিতে ইজতেহাদ প্রয়োগ করে সময়ের দাবির ভিত্তিতে এ সমসত্ম পরিবর্ধনকে বৈধ করা যেতে পারে। ' (ইসলামিক ল এ্যান্ড কন্সটিটিউশন, পৃ-১৩)
এখন হজ করতে যান দেখবেন পাথর মারার পদ্ধতি বদল হয়ে গেছে, বাংলাদেশে প্রকাশিত বইয়ে তার কোন উলেস্নখ নেই।
মরক্কো, সেনেগাল, তিউনিসিয়ায় সমান উত্তরাধিকার প্রচলিত হয়েছে। মনে রাখা দরকার তিউনিসিয়ায় ৯৯% মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ কিরগিজসত্মানে দু'বার বিয়ে করে দেখুন_সোজা কারাগারে যেতে হবে। কয়েক মাস আগে ইরানে বিধবার উত্তরাধিকার বদলানো হয়েছে। ইসলাম তো বিনষ্ট হয়নি। সুরা তালাকে দেখুন স্ত্রী তালাকের সময় 'তোমাদের মধ্য হইতে দুইজন নির্ভরযোগ্য লোককে সাৰী রাখিবে।
' (২) আর ইসলামী ফাউন্ডেশনের বিধিবদ্ধ ইসলামী আইনে দেখুন 'তালাক সংঘটিত হওয়ার জন্য সাৰী শর্ত নহে' (১ম খ-, পৃ.৩৪৪)। ইসলামে আছে হুদুদের অনত্মর্গত কোন অপরাধ করলে তা দ-নীয়, আর ফাউন্ডেশনের বিধিবদ্ধ আইনে আছে 'হুদুদের আওতাভুক্ত কোন অপরাধ করিলে ইসলামী রাষ্ট্র প্রধানের বিরম্নদ্ধে আদালতে মোকাদ্দমা দায়ের করা যাবে না। '
সুতরাং, নারীনীতির বিরম্নদ্ধে আমিনীরা যে কথা বলছেন এবং কোরান-সুন্নাহর উদাহরণ তুলে ধরছেন তা অপব্যাখ্যা। এর উদাহরণতো আগেই দিলাম। সব সময় সবকিছুই কালোপযোগী করা হয়েছে।
বাংলাদেশে কি আমিনীরা পারবেন ১২০০ বছর আগের সময়ের সমাজ প্রবর্তন করতে?
দেখুন, নিয়ত ভাল থাকলে সব করা যায়। আমিনীদের নিয়ত ধর্ম নয়, ধর্মের অপব্যবহার করে ৰমতা দখল। এ কারণেই নিয়তই তারা এ ধরনের ব্যাখ্যা দেয় এবং শেখ হাসিনা ৰমতায় থাকলেই। বেগম জিয়া কি পর্দানশীন না বিএনপির সমর্থকরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজী। কিন্তু আমিনীরা কেন তাদের সমর্থক সেটি বুঝতে হবে।
এবং এ কারণে এদের প্রতিরোধ করা পবিত্র কর্তব্য শুধু নয় ঈমানেরও অঙ্গ। কিন্তু অবাক কা- এ সরকার মনে হচ্ছে আমিনীর হুঙ্কারে বিচলিত। বিবিসির খবর অনুযায়ী_"১৯৯৭ সালে গৃহীত 'নারী উন্নয়ন নীতি '৯৭'-এ নারীর ৰমতায়ন ও অধিকার বিষয়ে ৭.১ ধারায় বর্ণিত 'সমান অধিকার' শব্দ দু'টি বাদ দিয়ে করা হয়েছে 'সংবিধানসম্মত অধিকার'। ৭.২ ধারার 'সম্পদ, বাসস্থান, অংশীদারিত্ব, উত্তরাধিকার-সম্পদ, ভূমির ওপর অধিকার আইন' ইত্যাদি লাইন ও শব্দ বাদ দেয়া হয়েছে। ৭.৩ ধারায় 'নারীর সর্বাত্মক কর্মসংস্থান'-এ বদলে করা হয়েছে 'যথোপযুক্ত'।
ধারা ৮ থেকে রাজনীতিতে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণের পুরোটাই এবং মন্ত্রী পরিষদ, সংসদ ও বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে নারীর ৰমতায়ন সম্পর্কিত কয়েকটি অংশ সম্পূর্ণভাবেই বাদ দেয়া হয়েছে। "
শিৰানীতির বিপৰেও হুঙ্কার দিলে প্রাক্তন কমিউনিস্ট শিৰামন্ত্রীও নমনীয় হয়ে যান। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন? আমিনীরা কি এতই শক্তিশালী যে একটি সরকার তার ভয়ে কুঁকড়ে যাবে? এ ধরনের মনত্মব্যে সরকারের অনেকে বলেন, আমরা বাসত্মবতা বুঝি না। তাদের থেকে বাসত্মবতা আমরা কম বুঝি না, বরং অনেক ৰেত্রে বেশি বুঝি। কারণ আমরা ৰমতায় যাই না।
যারা যান, চেয়ারে বসলেই তাদের পাগল পাগল লাগে।
এ প্রসঙ্গে আরও বলার আছে। আমিনীরা যখন হুমকি দিচ্ছেন তখন ইসলামী ফাউন্ডেশনের কর্তৃপৰ কেন ব্যাখ্যা করলেন না যে, আমিনী ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন? ধর্মমন্ত্রী কেন সোচ্চার হলেন না। ৩১ তারিখের একটি সভায় রৰণাত্মক বক্তৃতা দিয়েছেন। একই দিনে আওয়ামী মহিলালীগ এবং সাংস্কৃতিক জোট দুটি সভা করে।
সংসদীয় কমিটি কি করছে? এরা যদি সরকারকে ডিফেন্ড করতে না পারে এদের রাখা কেন? আওয়ামী লীগ ও জোট এত বড়, তারা কেন সোচ্চার হলো না? এত মহিলা সংগঠন, তারা কেন রাসত্মা ভরিয়ে তুলল না যেখানে এটিই তাদের মূল বিষয়? আমিনী এতদিন ধরে এ কাজ করে চলেছেন অথচ এখন শেষ মুহূর্তে এসে দু'একটি সভা করে কি এ অশুভ শক্তি প্রতিরোধ করা যাবে ? সুশীল সমাজ, তাদের মুখপত্র প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ড. ইউনূসের ব্যাপারে মাতম করতে করতে গলা শুকিয়ে ফেলল, তারা নিশ্চুপ কেন? রাজনৈতিক দলের ৰেত্রে বলতে হয় তাদের আত্মম্ভরিতা ও আত্মপ্রসাদ ও অগ্রাধিকার চিহ্নিতকরণ ও নেতৃত্বের ব্যর্থতা, মহিলা সংগঠনগুলোর নেতৃত্বের সঙ্গে তৃণমূলের যন্ত্রণার ফারাক এবং সুশীল সমাজ ও মিডিয়ার মতলববাজি।
কয়েক দিন আগে পাঞ্জাবের গবর্নর সালমান তাসিরকে হত্যা করে মৌলবাদী জঙ্গিরা, কারণ তারা বস্ন্যাশফেমি ল'র বিপৰে কথা বলেছেন। একই কারণে এরপর মন্ত্রী শাহবাজ ভাট্টিকে হত্যা করা হয়। হত্যাকারীর পৰে উলস্নাস করা হয় পাকিসত্মানে। কতটা বর্বর হলে এটি সম্ভব! সালমান তাসিরের স্ত্রী মেহের বানু বলছেন, "আজ যা হলো আগামী পাঁচ বছরে তার হয়ত কোন অভিঘাত হবে না।
কিন্তু ২৫ বছর পর হবে। এখন আমরা যা দেখছি তা ৩০ বছর আগে রোপিত বৃৰের ফল। তখন যদি জিয়াউল হকের বিরম্নদ্ধে মানুষ রম্নখে দাঁড়াত তাহলে আজ এ অবস্থা হতো না। আমাদের নৈঃশব্দের জন্য মাদ্রাসাগুলো আজ বিষ ঢেলে দিচ্ছে, সত্যিকারের ইসলামের হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে তারাই যারা বলছে তারা ইসলামের সেবক আর সংখ্যাগরিষ্ঠ এত ভীত যে কথা বলতে পারছে না। "
জেনারেল জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ, যুদ্ধাপরাধের সমর্থক বেগম খালেদা জিয়া ও যুদ্ধাপরাধী নিজামী বাংলাদেশকে সেই নষ্টের পথে নিয়ে যাচ্ছিল।
সিভিল সমাজ, আমাদের ও রাজনৈতিক দল বিশেষ করে আওয়ামী লীগের কারণে পারেনি। আজ সেই আওয়ামী লীগ বা সিভিল সমাজ আমিনীর ভয়ে জবুথবু হবে, তার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে, তার হুমকিতে কাবু হতে হবে_এটি কেমন কথা প্রধানমন্ত্রী? আমরা কেন আমিনীদের মনে করছি ধর্মের একমাত্র ব্যাখ্যাকারী? এই মেনে নেয়াটাই ভুল। বরং আমাদের বলতে হবে এরা ধর্মের অপব্যাখ্যাকারী।
মেহেরবানুর কথা ধার করে বলতে হয়, আমরা যদি আমিনীদের আজ প্রতিরোধ না করি, তাহলে তারা ৰমতায় আসবে হয়ত আমেরিকার সাহায্যেই [যারা মনে করে জামায়াত গণতান্ত্রিক দল এবং ব্যক্তি রাষ্ট্রের থেকে গুরম্নত্বপূর্ণ এবং যারা ১৯৭১ সালে পাকিসত্মানের গণহত্যা সমর্থন করেছিল। ] তখন এই সুশীল সমাজের পোশাক খুলে চামড়া তুলে নেয়া হবে, এনজিও ও ফ্যাশনেবল মহিলা সংগঠকদের বাসা থেকে বেরম্নতে হবে না, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হবে মাদ্রাসা এবং বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে ফতোয়া দিয়ে, দোররা মেরে আফগানিসত্মান করা হবে।
আজ বাংলাদেশ পাকিসত্মানই হতো যদি না আমরা ঐ নষ্ট চতুষ্টয়কে প্রতিরোধ করতাম। আজ যদি আমিনীদের প্রতিহত না করা হয় দশ বছরের মাথায়ই বাংলাদেশ আরেকটি পাকিসত্মানে পরিণত হবে। জেগে উঠুন, দাঁড়ান, প্রতিরোধ করম্নন আমিনীদের। এটি আমাদের জন্য এখন ফরয।
* টরেন্টো থেকে হাসান মাহমুদ এ লেখাটি লেখার জন্য বিশেষভাবে শুধু অনুরোধই নয়, তথ্য দিয়েও সাহায্য করেছেন।
তাঁকে ধন্যবাদ।
সূত্রঃ দৈনিক জনকন্ঠ, ২ এপ্রিল, ২০১১
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।