আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার প্রথম সেইভ করা এবং এতদ্বিষয়ক কতিপয় কথকতা......(ফান পোষ্ট সিক্যুয়াল - ১)

বিদ্রোহী

পর্ব ১ : সচরাচর আর সকলের মত সেইভ করিবার প্রথম অনুপ্রেরণাটুকু আমিও আমার শ্রদ্বেয় পিতাজির নিকট হইতেই পাইয়াছিলাম । প্রতিদিন সকালে অফিস যাইবার প্রাতঃকালে তাহাকে সেইভ করতে দেখিয়া সবসময়ই আমি মনে মনে যার পর নাই পুলকিত হইতাম এই ভাবিয়া যে কবে আমিও তাহার মত ঐরকম সাদা ফেনা মুখে লাগাইয়া ক্ষোরকার্য সমাধা করিতে পারিব ! তক্কে তক্কে থাকিলাম, কখন সুয়োগ পাই । বয়স আমার তখন কেবল ৮ কি ১০। ওই বয়সে বাবার রেজর রাখিবার সেলফের নাগাল পাওয়া আমার উচ্চতায় কুলোতো না । তবুও আব্বা অফিসে চলিয়া গেলে প্রায়শই মার চোখ ফাকি দিয়া রেজর নামক চমৎকার বস্তুটার রহস্যোদ্বারের চেষ্টা চালাইতাম ।

টুলের উপর মোড়া তার উপর পিড়ি বসাইয়া একদিন যেই না এভারেস্ট বিজয়ের আনন্দ লইয়া রেজরটার পশ্চাৎদেশ স্পর্শ করিয়াছি, ওমনি মোড়া বাবাজি আমার আনন্দের মুখে পানি ঢালিয়া দিয়া পিছলাইয়া গেল। তৎক্ষনাৎ আমার প্রতি ভূমির অসীম ভালবাসার বহিপ্রকাশের সুযোগ সে কিছুতেই হাতছাড়া করিতে চাহিল না। ফলাফল, মুহুর্তের মধ্যেই ধরনীর দুর্বার আকর্ষনের টানে হাতপা উল্টাইয়া প্রপাতধরনীতল !! আমিও তাহার ভালবাসার ডাকে সাড়া দিয়া দুইহাত সামনে প্রসারিত করিয়া দুই পা ছড়াইয়া দিয়া চিৎপটাং হইয়া তাহার ভালবাসার আবেগে (?) সাড়া দিয়া কান্নাকাটি শুরু করিয়া দিয়াছি ! সেইদিন ধরনীর প্রতি এই ভালবাসার মূল্য দিতে হইয়াছিল আমার সামনের দিককার একপাটি দন্ত আর মুত্র বিসর্জনের মাধ্যমে । য়াই হোক আম্মা আসিয়া সে যাত্রায় আমাকে উদ্বার করিয়াছিল । পর্ব ২: উক্ত ঘটনার পর হইতে আমার সেইভ করিবার নেশা কিছুমাত্র না কমিয়া বরন্ঞ বহুগূনে বাড়িয়া গেল।

তাছাড়া মনে এক প্রকার জেদ চাপিয়া বসিল যে, হতচ্ছাড়া রেজরকে একবার হাতে পাইলে সেইভ তো করিবই সেইসাথে বাড়তি মজুরি শাস্তি হিসেবে উহাকে দিয়া নিজের মাথাটাও কামাইয়া লইব । যাই হউক, আমাকে খুব বেশীদিন অপেক্ষা করিতে হয় নাই । কিছুদিন পরই বাপজান ভুল করিয়া রেজর বেসিনের মধ্যেই রাখিয়া গেলে আমি উহার সন্ধান পাইয়া আনন্দে লাফালাফি শুরু করিয়া দিলাম । আম্মা রান্নাঘরে রান্না করিতেছে আর ছোট খালা পড়িতে বসিয়াছে । অতএব এই তো সুযোগ, একখান আয়না আর রেজর লইয়া সেভ করিতে বসিয়া পড়িলাম ।

কিন্তু বিপত্তি বাধিল ক্রিম লইয়া, ক্রীম তো সেলফের ওপরই রহিয়া গিয়াছে, আর উহার নাগাল পাওয়া তো সম্ভব নহে । মুহুর্তের মধ্যেই মাথায় আইনষ্টাইনের বুদ্ধি খেলিয়া গেল । আরে ! টুথপেস্টই তো রহিয়াছে ! কল্পনায় ঝিলিক খাইয়া উঠিল শুভ্র সকালের মুখভর্তি এক কুলি ফেনার দৃশ্য । সত্য বলিতেছি, ফেনা দেখিয়া এত আনন্দ আমি আর জীবনে কোনদিন পাই নাই । যাই হউক, সারা মুখে এক টিউব পেস্টের প্রায় পুরোটা লাগাইয়া বিপুল উৎসাহের সহিত ব্রাশ দিয়া ঘষিতে লাগিলাম।

কিন্তু হতাশ হইতে বেশীক্ষন লাগিল না যখন দেখিলাম ব্রাশ ঘসিয়া মুখ লাল করিয়া ফেলিলেও ফেনার সন্ধান নাই। আব্বাকে দেখি ক্রীম লাগাইয়া কিছুক্ষন ঘষিতেই কি সুন্দর মুখভর্তি ফেনা তুলিয়া ফেলে !! কিছুক্ষন ঘষিয়া যখন মনে হইল দুই গালে আমার মরিচের চাষ-বাস চলিতেছে তখন উৎসাহে কিছুটা ভাটা পড়িল । ভাবলাম গুস্টি মারি তোর ফেনার, ফেনা ছাড়াই বহুত সুন্দর সেইভ করা যাইবে , এই ভাবিয়া রেজর লইয়া দ্বিগুন উৎসাহে দুই গালে পুনরায় ঘসিতে লাগিলাম । কিন্তু বিধিবাম, আমার এই সুখ বেশীক্ষন সইল না, চাল রাখার ড্রামের আড়ালে ইন্দুরের ন্যায় আমার এই খচখচ আওয়াজ শুনিয়া আম্মিজান অতি শীঘ্রই টের পাইয়া গেলেন । রান্নাঘর হইতে আসিয়া আমাকে এ অবস্থায় পাইয়া অগ্নিমূর্তি হইয়া গেলেন ।

দুই গালে জমপেশ এক যুগল রাম থাপ্পড় লাগাইয়া দুই কানে ধরিয়া একরকম ছেচড়াইতে ছেচড়াইতে টানিয়া লইয়া গেলেন । রেজরের টানে স্থানে স্থানে পোড়া রূটির ন্যায় ছাল উঠিয়া যাওয়া জায়গাগুলোতে মলম লাগাইয়া দিয়া কয়েক হাজার বার ভৎসনা করিয়া তবেই সেইদিন ক্ষান্ত হইয়াছিলেন । উল্লেখ্য, আমার এই ধরনের প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রকারের বান্দরামিতে ঘরের সকলেই একরকম অতিস্ট হইয়া উঠিয়াছিল। তাই "মিশন সেভ - ২" ও সেইদিনকার মত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হইল । চলবে................................. বি: দ্র: এতকিছুর পরও আমার অভিযান থামিয়া থাকে নাই ।

পরপর ৪ বারের মত ব্যর্থ হইয়া অবশেষে ইন্টার ২য় বর্ষে উঠিয়া সফলভাবে প্রথমবারের মত মিশন সফল করিয়াছিলাম, সে আরেক মজার ঘটনা । বলব আরেকদিন, সে পর্যন্ত আল্লাহ হাফেজ .....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.