আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হলিউড দেবী ডেইম এলিজাবেথ টেইলর: পর্ব ২

বুকের ভেতর বহু দূরের পথ...
হলিউড দেবী ডেইম এলিজাবেথ টেইলর: পর্ব ১ টেইলরের বিয়ে মাত্র ১৮ বছর বয়সেই খ্যাতির উচ্চসীমায় পৌঁছে গিয়েছিলেন এলিজাবেথ টেইলর। রূপে-গুণে-ব্যক্তিত্বে এলিজাবেথ ছিলেন অনন্য যা পুরুষদের সহজেই খুব আকৃষ্ট করতো। মিশরের সম্রাজ্ঞী ক্লিওপেট্রার মতই রূপরহস্যে সেই সময়ের বহু রূপবান পুরুষকে তিনি তার মায়াজালের কুহকে ভুলিয়েছিলেন, তাঁর প্রেমের বড়শিতে ধরা দিয়েছিলেন অনেকেই। তার মধ্যে তিনি পালাক্রমে বিয়েও করেছিলেন আটজনকে। এর মধ্যে দু'বার বিয়ে করেছেন একই পুরুষকে, তালাক দেওয়ার পর আরেকবার।

১.কনরাড নিকি হিলটন (৬ মে ১৯৫০- ২৯ জানুয়ারি ১৯৫১): পৃথিবীজুড়ে হিলটন হোটেলের যে বিশাল সাম্রাজ্য, তারই উত্তরাধিকারী কনরাড নিকি হিলটন। তার আরেকটি পরিচয় তিনি প্যারিস হিলটনের বাবার চাচা। শুরুতে কদিন ভালো কাটলেও লিজ প্লেবয়, জুয়াড়ু ও মদ্যপ স্বামীর অব্যাহত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে থাকেন। তাই সম্পর্কটা বেশিদিন টিকলো না। ২. মাইকেল ওয়াইল্ডিং (২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২- ২৬ জানুয়ারি ১৯৫৭) ব্রিটিশ অভিনেতা ওয়াইল্ডিং টেইলরের চেয়ে ১৯ বছরের বড় ছিলেন।

দুজনেরই দ্বিতীয় বিয়ে। একমাত্র মাইকেলই তাঁকে কিছুটা সাংসারিক স্থিতি দিতে পেরেছেন। কিন্তু তাও বেশিদিনের জন্য নয়। তাঁদের ঘরে এসেছিলো দুটি পুত্রসন্তান-মাইকেল জুনিয়র ও ক্রিস্টোফার। ৩. মাইকেল টড (২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৭- ২২ মার্চ ১৯৫৮) ধনাঢ্য প্রযোজক মাইকেল টড ১৯৫৮ সালের ২২ মার্চ ব্যক্তিগত প্লেন ক্রাশে নিহত হন।

প্লেনে টেইলরেরও থাকার কথা ছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারণে মাইকেল তাঁকে নিতে রাজি হননি। এই একবারের জন্যই বিধাব হন টেইলর। এ ঘরে ছিলো একটি কন্যা সন্তান। দাম্পত্য জীবনে তাঁর সঙ্গেই সবচেয়ে সুখে ছিলেন বলে টেইলর মন্তব্য করেছিলেন।

৪. এডি ফিশার ( ১২ মে ১৯৫৯- ৬ মার্চ ১৯৬৪) মাইকেল টডের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু এডি ফিশার পঞ্চাশের দশকে ছিলেন পৃথিবীর বিখ্যাত সংগীতশিল্পীদের একজন। নিহত বন্ধুর শেষকৃত্যানুষ্ঠানে বন্ধুর সদ্যবিধবা পত্নীকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে কদিনের মধ্যে দুজনই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যান। স্বামীর সমাধির ফুল না শুকাতেই প্রেমে মেতে ওঠায় নিন্দিত হন এলিজাবেথ টেলর। ফিশার নিজ স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন শুধুমাত্র টেইলরকে বিয়ে করার জন্য। বিয়ের পর এডি ফিশার ঘোষণা করেন, তাঁদের ৪০ বছর ধরে হানিমুন চলবে।

অবশ্য বিয়েটা টিকেছিল পাঁচ বছর। ৫.রিচার্ড বার্টন (১৫ মার্চ ১৯৬৪- ২৬ জুন ১৯৭৪ এবং পুনরায় ১০ অক্টোবর ১৯৭৫- ২৯ জুলাই ১৯৭৬) এ দুজনের প্রেমকাহিনী রোমিও-জুলিয়েটের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। মূল্যবান একটি হীরার নাম এ জুটির নামে রাখা হয়েছে তাদের প্রেমকে অমরত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে। ‘ডায়মন্ডস আর দ্য গার্লস বেস্ট ফ্রেন্ড’ বিখ্যাত সেই গানে বলেছিলেন মেরিলিন মনরো। সম্ভবত এই ধারণায় বিশ্বাসী ছিলেন অভিনেতা রিচার্ড বার্টনও।

প্রেয়সী এলিজাবেথ টেইলরের মন পাওয়ার জন্যই এ হীরে তিনি তুলে দিয়েছিলেন তার হাতে। এরপর থেকে সে সময়কার আলোচিত জুটির নামেই নামকরণ হয়ে যায় এ হীরের। রিচার্ড বললেন, ‘তুমি যদি আমাকে ছেড়ে যাও, মৃত্যু ছাড়া আমার সামনে কোনো পথ খোলা নেই। এলিজাবেথ বললেন, ‘আমার আর রিচার্ডের মধ্যে যদি তালাক হয়ে যায়, কসম, আমি আর কখনো বিয়ে করব না। ’ কিন্তু টেইলর-বার্টন হীরেও এলিজাবেথকে বেঁধে রাখতে পারেনি বার্টনের বাহুডোরে।

। প্রথমবার বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার পর বুঝলেন ভুল করেছেন। তাই আবার করলেন বিয়ে। এবার বুঝতে পারলেন না ওটা ভুলই ছিলো। তাই সম্পর্কটা একবারেই চুকেবুকে দিলেন।

রিচার্ড বার্টনের সাথেই সবচেয়ে বেশি সময় সংসার করেন টেইলর। দুই মেয়াদে প্রায় ১২ বছর। টেইলরের জন্য যা আশ্চর্যজনকই বটে। বার্টন-টেলর দম্পতির একটি কন্যাসন্তান—মারিয়া বার্টন। বার্টনের সঙ্গে সম্পর্ক চুকেবুকে যাওয়ার পর ১৯৭৮ সালে এ হীরেটি নিলামে তোলেন টেইলর।

বিক্রির টাকা দিয়ে হাসপাতাল তৈরির ঘোষণা দেন তিনি। নিলাম অনুষ্ঠানে এই হীরে শুধু একবার চোখের দেখা দেখার জন্যই সম্ভাব্য ক্রেতাদের গুণতে হয়েছিলো পুরো ২৫০০ ডলার। ১৯৭৯ সালে ৩ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয় ‘দ্য টেইলর-বার্টন’। ৬.জন ওয়ার্নার ( ৪ ডিসেম্বর ১৯৭৬- ৭ নভেম্বর ১৯৮২) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক জন ওয়ার্নার রিপাবলিকান রাজনীতিবিদ; ভার্জিনিয়া থেকে পাঁচবার সিনেটর নির্বাচিত হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নিক্সনের ‘সেক্রেটারি অব দ্য নেভি’র দায়িত্ব পালনকালে ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক মহলে এলিজাবেথ টেলরের সঙ্গে দেখা হয়।

এই দেখা ক্রমেই নিবিড় হয়ে আসে। তাঁদের দাম্পত্যের মেয়াদকাল কম নয়,- পুরো ৬ বছর! ৭.ল্যারি ফোর্টনেস্কি ( ৬ অক্টোবর ১৯৯১- ৩১ অক্টোবর ১৯৯৬) মাদক পুর্নবাসন হাসপাতাল বেটি ফোর্ড ক্লিনিকে চিকিৎসার সময় তাঁর চেয়ে কুড়ি বছরের ছোট পেশায় নির্মাণ শ্রমিক ল্যারি ফর্টেনস্কির সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। মাইকেল জ্যাকসনের নেভারল্যান্ড রেঞ্চে এ জুটি বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। তখন এলিজাবেথ টেইলর বললেন, ‘এই শেষ। ’ পরে এই বিয়েটাকে তিনি বললেন ‘দুর্ভাগ্যজনক’ এবং তালাকের মামলা করলেন।

ফলে বিয়ে ৫ বছরের বেশি টেকেনি। বিয়ে ও দাম্পত্য জীবন নিয়ে টেইলরের মজার উক্তি আজীবন যার কাছে বিয়ে ও সংসার ছিলো অনেকটা ছেলে খেলা তার মুখেই শুনুন প্রেম-ভালোবাসা বিয়ে-সংসার নিয়ে অমৃত বচন ১. বিয়ে একটি মহান প্রতিষ্ঠানের নাম। ২. আমি শুধু তাদের সঙ্গেই বিছানায় গিয়েছি যাদের আমি বিয়ে করেছিলাম। ক’জন নারীই বা সৎভাবে এরকম দাবী তুলতে পারে? ৩. রিচার্ড (রিচার্ড বার্টন) খুবই আবেদনময় পুরুষ। ওর মাঝে রয়েছে সেই বুনো গন্ধ যা কেবল একজন প্রকৃত নারীই অনুধাবন করতে পারে।

৪. আমি সাধারণ গৃহবধূ হওয়ার ভান করি না। ৫. আমার শরীরটা নারীর কিন্তু মনটা শিশুর। ৬. বড় মেয়েদের সাজতে প্রয়োজন বড় বড় হীরা। ৭. আমি খুবই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ স্ত্রী। বারবার বিয়ে করার কারণে আমার প্রতিশ্রুতবদ্ধ স্ত্রী হওয়াটা উচিতও বটে।

৮. কোন শক্তিই আমাদের আলাদা করতে পারবেনা। আমরা কমপক্ষে আরো দশ বছরের জন্য বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি। (রিচার্ড বার্টনের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার ৫ দিন আগে)
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।