আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বামী হত্যার বিচার না পেলে গণভবনের সামনে আত্মহত্যার হুমকি বখাটেদের হাতে নিহত অধ্যাপক হারুন-অর- রশিদের স্ত্রীর



স্বামী হত্যার বিচার না পেলে গণভবনের সামনে আত্মহত্যার হুমকি বখাটেদের হাতে নিহত অধ্যাপক হারুন-অর- রশিদের স্ত্রীর মামলা প্রত্যাহারের হুমকি আসামীদের ঢাকা,১৩ মার্চ, ২০১১: এ সরকারের আমলেই স্বামী হত্যার বিচার না পেলে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে আত্মহুতি দিতে চান বখাটেপনায় বাধা দেয়ায় নিহত সিলেট সরকারী মহিলা কলেজের দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান স্ত্রী আফরোজা হারুন। রোববার দুপুরে ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্র্যাব) কার্যালয়ে নিহতের পরিবারের আয়োজনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। উল্লেখ্য বখাটেপনায় বাধা দেওয়ায় গত ২১ শে মার্চ সিলেট শহরে শত শত লোকের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। আফরোজা হারুন বলেন, অবিলম্বে আমার স্বামী হারুন অর রশীদ হত্যা মামলার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে খোলাখুলি কথা বলতে চাই। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে মামলাটিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মনিটরিং সেলে অন্তর্ভূক্তির দাবি জানান তিনি।

সুষ্ঠু তদন্ত শেষে নিরপেক্ষ বিচারের স্বার্থে ঢাকায় দ্রুত বিচার আদালতে বিচার কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে জানেন স্বজন হারানোর কী বেদনা। আমি আশা করব প্রধানমন্ত্রী আন্তরিকভাবে বিষয়টি বিবেচনা করে আমাকে আমার এতিম দুটি সন্তানসহ তার সাথে দেখা করার সুযোগ দিবেন। তিনি বলেন, আর্থিক সহায়তার ব্যাপারে আমার অভিযোগ নেই; আমি শুধু আমার স্বামীর হত্যার বিচার চাই। আমার স্বামী হত্যার পর থেকে আজ পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে আমি একটি পয়সাও সাহায্য পাইনি। মাসের পর মাস ঘুরেও পেনশনসহ সরকারী পাওনাদি আজও হাতে পাইনি।

প্রয়োজনীয় কাজে সিলেটও যেতে পারছি না। কারণ ইতিমধ্যেই সকল আত্মস্বীকৃত খুনীরা জামিনে মুক্তি পেয়েছে। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেও মামলাটি চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলে অন্তর্ভ্ক্তূ করা হয়নি। খুনীদের আশ্রয়দাতা প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপে আমাদের কোন আবেদনই বিবেচনা করা হয়নি। আফরোজা হারুন বিবেকবান মানুষের কাছে আবেদন জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি আপনাদের মাধ্যমে দেশের সমস্ত বিবেকবান মানুষের কাছে জরুরী ভিত্তিতে মানবিক সাহায্য ভিক্ষা করছি।

নিহত অধ্যাপকের একজন অসহায় স্ত্রী হিসেবে, দুটি অসহায় এতিম সন্তানের মা হিসেবে, একজন বিধবা স্ত্রী হিসেবে, আপনাদেরই একজন বোন হিসেবে, যাতে আমি আমার স্বামী হত্যার সুষ্ঠু বিচার পেতে পারি। ” সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আফরোজা হারুন আরো বলেন, সিলেট কোতোয়ালী থানার কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এই ঘৃণ্য হত্যাকান্ডটিকে সম্পূর্ন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন। সমস্ত বিবেকবোধ বিসর্জন দিয়ে অর্থ লিপ্সু পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্বাক্ষীদের আসামী করার ভয় দেখিয়ে ১২ লক্ষ টাকা ঘুষ বাণিজ্য করেছে। যা সিলেটের স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ খুনীদের বিস্তারিত পরিচয় ও খুনের মোটিভ ঘটনার সাথে সাথে জানা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে খুনীদের গ্রেপ্তার করেনি।

পরে খুনীদের প্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে সারা দেশে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমাজ আন্দোলন শুরু করলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, অর্থ মন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও সিলেটের মেয়র বদরুদ্দিন কামরান সহ স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ প্রকৃত খুনীদের গ্রেপ্তারের জন্য প্রশাসনকে আল্টিমেটাম প্রদান করলেও এখনো মামলার চার্জশিট দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, পুলিশ ও র‌্যাবের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে র‌্যাব-৯ এর কমান্ডিং অফিসার উইং কমান্ডার সৈয়দ অনঘের সরাসরি তত্ত্বাবধানে র‌্যাব -৯ এর উপ-পরিচালক মেজর তৌফিক এলাহীর নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল গত ২৮ শে মার্চ’ ২০১০ তারিখে সিলেট থেকে ঘটনার মূল নায়িকা সূজিনা আক্তার মুন্নি (২২), সাফিয়া খাতুন লিপি (২০), আলেমুল ইসলাম (২৪), মোঃ রাসেল আহম্মেদ (২৪) এবং লোকমান হোসেন (৩৪) কে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেন। তাদের কাছ থেকে আমার স্বামীর ব্যবহৃত টেলিফোন সেটটিও উদ্ধার করা হয়। কিন্তু র‌্যাবের এই অভিযানের কথা জেনে মূল খুনী আব্দুল লতিফ ওরফে কাওসার হোটেল থেকে পালাতে সক্ষম হয়। র‌্যাবের এ দলটি পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার ও র‌্যাবের গোয়েন্দা প্রধান লে.কর্ণেল জিয়াউল হাসানের ব্যাক্তিগত হস্তক্ষেপে গত ২৪শে নভেম্বর মূল আসামীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব হেডকোয়ার্টারে সাংবাদিকদের মুখোমুখি করেন।

সাংবাদিকদের সামনে সে বখাটেপনায় বাধা দেয়ায় অধ্যাপক হারুনকে খুন করে বলে স্বীকারোক্তি দেয়। কিন্তু সে অভিযুক্ত খুনী কাওসার সম্প্রতি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে গেছে। নিহতের পরিবারকে বিভিন্নভাবে মামলা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার হুমকি দিচ্ছে। এমতাবস্থায় নিহতের পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে সাংবাদিকদের অভিযোগ করেন। আফরোজা বলেন আমার একমাত্র মেয়ে নাওয়ার নাজাফাত লুব্ধককে আজ ভয়ে কলেজে মুখ লুকিয়ে যেতে হয়।

এমন অবস্থায় আমি একজন নাগরিক হিসেবে দেশের সকলের সহযোগিতা চাই। সাংবাদিকদের সামনে নিহতের একমাত্র ছেলে চতুর্থ শ্রেণী পড়–য়া আবরার বারবার আব্বা আব্বা বলে চিৎকার করে বলে আমি আব্বুর কাছে যাব। তখন সম্মেলনে এক হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন নিহত অধ্যাপক হারুনের এতিম শিশু সন্তান আবরার আরহাম, বোন রেহানা সুলতানা রিনা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।