বুকের ভেতর বহু দূরের পথ...
সময় পরিক্রমায় এরিজাবেথ টেইলর-
২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৩২: উত্তর পশ্চিম লন্ডনের হ্যাম্পস্টেডে এক বিত্তশালী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ডেম এলিজাবেথ রোজমন্ড টেইলর। তাঁর বাবা ফ্রান্সিস লেন টেইলর পেশায় ছিলেন আর্ট ডিলার এবং মা সারা ভায়োলা ওয়ার্মরড ছিলেন মঞ্চকর্মী। এলিজাবেথ টেইলর লিজ টেইলর হিসেবেও পরিচিত।
১৯৪২: ১০ বছর বয়সে শিশুশিল্পী হিসেবে কমেডি ঘরানার ছবি ‘দেয়ার’স ওয়ান বর্ন এভরি মিনিট’-এ অভিনয়ের সুবাদে রূপালী পর্দায় অভিষেক ঘটে এলিজাবেথের।
১৯৪৩: ‘লেসি, কাম হেয়ার’ ছবিতে রডি ম্যাকডুয়ালের সাথে পর্দায় জুটি বাঁধেন।
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রডি ছিলেন টেইলরের সবচেয়ে কাছের মানুষের একজন।
১৯৪৪: টেইলর সর্বপ্রথম খ্যাতি পান ‘ন্যাশনাল ভেলভেট’ ছবিতে অভিনয় করে। প্রযোজক টেইলরের কাজে মুগ্ধ হয়ে ছবিতে তাঁকে যে ঘোড়াটিতে চড়তে দেখা যায়, সেটা উপহার হিসেবে দেন। সহশিল্পী হিসেবে ছিলেন মাইক রুনি।
১৯৪৯: প্রথমবারের মত প্রাপ্তবয়স্ক ও প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন।
ছবির নাম ‘কন্সপাইরেটর’। ছবিটি ফ্লপ খেলেও টেইলর সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ান। একই বছর লুইজা মে অ্যালকটের সাড়াজাগানো উপন্যাস ‘লিটল উইমেন’ অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। সহশিল্পী হিসেবে ছিলেন জ্যানেট লি, জুন অ্যালিসন ও মার্গারেট ব্রায়ান।
১৯৫০: প্রথমবারের মত বিয়ের পিড়িতে বসেন।
এরপর আরো সাতবার বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের মাত্র দু’দিনের মাথায় মুক্তি পায় ‘ফাদার অব দ্য ব্রাইড’ । ব্যবসাসফল এ চলচ্চিত্রটিতে খ্যাতিমান অভিনেতা স্পেন্সার ট্রেসি টেইলরের বাবার ভূমিকায় অভিনয় করেন। পরবর্তীতে চলচ্চিত্রটির সিকুয়্যেল তৈরি হয় এবং আরো পরে রিমেক করা হয়।
১৯৫১: ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয় জর্জ স্টিভেন্সের ‘এ প্লেস ইন দ্য সান’ ছবিটি।
৬টি বিভাগে অস্কার জিতে চলচ্চিত্রটিতে লাইব্রেরী অব কংগ্রেস ন্যাশনাল ফিল্ম রেজিস্ট্রিতে জায়গা করে নেয়।
১৯৫৪: লাস্ট টাইম আই স্ দ্য প্যারিস , বুয়ো ব্রামেল , এলিফ্যান্ট ওয়াক সহ মোট ৪টি চলচ্চিত্র মুক্তি পায় । টেইলরের ক্যারিয়ায়ের সবচেয়ে ব্যস্ততম সময় কেটেছে এ বছরটায়।
১৯৫৭: আমেরিকার গৃহযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত ‘রেইনট্রি কান্ট্রি’ চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করে এলিজাবেথ প্রথমবারের মত সেরা অভিনেত্রীর অস্কার মনোনয়ন পান। ছবিতে টেইলরের বিপরীতে ছিলেন মন্টগোমরী ক্লিফ।
১৯৫৯: খ্রিস্ট থেকে ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করেন। নতুন নাম নেন এলিসেবা রাচেল।
১৯৬০: টানা চতুর্থবারের মত মনোনয়ন পাওয়ার পর অবশেষে জুটলো অস্কার। ছবি ‘বাটারফিল্ড ৮’। টেইলর স্বামী এডি ফিশারের বিপরীতে এ চলচ্চিত্রটিতে পতিতার ভূমিকায় অভিনয় করেন।
এ ছবিতে আভিনয়ের সুবাদে জীবনের প্রথম অস্কারটি জুটলেও টেইলর-ফিশার জুটির কাছে চলচ্চিত্রটি ছিলো খুবই অপছন্দের।
১৯৬৩: মুক্তি পেলো ‘ক্লিওপেট্রা’ আর বক্স অফিসে সৃষ্টি করলো ইতিহাস। এ চলচ্চিত্রটি দিয়েই বার্টন-টেইলর প্রেমের সূত্রপাত ঘটে । ৪৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এ এপিক মুভিটি তৎকালীন সময়ে সবচেয়ে ব্যয়বহুল চলচ্চিত্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়। নাম ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য প্রযোজকের সঙ্গে টেইলর রেকর্ড এক মিলিয়ন ডলার পারিশ্রমিকের চুক্তি করেন।
১৯৬৬: অ্যাডওয়ার্ড আলবির নাটক অবলম্বনে নির্মিত মাইক নিকোলসের অভিষেক চলচ্চিত্র ‘হু’জ অ্যাফরেইড অফ ভার্জিনিয়া উলফ?’ এলিজাবেথকে এনে দেয় ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অস্কার। বার্টন মনোনয়ন পেলেও জিততে পারেননি।
১৯৭২: ‘হ্যামারস্মিথ ইজ আউট’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর সিলভার বিয়ার্স জিতে নেন টেইলর।
১৯৮০: ধীরে ধীরে চলচ্চিত্র থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকেন আর টেলিভিশনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এরপর বছর বিশেক ফিচার ফিল্মের চেয়েটিভি সিরিজে কাজ করেছেন বেশি।
জেনালেল হসপিটাল, দি সিম্পসন, পোকার হাউজ প্রভৃতি জনপ্রিয় টিভি সিরিয়ালে তাঁকে দেখা গেছে।
১৯৮৩: অ্যালকোহলিক হিসেবে শনাক্ত করা হয়। এছাড়া প্রচুর ঘুমের বড়ি, ব্যথানাশক ট্যাবলেট গ্রহণ করায় তাঁকে মাদক পুর্নবাসন ক্রেন্দ্রে পাঠানো হয়।
১৯৮৪: প্রথম হলিউড তারকা হিসেবে এইডস রোগের বিরুদ্ধে জনমত গড়তে এগিয়ে আসেন টেইলর। এইডস রোগীদের জন্য গঠন করেন অর্থ তহবিল।
১৯৮৫: আমেরিকান ফাউন্ডেশন ফর এইডস রিসার্চ এর যাত্রা শুরু যার সহপ্রতিষ্ঠাতা টেইলর। ঐ বছরই বহুদিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহকর্মী রক হাডসন এইডসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
১৯৮৭: এইডসের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের জন্য ফ্রান্সের সম্মানজনক পুরস্কার ‘লিজিয়ন অফ ওনার’ লাভ করেন।
১৯৯০: নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসেন। এ যাত্রা বেঁচে গেলেও শরীরে নানা ব্যধি বাসা বাঁধতে শুরু করে।
১৯৯১: অষ্টম ও শেষবারের মত বিয়ে করেন।
১৯৯২: এইডস এর বিরুদ্ধে লড়তে অবদান রখার জন্য বিশেষ অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড ‘জিন হার্শনট হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড ’ লাভ করেন।
১৯৯৩: ‘এলিজাবেথ টেইলর এইডস ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। আমেরিকান ফিল্ম ইন্সইটিউট আজীবন সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করে।
১৯৯৭: ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে।
মস্তিস্কে সফর অস্ত্রোপ্রচারের মাধ্যমে টিউমারটি অপসারণ করা হয়।
২০০০: চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ টেইলরকে পুরুষ নাইটের সমতুল্য ‘ডেইম’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
২০০১: ছোট পর্দায় শেষবারের মত তাঁকে দেখা যায় ‘দিস ওল্ড বোর্ডস’ টিভি সিরিজে।
২০০৩: ইরাক যুদ্ধের বিরোধীতা করে ৭৫তম অস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান।
২০০৫: চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য বাফটা পুরস্কার লাভ করেন।
২০০৭: এইডস তহবিল গঠনের জন্য মঞ্চে অভিনয়ের জন্য উঠেন টেইলর। নাটকরে নাম ‘লাভ লেটার’।
২৩মার্চ ২০১১: লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৭৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন এই হলিউড কিংবদন্তী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।