আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুধুই আমার জন্য! শুধুই আমার দেশের জন্য!



হঠাৎ করে আমার বন্ধু মামুন সেদিন বলে উঠলো,“কি রে খেলা দেখা ছেড়ে দিলি নাকি?” আমি কি উত্তর দেব? মুচকি হেসে এড়িয়ে গেলাম। কি বলবো ওকে? যেভাবে আমার দেশ হারল তাতে আর কি খেলা দেখতে ভাল লাগে? যে কোনদিন ক্রিকেট খেলা দেখেনি সেও বুঝবে ৩০০ বল এ ৫৮ অথবা ৭৮ খুবই লজ্জাজনক স্কোর। মাত্র ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর সাথে খেলা দেখে এসেছি, বুকে দগদগে ঘা নিয়ে আর জিহবাতে টক একটা স্বাদ, যেন হ্যাংওভার। ৮ ঘন্টার খেলা ২ ঘন্টায় (১০ মিনিট বেশি বা কম) দেখে কিছু খেতে (আসলে পালাতে) গিয়েছি বনানীর কজমো লাঊঞ্জ এ। এক শুভ্র বিদেশিনি আমার গায়ে লাল সবুজ জার্সি আর গাল এ বাঙ্গালি পতাকা দেখে আকণ্রবিস্ত্রিত হাসি হেসে জানালো, সে খুবি দুঃখিত যে বাংলাদেশ মাত্র ৫৮ রান এ অল-আঊট হয়ে গেছে! যদিও তাকে দেখে বিন্দুমাত্র দুঃখিত মনে হচ্ছিল না।

তার উচ্চারণ শুনে মনে হচ্ছিল উনি খাষ ব্রিটিশ। পারলে দিতাম একটা কষে থাপ্পড়। কিন্তু ওইদিন মাথা ঊচু করার সামর্থ্য বা শক্তি আমাদের ছিল না। আমরাও কষ্টে ঠোট একটু ব্যাকালাম। এরপর আর খেলা মিরপুর এই হোক আর পাড়ার মাঠেই হোক, কি লাভ দেখে? ১৯ মার্চ যেন শেষ করে দিল ১৬ কোটি বাঙ্গালির সাধের ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ।

এতদিন যেটা নিয়ে এত্ত দৌড় ঝাপ সব শেষ। এখন শুধুই বুকভরা দীঘ্রশ্বাস। সৈাভাগ্যক্রমে আমি এই কঠিন দুনিয়াতেও টিকেট নামক সোনার হরিনগুলির বেশ কয়েক টার দেখা পেয়েছি। খেলাও দেখলাম ২টা। সব ই আমার মামার কারনে অবশ্য।

কোয়াটার ফাইনাল এর ২টি ম্যাচ এর বেশ কিছু টিকেট ও আমার হাতে। বাঙ্গালি অবশ্য ক্লিক বিডি নামক ওয়েবসাইট এর কারনে টিকেট ঠিক ই যোগাড় করেছে! (৩য় কোয়াট্রার ফাইনাল এর টিকেট অবশ্য ২৫,০০০ ই মনে হয় ক্লিক বিডি নামক ওয়েবসাইট এ ছিল!) যাইহোক, আমি সোনার হরিণগুলি সোনার কয়েন এ রুপান্তরিত হবার আগেই ২টি খেলা দেখে ফেলেছি। চট্রগ্রাম এর খেলাও দেখতাম কিন্তু দুর্ভাগ্য ক্রমে (নিজের ইচ্ছাও ছিল!) আমাকে কাজ সেরে আগের দিনই ঢাকায় ফিরতে হয়। আর ৫৮ রান এর লজ্জার পর ইংল্যান্ড এর মত বাল্যান্সড টিম এর সাথে শাকিববাহীনি কি করে তা দেখার মতো বাঘ আমি কোনকালেও ছিলাম না, হবও না! যেখানে ইংলিশ বোলাররা সাউথ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানদের কেও মাত্র ১৬৫ রান এ অল-আঊট করে দিয়েছে মাত্র ১৭১ রান এর পুজি নিয়েও। এরপর আবার আশা??? মোবাইল এর ওয়েলকাম টিউন থেকে “শত আশা” নামক গানটা মুছে দেব কিনা ভাবছি।

পর পর ২টি অবিশ্বাস্য জয়ে আমি আবার বিড়াল থেকে বাঘ হয়ে গেলাম। আহ! কি যে একটা রাত ছিল সেটা। বাংলাদেশ এর ইতিহাস এ এমন আনন্দ একমাত্র দেশ স্বাধীন হওয়া ছাড়া আর উদযাপন হয়নি। আমি মাত্র বাসায় ফিরেছি মনে একবুক বেদনা নিয়ে। গাড়িতে আস্তে আস্তে এফ এম রেডিও এর কল্ল্যাণে শুনছিলাম এক এর পর এক শলাকাগুলির(ঊইকেট!) পতন।

৮ম ঊইকেটের এর পতন এর পর আর সহ্য হলনা এই অসহায় আত্ম্যসমর্পণ। টারগেট তখনও অনেক দূর! কোথায় ২২৬ আর কই ১৬৪!! ব্যাটসম্যান বলতে শুধু রিয়াদ। সাঊথ আফ্রিকা পারলনা আর এরা। হুহঃ বাসায় ঢুকে অন্ন্য কাজ এর ফাকেও চোখ শুধু থাকে টিভির স্ক্রীন এ। রাগ হয়, আর তাকাব না শালা ওই দিকে, চ্যানেল চেঞ্জ।

আর ভাবি এই বুঝি গেল ৯ম ও ১০ম শলাকা! আবার ফিরে আসি বিটিভি লাইভ এ। কিন্তু আমরা যে আসলেও বাঘ তা প্রমান করে ছাড়লো আমাদের ই দুই বাঘ রিয়াদ ও শাফিউল। শেষ ওভার এর আগে একটার পর একটা ফোন, “কোথায় তুই? নিচে নাম, বাইক এর চাবি নিয়ে আয়, নিচে নাম”। ইশশ! এখনি নামি আর ঊইকেটটা পড়লে আবার ঊঠে চলে আসি না? কি দরকার? আমার শুধুই ভয়, এই বুঝি গেল! আল্লাহ পার করো! আমি জানি যেখানে যত্ত বাঙ্গালি আছে; দেশে হোক বা বিদেশে, রাস্তায় হোক বা বাসায়, দাড়িয়ে অথবা বসে; সেই সময় সবার একমাত্র কাজ ছিল হয় টিভি নতুবা রেডিও নিদেনপক্ষে ইন্টারনেট এ এই ২ ব্যাটসম্যান এর সাথে ইংলিশ বোলার এর বিরুদ্ধে গার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়া। আর শাফিউল যে শটটি খেল্লো!!! আমি একটা বল হয় আর বাইক এর চাবি নেই, আর একটা রান হলে মানিব্যাগটা পকেট এ ঢুকাই।

সে যে কি উত্তেজনা তা সবাই জানে। আমার বলার মত বা দেয়ার মতো কোন বিশেষন আর বাকি নেই। শেষে কপিরাইট এর মামলায় পড়বো নাকি? চার হওয়া আমি দেখিনি। দেখতে চাইও নি। আমি জানি আমরা ক্রিকেট এর পিতা-মাতাদের আবার হারিয়েছি।

সারা ঢাকা শহর তখন রাস্তায়। খুশিতে মাতোয়ারা। যে যেভাবে পারছে তার খুশি প্রকাশ এ ব্যাস্ত অন্যান্যদের সাথে। কিন্তু আশ্চর্য এক সুশ্রিংখলতা ছিল সবখানে। ওই কয়দিন এ শুনিনি এমন কোন অঘটন এর কথা।

সবাইকে নিজের খুব আপন মনে হয়। ছুটে গেছি ঢাকার একমাথা থেকে আর এক মাথা। সবখানে একই চিত্র। অভিন্ন পরিবেশ। আমাদের এই ঝঞ্ঝাটময়, কর্মব্যাস্ত জীবনে যেখানে একটি নিঃশ্বাস ও ফেলি আমরা ১০০টা কথা ভেবে সেখানে সারাদেশ একসাথে এক পতাকার তলে।

এমন কি পেরেছে আগে একমাত্র মুক্তিযোদ্ধারা ছাড়া আর কেউ করতে? কখনও কি এসেছে এমন রাত যে রাত মা তার শিশু কোলে নিয়ে সারারাত রাস্তায় ঘুরেছেন, আনন্দ করেছেন? না। কখনই না। এমন হয়নি সেই বীর মুক্তিযোদ্ধারা এই সোনার বাংলা কে স্বাধীন করে যাওয়ার ৪০ বৎসরে। কই আমাদের রাজনীতিকরা তো পারেন নি এমন কিছু করতে? সময় ত কম পান নি। ৪০ বৎসর কম সময় নয়! মালায়েশিয়া কোথায় চলে গেছে? পাশের দেশ প্রায় ১৫০ কোটি লোক নিয়েও সুপারপাওয়ার গুলির এক্তটি।

আমদের নতুন প্রজন্মর সমস্যা নাকি আমরা পুরান কথা ভাবি না!! ১৯৭১ এর চেতনা শিক্ষা আমরা পাইনি। আমাদের দেশের প্রতি ভালবাসা কম। কিন্তু আমি নিজে জরিপ করে বলছি ১৯৮০-১৯৯০ এর দশকে যাদের জন্ম তারা দেশেই বেশি আছে। ষ্ট্যাটিষ্টিক্স দিয়ে আপনাদের আর বিরক্ত করব না। পেয়ে যাবেন গুগোল এ সার্চ করলে।

অনেক জরিপ সংস্থাই এইগুলি নিয়ে জরিপ করেছে ইন্ডিয়া, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ এ। ক্রিকেটটা নিয়ে আমরা একটু বেশিই মাতামাতি করি। যারা এতা বলেন তাদের বোঝা উচিৎ এই একটি খেলাই আমরা পারি। খুব ভালভাবেই পারি। অন্ততঃ ৭০ টি দেশ এই বিশ্বকাপ দিয়ে আমাদের চিনেছে।

কিভাবে বললাম? ইঊটিঊবে এর জরিপ এ দেখা গেছে ৭০ টির কাছাকাছি দেশের মানুষ একসাথে অনলাইন এ ম্যাচ দেখা বা এ সংক্রান্ত খবর সংগ্রহে ব্যাস্ত ছিল। ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড! এই শাকিব, তামিম, শফিউল, কায়েস ভাইরাই আমাদের কে চিনিয়েছে বিশ্বের কয়েকশ কোটি মানুষের কাছে। তারা কি একটু ভুল করতে পারে না? ভুল শুধু আমদের বিজ্ঞ রাজনীতিক এবং বুদ্ধিজীবিরাই করতে পারেন এবং করছেন ৪০ বৎসর ধরে!!! আমরা চুপ আছি। না এটা তো হবেই। তিনারা দেশ চালাবেন ভুল তো করবেনই! এমন কি? কই তাদের গাড়িতেতো আমরা সবাই একসাথে দাড়িয়ে ইট মারিনা??? তাদেরকে তো আমরা রাস্তায় ঘিরে ধরে অক্থ্য ভাষায় গালাগালি করিনা!! কেন? আমি সবার কথা বলছিনা।

বলার অধিকার ও আমার নেই। আমি “নেই” রাজ্জ্যের ফালতু এক প্রজন্ম যাদের কোন দেশপ্রেম, চেতনা, আত্মসম্মান নেই!!! আমাদের শুধু আছে বুকের ভিতরে “শ্’ত আশা” যে আশা দিয়ে হয়ত আমরা নতুন প্রজন্ম কে নতুন কিছু স্বপ্ন দিয়ে যেতে পারব আগামির জন্য। তারা শুধু এতটুকু বিশ্ব্যাস করলেই হবে, “ এই দেশটা শুধুই আমার জন্য” তাহলেই তারা বুঝতে পারবে তারাও এই দেশের জন্য। -নাজরেন

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।