আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডলারের চড়া দামে বাড়ছে কাঁচামাল আমদানির ব্যয়



ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশীয় শিল্প খাত। কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানির ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে বাড়ছে পণ্যের দামও। ফলে দেশের মানুষকে বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে এসব পণ্য। সারা বিশ্বে ডলারের দাম কমে গেলেও বাংলাদেশেই শুধু ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে।

চলতি অর্থবছরের শুরুতে ৬৯-৭০ টাকা দিয়ে এক ডলার কিনতে পারতেন ব্যবসায়ীরা। এখন এক ডলার কিনতে তাঁদের ব্যয় হচ্ছে ৭৩-৭৪ টাকা। গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার কেনার দর ছিল ৭১ টাকা ৯৯ পয়সা। আর বিক্রয়মূল্য ছিল ৭২ টাকা ৪০ পয়সা। সিটি ব্যাংক এনএ বাংলাদেশের ট্রেজারি বিভাগের তথ্যানুযায়ী ওই দিন ডলারের ক্রয়মূল্য ছিল ৭২ টাকা ১০ পয়সা।

আর বিক্রয়মূল্য ছিল ৭৩ টাকা ১০ পয়সা। চলতি অর্থবছরের শুরুতে গত ৪ জুলাই ডলারের ক্রয়মূল্য ছিল ৬৮ টাকা ৮০ পয়সা। বিক্রয়মূল্য ছিল ৬৯ টাকা ৮০ পয়সা। ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, বর্তমানে তাঁদের ডলার কিনতে হচ্ছে ৭৩ টাকারও বেশি দামে। ফলে পণ্যের দাম আগের মতো থাকলেও শুধু ডলারের দামের কারণে ১০০ ডলার মূল্যের কাঁচামাল আমদানিতে দেশীয় শিল্পমালিকদের ৩০০-৪০০ টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে।

জানা যায়, ডলারের দামের কারণে নতুন শিল্প স্থাপনে যন্ত্রপাতি আমদানিতেও ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। আগের চেয়ে শিল্প উদ্যোক্তাদের সাড়ে চার শতাংশ বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। রপ্তানিমুখী শিল্পে রডের দামের ক্ষেত্রে কোনো নেতিবাচক প্রভাব নেই। কারণ কাঁচামাল আমদানিতে বেশি ব্যয় হলেও তৈরি পণ্য বেশি দামেই বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে। আবার দেশীয় কাঁচামালনির্ভর রপ্তানিমুখী শিল্পও ডলারের দামের কারণে লাভবান হচ্ছে।

এর সুবিধা পাচ্ছেন গুটিকয়েক রপ্তানিকারক। কিন্তু ডলারের দামের কারণে রড, সিমেন্ট, ওষুধসহ বিভিন্ন শিল্পে কাঁচামাল আমদানির ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে পণ্যের দামে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের প্রায় সব মানুষ। বাংলাদেশের রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি।

ডলারের দামের কারণে রপ্তানিতে দেশ যতটুকু লাভবান হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি লোকসান দিচ্ছে আমদানিতে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদলের মতে, রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়া ও ডলারের রিজার্ভ কমে যাওয়ায় ভবিষ্যতে ডলারের বিপরীতে টাকার দাম আরো কমবে। একে শিল্প খাতের জন্য আরো বড় দুঃসংবাদ বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। ডলারের দামের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের স্টিল রি-রোলিং মিলগুলো। তাদের লৌহজাত পণ্যের প্রধান কাঁচামাল রড ও রাসায়নিক দ্রব্য আমদানিতে ব্যয় বেড়ে গেছে।

এ কারণে রডের দামও বেড়েছে। বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অর্থনৈতিক স্থবিরতার কারণে সারা বিশ্বেই ডলারের দাম কমে যাচ্ছে। শুধু বাংলাদেশেই বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ডলারের উচ্চ দামের কারণে কাঁচামাল আমদানিতে ব্যয় বেশি হচ্ছে।

' তিনি আরো বলেন, ভারতে আগে ডলারপ্রতি দর ছিল ৪৬ রুপি। এখন তা কমে ৪৪ রুপি হয়েছে। বাংলাদেশে ডলারের দাম ছিল ৬৯-৭০ টাকা। এখন তা প্রায় চার টাকা বেড়েছে। ডলারের দামের কারণেই ইস্পাত শিল্পে প্রায় ৪.৫ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে।

ডলারের দামের কারণে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দাম বাড়ায় দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে বলে মনে করেন শেখ মাসাদুল আলম। তিনি বলেন, ডলারের দাম বাড়ায় সব পণ্যের দামেই প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের সুদের হার ও ব্যাংকের বিধিবদ্ধ জমার হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও ডলারের দামের কারণে সে চেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে। বাংলাদেশ ওষুধ শিল্পমালিক সমিতির মহাসচিব আবদুল মুক্তাদির কালের কণ্ঠকে বলেন, ডলারের দামের কারণে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে ওষুধ শিল্প খাত চাপের মধ্যে আছে।

কাঁচামাল ছাড়াও যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে খরচ বাড়ছে। ডলার ছাড়াও ইউরোর দামও অত্যধিক বেড়ে গেছে। দেশে মোট উৎপাদিত ওষুধের ৯০ শতাংশ ব্যবহৃত হয় দেশে। বাকি ১০ শতাংশ রপ্তানি হয়। এ কথা জানিয়ে মুক্তাদির বলেন, 'রপ্তানিকারকদের খুব বেশি সমস্যা হচ্ছে না।

চাপে আছেন দেশের চাহিদার জন্য যাঁরা উৎপাদন করেন তাঁরা। তবে আমরা এখনই ওষুধের দাম বাড়াচ্ছি না। আশা করছি, ছয় মাসের মধ্যে ডলারের দাম কমে যাবে। ' বাংলাদেশ টেঙ্টাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএম) সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রায় দেড় মাস ধরে ডলারের দাম একটু বেশি বাড়তি। ডলারের দামের কারণে সব ধরনের পণ্যের আমদানি খরচ বেড়ে গেছে।

স্বাভাবিকভাবেই তুলা আমদানিতেও খরচ বেড়েছে। দেশীয় টেঙ্টাইল মিলে উৎপাদনের ২০-৩০ শতাংশ স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ডলারের দামের কারণে দেশীয় ক্রেতারাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.