লিখতে ভাল লাগে, লিখে আনন্দ পাই, তাই লিখি। নতুন কিছু তৈরির আনন্দ পাই। কল্পনার আনন্দ।
- স্যার, আমার লেখাটা ... ...
- বললাম তো, পড়ে দেখবো। রেখে যান।
এখন খুব ব্যস্ত।
- স্যার, অনেক আশা করে নিয়ে এসেছিলাম। যদি ঈদ সংখ্যায় ... ...
- এটাও দু’বার বলা হয়ে গেছে। প্লীজ, যান তো। বললাম তো পড়ে দেখবো।
- স্যার, অনেক কষ্ট করে লেখা। আমি অনেক নতুন কিছু ইন্ট্রোডিউজ করেছি ... ...
- হ্যাঁ হ্যাঁ, বুঝলাম। বিবেচনা করবো। ভয় নেই, ট্র্যাশ ক্যানে ফেলে দেবো না।
ফেলে দেয়া হবে না বলাতেই যেন ছেলেটার ভয় আরও বেড়ে যায়।
স্যার, তাহলে রেখে যাবো?
- আরে হ্যাঁ হ্যাঁ। দেখুন, আপনার এক কথা বারবার বলার অভ্যেস আছে। এটা ছাড়ার চেষ্টা করবেন। মানুষ বিরক্ত হয়।
- সরি স্যার।
ওখানটাতে রাখবো?
- হ্যাঁ, ওখানটাতেই রাখুন।
- স্যার, একটা পেপারওয়েট চাপা দিয়ে দিই? বাতাসে উড়ে যেতে পারে।
- এত বড় একটা জিনিস উড়ে যাবে? আশ্চর্য মানুষ তো আপনি!
- তবুও স্যার, মনের শান্তি।
- ঠিক আছে, পেপারওয়েট চাপা দিন। মনের শান্তিই সই।
- তাহলে স্যার যাই?
- হ্যাঁ, যান। চিন্তা করবেন না, ভাল হলে ছাপা হবে।
ছেলেটা দরজা থেকে আবার ঘুরে দাঁড়ায়। বোধহয় কিছু একটা বলতে চায়। হয়তো শেষবারের মতো বলে যেতে চায়, স্যার, মনে করে পড়ে দেখবেন।
অনেক যত্ন করে লিখেছি।
কিন্তু সম্পাদকের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল। ব্যাটার দৃষ্টি ভাল নয়, রেগে যেতে পারে। তাহলে সবটাই মাটি হবে। তারচেয়ে এখন পশ্চাদপসরণই উত্তম হবে।
ছেলেটা চলে গেছে। সম্পাদক সাহেব এক গেলাস পানি খেয়ে ছেলেটার গল্পটা পড়লেন। মোটামুটি গল্প, আহামরি কিছু নয়। সাধারণত এ ধরণের লেখা বাদ পড়ে যায়।
তবে এটা বাদ পড়বে না।
এটা ঈদ সংখ্যায় যাবে। ছেলেটা পাত্তা না পেয়ে খানিকটা মন খারাপ করে চলে গেছে ঠিকই, কিন্তু ঈদ সংখ্যায় সে অবশ্যই খুব আগ্রহ নিয়ে আগাগোড়া চোখ বুলিয়ে দেখবে। গল্পটা ছাপা হবে একেবারে শেষ পাতায়, যাতে একেবারে শেষে চোখে পড়ে। নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে ছেলেটা।
সম্পাদক সাহেব একা একাই হাসলেন।
ছেলেটার অবাক চোখ দুটি কল্পনা করতে পারছেন। কাউকে খুশি করার উপায় হচ্ছে, প্রথমে তাকে হতাশ করতে হবে, এবং তারপর সে যা চেয়েছে সেটা দিতে হবে। “অপ্রত্যাশিত আনন্দ” যাকে বলে।
তিনি উঁচু গলায় একজনকে ডাক দিলেন। গল্পটা পাঠিয়ে দেয়া যাক।
(১৮ জুলাই, ২০১৩)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।